আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাসিরউদ্দিন হোজ্জার জোকস্ কালেকশন

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience

হোজ্জা ও তুর্কির ষাঁড় এক তুর্কির ষাঁড় হোজ্জার বাগানের বেড়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিয়ে মালিকের কাছে ফিরে গেল। হোজ্জা পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করলেন, তারপর একটা বেত নিয়ে বেরিয়ে এসে ষাঁড়টাকে পেটাতে শুরু করলেন। ‘কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন!’ তুর্কি চেঁচিয়ে বলল। ‘কিছু মনে করবেন না আপনি’, হোজ্জা বললেন, ‘ও পুরো ব্যাপারটা জানে। এটা ওর আর আমার ব্যাপার!’ বাজপাখি ও হোজ্জা একদিন হোজ্জা বাজার থেকে কলিজা কিনে বাসায় যাচ্ছিলেন।

এদিকে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে কলিজার পাই বানানোর রেসিপি দিয়েছিলেন, যাতে বাসায় গিয়ে কলিজার পাই রান্না করতে পারেন। কিন্তু হঠাৎ একটি বাজপাখি উড়ে এসে কলিজা ছিনিয়ে নিয়ে একেবারে নাগালের বাইরে উড়ে চলে গেল। ‘বোকা কোথাকার!’ চেঁচিয়ে হোজ্জা বললেন, ‘কলিজা নিয়ে গেছ ঠিক আছে, কিন্তু প্রস্তুত প্রণালী (রেসিপি )তো আমার কাছে!’ কুর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম একরাতে হোজ্জার প্রতিবেশী হোজ্জার বাসা থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেল। পরদিন সকালে তাদের দেখা হলে প্রতিবেশী হোজ্জাকে জিজ্ঞাস করলেন। ‘ভাই সাহেব, গতকাল আপনার বাসা থেকে ভারী কিছু পতনের শব্দ শুনলাম, কি হয়েছে?’ ‘আর বলবেননা, কালকে আমার বিবি রাগ করে আমার কুর্তা উপর থেকে নীচে ফেলে দেয়’।

‘কুর্তা ফেলে দিলে এত শব্দ হয়’। প্রতিবেশী অবাক। ‘কুর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জার ত্বরিত উত্তর। হোজ্জার চিঠি পড়া একবার এক লোক হোজ্জার কাছে একটা চিঠি নিয়ে এসে পড়ে দেওয়ার অনুরোধ করল। হোজ্জা পড়ার চেষ্টা করে বিফল হয়ে বলল, ‘লেখাটা দুষ্পাঠ্য তাই পড়া যাইতেছেনা।

’ লোকটা খেপে গিয়ে বলল, ‘একটা সাধারণ চিঠি পড়তে পারনা আবার মাথায় পাগড়ি পরছ’। হোজ্জা তাড়াতাড়ি নিজের পাগড়ি খুলে লোকটার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলল, ‘এইযে এখন তোমার মাথায় পাগড়ি আছে, এইবার তুমি দেখোতো চিঠিটা পড়তে পারো কীনা?’ হোজ্জার বাজি জেতা একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা অসুস্থ। নিজের গাধাটাকে খাওয়ানোর জন্য বিবিকে বললেন। হোজ্জার বিবি একটু ত্যাদড় টাইপের। সে গাধা কে খাবার দিতে অস্বীকার করল।

দুজনের মধ্যে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া। তারপর একটা সমঝোতা হল, যে আগে কথা বলবে সে গাধাকে খাওয়াবে। হোজ্জা বাজিতে জেতার ব্যপারে ডিটারমাইন্ড ছিল। সেইদিনই, হোজ্জার বিবি বাইরে গেছে, খালি বাসা দেখে একটা চোর ঘরে ঢুকল। হোজ্জা বাসায় ছিল, কিন্তু বাজিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে চোরকে কিছু বলল না।

চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে গেল। হোজ্জার স্ত্রী বাসায় ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি, চিৎকার দিয়ে বলল, ‘হায় আল্লা! কি হইছে?’ হোজ্জা খুশিতে লাফিয়ে উঠল, ‘আমি জিতছি বাজিতে, এখন তোমারেই গাধাকে খাওয়ান লাগবে’। অতিথিপরায়ণ হোজ্জা একদিন এক চায়ের স্টলে হোজ্জা সবাইকে বললেন, ‘আমি একজন অতিথিপরায়ণ ব্যক্তি। ’ ‘বেশ, তাহলে আজ দুপুরে আমাদের সবাইকে খাওয়ান’, সবচেয়ে চতুরজন কথাটা বলল। হোজ্জা তাদের নিয়ে নিজ বাসার দিকে রওনা দিলেন।

