মূল প্রবন্ধঃ Click This Link
প্রশ্ন একঃ
আপনার লেখার মূল সুরটা ধরতে পারি নি। ২টা বিষয় উঠে এসেছে –
১। চট্টগ্রামে ব্যক্তিমালিকানাধীন বন্দর তৈরি।
২। বন্দর তৈরিতে বসুন্ধরার নানা রকম অনিয়মের আশ্রয় নেয়া।
আমি দ্বিতীয়টার বিরোধী কিন্তু আপনি সম্ভবতঃ দুটোরই বিরোধী।
==>> হ্যাঁ, আমরা ১ ও ২ উভয়েরই বিরোধী। সেই সাথে আরেকটি অপশন আনা হচ্ছে- সেটি হলো নতুন বন্দর। অবশ্যই আমরা এর বিরোধী নই। অবশ্যই নতুন বন্দর দরকার হবে আমাদের।
আমি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে- রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় নতুন বন্দর চাই। প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন- এক্সপানশন চাই, মংলা বন্দরের পুনর্জীবন চাই। এরপরে দরকারে অন্যত্র অন্য বন্দরও হতে পারে (এমনকি ডিপ সি পোর্টও হতে পারে)- তবে সেটাও থাকবে রাষ্ট্রের হাতে এবং সে বন্দরের কারণে এক্সিসটিং বন্দরের ক্ষতি করা যাবে না, আর এক্সিসটিং বন্দরকে ধ্বংস করে বেসরকারী খাতে বন্দর করার তো প্রশ্নই উঠে না।
সম্পূরক প্রশ্নঃআপনি যদি ব্যক্তি মালিকানার কনসেপ্টটারই বিরোধী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের চিন্তাধারায় কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। আমি মনে করি শিল্প কারখানা বা বন্দর পরিচালনার মত কাজ চালানোর দক্ষতা রাষ্ট্রের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়।
যেমন গুগলের মত কোন প্রতিষ্ঠান কখনোই রাষ্ট্রীয় খাতে গড়ে উঠবেনা। রাষ্ট্র ঐতিহাসিক ভাবেই ইনোভেশন বা ব্যক্তিগত দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
==>> আপনার চিন্তার সাথে মৌলিক পার্থক্য তো অতি অবশ্যই আছে..। আপনার সাথে পুরোটাই দ্বিমত করি, কেননা মনে করি- দক্ষতা বিষয়টা রাষ্ট্র চালাচ্ছে না ব্যাক্তি মালিকানায় চলছে তার উপর নির্ভর করেনা। উভয়ক্ষেত্রেই আদি ও অকৃত্রিম মানব সন্তানই চালায়... বেসরকারী মালিকনায় মানব সন্তানেরা যদি দক্ষ ভাবে চালাতে পারে তাহলে সরকারী মালিকানাতেও পারবে।
প্রশ্ন হলো যে মানবসন্তানেরা চালাচ্ছে তারা কি করতে চাচ্ছে বা কি করতে পারছে। বেসরকারী মালিক তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তি লুটপাট করতে দেয়না বলেই মানবসন্তানেরা লুটপাট করতে পারেনা... আমাদের রাষ্ট্র আমরা যাদের হাতে দিয়ে রেখেছি তারা লুটপাট ঠেকাবে কি, নিজেরাই লুটপাট করতে ব্যস্ত। কাজেই রাষ্ট্রক্ষমতায় কে আছে, কার স্বার্থে আছে সেটাই মূল প্রশ্ন... এই প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে গিয়ে গুগলের মত প্রতিষ্ঠান কখনই রাষ্ট্রীয় খাতে গড়ে উঠবেনা.. রাষ্ট্র ঐতিহাসিক ভাবেই ইনোভেশন বা ব্যক্তিগত দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে-- এই সব কথা বলা মানে হলো ইতিহাসের নামে ঐতিহাসিক বদমায়েসি করা... আরে ভাই জনগনের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় নাথেকেও দেখেন ভারতের রেলওয়ে কি চমতকার চলছে... স্কেনডেনেভিয়ান দেশগুলতে স্রেফ রাষ্ট্রিয় পুজিবাদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রিয় মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো কি দারুন সার্ভিস দিচ্ছে... আর যেসব দেশগুলোতে এখন বেসরকরীকরনের রমরমা অবস্থা সেসব দেশের ও শিল্প অর্থনীতির বিকাশ কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাতেই হয়েছে.... চীনের দিকে তাকান...এমনকি সিঙ্গাপুরের বন্দরও তো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় হংকং এর বেসরকারী বন্দরের চেয়ে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে! আর জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিস্কারগুলো কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাতেই হয়েছে। এখন বরং বিভিন্ন কর্পোরেট মুনাফার স্বার্থে মানুষের ক্রিয়েটিভিটি দক্ষতা ইত্যাদিকে স্রেফ মুনাফা অর্জনের পক্ষে কাজে লাগাতে গিয়ে সাবান-শ্যাম্পু-কোমলপানীয়-চকচকে ডিজিটাল বিনোদনের পেছনে যত মেধা এবং সম্পদ নিয়োজিত হচ্ছে মানবজাতির প্রকৃত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তার সমান্য ও হচ্ছে না।
