আমি বরাবরই পড়ি বেশি, লিখি কম ( পাঠ্যবই, বা ব্লগ দু’ক্ষেত্রেই), কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার পর অন্যদের ব্লগ এ বেশ বড়সর কয়েকটা কমেন্ট করে ফেলেছি। আসল লেখার লিঙ্কের সাথে সেই কমেন্ট গুলো জুড়ে দিলাম এই লেখায়।
লেখা:
Click This Link
মন্তব্য:
"আজকের পরে বিডিআর কি পাবে জানি না , কিন্তু সংশ্লিষ্ট সকলের অন্তত চাকরী চলে যাবে । কোর্ট মার্শাল হবে কারো কারো , মৃত্যুদন্ড ও হতে পারে যারা সরাসরি হত্যার সাথে জড়িত”। " হত্যাকারীদের মৃত্যুদন্ড হওয়া কি উচিত নয়? এটা কি শুধুই “চেইন অফ কমান্ড” রক্ষার জন্যই? আজকে যদি অফিসারদের হাতে বিনা বিচারে সৈন্যরা মারা যায়, আমরা কি তার বিচার চাবনা?
"“পাকিস্তান বাংলাদেশ যুদ্ধে বাংলাদেশ আক্রমনের সিদ্ধান্তটা রাজনৈতিক হলেও যুদ্ধে হেরে যাওয়ার কারনে পাকিস্তান আর্মির সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়”"- প্রথমত, যুদ্ধের সিদ্ধান্ত সামরিক কর্তৃপক্ষের, রাজনৈতিক না।
আর সংশ্লিষ্ট কারো তেমন কোন শাস্তি হয় নাই। নিয়াজী আর তার স্টাফ অফিসার বকর সিদ্দিকির চাকরি চলে যায়, পেন্সন দেয়া হয়নি। আর কারো কোন শাস্তি হয় নি। মূল নায়ক ইয়াহিয়া দুটো পেন্সন পায়-রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান হিসেবে।
"“বাংলাদেশ একমাত্র উজবুক জাতি যারা পাকিস্তান ফেরত অফিসারদের চাকুরীতে রেখে বাংলাদেশী অফিসার বনাম পাকিস্তান ফেরত অফিসার - এই দুই দলে বিভক্তি তৈরী করে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যু, হত্যা, বিদ্রোহের বীজ বুনে রেখেছে” "– বিপুল সংখক বাংগালি অফিসার ( সামরিক ও বেসামরিক এবং তাদের পরিবার- সংখ্যাটা ৪ লক্ষ) যারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্থানে গৃহবন্দী ছিল, তাদের আমরা আর কি করতাম? কেন তাদের পোস্টিং তখন ওখানে ছিল - একথা বলে কান ধরে ফেরত পাঠাতাম সেখানে? নাকি চাকরী থেকে বের করে দিতাম? আর কথাটা “বাংলাদেশী অফিসার বনাম পাকিস্তান ফেরত অফিসার” এটা কেন বলা হল।
মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা কেউ কেউ যুদ্ধের পর ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পরে, আর তার সুবিধা নেয় এরশাদের মত কেউ কেউ। ( কেউ যেন দেশপ্রেমিক নিস্বার্থদের একথার সাথে মিশিয়ে না ফেলেন)
গোলাম আজমের ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অফিসার, একমাত্র নয়। আর জাতি হিসেবে এ লজ্জা আমাদের যে আমরাই এই রাজাকারদের নির্বাচিত করি ভোট দিয়ে। এবারো নিজামি এক লাখ উনিশ হাজার ভোট পেয়েছে (যতদূর মনে পরে)
"“এই সীমাহীন দুর্নীতির কারনেই বিডি আর জওয়ানরা তাদের বঞ্চনা আর ক্ষোভের জায়গা গুলো তৈরী হতে দেখেছেন বছরের পর বছর”" দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বিডিআর জওয়ানরা এর বাইরে নন। বর্ডারে চোরাচালানের ভাগ তারাও নেয়।
এই বিদ্রোহ কোন ভাবেই দেশের কল্যানে তারা করেনি, বরং নিজেদের সুবিধা আরো বাড়ানোর জন্য করেছে। এটা কোন মহান বিপ্লব নয়, ঘৃন্য অপরাধের প্রদর্শনী।
"“ এই সরকার পুরোপুরিভাবে আর্মি ব্যাকড সরকার
বাংলাদেশ আর্মি পুরোপুরি আমেরিকা ব্যাকড বাহিনী”"
সেনাবাহিনী দেশের সরকারের অংশ। আর আমেরিকান জুজুর ভয় না দেখানোই ভাল।
"“বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোন জবাবদিহিতা নেই” – সহমত।
" এখানে পরিবর্তন আবশ্যক। দরকার গণমুখী সেনাবাহিনী।
"“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কি একটাও যুদ্ধ লড়েছে যার জন্য আমরা তাদের এত টাকা দিয়ে লালন করি ? নাকি অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ইচ্ছা আছে যুদ্ধ করার যার জন্য এত সুবিধা দিয়ে তাদের লালন করতে হবে?” –" ১৯৭১ এর যুদ্ধে তাদের অবদানকে অস্বীকার কর? আমাদের প্রতিরক্ষানীতি আত্মরক্ষামূলক, তাই বলে সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করতে পারি না!!
