সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে
রাত আটটা বা সাড়ে আটটা খুব বেশী রাত না হলেও অপেক্ষার জন্য দীর্ঘতর ; আমার স্বামীর এ সময়ে বাসায় আসা সেটাও নৈমিত্তিক ব্যাপার ,তবু অস্বাভাবিক লাগছিল আমার নিজের কারনে ।
বাসায় আসতেই বাচ্চাদের বিভিন্ন বক্তব্য তাকে শুনতে হয় মনোযোগী হবার ভান করে ; আজ আমিও সিরিয়ালে দাড়িয়ে গেলাম ।
আমার পালা আসতে বললাম তাকে , শোন ইমোশনাল হবার জন্য যদি কোন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় আমি পেয়েও যেতে পারি ।
সে একপায়ে দাড়ানো সে ব্যাপারে জানালো আমাকে ; মুচকি হেসে বলল ,আমি তোমার নাম প্রস্তাব করব । তারপর জানতে চাইল আজ আবার কি হল ।
সেটাই তো বলতে চাই । সন্ধ্যায় জাভেদের প্রতিষ্ঠানে যাব আমার মেয়ের একটা প্রয়োজনে এবং একটা জিনিস আছে ওর কাছে সেটা আনতে । ফোনে যোগাযোগ করতে জানাল সে হজ্জ্বে যাচ্ছে ,আমাকে জানানোর কথা ভাবছিল নাকি ; প্রথম একটু রাগ হল ,পরে রাগটা চলে গেল বেশ ভাল করে ; সেখানে স্থান করে নিল তার জন্য টেনশন । জাভেদ আমার ছোট ভাইয়ের মত , তবে আপন ভাই নয় ,এমনকি দূর সম্পর্কেরও নয় । আমার কর্মস্থলে এক মিটিং এ পরিচয় , আমার একজন জুনিয়র ছেলের কলিগ ছিল , সেটাই সূত্রপাত ।
তবে পেশা এক হওয়াতে কখনো কখনো দেখা হয়েছে । কখন যেন সে আমার আপন ছোট ভাইয়ের মত হয়ে গিয়েছে । আমার বা আমার পরিবারের প্রয়োজনে সে যেভাবে আন্তরিকতার পরিচয় দেয় , অভিভুত না হয়ে পারা যায় না ।
ওর বউ একদিন বলছিল , আপা আমার হাসবেন্ড আপনার কথা এত বলে আর মনে রাখে আপনি জানেন না ।
কে বলেছে জানিনা ,আমার মন জানে --এ কথা বলা হয়নি ওর বউকে ।
সন্ধ্যায় সেখানে যাওয়া বাতিল হল , কাল যাব ; মনে হচ্ছিল ও কিভাবে যাবে , গিয়ে যদি ওর কষ্ট হয় ! স্নেহের বন্ধন অনিশ্চয়তার আশঙ্কা জাগায় ক্ষনে ক্ষনে মানুষের মনে । ওর মত একটা ইয়াং ছেলে , যে একজন গর্বিত বাবা অলরেডী , অত্যন্ত দক্ষতার সাথে একটা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে প্রসংশা কুড়িয়ে নিচ্ছে ; আমি তার জন্য উৎকন্ঠিত ,উদ্বিগ্ন ।
কতশত বৃদ্ধ , গ্রামের অল্পশিক্ষিত মানুষ হজ্জে যায় ,তাদের কথা ভেবে মনকে প্রবোধ দেই । এরপরে মনে আসে সে যে ঈদে থাকবেনা ,ঈদের জর্দা - সেমাই খাবে না ,আবার মনটা বিষন্ন হয় । কি করবো ? এদিকে আমার কর্তা মহাশয় ফিরছিল না ; আবার জাভেদকে ফোন করি ,জানতে চাই কি খাবে সে ,আমি রান্না করে নেব ; নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার ওষুধ হাতড়ে খুঁজি ।
এই ফোনটা পেয়ে বলে ,এজন্য আপনাকে জানাতে চাইনি এতদিন ।
জাভেদ আরব দেশে যাবে ,কত দূর ! মন বড় বেয়াড়া জিনিস । তাকে বোঝা বা বোঝানো শক্ত ভীষন । মনে হচ্ছে আমার একটা ছোট্ট ভাই সে ,অনেক বড় মেলায় মানুষের ভীড়ে ,বাড়ি থেকে বহুদূরে না জানি কেমন থাকবে । পবিত্র এক উদ্দেশ্য নিয়ে যাবে জানি , সেটাতে সে সফলকাম হোক ।
তারপর ফিরে আসুক আমাদের সবার মাঝে ।
মমত্ববোধের জন্য কি কোন সীমারেখা টানা আছে ? কেন নেই ?
থাকলে ভাল হোত , তাহলে এত জড়িয়ে যাওয়া এড়িয়ে যাওয়া যেত। আমার স্বামী আমাকে বুঝতে পারে এবং আমার অনুভুতিকে মূল্য দেয় , তানা হলে এসব হেয়ালীপানার চড়ামূল্য দিতে হোত ।
*** জাভেদ নামটি প্রকৃত নাম নয় তার ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।