প্রশ্ন দুইঃ
আপনি বলেছেন:“এত কিছুর পরেও চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান।
বন্দর কর্তৃপক্ষ কখনো সরকারের কাছ থেকে এক পয়সাও অনুদান নেয় নি। বরং ’৮৪-’৯৮ পর্যন্ত সরকারি তহবিলে ২৩৫ কোটি টাকা দিয়েছে। "
একটা মনোপলি প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হওয়া খুব একটা কঠিন কাজ না। ১৪ বছরে ২৩৫ কোটি টাকার হিসাবে একজন করদাতা হিসেবে আমি খুব একটা খুশি না। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান যদি আরো অনেক লাভজনক হয় আমি অবশ্যই তার প্রস্তাব খতিয়ে দেখার পক্ষে।
==>> একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লাভজনক হওয়া আর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক নয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য কেবল ব্যবসা করা বা মুনাফা নয়। রাষ্ট্রের নীতি-কৌশল, সার্বভৌমতা অক্ষুন্ন রাখা, জনগণকে নানাবিধ সার্ভিস দেয়া, রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজিক বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রের হোল্ড ঠিক রাখা এরকম নানাবিধ উদ্দেশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের থাকে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান তাই শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান থেকেই হিসাব করা যায় না, কেননা এর পরোক্ষ অনেকগুলো খাত আছে, যেগুলোকে ডেরিভেটিভও বলতে পারেন। এ কারণেই প্রাইভেট একটা কোম্পানী তার পণ্যের (মুনাফার উদ্দেশ্যে বিক্রি করা সার্ভিসও পণ্য) দাম ইচ্ছা ও সুবিধা মাফিক বাড়াতে পারে- বাড়িয়ে কমিয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিতে পারে; সেটা একটা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পারেনা; এমনকি মনোপলি হওয়ার পরেও পারেনা- অনেকক্ষেত্রে লোকসানে পড়ার পরেও পারেনা- এখানে লোকসানে পড়া মানে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসা বরাদ্দ যা আবার প্রকারন্তরে জনগণেরই ট্যাক্সের টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এমনটি করে না কেন? কারণ রাষ্ট্র নাগরিককে বিভিন্ন সার্ভিস দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, নাগরিক সেকারণে ট্যাক্স পে করে, এবং গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু খাত আছে- সেখানে একটি পয়সা দাম বাড়ালে তার সাথে সংশ্লিষ্ট আরো দশটা খাতে তার প্রভাব পড়ে, নাগরিক খরচ একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেকারণে বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, পরিবহন এর খরচ, লেভি-সারচার্জ-টোল প্রভৃতি এমন বিভিন্ন খাত সরকারের হাতে থাকায় রাষ্ট্র দরকারে কখনো কখনো আপাত লোকসান দিয়েও অর্থনীতির মূল প্রবাহটা অটুট রাখে। একইভাবে পাবলিক চিকিৎসা, শিক্ষা এখাতে সরাসরি রাষ্ট্র শুধু বরাদ্দই দিয়ে যায়- অন্যান্য প্রাইভেট মুনাফাখোর কোম্পানীর মত লাভ বা মুনাফার আশা করলে রাষ্ট্রের একটা বড় অংশের জনগণকে শিক্ষা-চিকিৎসা থেকে দূরে রাখা হতো। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এসব আপাত লোকসানকে আসলে বিনিয়োগ হিসাবে দেখলেই ভালো। কেননা- শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ ও সবল নাগরিকই পারে রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ভালো গতি দিতে, সে বিবেচনায় চিকিৎসা-শিক্ষায় বরাদ্দ দেয়াটাও লোকসান নয়।