“"আমরা কেন জানবো না তারা ঠিক কত টাকা , কিসের পিছনে ব্যয় করছে ?"” স্বচ্ছতা আনতে হবে, এর কোন বিকল্প নাই।
“ "আমরা কি করবো ? তাদেরকেই শাস্তি দেব , যারা প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ের ?"” না, অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের উপর গনশাস্তি বা নির্যাতন কোন ভাবেই করা যাবে না। কিন্তু যারা প্রতিবাদের নামে লুটপাট, হত্যা (এখন এমনকি ধর্ষণের কথা শোনা যাচ্ছে) তাদের বিচার করতেই হবে।
ভয় পাচ্ছি, এখানে নিরাপরাধরাও না শাস্তি পায়।
একজন ব্লগারের লেখায় আবেগের অনেকখানি ভুল প্রকাশ দেখে এত বড় মন্তব্য লিখে ফেললাম!! ঘটনা দেখে মনে হল, জাতিগতভাবে আমাদের সংযম আর ধৈর্যের চূড়ান্ত এক পরিক্ষার সময় এসেছে। (আমার লেখাটা বিশাল হওয়ায় আমি এখন সংযমের কিছুটা অভাব দেখছি)
লেখা:
Click This Link
মন্তব্য:
অনেকগুলো কমেন্ট পরলাম এই লেখাটির। কিছু লেখা পরে এত খারাপ লাগলো যে মন্তব্য করতে বাধ্য হলাম।
শুভ লিখেছ, “"বছরের পর বছর বিডিআর এর উপর অর্থনৈতিক অত্যাচার করা হয়েছে”।
" আবেগতারিত হয়ে কথা না বলে তথ্য দাও। বিডিআর জওয়ান দের শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষন আর দায়িত্তের ভিত্তিতে তুলনা কর যে বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য সার্ভিসের কর্মচারীদের তুলনায় তাদের বেতন ভাতা কম কিনা। দেখতে পাবে, তারা অধিকতর সুবিধা পায়। পুলিস বা অন্যান্য বাহিনী এতটা সুবিধা পায় বলে আমার জানা নেই। একমাত্র সেনাবাহিনীর নিয়মিত সৈনিকরাই এর মত বা সামান্য বেশী সুবিধা পেয়ে থাকতে পারে।
আজকাল অনেককেই দেখি এভাবে বলে, “লাথি মারি এমন চাকরীর কপালে”। তাদের জন্য আমার কথা, যদি মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন যে “you deserve more”, তাহলে সেই চাকরি ছেড়ে দিন, “better” কিছু করেন যদি সত্যি তার যোগ্য হয়ে থাকেন। আর নয়ত সন্তুষ্ট থাকুন।
শুভ ইঙ্গিত দিয়েছ, আজকে অফিসারদের জন্য এত কথা হচ্ছে “অভিজাত” হবার কারনে। ভুল কথা।
আমাদের জনগন অভাবী। তাই কেউ যদি অভাবের কথা বলে আন্দোলন করত, তা মানুষের সমর্থন পেত। তা কিন্তু হয়নি, সবাই এখন বিশ্বাস করে, আগে হত্যা করে, পরে সাধারন ক্ষমা আর পালানোর সুযোগ পেতে এসব নিয়ে মিডিয়াতে মানুষের আবেগকে কাজে লাগানো হয়েছে।
আরেকটা কথা বলে রাখি, ঘটনা যদি এমন হতো, অফিসাররা সৈন্যদের হত্যা করতো, আমরা সবাই তখন এই “অভিজাত” দের বিরূদ্ধেই বলতাম।
“এইরকম হাজারো "তিথি" র বাবা বছর বছর বিএসএফ এর গুলিতে মারা গিয়েছে”।
তারা মারা গিয়েছেন দেশের জন্য, যুদ্ধক্ষেত্রে। বীরত্ব আর কাপুরুষতা এক নয়, হত্যা আর যুদ্ধাপরাধ যেমন নয় এক। কয়েক বছর আগে, বিএস এফ হাতে তিন বিডিআর সদস্য নিহত হবার পর তাদের জন্য শোক দিবস পালন করা হয়েছিল, তাদেরকে বীরত্ব্যের সর্বোচ্চ পদক দেয়া হয়েছিল। আজকে যদি দায়ী ব্যাক্তিদের বিচার করে ফাসি দেয়া হয়, কেউ বলবে না, এরা দেশের জন্য মারা গিয়েছেন, বলবে জঘন্য একজন অপরাধীকে বিচার করে জাতি তার দায় মুক্তি পেয়েছে। পার্থক্যটা এখানেই।
“আপনার জন্য শুধুই করুনা”। তুমি উনার অবস্থানে নিজেকে বসাও। করুনার পাশাপাশি কষ্টও পাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।