বুকে পিঠে বিভিন্ন কথা বার্তা লেখা টি শার্টগুলো দেখেছেন? আজিজ মার্কেট থেকেই বোধ হয় উদয় হয়েছিল বাংলাদেশে।
তারপর ক্যাম্পাস ঘুরে রাজধানির সিমানা ছাড়িয়ে পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে সারা বাংলাদেশেই এখন বার্তা ঝোলানো টি শার্টের ছড়াছড়ি।
আর শুধু টি শার্টই বা কেন, ফতুয়া, পানজাবি, শার্ট, প্যান্ট এমনকি শাড়িতেও চলছে সমানে। (২০০১ এর নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রির শাদা শাড়ি জুড়ে ছিল নৌকা প্রতিক আর বিভিন্ন কথাবার্তা)
আচমকা সামনের লোকটির পিঠে ঢাকা মেট্রো ঘ ১৪০০ লেখা দেখে ভিমরি খাওয়ার ইতিহাস খুব বেশি দিন আগের না।
কিন্তু এখন! স্পষ্ট-অস্পষ্ট, একক-যৌগিক, জটিল-সরল, বক্তব্য-প্রতিবাদ, কবিতা-ঐতিহ্য, কত রকম কিছু দেখেও আর অবাক হওয়া হয়ে ওঠেনা।
এইতো, কদিন আগে একজনের টি শার্টের পেছনে লেখা দেখি-
হাট টিমা টিম পসিবল
ঘোড়ার মাথায় শিং পসিবল
যুদ্ধপরাধির বিচার?
সম্ভবত, ইমপসিবল
কি সুন্দর অহিংস্র কিন্তু জোরালো প্রতিবাদ।
প্রসঙ্গে আসি। সম্ভবত তিরানব্বুই-এ। তখনও বুকে পিঠে লেখার সংস্কৃতি শুরু হয়নি, বা হলেও মফস্বলে যায়নি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমার দু' ভাইএর সুবাদে আমরা সেই মফস্বলেই কিছুটা ঢাকাইয়া সভ্যতার সাথে পরিচিত থাকতাম।
ঈদে অন্যরা যখন পেছনে পান পাতার ছাঁপ ওয়ালা পানজাবি পড়ে ঈদ মাঠে যেত, ভাইয়াদের কল্যাণে আমরা তখন পেতাম ফেব্রিক্স কালার দিয়ে হাতে আল্পনা করা অন্য ধরণের পানজাবি। আমার বড় ভাইয়া এই সব আঁকা আঁকিতে ওস্তাদ ছিল।
সেকালের এক গরমের দিনে, মনে আছে শিমুল গাছগুলো সব লাল ছিল, ভাইয়া একটা সাদা টি শার্ট দিল যার সামনে খাঁটি বাংলায় বড় বড় করে লেখা ছিল রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচাও আর পেছনে ইংরেজিতে লেখা ছিল স্টপ জেনোসাইড ইন প্যালেস্টাইন।
জেনোসাইড এর বাংলা না জানা থাকায় ইংরেজি বক্তব্য নিয়ে কেউ উচ্চ বাচ্য না করলেও বাংলায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচাও লেখা দেখে তখনকার কিছু বুঝনদার কলেজ পড়ুয়া, যাদের সাথে মাঠে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতাম, তাদের ব্যাপক হাসাহাসির পাত্র হয়ে গিয়েছিলাম। তাদের বা কিসের ত্রুটি, ওখানে কেই-বা এই সংস্কৃতির সাথে পরিচিত ছিল।
তবুও ওটা একটা নির্ভেজাল প্রতিবাদি টি শার্ট-ই ছিল।
ইসরায়েলি নরপশুদের রক্ত পিপাসা মেটেনি কখনওই। বিরতি দিয়েছে যখন রক্ত পান করে করে ক্লান্ত। আবার যখনই পিপাসা পেয়েছে, হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছে অস্তিত্বের সংগ্রামে লড়তে থাকা ফিলিস্তিনিদের উপর। জাতি সংঘ না কি এক ঘোড়ার ডিম, তারপর মানবাধিকার, হাবিজাবি সবই এখানে শুধুই কথার কথা।
আর আমরাও আছি সেই তিরানব্বুই এর যুগেই। কর্পোরেট দুনিয়ার বানিজ্যময় যুগে আমাদের আবেগকে নিয়ে যথারিতি আবার ব্যবসা।
এখনও টি শার্ট পরছি, মাথায় ব্যান্ড বাঁধছি, পিটিশন সিগনেচার করছি, অমুক পন্য তমুক পন্য সাময়িক বর্জনের ডাক দিচ্ছি। চামে চিকনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি পন্য ব্যবসা করে লাল হয়ে সেই লভ্যংশ পাঠাচ্ছে হামাসের সম্ভাব্য হামলার ভয়ে বিপন্ন ইসরায়েলি শিশুর ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে।
রিফাত হাসানের কথাই আসলে সত্য।
আমরা কেউই আসলে রেডিক্যল হতে পারিনা, সুবিধামত এক্টিভিস্ট হওয়াটা অনেক সহজ।
হ্যাঁ, আর আমরা ব্লগে লিখছি অক্ষমের মত।
কিন্তু কি লাভ এতে, এটাতো এখন প্রমাণিত- মসি নয়, অসিই শক্তিশালি।
ঘুরে ঘুরে সারা দিন শুধু মুনতাজার আল জায়দি'র জুতাটা চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।