বাড়ির কাছে এসে হোজ্জা বললেন, ‘আমি আগে আগে বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে বলি আর তোমরা আসতে থাকো। ’ খবরটা শোনার পর স্ত্রী রেগে আগুন, ‘ঘরে কোনো খাবার নেই, ওদের ফিরে যেতে বলো। ’ ‘তা পারব না, আমি যে অতিথিপরায়ণ, তার একটা সুনাম আছে। ’ ‘বেশ, তাহলে তুমি ওপরের তলায় গিয়ে বসো; আমি ওদের বলছি তুমি বেরিয়ে গেছ, বাড়িতে নেই। ’ এক ঘণ্টা পর অতিথিরা এসে দরজায় ধাক্কা দিল আর বলতে লাগল, ‘আমাদের ভেতরে ঢুকতে দাও হোজ্জা।

’ হোজ্জার স্ত্রী দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। ‘হোজ্জা তো বাড়ি নেই। ’ ‘সেকি আমরা তো তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি আর দরজার দিকে লক্ষ রেখেছি তার ঢোকার পর থেকে। বের তো হয়নি। ’ স্ত্রী চুপ করে গেলেন।

ওপরতলার জানালা দিয়ে হোজ্জা পুরোটাই দেখছিলেন। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জানালা দিয়ে ঝুঁকে বললেন, ‘আমি কি পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে যেতে পারি না?’ বিবি তোমার কথাই ঠিক নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে।

হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’। এইবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার দুইটা কথা ছিল’। হোজ্জা বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি তোমার বক্তব্য বল’। আসামির বক্তব্যও মনযোগ দিয়া শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।

হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক অথবা ফরিয়াদির কথা ঠিক’। হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক’। কেমন জব্দ! একদিন হোজ্জা তার প্রিয় গাধার পিঠে লবণ বোঝাই করে বাজারের দিকে রওনা দিলেন। পথে একটা নদী পড়ল।

গাধাসহ নদী পার হলেন। কিন্তু নদীর পানিতে লবণ গলে একাকার। পণ্য হারিয়ে হোজ্জা বিরক্ত। গাধা তো মহা খুশি বোঝা থেকে বেঁচে গিয়ে। এর পরেরবারও হোজ্জা ওই পথ দিয়ে গেলেন, তবে এবার তুলা বোঝাই করে।

গাধা যখন নদী পার হলো তখন তুলা ভিজে ওজন বেড়ে গেল। গাধা ওজনদার মাল নিয়ে টলমল পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল। ‘হাহ্!’ হোজ্জা চেঁচিয়ে বললেন, “কেমন জব্দ! ভেবেছিলি প্রতিবার পানি দিয়ে গেলে পিঠের ওপরের মালের ওজন কমে যাবে, তাই না?” ১ কোন অভিযোগ নাই বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একটা গরু কিনল। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো। প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে: “হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে” পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।

প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যুতে দুঃখিত ও হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে বলল: “কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!” ২ অশুভ রাজার মেজাজ খারাপ। রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জা সামনে পড়ে গেলেন। ‘শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য খারাপ’, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন রাজা। ‘আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-চাবুকপেটা করে ওকে পথ থেকে সরিয়ে দাও। ’ প্রহরীরা তা-ই করল।

শিকার কিন্তু ভালোই হলো। রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন। ‘আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা। ভেবেছিলাম তুমি অশুভ। কিন্তু তুমি তা নও।

’ ‘আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!’ হোজ্জা বললেন। ‘আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করেছেন। আর আমি আপনাকে দেখে চাবুকপেটা খেয়েছি। কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না। ’ ৩ দৌড় ‘আমি যখন মরুভূমিতে গিয়েছিলাম তখন আমার কারণে একটি বেদুইন গোষ্ঠী দৌড়ের ওপর ছিল।

