আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Mankind in crisis (সংকটের আবর্তে বিশ্বমানবতা) ড. আবু আমিনা বিলাল ফিলিপস্

বলুন! ইহাই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীগণ মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে এবং আমি অংশীবাদীদের অর্ন্তভূক্ত নই (আল-কুরআন)

Mankind in crisis (সংকটের আবর্তে বিশ্বমানবতা) ড. আবু আমিনা বিলাল ফিলিপস্ --সারসংক্ষেপ-- গণতন্ত্র পাশ্চাত্যের আচরিত মানবতাবাদী আদর্শ যার মূলে রয়েছে ডারউইনের থিউরি। এ থিউরি অনুযায়ী যোগ্যতমেরই কেবল বেচে থাকার অধিকার রয়েছে এবং তাদের কর্তৃত্বই সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বর্তমান পৃথিবীতে শক্তিবলে শ্রেষ্ঠতা অর্জন করেছে আমেরিকা তথা পাশ্চাত্যবিশ্ব। আর সামন্তবাদী ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের দুঃসহ অভিজ্ঞতা বহন করার পর আজ গণতন্ত্রই তাদের নিকট সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য আদর্শে (যদিও এটি প্রাচীন গ্রীক কর্তৃক প্রবর্তিত) পরিণত হয়েছে।

যেহেতু আদর্শ হিসাবে গণতন্ত্র তাদের নিকট স্বীকৃত অন্যদিকে তারা নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে যোগ্যতম মনে করে তাই তারা ডারউইনি থিইরী অনুযায়ী এ আদর্শকে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠা চায়। পৃথিবীর সকল দেশে তারা ইতিবাচক সাড়া পেলেও কেবল মুসলিম দেশগুলোতে এ আদর্শের পূর্ণ প্রবর্তন করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ইসলাম ও মুসলিম দেশগুলো নিয়ে এটাই তাদের মাথাব্যাথার মূল কারণ। মূলতঃ গণতন্ত্র কেকের উপরস্থিত ক্রিম। মূল অংশ তথা কেকটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ।

এ কারণেই দেখা যায় কোন দেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে সামরিক বা স্বৈরাচারী সরকার থাকলেও যদি সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের নীতি প্রতিফলিত হয় তবে পাশ্চাত্যে সে সরকারকে খারাপ চোখে দেখা হয় না। তাদের দৃষ্টিতে ধর্ম মানুষের কিছু অবাস্তব অতীন্দ্রীয় কল্পনার সমষ্টি। অতএব আচার বিভিন্ন হলেও সকল ধর্ম মূলতঃ এগুলো একই গোড়া তথা মানবীয় কল্পনা থেকে উৎসারিত। মৌলিকভাবে সবগুলোই মানুষের তৈরী বিশ্বাস বা কুসংস্কার,অন্যকথায় যেগুলোকে বলা যায় লোকজ বা অন্ত্যজ সংস্কৃতি। তাই পাশ্চাত্য যে যা বিশ্বাস করুক না কেন তাকে সে ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়ে ‘ধর্মপালনের স্বাধীনতা’র নামে তাদের পরিতুষ্ট করে।

আর এতে অন্ততঃ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এ সব ‘কুসংস্কারে’র অনুপ্রবেশ করছে না বলে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করছে। এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের ফলেই তারা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা উঠলে একে অযৌক্তিক মনে করে, কেননা সকল ধর্মবিশ্বাস একই উৎসে মূলীভূত। কোন যুক্তিতে একটা অপরটার উপর প্রাধান্য পাবে? এটি সাম্য, উদারতা, সহিঞ্চুতার নীতি বহির্ভূত। এভাবেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং তার পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রনীতি গণতন্ত্র আধুনিক তথা পাশ্চাত্য সভ্যতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসাবে প্রচারিত ও প্রসারিত হচ্ছে যাকে আধুনিক দুনিয়ার জন্য একমাত্র সমাধান এবং ‘সুপিরিয়র মরালিটি’ মনে করা হয়। আর এজন্যই ডারউইনী থিওরী অনুসরণে সারাবিশ্বে তার প্রতিষ্ঠা দেওয়াকে তারা অপরিহার্য মনে করছে।

আমাদের স্পষ্ট হওয়া উচিৎ যে, কোন সিস্টেম তা যদি ধর্মনিরপেক্ষতানির্দেশক হয় তবে তা সরাসরি ইসলামবিরোধী। এখানে মধ্যবর্তী কিছুর অস্তিত্ব নেই। একজন মুসলমানের জীবনে ধর্মনিরপেক্ষ কোন ক্ষেত্র নেই। কেননা ইবাদতের অর্থই হলো যা কিছুই করা হবে তা শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যই। অন্য ধর্মগুলো মানবতার ধর্ম (Man-made) বলে পরিচিত।

সুতরাং গণতন্ত্র এবং ইসলামের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্যের যে সূচক তা হলো- গণতন্ত্রে (Human System) সুনির্দিষ্ট বা বিধিবদ্ধ কোন ব্যবস্থা স্বীকৃত নয়; হোক তা কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাধারণ নীতি; বরং আইন সবসময়ই সেখানে পরিবর্তনযোগ্য। `consenting adult’ তথা প্রাপ্তবয়স্কের ইচ্ছাই গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তি। অন্যদিকে ইসলামে (Devine System) ধর্মই মানুষের সমগ্র জীবন পরিচালনা করে এবং ধর্মকে সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় মনে করা হয়। সুতরাং এ দুটোর মধ্যে কোন কমপ্রোমাইজিং প্রিন্সিপল অবলম্বনের অবকাশ নেই। ইদানিং ‘মডারেট’ ইসলামপন্থীরা ইসলামী গণতন্ত্র কথাটি উল্লেখ করছেন।

