সাগর সরওয়ার
কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি-১ কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি-২ কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি-৩ কিছুক্ষন পড়ন্ত বিকেলের রোদে দাঁড়িয়ে বিডিআর রিজিওন কমান্ডারের সঙ্গে দেখা না করেই চলে এলাম। ভাবলাম আর একটু দেখা দরকার। আমি নাইক্ষ্যংছড়ির পথে পথে ঘুরছি। এই পথে আমার সঙ্গে মুস্তাফিজ ভাই। একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছেন।
পাহাড়ী পথের এক কোণে একটি চায়ের দোকানে চা খাবো। আমি চায়ের কাপে যে দিকটায় হাতল থাকে সে দিকটা দিয়ে চা খাই! অনেকে আমার চা খাওয়া দেখে হাসে। মুস্তাফিজ ভাই হাসে না। সে জানে এটার আমার কৌশল। বাতাস বইছে ঝির ঝির করে।
একটি ঝিরিতে পানি বয়ে যাচ্ছে কলকল করে। আমি চুরিয়ে যাওয়া আলোতে পানির চলাচল দেখছি। স্বচ্ছ জল খলখলিয়ে হাসছে। আমি সেই হাসির শব্দ পাচ্ছি।
: ভালো আছেন?
অবাক হয়ে তাকালাম যে প্রশ্ন করলো তার দিকে.... দিনের শেষ ভাগের আলোতে আমি তাকালাম তার দিকে....
: তুমি এখানে...
: আমাদের তো এখানেই থাকার কথা ছিল.........!
_________________________________________________
ছুটে চলা মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল লিপি।
লিপি চাকমা। বাঘাইছড়ির আকাশ বেশ নীল। লিপির মা অনেক আগেই মারা গেছে। মা মরা মেয়ের ভাগ্যে জুটেছে সৎ মা।
এক রাতে বাবা দো চোয়ানির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বললো
: লিপি, আমার তো বয়স হচ্ছে।
তোর মাও ছেড়ে চলে গেল। তুইও তো এক সময় চলে যাবি শ্বশুর বাড়ি। আমাকে কে দেখবে বল?
বাবার এই কথার মানে জানে লিপি। লিপিদের অনেক কিছুই জানতে হয়। বুঝতে হয়।
: তুমি কি বিয়ে করতে চাইছো বাবা?
: না মানে ... হ্যা। আমতা আমতা করে বাবা আসল কথাটি বলে দিল।
: আমার কিছুই বলার নেই। তোমার ঘরে আরেক জন আসলে আমার কি বলার আছে।
এরপর এক বিকালে বাবা একজনকে নিয়ে এলো।
বললো এটা তোর ছোট মা। সেই মহিলাটির সঙ্গে খুব খারাপ সর্ম্পক নয় লিপির। আবার খুব ভালোও না।
আজ ছোট মা বাড়িতে নেই। তার বাবার বাড়ি গেছেন।
আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি শাখার ছোট খাট নেত্রী সে। রাজনীতি! রাঙ্গামাটি কলেজ এখন বন্ধ। এই সময়ে সে বাড়িতে এসেছে। সংগঠনের অনেক কাজ তার কাঁধে।
সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যানের। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে নেতারা উড়ে যাচ্ছেন ঢাকায়। শান্তি আলোচনা। থাকছেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা বা মেঘনায়। পত্রিকায় রিপোর্ট আসছে।
দিনের শেষে পত্রিকার থেকে লিপিরা জেনে নিচ্ছে আলোচনার কথা। বিশেষ সূত্রের বরাত দিয়ে ছাঁপানো রিপোর্টগুলো যদি সত্য হয়....... তাহলে এতদিনের আন্দোলনের কি হলো। পূনাঙ্গ স্বায়ত্বশাসিত পার্বত্য চট্টগ্রাম......
আকাশের মেঘ দেখতে দেখতে হঠাৎ লিপির দৃশ্যপটে পরিবর্তন। আচ্ছা এখন নিপুণ কোথায়! নিপুন চাকমা। ওর ভালোবাসার মানুষ।
চট্টগ্রামে থাকার কথা। অনেকদিন দেখা হয় না ।
=============================================
থাম্ লিপি.......
