নিজেকে চেন।
The most bucks for the biggest bang -
বিশ্ব রেকর্ডের অন্ত নেই বাংলাদেশে। তারপরও এ দেশটির শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। ফলে এ সেতুর ভাগ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সম্মতি দিয়েছে রাশিয়া। এক্ষেত্রে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেসব শর্ত দিয়েছেন তা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের তুলনায় অনেক হীনতর। তাছাড়া, এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি রড সরবরাহ করবে রাশিয়া তা পরিবহন ও ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। যদি তাড়াতাড়ি পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা না যায় তাহলে ওই জ্বালানি পদ্মা নদী পার করতে নৌযানের আশ্রয় নিতে হবে। গতকাল লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দি ইকোনমিস্ট ‘স্পেন্ডিং ইন বাংলাদেশ: দ্য মোস্ট বাকস ফর দ্য বিগেস্ট ব্যাং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গ্যাসের মজুত পর্যাপ্ত নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক বিষয়েই দ্বিমত। কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিষয়ে তাদের অমিল নেই। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গের ঘটনার কোন অভাব নেই বাংলাদেশে। এর যাত্রা শুরু বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে।
১৯৪৭ সালে ভারতের সঙ্গে দেশভাগের সময় ঢাকা ছিল একটি জেলা সদর। এখন তা বাংলাদেশের রাজধানী। বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু শহর হিসেবে একে বিবেচনা করা যায়। পুরুষদের চেয়ে নারী নেত্রীরা এদেশটি বেশি সময় শাসন করেছেন। বলা হয়, বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় এদেশে নারীরা বেশি দিন দেশ শাসন করছেন।
বিশ্বে প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তারক্ষীরা একটি দেশের এত সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার পরও অন্য কোন দেশ এত শান্ত নয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সেরা হিসেবেও তা বিবেচিত, ব্র্যাক (বাংলাদেশ রুরাল এডভান্সমেন্ট কমিটি) দেশের সুনাম বহন করছে। এতসব বিস্ময়কর অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ৫ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে। তারা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। জানুয়ারির শেষ পর্যন্তও বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার এমন একটি দেশ, যেখানে দাতাদের অর্থে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।
ওই প্রকল্পের নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এর খরচ ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। পদ্মা নদীর ওপর নির্মিতব্য ও প্রস্তাবিত এই সেতুটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। এর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার। কিন্তু গত ৩১শে জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থায়নের অনুরোধ তুলে নেয়।
এর ফলে এ সেতুর ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম কোন প্রকল্পে দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ বা শূন্য সহনশীলতার নীতি ঘোষণার পরদিনই এই ব্যাংক থেকে অল্প সুদে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ আহ্বান তুলে নেয়ার অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। কিম ওই বক্তব্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি প্রমাণের বিষয়ে সরকার পর্যাপ্ত সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ আনেন। বাংলাদেশ যে জবাব দিয়েছে তাতে ধন্যবাদ আছে, কিন্তু বস্তুত তা ধন্যবাদ নয়। যেহেতু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ নিতে পারছে না, তার ফলে সরকারের আপসবিরোধী মনোভাব বেরিয়ে এসেছে।
বিশাল পদ্মা ও যমুনা নদী ঢাকা থেকে ৩ কোটি মানুষ ও দেশের অন্য অংশ থেকে আলাদা করে রেখেছে। সরকারের মনোভাবের জন্য তাদেরকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। এই সেতুর কথা আপাতত থাক। এখন দৃশ্যত, সরকার ক্ষমতার যে অন্য মাধ্যম আছে তা প্রদর্শনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত বছরেই বাংলাদেশ তার প্রথম স্যাটেলাইটের অর্ডার দিয়েছে।
সবেমাত্র গত সপ্তাহে প্রথম সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি একক প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মনোভাব দেখিয়েছে। ৫০ বছর আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিকরা যে ধারণা পোষণ করতেন, এতদিন পর সরকার সেই ধারণায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দাতা হিসেবে পেয়েছে। বাংলাদেশের অন্য যেসব আন্তর্জাতিক অংশীদার আছে তাদের তুলনায় পুতিনের দেয়া শর্ত আর্থিক দিক থেকে হীন। কিন্তু রাজনৈতিক বিচারে তা অপরিহার্য।
সর্বোপরি এটি সেই দেশ যেখানে অতি সমপ্রতি ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেছিল এবং উত্তরাধিকারের রাজনীতির দুই প্রধান সহ রাজনৈতিক নেতাদের জেলে ভরেছিল। সামপ্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে গত মাসে যে অস্ত্র চুক্তি হয়েছে তাতে সেই আশঙ্কায় আঘাত হেনেছে। তুলনামূলক বিচারে অল্প অস্ত্র বিক্রি হবে। দেশে যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা তার খরচ ২০০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি ডলারের মধ্যে হবে বলে ধরা যায়।