এতসব বলার উদ্দেশ্য একটাই- ১৪ বছরে আপনার কাছে ২৩৫ কোটি টাকা লাভ আপনার কাছে অপ্রতুল মনে হওয়ায় এবং অন্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যদি এর বেশী আয় রাষ্ট্রকে দিতে পারে- সেক্ষেত্রে প্রাইভেটাইজেশন করা উচিৎ এমন যুক্তি তোলায় মনে হয়েছে, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রমটিই আপনার কাছে পরিষ্কার নয়। পোস্টে উল্লেখিত সমস্ত ফ্যাক্টর বাদ দিলেও দেখুন- প্রাইভেট পুঁজি যখন এখানে বিনিয়োগ হবে- তখন তাদের মূল উদ্দেশ্যই হবে মুনাফা। তার বর্তমান যে খরচ, তার সাথে এক্সট্রা যুক্ত হবে রাষ্ট্রকে দেয়া শুল্ক (এটা আবার আপনার দাবী মোতাবেক বর্তমানের লাভের চেয়ে বেশী), তার সাথে বিশাল পরিমাণে মুনাফা, ফলে বুঝতেই পারছেন- এই বন্দর থেকে কি পরিমাণ আয় করতে হবে এবং মালামাল পরিবহনের চার্জ কতখানি করতে হবে; আর বন্দরের চার্জ বাড়লে প্রতিটি আমাদানীকৃত পণ্যের উপর তার প্রভাব পড়বে- একইভাবে রপ্তানীকৃত পণ্যের ব্যয়ও বেড়ে যাবে- এসমস্তই রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপরই কি প্রভাব ফেলবে? আর কোন রাষ্ট্রীয় বন্দর যদি না থাকে- এবং পুরোটাই যদি প্রাইভেট বন্দরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়- তবে বাস্তবে কোন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে?
এখন যদি বলেন, এই রাষ্ট্রীয় বন্দরের ক্ষমতা অনুযায়ী ১৪ বছরে আরো লাভ করার উপায় ছিল। তাহলে আমিও আপনার সাথে একমত হবো- এবং সে ব্যাপারে আমিও অসন্তুষ্ট। দুর্ণীতি, আধুনিকায়ন না করা, ব্যবস্থাপনায় ঝামেলা ইত্যাদি সমস্যাগুলো না থাকলে, নষ্ট জেটি ঠিক করলে ও নতুন জেটি নির্মাণ করলে আরো বেশী লাভ করা যেত।
কিন্তু সেটার অজুহাত তুলে পুরো বন্দরকেই বাতিল করে প্রাইভেট বন্দরের জয়গান গাওয়া মোটেও কাজের কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় দুর্ণীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, দুর্ণীতি বন্ধ করতে না পারলে যে, প্রাইভেট ওনারশিপেরা আসলে সবাই খুব ফেরেশতা হয়ে যাবে- এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই, কেননা এরাও যে বড় দুর্নীতিবাজ তার প্রমাণ তো এই পোস্টেই আছে। বিদেশীরা আমাদের দু-দুটো গ্যাসক্ষেত্র পুড়িয়ে ফেলেছে- আমরা কিছুই করতে পারিনি। ফলে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লোকসব দুর্নীতিবাজ আর তার বাইরের সবাই ফেরেশতা এমনটা ভাবার মত মূর্খতা কিছুই নেই।
সম্পূরক প্রশ্নঃ একই সাথে আপনি ভুলে যাচ্ছেন, প্রাইভেট বন্দরের অপারেটিং কস্ট কম হবে কারণ তাদের ডিসিশান প্রসেস অনেক বেশি স্ট্রিমলাইনড, আমলাতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক ওভারহেড নেই, নেই অপ্রয়োজনীয় কর্মশক্তিকে বসিয়ে বেতন দেয়ার কোন বাধ্যবাধকতা।
তাই তারা মুনাফা নিয়েও সরকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম খরচে সার্ভিস দিতে পারবে। আর যদি না পারে, তাইলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। আপনি হয়তো বলবেন, চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে তখন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠাণের মনোপলি হবে। সেই ব্যাপারে চিন্তিত থাকলে আপনার যথাযথ দাবিটি হওয়া উচিত নতুন বন্দর তৈরির ফলে যাতে পুরানো বন্দর বন্ধ না হয়ে যায় এমন ভাবে ডিজাইন করার। অথবা একাধিক প্রাইভেট বন্দর তৈরিও সুস্থ প্রতিযোগিতা প্রমোট করতে পারে।
