...গন্তব্যহীন যাত্রায় পথচারীকে সন্ত মনে হয়! ⎝⏠⏝⏠⎠
আমার প্রথম ইস্কুল
‘কেউ যখন তোমাকে জিজ্ঞেস করবে কোন ক্লাসে পড়, তখন উত্তর দিবে ক্লাস-টু। আর যখন জানতে চাইবে কোন শ্রেণিতে পড়, তখন বলবে দ্বিতীয় শ্রেণী। ’ বাবার এই কথাটা আমার সব সময় মনে থাকত। কেউ পড়াশোনার কথা জিজ্ঞেস করলেই ঠিক ঠিক বলে দিতাম, কোন ভুল হত না। বাবাকে এখানে বাবা-ই বল্লাম, যদিও চা বাগানে থাকাকালীন সময়ে আমরা যারা মুসলমান ছিলাম তারা বাবা বলাটা হিন্দুয়ানী মনে করতাম।
তাই মাকে আম্মা ডাকতে হত। কিন্তু টিভি-সিনেমায় যখন দেখতাম সবাই মা-বাবা ডাকে তখন কেমন যেন লাগত। আমার প্রথম স্কুল ছিল হোসেনাবাদ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেউ স্কুলের নাম জানতে চাইলে দাড়ি-কমাসহ বলে দিতাম। হোসেনাবাদ ছিল আমাদের পাশের চা বাগানের নাম।
আর স্কুলটা ছিল সেখানে। তার পরের শব্দটা অর্থাৎ বেসরকারীর কোন অর্থ তখন জানতাম না। স্কুলের সবচেয়ে মজার জিনিস ছিল ঘণ্টার শব্দ! স্কুলে যারা বড় কাসে পড়তো, দেখতাম, তারাই শুধু ঘণ্টা বাজাত। তখন বড় ক্লাসের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ তৈরী হয়। কখন বড় ক্লাসে উঠব, কখন ঘণ্টা বাজাব!
তবে, ঘণ্টার মধ্যে ছুটির সময় যে ঘণ্টাটা পড়ত, সেটাই ছিল বেশী প্রিয়।
তবে, বিরতির সময় (প্রাইমারীতে বলতাম টিফিন আর হাইস্কুলে বলতাম বিরতি) খেলতে ভাল লাগতো। যখন পানির পিপাসায় পেত, তখন হাফ কিলোমিটার দৌড়ে গিয়ে টিউবওয়েলের পানি খেয়ে আসতাম। সবচেয়ে মজা হত বৃহঃস্পতিবারে। সেদিন স্কুলে গান, কুইজ, যেমন খুশি তেমন সাজো ইত্যাদি হত। আমার মনে আছে, একবার গোলাপ নামের বড় কাসের একটা ছেলে ’মা আমি বন্দি কারাগারে’ গানটা গেয়েছিল।
আমার খুব ভাল লেগেছিল। সেই থেকে গোলাপকে দেখলেই আমার গায়ক হতে ইচ্ছে হত। যদিও আমার কখন তা হয়ে ওঠা হয় নি।
‘বিশুদ বারে হাফ, শুক্রবারে মাফ’! যে বৃহঃস্পতিবারে অনুষ্ঠান থাকতো না, আমরা চলে যেতাম চা বাগানের ভেতর আয়েলা (আমলকি) খেতে। আয়েলা খাওয়ার অন্য উদ্দেশ্য ছিল! আয়েলা খেয়ে তার পর পানি খেলে ভীষণ মিষ্টি লাগত।
আমরা সবাই তাই করতাম। মনে আছে, একবার আয়েলা গাছের নিচে হরিণ দেখেছিলাম। ওটাই ছিল সরাসরি আমার দেখা প্রথম হরিণ! এই সুযোগটা হয়েছিল স্কুলের তিন দিকে চা বাগান এবং চা বাগানের গভীরে বাঁশ বাগান থাকার কারণে। দল বেঁধে ৬/৭ জন যেতাম। খুব মজা হত।
সময়ের স্রোতে ছিটকে গেছি সবাই। দিনাজপুরের রায়হান, নোয়াখালির জুয়েল, বরিশালের সেলিম, নন্দরাণীর নিপেন, হোসেনাবাদের ছন্দা কে কোথায় আছে জানি না।
সবাই দলছুট হয়ে গেছে। আর আমিও হয়ে গেছি অন্য কোন দলের একজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।