রাশিয়া এ প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য ৫০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কোম্পানি রোসাটম বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে রূপপুরে দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। যদি সব কিছু ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হয় তাহলে শিগগিরই এশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী ৭ম দেশ হবে বাংলাদেশ। এছাড়া, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও পাকিস্তানে। বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের খারাপ দিকটি কি? প্রথমেই বলতে হয়, বাংলাদেশে বিদ্যুতের বিশাল ঘাটতি রয়েছে।
কি পরিমাণ বিদ্যুতের ঘাটতি আছে তা সঠিক করে বলা যায় না। তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে বিদ্যুতের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য যে কঠিন অবস্থায় রয়েছে এমন আর কোন দেশ নেই। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘ডুইং বিজনেস সার্ভে’ অনুযায়ী, এই ক্যাটিগরিতে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে নিম্নতম ১৮৫তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশের শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পায় না। তাই এত বিপুল লোকসংখ্যার জন্য যদি সমস্যার সমাধান দিতে হয় তাহলে দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বেশি উৎপাদন একটি ভাল সূচনা হতে পারে।
বর্তমানে বিদ্যুতের যে ঘাটতি আছে তা পূরণের জন্য রাশিয়া পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। ২০২০ সালের মধ্যে সরকার ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এটা হবে তার মধ্যে একটি বড় উদ্যোগ। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০০০ থেকে ৬০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। এক্ষেত্রে কাঁচামাল বাংলাদেশেরই গ্যাস। কিন্তু সেই গ্যাসের মজুত পর্যাপ্ত নেই।
তাই স্বল্প সময়ের জন্য সরকার যে কৌশল নিয়েছে তাতে তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলা করা। কিন্তু তা বাংলাদেশের সক্ষমতায়ও নেই। আবার পরিবেশের জন্যই তা উপযোগী নয়। বাংলাদেশে কয়লার মজুত আছে। কিন্তু তার মজুত যেখানে, সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস।
গত সপ্তাহে বিদেশীরা ওই প্রকল্পে খনন কাজে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এর ফলে তারা সেখানে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন সেই একই প্রতিক্রিয়া যে কোন রাজনীতিকও পেতে পারেন, যদি তিনি সেখানকার কয়লা উত্তোলনের বা স্পর্শ করার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হতে পারে মিয়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে কয়লা ও গ্যাস আমদানির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেই পারমাণবিক স্থাপনা চালানোর বিষয়ে পরিষ্কার করে কথা বলেনি। বলেছে কি? বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কোন বিষয়ে যথেষ্ট একমত হতে পারেন না।
তবে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিষয়ে তারা একই রকম ধারণা পোষণ করেন।
বাংলাদেশ বিশাল এক গাঙ্গেয় উপত্যকা। এখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করলে তাতে কিছু সমস্যা থাকবেই। বিকল্প বিদ্যুতের সঙ্কট রয়েছে। শীতলীকরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে কি হবে তার ঠিক নেই।
বার্ষিক বন্যাও এতে বিভ্রাট ঘটাতে পারে। এই বন্যা কোন কোন বছরে দেশটির দুই-তৃতীয়াংশকে প্লাবিত করে। এ বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পূর্ব দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ। আগে এটা ঢাকার পূর্ব দিয়ে প্রবাহিত হতো।
কিন্তু একটি ভূমিকম্প এর গতিপথকে পরিবর্তন করিয়ে বর্তমানে রাজধানী থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে নিয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলতে পারেন যে, পদ্মা নদীর তীরে প্রস্তাবিত স্থানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা নিরাপদ। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কুন্দানকুলামে একই রকম একটি রাশিয়ান পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করা নিয়ে যে ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে একই রকম এখানেও হতে পারে।
কোনভাবেই বাংলাদেশ নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি রড সরবরাহ করবে রাশিয়া।
বাংলাদেশের যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা সেখান থেকে ভারতের সীমান্ত মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ পারমাণবিক সরঞ্জাম পরিবহনের সময় নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা চাইতে পারে। তেজস্ক্রিয় ওই রড বাংলাদেশের ব্যস্ততম চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে সড়ক পথে নেয়া হবে। এই সড়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৃত্যুফাঁদের একটি।
যদি এই পারমাণবিক সরঞ্জাম ঢাকা হয়ে পরিবহন করা হয় তাহলে তা পদ্মা নদী পার করাতে হবে।
তাই খুব তাড়াতাড়ি সরকার যদি চীনাদের পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ করার জন্য চাপ না দেয় তাহলে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি বহন করতে হবে নৌপথে।
(মানব জমিন) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।