আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে...
দেশে কাজের অভাব, মানুষগুলো তাই ভাগ্য গড়ার আশায় বঙ্গোপসাগর ধরে রওনা হয়েছিলেন মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। উত্তাল সাগরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে দিয়ে প্রতারক দালাল সটকে পড়ে। বেঁচে যাওয়াদের একজন মহম্মদ সোয়েবের মুখে শুনুন পরের কাহিনী- "তাঁরা ভাসতে ভাসতে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমানায় ঢুকে পড়েন। তখন থাই নৌবাহিনীর একটি জাহাজ তাঁদের আটক করে। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন দ্বীপের ক্যাম্পে।
সেখানে ১৫ দিন আটক রাখার পর তাঁদের ছয়টি নৌকা ফেরত না দিয়ে ২৫ মিটার লম্বা একটি নৌকার মধ্যে সবাইকে গাদাগাদি করে উঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের দেওয়া হয়েছিল একটি প্লাস্টিকের চাদর আর কিছু খাবার। সেই নৌকা থেকে ইঞ্জিন খুলে নেওয়া হয়। একটি থাই নৌজাহাজ প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে টেনে নিয়ে মাঝ সমুদ্রে তাঁদের নৌকাটি ছেড়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ উদ্দেশ্যহীনভাবে সাগরে ভেসে বেড়ান চার শতাধিক বাংলাদেশি।
স্রোতের টানে এক সময় তাঁরা ভাসতে ভাসতে চলে আসেন ভারতের সমুদ্রসীমানায়। আন্দামানের কাছে একটি বাতিঘর দেখতে পেয়ে তাঁরা ভেবেছিলেন উপকুলের কাছাকাছি এসে গেছেন। তাই প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁরা একে একে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। "
এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশী বলেই থাই নৌবাহিনী এই নিষ্ঠুর কাজটি করতে পারলো। পশ্চিমের কথা বাদ দিলাম, মালয়েশিয়া হোক কিংবা সিঙ্গাপুরের, এমনকি যদি হতো পাকিস্তানের নাগরিকও - থাইল্যান্ড নৌবাহিনীর এই সাহস কখনোই হতো না।
শালার বাংলাদেশের মানুষের জীবন যেন সামান্য পিঁপড়ার জীবন। ৪০০ মানুষভর্তি একটি নৌকা জাহাজের পিছনে বেঁধে ১৮ ঘন্টা ধরে সাগরে টেনে নিয়ে যাওয়া, হোক তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, এই সভ্য যুগে কিভাবে সম্ভব? নৌকার ইঞ্জিন খুলে অসহায় মানুষগুলোকে মাঝ সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
ভারতীয় নৌবাহিনী চাইলে পাশ কেটে যেতে পারতো। তাদের কোনো দায়ও ছিল না। কিন্তু তারা একটি জীবন বাঁচানোর সর্বাত্মক লড়াই করেছে।
এখনো তারা বঙ্গোপসাগর চষে বেড়াচ্ছে হতভাগ্য বাংলাদেশীদের খোঁজে। কৃতজ্ঞতা জানানোর উদারতা কম বাংলাদেশের মানুষের। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন মানুষ মারা গেলে এতোক্ষণে পঞ্চম নৌবহর এসে থাইল্যান্ড উপকূলে অবস্থান নিতো। ভারত হলে মুম্বাই-কলকাতা-নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ হতো।
এমনকি পাকিস্তানও যদি হতো, ছেড়ে কথা বলতো না। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ, তৃতীয় বিশ্বেরও তৃতীয়, চার যুগ পার হতে চললেও আত্মসম্মানবোধ জন্মেনি। আর আমরা তো বাংলাদেশের মানুষই! তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম-রাজশাহী খুলনায় এ বর্বরতার ঘটনায় একটি বিক্ষোভ হয়নি, হবেও না।
সম্ভব হলে কোনো বান্দা অনলাইনে একটি পিটিশন খোলার ব্যবস্থা করেন। সেই পিটিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ থাই কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর একটা উপায় খুঁজে বের করি চলুন।
তাতে হয়তো কাজ কিছুই হবে না, কিন্তু একটা চিহ্ন তো থাকলো।
গত বুধবারের সেই সংবাদের পুরোটা-
নিখোঁজ বাংলাদেশিদের সন্ধানে সাগরে উদ্ধার অভিযান চলছে
কলকাতা প্রতিনিধি
বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ তিন শতাধিক বাংলাদেশির সন্ধানে এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। উপকুল রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে নেমেছে ভারতের নৌবাহিনীও। গতকাল মঙ্গলবার একটি হেলিকপ্টার ও চারটি জাহাজের সাহায্যে সমুদ্রে অভিযান চালানো হয়।
এখন পর্যন্ত ১০৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ১৭ জন দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা সাঁতরে তীরে এসে উঠেছিলেন। বাকি ৮৮ জনকে উদ্ধার করা হয় সমুদ্র থেকে। লিটল আন্দামানের কাছে কয়েকজনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিন শতাধিক বাংলাদেশি এখনো নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাঁরা সবাই সাগরে ডুবে মারা গেছেন।
উদ্ধারকৃতরা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আন্দামানের পুলিশ প্রশাসন মানবিক কারণে তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেপ্তার না করে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
বেঁচে যাওয়াদের একজন মহম্মদ সোয়েব পুলিশকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কাজ পাওয়ার আশায় দালালদের টাকা দিয়েছিলেন তিনি ও তাঁর মতো চার শতাধিক বাংলাদেশি। প্রায় দুই মাস আগে মাঝ সমুদ্রে তাঁদের ছয়টি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে দালালেরা সটকে পড়ে। তাঁরা ভাসতে ভাসতে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমানায় ঢুকে পড়েন।
তখন থাই নৌবাহিনীর একটি জাহাজ তাঁদের আটক করে। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় একটি নির্জন দ্বীপের ক্যাম্পে। সেখানে ১৫ দিন আটক রাখার পর তাঁদের ছয়টি নৌকা ফেরত না দিয়ে ২৫ মিটার লম্বা একটি নৌকার মধ্যে সবাইকে গাদাগাদি করে উঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের দেওয়া হয়েছিল একটি প্লাস্টিকের চাদর আর কিছু খাবার। সেই নৌকা থেকে ইঞ্জিন খুলে নেওয়া হয়।
একটি থাই নৌজাহাজ প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে টেনে নিয়ে মাঝ সমুদ্রে তাঁদের নৌকাটি ছেড়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ উদ্দেশ্যহীনভাবে সাগরে ভেসে বেড়ান চার শতাধিক বাংলাদেশি। স্রোতের টানে এক সময় তাঁরা ভাসতে ভাসতে চলে আসেন ভারতের সমুদ্রসীমানায়। আন্দামানের কাছে একটি বাতিঘর দেখতে পেয়ে তাঁরা ভেবেছিলেন উপকুলের কাছাকাছি এসে গেছেন। তাই প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁরা একে একে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
প্রথম আলো, ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।