ঢালাও ভাবে প্রাইভেট বন্দরের বিরোধিতা করার মত কারণ নয় এটা।
==>> ঠিক এই ধরনের যুক্তি দেখিয়েই বলিভিয়ার পানিসম্পদ বেসরকারী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া হয়ে ছিল। জনগন তার ফলাফল হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার পর সেখান থেকে বেখটেল কে ঝেটিয়ে বিদায় করে। শুধু তাই নয় বলিভিয়া, ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে পুরো ল্যাটিনআমারেকিতেই জাতীয়করনের হাওয়া বইছে। আমরা শালা দেখেও শিখিনা! আরে অপারেটিং কষ্ট-ফষ্ট তো আসল কথা না, আসল কথা মুনাফা.... খালি ইফিশিয়েন্ট ভাবে চালায়া আমার কি হবে যদি লাভের গুড় পিপড়ায় খায়... রাষ্ট্রীয় ভাবে চালালে ইফিশিয়ান্ট ভাবেও চালানো সম্ভব, সেই সাথে মুনাফার ভাগটাও জনগনেরই থাকল.. যে কারণেই আমরা কেবল বন্দর না যেকোন কিছু প্রাইভেটাইজেশানের বিরোধী।
প্রশ্ন তিনঃ
আপনি বলেছেন:"বন্দরের পর্যাপ্ত জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বছরে প্রায় ৪৪ লক্ষ কন্টেইনার অনায়াসে হ্যান্ডলিং করা যাবে। "
গত ৩০/৩৫ বছরে যে ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা দেখা গেল না, আজ কিসের ভিত্তিতে আমরা সেটা আশা করব চট্টগ্রাম বন্দর থেকে, কিছু মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে কি?
==>> ৩০/৩৫ বছর ধরেই কিন্তু এই বন্দর দিয়েই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশটা হয়ে আসছে। এখন প্রশ্ন আসছে- একে আরো আধুনিক করা, জেটি বাড়ানো, নষ্ট জেটিগুলো ঠিকঠাক করা- সেটা কেন করা হবে না? স্বাধীন বাংলাদেশ কয়টা টাকা খরচ করেছে? কয়টা নতুন জেটি বানিয়েছে? কয়টা ড্রেজার কেনা হয়েছে? কেন হবে না?
যেখানে বন্দর লাভ করছে, সেখানে সেই লাভের টাকাই এখানে খাটতে দেয়া হবে না কেন? বন্দরের নিজের পর্যাপ্ত জায়গাও আছে। তাহলে এ সিদ্ধান্তগুলো কেন নেয়া হবে না? ৩০/৩৫ বছরে যেটা হলো না- সেটা কি অসম্ভব ধরণের কিছু? কোন জায়গায় আটকে যাচ্ছে? গতদুবছরে বন্দর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা গতি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে- এর মানে এই যে, গতি বাড়ানো সম্ভব। এখন সেই দাবীই কি আমরা করবো না?
প্রশ্ন চারঃ
বামদলগুলোরো ২য় বন্দর ঠেকানোর দিকে যতটা আগ্রহ তার সিকি ভাগ আগ্রহ বর্তমান বন্দর উন্নয়নে নেই (সম্ভবতঃ বন্দর বাঁচাও লংমার্চে যত লোক হয়, “বন্দর আরো লাভজনক কর” লংমার্চে তত লোক হয় না)
==>> জ্বি-না, বামদলগুলো ২য় বন্দর ঠেকানোর দিকে কোন আগ্রহ নেই।
এর চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে লংমার্চের শ্লোগান ছিল বন্দর বাঁচাও। সেটাতে এসএসএ এর বিরুদ্ধে যেমন দাবী ছিল- চট্টগ্রাম বন্দরকে আধুনিকায়ন করা, জেটি নির্মাণ, ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এসব দাবীও তুলেছিল। মংলা বন্দর অভিমুখেও লংমার্চ করেছে। মংলা বন্দরকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবী বামদলগুলোই তুলছে। সেগুলো আপনাদের দৃষ্টিতে না-ই পড়তে পারে।
তবে আপনার এমন অভিযোগটি দেখে খুব অবাক ও হতাশ হলাম। বামদলগুলোর দিকে অভিযোগের তীর না ছুড়ে রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় যারা আছে তাদের দিকে তীর তুলা দরকার নয় কি? আমার মনে হয়- আপনার উপরের এই প্রশ্ন না তুলে বরং আমাদের সবারই এই প্রশ্ন করা উচিৎ যে "বন্দরকে আধুনিক করা- লাভজনক করার দিকে সরকারগুলোর আগ্রহ নেই; যাবতীয় আগ্রহ কেবল ব্যক্তিমালিকানাধীন বন্দর করার দিকে। কেন?"