মূলতঃ এটা অসম্ভব। কেননা গণতন্ত্রের অর্থ হলো জনগণের শাসন। অর্থাৎ জনগণের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবকিছু চলবে। কোনটা ভাল কোনটা মন্দ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা জনগণের। আর ইসলামে এক্ষেত্রে মূল ক্ষমতাধর হলেন আল্লাহ এবং তার প্রতিনিধি হিসাবে মানুষের নিকট পথপ্রদর্শক হলেন রাসূল (ছাঃ)।

আর পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের ক্ষেত্রে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তিত হওয়া গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামের নীতি সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়। কারণ এটি সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত। মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর এটি নির্ভরশীল নয়। সৃষ্টির ইচ্ছার পরিবর্তনে স্রষ্ঠার ইচ্ছা পরিবর্তযোগ্য নয়। এ জন্য ইসলাম ধর্ম পাশ্চাত্যের নিকট ‘মৌলবাদী’, মানবতার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণকারী ধর্ম হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

অবশ্য পাশ্চাত্য গণতন্ত্রীরা ধর্মের প্রত্যক্ষ গুরুত্ব স্বীকার না করলেও তাদের আইনের মূলনীতিগুলো তাওরাতের ‘দশ নির্দেশ’ থেকে গ্রহণ করেছে। আবার ব্যভিচারকে তারা সিদ্ধ করেছে, যদিও সেটা বাইবেলের নীতি বিরোধী। বাইবেলের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে এই জন্য যে, নীতি হিসাবে বাইবেলের পরোক্ষ কিছু ভূমিকা থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে তার কোন গণতান্ত্রিক গুরুত্ব নেই। কেননা গণতন্ত্রে আনুষ্ঠানিক ধর্ম কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাস আর সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের প্রবর্তিত বা গৃহীত নীতিই মূলতঃ ধর্ম। এখানে প্রশ্ন আসে, ইসলাম এবং তার নীতিমালা সম্পূর্ণ সংরক্ষিত থাকা স্বত্ত্বেও আজ পৃথিবীর মুসলমানরা কেন পশ্চিমা কালচার, মূল্যোবোধকে নিজেদের কালচার, মূল্যোবোধে পরিণত করছে- এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, আজ সামগ্রিকভাবে মুসলমানরা তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামকে পরিত্যাগ করেছে।

ফিলিস্তিন, চেচনিয়া, কাশ্মির বা ইরাক প্রভৃতি মুসলিম দেশ পশ্চিমাদের হাতে চলে যাওয়া এটা মূলতঃ কোন সমস্যা নয়, বরং আজ সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা তা হলো, মুসলমানদের নিকট থেকে ইসলাম হারিয়ে যাওয়া। ইসলামের সাথে সম্পর্কচ্ছিন্ন করে মুসলমানরা জ্ঞাতে অজ্ঞাতে পূর্বপুরুষের কালচারকে বা স্ব স্ব দেশীয় কালচারকে চর্চা করতেই উৎসাহবোধ করছে। জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ তাদের ঘিরে ফেলেছে। নিজেদের মুসলমান বলার চেয়ে সোমালী, পাকিস্থানী, লেবাননী বলে পরিচয় দিতেই তারা বেশী গর্ববোধ করছে। এতসব বিভক্তিকে জারি রেখে আমরা কিভাবে একক মুসলিম উম্মাহ হিসাবে পরিচয় দিব? অপরদিকে এ সুযোগে পশ্চিমা মিডিয়া মুসলমানদের এই অধঃপতনের ন্যক্কারজনক দিকগুলো বেশী করে ফোকাস করছে।

রাসূল বলেন, যদি তোমরা ঈনা বিক্রয় কর, ষাড়ের লেজ ধরে থাক এবং কৃষিকাজে লিপ্ত থাকার কারণে জিহাদ পরিত্যাগ কর, তবে আল্লাহ তোমাদের উপর এমন অপমান প্রবল করে দেবেন যে, যতক্ষণ না তোমরা দ্বীনের উপর পূর্ণরূপে প্রত্যাবর্তন করবে এবং তওবা করবে, ততক্ষণ আল্লাহ তোমাদের থেকে ঐ অপমান দূর করবেন না। (আবু দাউদ, হা/৩০০৩; আহমাদ, হা/৫৩০৪) সুতরাং মুসলমানদের আজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রকৃতরূপে ইসলামের কাছে ফিরে আসা। তবেই তারা গ্লোবাল ওয়েস্টার্ন কালচার তথা বিশ্বব্যাপি পশ্চিমাদের সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করার নৈতিক যোগ্যতা লাভ করবে। এজন্য আমাদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন নিজেদেরকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং নেক্সট জেনারেশনকে সে আক্বীদার উপর উত্তম রূপে গড়ে তোলা। কারো অপেক্ষা না করে আমাদের নিজ থেকেই এই প্রাকটিস্ শুরু করতে হবে।

আমাদের প্রত্যেকেরই এ ক্ষেত্রে আবদান রাখার সমান সুযোগ রয়েছে। এভাবেই আমরা সামষ্টিক প্রচেষ্টার (কালেকটিভ ইফোর্ট) মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে একটা সামগ্রিক পরিবর্তন (কালেকটিভ চেঞ্জ) আনতে সমর্থ হব ইনশাআল্লাহ। (mankind in crisis VCD)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।