’ একদিন হোজ্জা বললেন সবাইকে গর্বের সঙ্গে। ‘কিন্তু কীভাবে?’ ‘একেবারে সহজ। হঠাৎ ওদের সামনে দিয়ে যেই দৌড় লাগিয়েছি, অমনি পুরো দলটা আমার পিছু পিছু দৌড় লাগাল, ব্যাস। ’ ৪ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার এক সন্ধ্যায় হোজ্জা হঠাৎ দেখতে পেলেন একদল ঘোড়সওয়ার তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। তিনি দিব্যদৃষ্টিতে যেন দেখতে পেলেন তাঁকে ধরে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে কিংবা সেনাবাহিনীতে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হোজ্জা লাফ দিয়ে দেয়াল টপকে গোরস্থানে গিয়ে একটা খালি কবর দেখে শুয়ে পড়লেন। তার আচরণে কৌতূহলী হয়ে ঘোড়সওয়াররা গোরস্থানে ঢুকে পড়ল। দেখল হোজ্জা একটা খালি কবরে শক্ত কাঠ হয়ে শুয়ে আছে। ‘কবরের ভেতর কী করছেন আপনি? আমরা কি সাহায্য করতে পারি?’ ‘প্রশ্ন করেছেন বলেই সব প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব দেওয়া যায় না’, হোজ্জা বললেন। ‘পুরো ব্যাপারটা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে।

যদি বলি আপনাদের জন্য আমার এখানে আসা আর আমার জন্যই আপনাদের এখানে আসা-তাহলে কি কিছু বুঝবেন?’ ৫ সে ভালো বোধ করছে একদিন হোজ্জার স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসক ডাকতে বলেন। হোজ্জা তাঁর স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি ছুটে গেলেন চিকিৎসক ডেকে আনার জন্য। কিন্তু রাস্তার দিকের জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী জানালা দিয়ে গলা বের করে চেঁচিয়ে বললেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ! ব্যথাটা চলে গেছে, চিকিৎসকের দরকার নেই। ’ হোজ্জা স্ত্রীর কথা শুনলেন এবং চিকিৎসকের বাড়ির দিকে দৌড়ে গেলেন।

বললেন, ‘ডাক্তার, আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ ছিল এবং আপনাকে ডেকে আনার জন্য বলেছিল। কিন্তু আপনাকে ডেকে আনতে বের হওয়ার সময় বলল সে সুস্থ বোধ করছে, আপনাকে ডাকার দরকার নেই। তাই আপনাকে পুরো ব্যাপারটা বলতে এলাম এই জন্য যে তাকে দেখতে আসতে হবে না। ’ ৬ আজকে সপ্তাহের কোন দিন হোজ্জাকে একদিন একজন রাস্তায় থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আজকে সপ্তাহের কোন দিন?’ ‘বলতে পারব না’, জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমি এই এলাকায় নতুন। জানি না এখানকার মানুষেরা সপ্তাহের কোন দিনটি মেনে চলে।

’ ৭ চোরাচালান গাধার পিঠে চেপে হোজ্জা প্রায়ই ইরান, গ্রিস চলে যান। প্রতিবারই গাধার পিঠে দুই বোঝা খড় চাপিয়ে নিয়ে যেতেন এবং ফিরে আসতেন পায়ে হেঁটে। প্রতিবার তাঁকে তল্লাশি করা হতো বেআইনি সামগ্রীর খোঁজে। কিছুই পাওয়া যেত না। ‘কী নিয়ে যান আপনি, হোজ্জা?’ ‘আমি একজন চোরাচালানি।

’ কয়েক বছর পর হোজ্জার অবস্থা আরও রমরমা। মিসরের উদ্দেশে রওনা দিলেন। সেখানে একদিন এক সীমান্তরক্ষী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। ‘বলুন হোজ্জা, কী করে গ্রিস ও ইরানের আইন ফাঁকি দিয়ে গেলেন আর এখানেও বেশ ভালোই আছেন, কী চোরাচালান করতেন যে কখনোই ধরা যেত না?’ ‘গাধা। ’ ৮ চেষ্টা একদিন এক গার্ড দেখল হোজ্জা তাঁর শোয়ার ঘরের জানালা খুলে বেরিয়ে আসতে চাইছেন।

তখন ছিল গভীর রাত। ‘কী করছেন আপনি হোজ্জা? এভাবে বাইরে আসতে চাইছেন কেন?’ ‘হিসস..! ওরা বলে আমি নাকি ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁটি। সেটা দেখার জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’ ৯ বাঘ তাড়াতে একদিন হোজ্জা তাঁর বাড়ির চারপাশে শুকনো খাবারের টুকরো ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। ‘কী করছেন হোজ্জা?’ একজন জিজ্ঞেস করল।

‘বাঘকে দূরে সরিয়ে রাখছি। ’ ‘কিন্তু এ এলাকায় কোনো বাঘ তো নেই। ’ ‘ঠিক বলেছ, খুবই কার্যকর পদ্ধতি, তাই না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।