ওদের সঙ্গে তুই সর্ম্পকটাই ভালোবাসার প্রথম কথা। লিপি নিপুণ কে খুব ভালোবাসে। নিপুণও।
কলেজের ফাষ্ট ইয়ারে দুই জনের নিবিড় সর্ম্পক। নিপুণের বাড়িও বাঘাইছড়ি।
লিপি থামে না। সে ছুটে চলে। ছুটে চলা এক নীলকন্ঠি পাখি।
উড়ে বেড়ায় যথন নিপুণ সাথে থাকে। পাহাড়ের এ দিকটায় লোকজন তেমন আসে না। হাটতে হাটতে তারা চলে এসেছে। কথা বলবে। অনেক কথা জমে আছে তাদের মধ্যে।
এক সময় আর দৌঁড়াতে পারে না লিপি। থেমে যায়। তাকে জাপ্টে ধরে নিপুণ......
নিপুণের শরীর থেকে অদ্ভুত এক সুন্দর গন্ধ আসছে। ভালোবাসায় গন্ধ থাকে। সেটা পাচ্ছে সে।
মুখোমুখি বসে পড়লো তারা। লিপির হাত নিপুনের হাতের মধ্যে।
হঠ্যাত এক ঝটকায় বুকের কাছে টেনে নিল লিপিকে নিপুণ। তারপর ... তারপর এগিয়ে গিয়ে আদার মেখে দিল লিপির ঠোটে। লিপির ঠোটটি খুব সুন্দর...!
: এটা কি হলো?
: ভালোবাসা।
: তুই কি করলি।
: ভালোবাসা একে দিলাম।
: তুই কি আর্টিষ্ট নাকি?
: হ্যাঁ, আমি ভালোবাসা আঁকি।
এরপর আরো কথা হলো।
: দেখ লিপি আমাকে যেতে হবে।
: কোথায়
: পিসিপির একটি জরুরি বৈঠক হবে। চট্টগ্রামে। ওরা আমাকে ডেকেছে। প্রসিত দা আর সঞ্চয় দা ও থাকবে। ঢাকা থেকে আরও অনেকে আসছে।
তিন জেলা থেকে তো থাকবেই। জানি না সেখানে কি হবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কথা হবে। যে আলোচনা হচ্ছে , তা আমাদের যে খুব একটা লাভ এনে দেবে না ... তা আমি জানি। এখানে আমি আমার বক্তব্য জানাবো।
সরকার চাইছে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি আঞ্চলিক পরিষদ করতে। ১৯০০ সালের হিল ট্রাক্টস রেগুলেশন অনুসারে পার্বত্য এলাকা একটি বিশেষ এলাকা। সেই রেগুলেশন তো সরকার বাতিল করেনি। আর তা না হলে এ কথা উঠছে কেন। এটা বিশেষ এলাকা।
এর সব কিছুই বিশেষ। প্রয়োজনে আমরা জনসংহতি সমিতির সঙ্গে থাকবো না। আমরা নিজেরাই এগিয়ে যাবো।
========================================
নিপুণ এর কিছু দিন পর ফিরে এসে বাঘাইছড়িতে সভা করলো। জানালো ওরা জনসংহতি সমিতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে থাকবে না।
দুই দল হয়ে গেল এখানে। এরপর ...এরপর ... নিপুণ কোথায় যেন চলে গেল বেশ কিছু দিনের জন্য। এক রাতে এসেছিল লিপির কাছে। এসে বলেছিল....
আমার জন্য অপেক্ষা করিস না।
লিপি সে কথা মানেনি।
লিপিরা অনেক কিছুই মানে না.....
======================================
লিপির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় কল্পনা চাকমার বাড়িতে। নিউ লাইন্যাঘোনায়। বাঘাইছড়ির একটি এলাকা।
চারিদিকে বৃষ্টি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর আমরা গেলাম সেখানে।
হারিযে যাওয়া কল্পনা চাকমাকে খুঁজতে। ব্যর্থ চেষ্টা। যে হারিয়ে যায়, যাকে হারিয়ে ফেলা হয় তাকে কি খুঁজে পাওয়া যায়?
কোখায় কোথায় না তাঁকে খুঁজেছি। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান। ত্রিপুরা আগরতলা...কলকাতা....
আমি তাকে পাইনি।
সেই রাতে আমার গাইড লিপি। পিচ্ছিল পথ। বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এ পাহাড় থেকে ও পাহাড়।
: শুনুন।
পিচ্ছিল পথে চলতে হলে আপনার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের উপর জোড় দেবেন। কাঁদার উপর। দেখবেন আপনি আর পড়ছেন না।
সত্যিই আমি কখনো পিছলে পড়িনি......
( এটি একটি উপন্যাসের অংশ। তবে এতে অনেক ঘটনাই সত্য।
কিছু নাম কারও কারও সঙ্গে মিলে যেতে পারে। এরা সকলেই উপন্যাসের চরিত্র)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।