আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোক্তাদের অর্থে মনোলোভা বিজ্ঞাপন দিয়ে কোমল পানীয়ের নামে বিষ ভোক্তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।



ভোক্তাদের অর্থে মনোলোভা বিজ্ঞাপন দিয়ে কোমল পানীয়ের নামে বিষ ভোক্তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কোমল পানীয়তে নেশার উপকরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গবেষণায় ও পরীক্ষাগারে বেশির ভাগ কোমল পানীয়তে নেশার উপকরণ ক্যাফইনের অস্তিত পাওয়া গেছে। নেশা নেশা ভাব থাকায় শিশু-কিশোররা বার বার কোমল পানীয় সেবনে উৎসাহিত হচ্ছে। ক্যাফেইন মিশ্রিত কোমল পানীয় সেবনের ফলে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মস্তিকে ও পাকস্থলীতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের জটিল ব্যাধিত আক্রান্তদের হার আশংকাজনক হারে বাড়ছে।

কোমল পানীয় মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এটা প্রমাণিত বিষয়। কোমল পানীয়ের ওপর গবেষণা চালিয়ে তথ্য পাওয়া গেছে যে, বাতাসের দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস, বস্ত্রকলের রং, স্যাকারিন, ইথিলিনগস্নাই কল (বিষ) ফসফরিক এসিড, সাইট্রিক এসিড ও ডিস্টিল ওয়াটারের সংমিশ্রণে কোমল পানীয় তৈরি করা হয়। সংরক্ষণের জন্য কার্বনিক এসিড, ব্যানজুইক এসিড ব্যবহার করা হয়। বুঝা যাচ্ছে কোমল পানীয়তে মানব স্বাস্থ্যহানীর বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক উপকরণ ও উপাদানের সমারোহ। নিয়মিত কোমল পানীয় পান করলে দাঁতের অসুখ, ক্যান্সার, স্থূলতা, অস্থিৰয় প্রভৃতি রোগ হতে পারে।

বিজ্ঞাপনের চমৎকারিত্বের আড়ালে মানুষকে প্রতারিত করে অবাধে কোমল পানীয় বেচা-কেনা চলছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কোমল পানীয়ের নামে বিষ বাজারজাত করছে দেশে দেশে। কোমল পানীয় পানে প্রথমে দেহে উত্তেজনা হয়। হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে। এই কারণে শিশু-কিশোরসহ উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা বেশি বেশি কোমল পানীয় পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত ক্যাফেইন লাশের পচন রোধের উপাদান। ক্যাফেইন শিশুদের যকৃত, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও মগজের ক্ষতি করে। শিশুর খাবার রুচি কমে যায় ও ঘুম কম হয় এবং শিশু লেখাপড়ায় অনীহা দেখায়। মনোলোভা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মোহে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের ভোক্তারা কোমল পানীয় কিনে নিজের অজান্তে সস্নোপোয়েজন শরীরে প্রবেশ করাচ্ছে। কোমল পানীয়ের ভোক্তা ও বিপণন নেটওয়ার্কের ব্যাপক প্রসার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।

জনমত গড়ে না উঠলে কোমল পানীয়ের ভোক্তা ও বিপণন নেটওয়ার্ক বিস্তার রোধ দুরূহ হবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কোমল পানীয়ের বাজার সম্প্রসারণে বিপুল অর্থ ব্যয় করে। কোমল পানীয়ের বিক্রয় মূল্য অপেক্ষা উৎপাদন মূল্য একেবারেই যৎসামান্য। কোমল পানীয়ের বিজ্ঞাপনে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ উৎপাদন ব্যয়ের বহুগুণ। বিজ্ঞাপনে ব্যয়িত অর্থ যোগ করে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

ভোক্তাদের অর্থে মনোলোভা বিজ্ঞাপন দিয়ে কোমল পানীয়ের নামে বিষ ভোক্তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিকর কোমল পানীয়ের ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলতে সচেতন মহলের ভূমিকা অপরিহার্য। কয়েক বছর আগে ভারতে কোমল পানীয়তে ক্ষতিকর কীটনাশকের অস্তিত্ব পাওয়ার পর সেখানকার সচেতন সমাজ সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। ভারতের কয়েকটি রাজ্য সরকার, রাজ্যের সরকারি সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোক-পেপসিসহ ১৬টি কোমল পানীয় নিষিদ্ধ করেছিল। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চাপে শেষতক যদিও ভারতের সরকারি মহলকে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল।

তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ভারতের নাগরিক সমাজ যদি কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিকগুলো ব্যাপকভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরতে পারত তাহলে সেখানে কোমল পানীয়ের ব্যাপকতা হ্রাস করা কঠিন হতো না। আমাদের দেশে মানুষ কম সচেতন। বাংলাদেশে কোমল পানীয় বাণিজ্যিক বিলাসী পানীয়তে পরিণত হয়েছে। কেবলমাত্র জনমত তৈরি করেই বাণিজ্যিক বিলাসী পানীয়তে পরিণত হওয়া নীরব ঘাতক কোমল পানীয়ের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের দেশে কোমল পানীয়ের বৃহদাংশের ভোক্তা শিশু-কিশোর।

বলা যায় কোমল পানীয়ের ক্ষতির শিকার হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকরাই। এই ক্ষতির পরিমাণ যে অপরিমেয় তা সহজেই অনুমেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর উচিত নিজেদের নাগরিকদের এই ধরনের পানীয় কম খেতে উদ্বুদ্ধ করা। বিষাক্ত কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে সরকারের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দেশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।

এই ব্যাপারে যত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ততই মঙ্গলজনক। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়া কোমল পানীয় বেচা-কেনা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়াই আমাদের কাম্য। দৈনিক দিনকাল পত্রিকার সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত হয়েছে Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।