প্রশ্ন পাঁচঃ
আপনি বলেছেন: “আর ফলাফল হিসাবে বন্দরের প্রায় ২০০ কোটি টাকার কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য স্থাপনা, ঢাকাস্থ বন্দরের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা পরিত্যক্ত হবে। "
একটু বেশি নাটকীয়তা হয়ে গেল না? যদি এই প্রতিষ্ঠাণগুলো ভাল সেবা দিয়ে থাকে তবে নতুন বন্দরের এই সেবা না নেবার কোন কারণ আছে কি?
==>> না, একদম নাটকীয়তা হয়নি। বন্দর অকেজো হয়ে গেলে এর কার্গো হ্যাণ্ডলিং যন্ত্রপাতির কি হবে? মংলা বন্দরের যন্ত্রপাতির আজ কি দশা? আমাদের অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর ক্ষেত্রে এমন আরো ভয়ানক অভিজ্ঞতা আছে।
আদমজীতে ৩২৫০ তাঁত থাকার পরে ডাউন সাইজের নামে ১৫০০ তাঁত চালাতে বাধ্য করা হয়েছিল- তখন বাকি তাঁতগুলোর কি দশা হয়েছিল জানেন? অকেজো বসে থেকে থেকে জীর্ণ-নষ্ট হয়েছিল; আজ সে চালু-অচালু তাঁত গুলোর অবস্থা কি? অন্যান্য প্রাইভেটাইজ করা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই চিত্র, যেগুলো বিক্রি করা হয়েছে- সব পানির দরে। আর বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে আপনার প্রশ্ন- নতুন বন্দর কেন সেগুলো ব্যবহার করবে না? আমার প্রশ্ন প্রাইভেট বন্দর যদি রাষ্ট্রীয় সে স্থাপনা- সে প্রতিষ্ঠান গুলো ব্যবহার না করতে চায়- আপনি বাধ্য করতে পারবেন? বড় ক্যাপিটাল আসলে, তারা নিজেদের বিকল্প স্থাপনা গড়ে নিবে বলেই ধরা যায়- বড়জোর এতটুকু হতে পারে- সেই রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোও পানির দরে কিনে নিতে পারে।
প্রশ্ন ছয়ঃ
আপনি বলেছেন: “চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতি বছর যে টাকা আয় হয় তন্মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থাকে যা বন্ধ হয়ে যাবে। ------- সে সাথে বেকার হবে বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫০ হাজার মানুষ; নিদারুন দুরবস্থায় পড়বে তাদের পোষ্য আরও কয়েক লক্ষ মানুষ। "
আপনার এ কথা সত্য হবে যদি নতুন বন্দর সরকারকে কোন রকম শুল্ক না দেয়, এবং কোন কর্মচারী নিয়োগ না করে।
খুব একটা বাস্তব চিন্তা ভাবনা মনে হয় না।
==>> শুল্কের বিষয়টি আগেই বলেছি।
নতুন বন্দর কর্মচারী নিয়োগ করবে অতি অবশ্যই। তাতে একটা এক্সিসটিং বন্দর বন্ধ হয়ে গেলে তার সাথে যুক্ত মানুষদের বেকার হয়ে যাওয়ায় হেরফের হবে বলে মনে হয় না। এদের কিছু লোক হয়তো কাজ পাবে ঠিকই, কিন্তু বেশীরভাগই বেকার হবে।
সম্পূরক প্রশ্নঃ এইখানে কিছু গাণিতিক ব্যাখ্যা দিতে হবে মনে হচ্ছে।
ধরুন বর্তমানে ৫০০০০ লোক চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ করে এবং এদের কেউই অপ্রয়োজনীয় নয়। তাইলে নতুন বন্দরেরো সম পরিমাণ লোক লাগার কথা। মোট বেকারের সংখ্যা বাড়ার কোন কারণ দেখি না।
==>> খালি গণিত দিয়ে এইটা বুঝতে পারবেন না।
অপ্রয়োজনীয় কথাটা কেবল গাণিতিক হিসাবে নির্ধারিত হয় না। যখন মুনাফা মূল কথা থাকে তখন মুনাফার প্রয়োজনেই শ্রমশক্তি একবার প্রয়োজনীয় হয়, একবার অপ্রয়োজনীয় হয়। শ্রমিকের মানবিক প্রয়োজন, শ্রম অধিকার এইসব মুনাফাখোরেরা বোঝেনা। যে শ্রমিক তাকে সারা বছর মুনাফার যোগান দিয়ে এলো, সেই মুনাফাতে সামন্য টান পড়লেই সে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়.. দেখছেনা বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় কেমন করে ফোর্ড, জেনারেল ইলেক্ট্রিক থেকে শুরু করে বড় বড় বহুজাতিক কেমন করে হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই করছে। অথচ রাষ্ট্রীয় কারখানায় কিন্তু এরকম ঘটছেনা..
