আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছামৃত্যু



ইউসুফ আলমগীর ইচ্ছামৃত্যু দুপুর গড়িয়ে গেছে অনেক্ষণ। কাজ পাবার আশায় দশ-বারোজনের মতো আব্দুর রহিমও ঠায় বসে। কাঁঠালবাড়ি বাজারের মেইন রোড থেকে ফুলবাড়ি যাবার রাস্তার সংযোগে মাইলফলকে হেলান দিয়ে-দু'পা ছড়িয়ে। পরপর তৃতীয় দিনের মতো কাজ পায়নি আব্দুর রহিম। গতকাল সকালে পান্তা খেয়ে কাজের খোঁজে আসে।

কাজ না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে যায় বিকেলের দিকে। রাতে এবং সকালে না খেয়েই কাঁঠালবাড়ি বাজারের কামলার হাটে এসেছে আব্দুর রহিম। ধরলা নদী পার হয়ে ঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হাঁটাপথ। বয়স কতইবা-৪৫/৪৬। কিন্তু দারিদ্র্য তার চেহারায় ছাপ ফেলেছে ৬০/৬৫ বছরের বয়স্ক মানুষের মতই।

দু’দফা বন্যায় সর্বশান্ত—গেরস্থের অবস্থা সঙ্গীন। আর কামলা নিতে আসা লোকজন খোঁজে কম বয়সি উঠতি চেংরাকামলা। ফলে এই বৃদ্ধ আব্দুর রহিমকে কেইবা নেয়! দু’দিনের অনাহারি আব্দুর রহিম একসময় উঠে দাঁড়ায়। নিচে রাখা ব্যাগটা হাতে নেয়। যেখানে তার কাজের প্রধান ও একমাত্র সম্পদ একটি নিড়ানী।

বাড়িতে ফেরার জন্য ঘুরে দাঁড়ায়। ঘাটের দিকে হাঁটতে থাকে ধীর গতিতে। মাথার ভেতর চিন্তাপোকা গুনগুনিয়ে ওঠে। নিজের সাথে সাথে দু’দিনের উপোসী স্ত্রীসহ অপর দুই সন্তান। ২. নদী পাড়ি দিলে নৌকা ভাড়া আবার ঘাটের টোল।

গরিব মানুষ এই টাকা ক্যামনে দেয়! তাই তো সম্বল কলার ভেলা। ঘাটের একটু দূরে বেঁধে রাখা ভেলা ভাসায় আব্দুর রহিম। ধরলার মাঝামাঝি যেতেই লগি ঠেলা বন্ধ করে সে। ভেলা বাঁধা রশিটি ভেলা থেকে খুলে নেয়। ভেলায় বসে পড়ে।

ঘাড়ের গামছা দিয়ে নিজের পা দু’টোকে শক্ত করে বাঁধে। এবারে রশিটি দিয়ে নিজের হাত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধে। আব্দুর রহিম কলার ভেলায় শুয়ে পড়ে চিৎ হয়ে। ধরলার দু’ধার নিশ্চুপ। আকাশে বৈকালিক সূর্যকিরণ।

ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ। আব্দুর রহিম শরীরকে একটু ঝাঁকি দিয়ে ঘুরে যায়। ভেলার এক কোণে চলে আসলে ভারসাম্যহীনতায় ভেলাটির একটি অংশ বাঁকা হয়ে যায়। আব্দুর রহিম টাল খাওয়া ভেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সখ্য গড়ে ধরলার পানিতে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।