ধর্মীয় ব্যাপারে লেখতে ভয় লাগে। তার পরও আমার বিবেক বলে তুমি যা জানো তা অপরকে জানানো উচিৎ। তাই বিবেকের তাড়নায় এরকম সাহস করলাম। গঠন মূলক সমালোচনা সাদরে গৃহীত হবে ইনশআল্লাহ।
আমাদের এই উপমহাদেশে এক শ্রেনীর ধার্মীক আছে যাদের যুক্তির চেয়ে অন্ধ বিশ্বাসের প্রতি মোহ বেশি।
এই মোহাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা ধর্মের মূল স্পিরিট কে বাদ দিয়ে বাহ্যিক কিছু আচার আচরণ নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকে। আপনি যদি তাদেরকে ধর্ম বিয়য়ে কিছু বলতে চান তবে তারা আগে দেখবে আপনার দাড়ি আছে নাকি , তার পর দেখবে আপনি আলখেল্লা পড়েছেন কিনা ইত্যাদি। যদি এগুলি না থাকে তবে সে আপনাকে উপহাসের সাথে বিবেচনা করবে আর মনে মনে ভাবে এই ব্যাটা আর ইসলামের কি জানে? এদের কাছে বাহ্যিক বেশভূষাই মুখ্য বিষয়।
আমি বিশ্বধর্ম শিক্ষার এক শিক্ষার্থী মাত্র। এ পর্যন্ত ধর্ম বিষয়ে যতটুকু পড়াশুনা করেছি তাতে আমি বুঝতে পেরেছি যে ধর্মের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানব সেবা।
মানুষের কল্যানের জন্যই ধর্মের আবির্ভাব। এই নিবন্ধে আমি শুধু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলার চেষ্টা করব। অন্যন্য ধর্ম সম্পর্কেও পরে আলোচনা করবো ইনশআল্লাহ।
ইসলাম অর্থ শান্তি। পৃথিবীতে এই শান্তি প্রতিষ্ঠা কল্পে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন।
মানুষ যখন অধপতনের সর্বোনিম্ন পর্যায়ে উপনিত হয়েছে তখই নবী রাসূলের আগমন ঘটেছে। এতে কোন কোন নবী- রাসূল সফল হয়েছেন আর যেসব জাতি আল্লাহ পথে আসেনি তারা তাদের পাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধ্বংস হয়েছে।
হযরাত ইসা (আ) এর যুগ শেষ হওয়ার বহুকাল পর্যন্ত পৃথিবীতে কোন নবীর আগমন ঘটেনি। এতে মানুষ ধীরে ধীরে ইসা (আ) এর শিক্ষা ভূলে যেয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়। আরব জাতি চরম অমানবিক কাজ কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আর্বিভাব ঘটে। মহানবী (সা) এর উপর আল্লাহ যে প্রথম ওহী নাজীল করেন তা হলো, ‘ পড়’। এই মহান বানীর মাধ্যমে শুরু হয় সমাজ পরিবর্তনের ধারা। এর পর আল্লাহ সেই পাপে নিমজ্জিত জাতিকে আলোর পথে আনতে প্রথম দিকে নাজিল করেন তাওহীদ,আখেরাত, সম্পর্কিত আয়াত। মানুষের মনে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারনা সুষ্টি করাই মহনবীর (স) এর প্রথম দিকের মিশন ছিল।
আস্তে আস্তে যখন মানুষ ইসলামের মূল ধারণা লাভ করা শুরু করলো তখন নবী (স) নজর দিলেন ছোট ছোট পাপ বিষয়ে সতর্ক করা। এভাবে ক্রমে ক্রমে একটা জাতিকে সঠিক পথে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন হযরাত মুহাম্মদ (সা).