মুনাফার লজিকে পথ চললে এরকম অনেক কিছুই চোখে পড়বেনা, এরকম অনেক কিছুই ধরতে পারবেনা না।
তাই বলি মুনাফার লজিক থেকে বাইরে এসে দুচোখ ভরে দুনিয়াটা একবার দেখুন, সামাজিক মানবিক প্রয়োজনটুকু বুঝতে শিখুন.. দেখবেন অনেক অসম্ভবই সম্ভব হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন সাতঃ
আমার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আপনি চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিযোগী হিসাবে দেখাচ্ছেন এই নতুন বন্দরকে ... এটার ভিত্তি কি? ধরা যাক আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য আয়তনে ১০% হারে বাড়ল। সেক্ষেত্রে ১০ বছর পরে দ্বিগুণ মাল পরিবহন করতে হবে বাংলাদেশের বন্দরগুলোকে। এখন বলুন আরেকটা বন্দর হলে অসুবিধাটা কোথায়? আপনিই তো বলেছেন মংলা বন্দর কর্মক্ষম নয় ততটা।
==>> বসুন্ধরার প্রস্তাবিত বন্দরকে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিযোগী হিসাবে দেখানোর ভিত্তি কি পুরো পোস্ট পড়েও পরিষ্কার নয়? কর্ণফুলীর মোহনায় বন্দর হলে, উজানে অবস্থিত আমাদের বর্তমান বন্দরটি কি টিকবে? তারচেয়েও বড় যে বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হয়েছে- সেটি হচ্ছে, কর্ণফুলীর উজানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ যেসমস্ত স্থাপনাগুলো আছে- সেগুলোর অবস্থা কি হবে- প্রবেশপথ খ্যাত মোহনায় যদি বেসরকারী বন্দর নির্মিত হয়?
আরেকটা বন্দর হলে কোন অসুবিধা নেই, বরং খুবই দরকার। প্রথম প্রশ্ন এই বন্দর করতে গিয়ে আগেরটি ধ্বংস করা হলে আদৌ লাভ কি হবে? ২য় প্রশ্ন- এই বন্দর কার হাতে থাকবে?
আর চট্টগ্রাম বন্দর এখন পর্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠান, এর অর্থেই কিন্তু বন্দর আধুনিকায়ন করা সম্ভব, নষ্ট জেটিগুলো বিনির্মাণ করে মালামাল খালাস ও পরিবহনের ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব- সেটির চিন্তা কেন করা হবে না? এমনকি নিজস্ব লাভের টাকার সাথে আর সামান্য কিছু সরকারী বরাদ্দ যুক্ত হলে জেটির সংখ্যা আরো বাড়ানো সম্ভব।
মংলা বন্দরকে কার্যকর করার উদ্যোগ কেন নেয়া হবে না? প্রস্তাবিত পদ্মা সেতু হয়ে গেল কিন্তু রাজধানী ঢাকা থেকে মংলার দূরত্ব ঢাকা-চট্টগ্রামের চেয়েও অনেক কমে যাবে। (প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর দুই পাশের রাস্তা এরই মধ্যে প্রস্তুত)। এবং সেক্ষেত্রেও বেসরকারী নয়, সরকারী মংলা বন্দরেরই পুনর্জীবন চাইব।
প্রশ্ন আটঃ
আপনি বলেছেন: "সবার জানা আছে, বর্তমানে বন্দরের ১-১৩ নং জেটি এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে পানির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। "
আমার ধারণা যদি আপনার দুটো কথা সত্যি হয়ে থাকে তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বাঁচানোর জন্যই কর্ণফুলীর মোহানায় বন্দর তৈরী করা দরকার। নাহলে, যদি নদীর নাব্যতা অনেকটা কমে যাবার পরে এ নিয়ে ভাবা শুরু হয় তাহলে সমস্যা বাড়বে।
==>> কর্ণফুলীর মোহনায় বন্দর তৈরী হলে কিভাবে চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে? নাকি মোহনায় বন্দর তৈরী হলে মোহনার বন্দর উজানে পলি জমিয়ে নাব্যতা কমিয়ে ফেলে চট্টগ্রাম বন্দরের বন্ধ হওয়াটা ত্বরান্বিতই করবে?
