পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষ
যারা পুকুরে মাছ চাষ করেন। কিংবা করতে চান। বিশেষ করে যারা রুই জাতীয় মাছ চাষ করেন তারা এর পাশাপাশি চিংড়ি চাষও করতে পারেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ মিঠাপানির ছোট-বড় পুকুর-দিঘি রয়েছে। এসব পুকুর-দিঘিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে গলদা চিংড়া চাষ করে তুলনামূলক বার্ষিক উৎপাদন সাম্প্রতিক সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, উন্নত হালকা চাষ পদ্ধতিতে পুকুরে গলদা চিংড়ির একক চাষের চেয়ে রুই জাতীয় মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ অধিকতর লাভজনক।
পুকুরে এক ধরনের চিংড়ি প্রজাতি যেমন শুধু গলদা চিংড়ির চাষ করলে পানির উপরিভাগের ও মধ্যভাগের খাবার অব্যবহৃত থেকে যায়। কেননা চিংড়ি শুধু পুকুরের তলদেশের খাবারই খেয়ে থাকে। এ অব্যবহৃত খাবার পচে পুকুরের পানিতে গ্যাসের সৃষ্টি করে এবং তা চিড়িং চাষে সমূহ বিঘ্ন ঘটায়।
বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, রুই জাতীয় মাছের সঙ্গে চিংড়ির মিশ্র চাষে পুকুরে উৎপাদন বেশী হয়।
চিংড়ি থেকে এককভাবে বিক্রয়লব্ধ অর্থের পরিমাণ অবশিষ্ট মাছ বিক্রি বাবদ কয়েকগুণ বেশি হয়ে থাকে।
রুই জাতীয় মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়িংর মিশ্র চাষ করতে হলে পুকুরের মাটি দোআঁশ, এঁটেল বা বেলে-দোআঁশ এবং আয়তন ২০-৪০ শতাংশ হলেই সবচেয়ে ভালো হয়।
উপরন্তু এ ধরনের মিশ্র চাষের জন্য এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে, যেখানে বছরে অন্তত ৬ থেকে ৭ মাস ৪-৬ ফুট পানি বিদ্যমান থাকে।
যথা নিয়মে পুকুরে চুন ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করতে হবে। হেক্টর প্রতি ৩ ইঞ্চি থেকে ৪ ইঞ্চি আকারের ১২ হাজার গলদা চিংড়ির পোনা ছাড়ার কমপক্ষে ৬-৭ দিন পর হেক্টর প্রতি একই আকারের ৭ হাজার অন্য প্রজাতির মাছের পোনা অর্থাৎ রুই জাতীয় মাছের পোনা পুকুরে মজুদ করে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন লাভ করা যায়।
এ ক্ষেত্রে অন্য প্রজাতির মাছের পোনার অনুপাত হবে কাতল ২৫ শতাংশ, সিলভারকার্প ২০ শতাংশ, রুই ২৫ শতাংশ এবং থাই সরপুঁটি ৩০ শতাংশ।
চিংড়ি ও মাছের দৈহিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ফিশমিল, চালের কুঁড়া, গামের ভুসি ও সরিষার খৈল যথাক্রমে ১:৪:২:৩ অনুপাতে মিশ্রিত করে মজুদকৃত চিংড়ি ও মাছের মোট ওজনের শতকরা ৩-৪ ভাগ হারে প্রতিদিন পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
উপরন্তু ভিন্নভাবে তৈরি খাবার, যেমন শামুক-ঝিনুকের টুকরা মাংস এবং গরু ও খাসির রক্ত রোদে শুকিয়ে সম্পূরক খাদ্য হিসেবে চিংড়িকে খাওয়ানো যেতে পারে।
পুকুরে গলদা চিংড়ির রোগবালাই কদাচিৎ লক্ষ্য করা যায়। চিংড়ি অনেক সময় পরজীব্য দ্বারা আক্রান্ত হয়।
এমতাবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে সেচযন্ত্রের সাহায্যে পুকুরের অন্তত ৩ ভাগের এক ভাগ পানি সরিয়ে নতুন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চিংড়ির পুকুরে রোগবালাই প্রতিরোধকল্পে পুকুরের পানির গুণগতমান বজায় রাখা, অধিকসংখ্যক পোনা মজুদ না করা, পানি নষ্ট হলে শিগগিরই পরিবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উন্নতমানের খাবার সরবরাহ ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা একান্তই অপরিহার্য।
উপরোক্ত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হলে ৬ থেকে ৭ মাসে এক একটি চিংড়ি ৫০-৬০ গ্রাম ওজনে উন্নীত হয়ে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।