এখানে পুরো ইতিহাস বা রেফারেন্স দেওয়া সমীচিন মনে করলাম না। আমি শুধু আমার ধারণাটা ব্যক্ত করলাম।
এই ক্রম বিবর্তনের ইতিহাস পড়ে আমি একটা ব্যপার লক্ষ করলাম যে কোন কিছু (মদ, সুদ,জুয়া ইত্যাদি) আল্লাহ হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করেননি । ক্রমে ক্রমে নিষিদ্ধ করছেন।
যেমন মদ নিষিদ্ধি হওয়ার ক্রম ধারাটা হলো ১. প্রথমে মদের ভালো মন্দ দিকটা মানুষকে অবহিত করা, আল্লাহ মন্তব্য করলেন যে মদে ভালোর চেয়ে মন্দ দিক বেশি।
২. দ্বিতীয় ধাপে আল্লাহ বললেন যে তোমরা মদপান করে নামাজের ধারে কাছে যেওনা। কারণ হিসেবে বলা হলো মদ পান অবস্থায় মানুষ মাতল হয়ে ভূল কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে।
৩ .তৃতীয় ধাপে আল্লাহ পুরোপুরি মদ নিষিদ্ধ করলেন। ততো দিনে মানুষ ইসলামের অন্যান্য আকর্ষনীয় জিনিষ সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন।
আল্লাহ বুঝতে পেরেছিলেন যে এই অবস্থায় মদ নিষিদ্ধ করলে মানুষ মেনে নেবে। তাই ঘটলো। সবাই মদ ছেড়ে দিলেন। সে সময় মদ একটা কমন বস্তু ছিল পান করার। এখন যেমন অমুসলিম দেশে চলে।
এর পর দেখা যায় যে নামাজের ব্যপারটাও হঠাৎ করে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ হয়নি। নবুওতের কিছুদিন পর নামজ ফরজ হয়।
লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে লেখাটা শুরু করেছিরাম সে দিকে এবার মন দেওয়া যাক। আমি কুরআন বহুবার অধ্যয়ন করে দেখেছিে যে সেখানে বাহ্যিক পোশাক- পরিচ্ছদ সম্পর্কে কদাচিৎ বলা আছে।
পোষাকের মূল দুটি লক্ষ কুরআন থেকে বোঝা যায়। একটি হলো লজ্জাস্থান আবৃতকরণ এবং আরেকটি হলো সৌন্দর্য্য। সূরা আরাফে পোষাক সম্পর্কিত আয়াতটি হলো“
“O Children of Adam! Indeed We have bestowed upon you from on high ( the knowledge of making) garments to cover your nakedness, and as a think of beauty, ...( 7.26, From Md. Asad)
আমি বির্তক এড়াতে বাংলাদশেী অনুবাদ বাদ দিয়ে শ্রদ্ধেয় মুহাম্মদ আসাদ ( লিওপোল্ড লুইস) এর অনূদিত কুরআন থেকে উদ্ধৃতি দিলাম।
এখানে পাঠক স্পষ্ট লক্ষ করবেন যে পোষাকের দুটি দিককেই আল্লাহ তুলে ধরেছেন। আমরা যদি আমাদের সংস্কৃতি পরিমন্ডলের মধ্যকার এমন পোষাক পরিধান করি যাতে কুরাআনের বর্ণিত দুটি শর্তকে পূরণ করে তবে ত আমাদের মোল্লা মওলানাদের কিছু বলার থাকে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের বেশির ভাগ মওলানা নামধারীরা কুরআনের ধারের কাছেও যান না। তারা কিছু ফাযায়েলে আমল বা মুরুব্বিদের নিকট থেকে কিছু শোনা কথার উপর ভিত্তি করে পোষাক সম্পর্কে আমাদের মনে অহেতুক ভীতির সৃষ্টি করেন। তাদের মতে জিন্স প্যান্ট বা গেঞ্জি অনৈসলামিক। আর কেউ কেউ সরাসরি অনৈসলামিক না বললেও মাকরুহ বলতে দ্বিধা করেণ না।
এবার বলি দাড়ির কথা।
কুরআনে কোথাও একটি বারের জন্যও দাড়ি রাখাতো দূরে থাক তার গুনগানও করা হয় নি। যেই বিষয় নিয়ে আল্লাহ কোন আয়াত নাজিলের প্রয়োজন মনে করলেন না , আমাদের সমাজের হাজারো সমস্যার কথা বাদ দিয়ে আমরা সেরকম একটি বিষয় নিয়ে তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়লাম।
আমার কাছে ইসলাম সম্পর্কে অধ্যায়নের পর মনে হয়েছে যে দাড়ি টুপি বা আলখেল্লার বাস্তবায়নের জন্য ইসলামের আগমন ঘটেনি। মানুষের মানবিক বৈশিষ্ঠাবলীর উৎর্কষ সাধনের মহান ব্রত নিয়ে ইসলামের আগমন। এই ব্রত পালন কালে যার ইচ্ছে দাড়ি রাখবে বা ছোট করবে আর যার ইচ্ছে সে রাখবে না।
যার ইচ্ছে সে পাঞ্জাবী পরবে আর যার জিন্স -গেঞ্জি পড়তে ইচ্ছে সে তা পরবে। এতা আমাদের সময় নষ্ট করা উচিৎ না। (নারীদের পোষাকের ব্যাপারে সূরা নিছা সহ আরো কয়েকটি স্থানে র্বননা আছে। ( ইউসূফ আল কারজাভীর ‘ইসলামের হালাল হারামের বিধান’ বইতে বিস্তারিত বর্ননা আছে)
বায়তুল মোকরমে যে কান্ডটা গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ ঘটছে এতে আমাদের সরকার যেমন দায়ী তেমনি আমাদের কিছু অল্প জ্ঞানী মুসল্লীরাও দায়ী।
সরকারের উচিৎ ছিল ভারপ্রাপ্ত খতিবকে নিয়োগ দেওয়া ।
যার পেছনে সব দলের লোকই অনেক দিন যাবৎ নামাজ আদায় করে আসছে কোন রূপ বির্তক ছাড়াই। আর মুসল্লীদের উচিৎ ছিল পবিত্র স্থানের মর্যাদা সমুন্নিত রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানো এবং পরবর্তীতে আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।