তবে আপনার অবস্থান দেখে মনে হলো অনেকটা এরকম যে, চট্টগ্রাম বন্দরের যেহেতু নাব্যতা কমছে এবং এটা ধীরে ধীরে এমনিতেই ধংসের দিকে যাচ্ছে- সেহেতু এখনই নতুন বন্দর তৈরীর দিকে যেতে হবে- নাহলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে! আমরা এ জায়গাটি অন্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি- প্রথমত একমাত্র রাষ্ট্রীয় বন্দরটি রক্ষার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানাই- কেননা এখনো এই বন্দরকে রক্ষা করা খুবই সম্ভব, এবং দ্বিতীয়ত- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- রাষ্ট্রীয় বন্দর মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে আর আরেকটি বেসরকারী বন্দর তৈরী হওয়ার মানে হচ্ছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য পুরোটাই বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল হওয়া। এটা কি মেনে নেয়ার মতো?
সম্পূরক প্রশ্নঃ ”চট্টগ্রাম বন্দরের যেহেতু নাব্যতা কমছে এবং এটা ধীরে ধীরে এমনিতেই ধংসের দিকে যাচ্ছে- সেহেতু এখনই নতুন বন্দর তৈরীর দিকে যেতে হবে- নাহলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে!- ঠিকই ধরেছেন, এটাই আমার মত।
এবার দেখে নিই পৃথিবীতে আর কোথায় কোথায় পাশাপাশি এরকম দুটো বন্দর আছে।
১) লন্ডন আর টিলসবারি বন্দর ২৫ মাইল দূরত্বে।
২) হলদিয়া আর কোলকাতা বন্দরের নদী-দূরত্ব ৫০ মাইল।
৩) জাপানে প্রায় সব শহরেই একটা করে বন্দর আছে।
৪) সাঙ্ঘাইতে অনেককাল হল নদীবন্দর আছে।
কিন্তু সদ্য বেশী গভীরতায় আরো একটি বন্দর গড়ে তোলা হল।
এদের কোনওটিই অন্যটির ক্ষতি করেনি, বরং পরিপূরক হিসাবে কাজ করেছে। সরকারি বেসরকারি ব্যাপারটা অন্যরকম। আমেরিকা তো প্রতিরক্ষার কাজও বেসরকারি কোম্পানীকে দিয়ে করায়।
==>> আপনার এই আলোচনার মাজেজা বুঝলাম না।
পাশাপাশি বন্দরের উদাহরণ ৪টি দেয়ার উদ্দেশ্য কি? এটা কি এই জন্য যে, ঐ সব জায়গাতে পাশাপাশি বন্দর থাকায় কোন ক্ষতি হয়নি বলে বাংলাদেশেও হবে না এটা প্রমাণ করার জন্য? আমি তো পাশাপাশি বন্দরের বিরোধিতা করিনি কোথাও! জাপানের পাশাপাশি শহরের বন্দর আর চট্টগ্রাম বন্দর একই রকম হয় কি করে? চট্টগ্রাম বন্দরটি সমুদ্রে নয়- সেটা কর্ণফুলী নদীতে, মোহনা থেকেও বেশ কিছু ভেতরে। এবং সাথে এই তথ্যটিও জেনে নিন যে, বাংলাদেশ একটি পলিবাহিত দেশ- এখানকার নদীগুলো দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী পলিবাহী নদীগুলোর অন্যতম। যতই ভাটির দিকে স্থাপনা গড়বেন- তা স্রোতধারাকে প্রতিহত করবে এবং উজানে পলি জমতে সাহায্য করবে- এবং উজানে নদীর নাব্যতা কমবে। এই তথ্য যদি ভুল হয়- তবে সেটা জানান, তা না করে দুনিয়ায় কোথায় পাশাপাশি কি বন্দর আছে- তা বললে কি দাঁড়ায়? বঙ্গোপসাগরে এক চট্রগ্রামেই আরো চারটা আরো কাছাকাছি বন্দর হোক না। সেটা হলে আর কর্ণফুলীর চ্যানেল ব্যবহার করা না হলে কি বলা হবে যে, পাশাপাশি বাকি বন্দরের জন্য আগের বন্ধটি ধ্বংস হয়ে যাবে?
