অফসাইড বিষয়য়টা এখনো আমার কাছে স্বচ্ছ না হলেও যখন থেকে থ্রো-ইন, আউট বা কর্ণার বুঝি, বুঝি পেনাল্টি মানে হচ্ছে প্রতিপক্ষের মৃত্যুঘন্টা তখন থেকে হিসেব করলে ২০০৬-তে গেলো আমার দেখা ছয় নম্বর বিশ্বকাপ। নব্বইয়ে আর্জেন্টিনা, এবং আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনাকে কেন্দ্র করেই মূলত ফুটবল আমার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। তারপর থেকেই ম্যারাডোনা, যার সাফল্যে হেসেছি,ব্যার্থতায় লাখো তার লাখো ভক্তদের মতো আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। চুরানব্বই-তে ডোপটেষ্ট পজেটিভে ম্যারাডোনা নিষিদ্ধ হবার খবরে ঘুমাতে পারিনি কয়েক রাত।
তাই আমার ফুটবল পছন্দ আর ভালোবাসার পুরো সম্রাজ্য জুড়েই আর্জেন্টাইন উপনিবেশ।
আর একনায়ক ম্যারাডোনার একছত্র শাসন।
২.
আমার ফুটবল ভালোবাসা, আর্জেন্টিনা অথবা ম্যারাডোনার কথা বলে যদি একজনকে পর্দার আড়ালে রাখি তবে রীতিমত বড় ভুল করা হবে। আমার বাবা, ম্যারাডোনাকে পছন্দ আর ভালোবাসার পরিসংখ্যানে তিনি পৃথিবীর তামাম ম্যারাডোনা ভক্তদের মধ্যে প্রথম সারির কমরেড। আর্জেন্টিনা আর ম্যারাডোনায় চরম আসক্তি তার। নব্বইয়ে ম্যারাডোনার হাত ধরে আর্জেন্টিনার একের পর এক জয়ে তার আনন্দের পরিমান পরিমাপ করে বলা কঠিন।
সে বছর ইতালিতে খেলা হলেও এলাকায় টিভির স্বল্পতা ও বাবার আন্তরিকতায় রূপগঞ্জের সেই মফস্বলে আমাদের বাসাটি ছিল স্বীকৃতিবিহীন স্টেডিয়াম। ম্যারাডোনার খেলার দিন বিরক্ত হয়ে বাসার সবাই চলে যেত নানাবাড়িতে। আমি আর আমার বাবা, সঙ্গে এলাকার প্রায় গোটা পঞ্চাশেক ভাই ব্রাদার চাচাস্থানীয় মানুষের সে ষ্টেডিয়ামে ম্যারাডোনা ছাড়া অন্য কারো সমর্থক ছিলনা। সেই বিশ্বকাপে আর্জোন্টনার সেমিফাইনাল জয়ের রাতে আমার বাবা তার ডানপাশে রাখা কোল বালিশ মনে করে বাম পাশ থেকে আমাকে তুলে যেভাবে ছুড়ে ফেলেছিলেন তা আমার পে ভুলে যাওয়া সম্ভব না। পরক্ষনেই অবশ্য তা বুঝতে পেরেছিলেন।
তবে সেটা ম্যারাডোনার দলের ফাইনালে ওঠার আনন্দকে এতটুকুও ম্লান করতে পারেনী। ম্যরাডোনা যে আমাদের কি পরিমান ভালোবাসা জুড়ে আছে তা বলে বোঝানো সম্ভব না। বোঝানো সম্ভব না নব্বইয়ের বিশ্বকাপের কাঁপন এখনো যে কোন শীতের চেয়েও তুলনামূলকভাবে অনেক শক্তিশালী, অনেক বেশি তীব্র।
বিষয়টা অসম্ভব হলেও সত্যি আমি আর আমার বাবা কেন জানি এখনো প্রতিটি বিশ্বকাপে বসে থাকি ম্যারাডোনাকে দেখবো বলে।
৩.
ম্যারাডোনা এসেছেন আমাদের পাশের দেশে।
সেখানে তার লাখো ভক্তর মাঝে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন। আমাদের দেশের কাগজগুলোতে প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে সে ছবি। আমার বাবা, আমাদের বাসায় রাখা পত্রিকাগুলোর খেলার পাতা খুলে সেসব ছবি দেখেন, আনন্দ পান। তার আনন্দ দেখে মনে হয়, তিনি সামনাসামনি ম্যারাডোনাকে দেখছেন।
আমি জানি তার আনন্দটা কেমন।
ম্যরাডোনার হাসির ছবি দেখে তার মুখেও অনায়াসে ফুটে ওঠে হাসি।
একজন ম্যরাডোনা হয়তো ভাবেনওনা তার নামে মানুষের ভালোবাসা কতটা কাঁপন জাগায়? তার আনন্দ কতটা সংক্রমিত হয়?
হে ফুটবল ঈশ্বর, আপনি দীর্ঘজীবি হোন। কোন এক দেশের অখ্যাত পিতা-পুত্র আজীবন আপনার ভুবনভোলানো হাসি দেখার প্রত্যাশায় আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।