২য় বিষয়টি হলো- আপনি পাশাপাশি বন্দরের যে উদাহরণ দিয়েছেন- সেগুলোর কোনটি কোনটি একই রিসোর্স ব্যবহার করে? কর্ণফুলীর মোহনায় বন্দর হলে- চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য কিন্তু জাহাজগুলো যাওয়া আসার জন্য নতুন বন্দরের জন্য চ্যানেল শেয়ার করতে হবে।
কর্ণফুলী চ্যানেলে পর্যাপ্ত জায়গা নেই পাশাপাশি দুটো জাহাজ একত্রে ভীড়তে পারবে। এমনটি কি আপনার কথিত উদাহরণ গুলিতে আছে?
৩য় বিষয়টি হচ্ছে- সেগুলোর মালিকানা কার হাতে? এমনকি যে একটি সরকারী আরেকটি বেসরকারী? একই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দুটো বন্দর থাকলে তাতে প্রতিদ্বন্দিতা না হয়ে একটা আরেকটার পরিপূরক হয়ে কাজ করে- কিন্তু আলাদা প্রতিষ্ঠানের হলেও কি প্রতিদ্বন্দিতা থাকবে না বলছেন? আর সেই প্রতিদ্বন্দিতায় ব্যাকওয়ার্ড জায়গায় রাখতে চাইছেন- রাষ্ট্রীয় বন্দরটিকে? মোহনায় বন্দর যদি করতেই হয়- হোক না রাষ্ট্রীয় বন্দর, তাতেও অনেক সমস্যা হলেও শেষ পর্যন্ত অতখানি আপত্তি করবো না; কিন্তু উজানে রাষ্ট্রীয় বন্দর আর ভাটিতে মোহনায় প্রাইভেট বন্দর? প্রশ্নই উঠেনা।
আর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজ বেসরাকারী কোম্পানী দিয়ে করায় এটা বলে আপনি কি প্রমাণ করতে চাইলেন? যুক্তরাষ্ট্র করে বলে আমাদেরও বন্দর-প্রতিরক্ষা ইত্যাদি সমস্ত কিছুই বেসরাকারী হাতে তুলে দিতে হবে? দেশী- এমনকি বিদেশী বণিকদের হাতে পুরো দেশটাই তুলে দেই আরকি!! আরো ভালো হয়- ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে, তাই না?
শুনুন- প্রতিরক্ষার কিছু কাজ বেসরকারী কোম্পানীকে দিয়ে করানো আর- পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বেসরকারী খাতে তুলে দেয়া এক নয়। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরেও অনেকগুলো প্রাইভেট কোম্পানী কাজ করে, সেটা নিয়ে এখানে কথা হচ্ছে না- মূল প্রশ্নটি হচ্ছে মূল মালিকানার প্রশ্ন, মূল নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। আপনার যুক্তরাষ্ট্রের পুরো প্রতিরক্ষা বাহিনী যেমন বেসরকারী হাতে দিতে চাইবে না- যতই বেসরকারী কোম্পানী দিয়ে প্রতিরক্ষার কাজ করাক না কেন, তেমনি আমরাও আমাদের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ আমাদের রাষ্ট্রের হাতেই রাখতে চাই।
এরপরে অনেক কাজই প্রাইভেট কোম্পানীকে দিয়ে হতে পারে। আর, আশা করি এরপরের উদাহরণে আপনি প্রতিরক্ষাকে না টেনে প্রাইভেটাইজেশনের স্বর্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরের মালিকানার উদাহরণ টানবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।