আমার মৃত্যু যেন আমার সকল ইচ্ছা পূরণের পর হয়
ব্লগ জগতে আমার বিচরন বেশি দিন নয় হয়ত বছর খানেক হবে। ইয়াহু ম্যাসেন্জারে কিছু পরিচিত মানুষদের সাথে কথা বলা ছাড়া অবসর সময়টুকু কাটতো না। পড়ালেখাটা শুধু ক্লাস শেষের পরেই শেষ হয়ে যেত। কাজের পরবর্তী সময়টুকু শুধু ঘুমিয়ে বা ঘর গোছানো দিয়ে চলে যেত। বাগান সাফ করা বা ঘরের ইন্টরিয়র চেন্জ করে ছিলো আমার অন্যতম সখ।
পুরো বাগানের ঘাস কাটা ফুল পরিচর্চা করতে আমার ভালো লাগে। ঘরের ইন্টরিয়রে নতুন ডিজাইন বা কোন রুম সিলেক্ট করে সেটাকে আচ্ছামত সুন্দর বানিয়ে ছাড়তাম। গাড়ী চালানোটা আমার কাছে একটা ফরজ কাজ। ভাত না খেলেও চলে কিন্তু গাড়ী নিয়ে কারনে অকারনে ঘুরে বেড়ানোটা আমি সব সময় পছন্দ করি। বাবা মা সব সময় ভয়ে থাকে আমার গাড়ী চালানো নিয়ে।
ফোনে নতুন কারো সাথে পরিচিত হওয়া বা আলাপচারিতা ও আমি বেশ ইনজয় করি। কিন্তু সমস্যা একটা জায়গায় বেশিক্ষন কোন কাজে স্থির হওয়া আমার দ্বারা হয় না। তিন চার মাসে ও দাড়ি কাটিনা। ঘর থেকে বাইরে থাকলে ঘরে যাবার নাম নিতে ইচ্ছা করেনা।
ব্লগ জগতে কিছুই জানতাম না।
শুধু ভাবতাম এটা মনে হয় পত্রিকা পড়ার মতই। তবে একটু ভিন্ন পত্রিকায় যেমন শুধু নির্বাচিত লেখা আসে কিন্তু এখানে সবাই লিখতে পারে। প্রথমে আসলে বন্ধু আরিফের উছিলায় ব্লগ জগতে আসা। ইয়াহুতে পাঠানো লিংক ঘুরতেই এই ব্লগ ব্যাপারটা জানা। বন্ধু আরিফ এক সময় ব্যাপক ব্লগীং করতো কিন্তু পড়ালেখায় ব্যস্ত হবার কারনে তার ব্লগ জগতটা শেষ হয়ে যায়।
এখন হয়ত মাঝে মাঝে পাসওয়াড ঠিক আছে কিনা চেক করতেই মাঝে মাঝে লগ ইন করে। আরিফের অনুপ্রেরনা থেকেই ব্লগে আসা। ব্লগে কি করবো? কি করা উচিত? লিখা উচিত নাকি শুধু পাঠক থাকাই ভালো? আরো প্রশ্ন আসে মাথায় কিন্তু আমার মোটা মাথার জট খুলতেই আরিফ দিলো নানা রকম টিপস। বেশি পোষ্ট করা উচিত নয়, বেশি করে অন্যর লেখা পড়া, কমেন্ট করা, বন্ধুসুলভ ব্যবহার করা সব ব্লগারের সাথে, নামী দামী ব্লগারের ব্লগে কমেন্ট করা, আরো নানা টিপস। কিন্তু এগুলো সব মানা আমার জন্য একটু হলেও কষ্টকর ছিলো।
তারপরেও আরিফের কথা মানা শুরু করলাম। প্রথমে পাঠক হিসেবে সকল পোষ্ট পড়ার চেষ্টা করতাম, কমেন্ট করা শুরু করলাম, কিন্তু আসলে এই জগতেও কবিতা, সাহিত্য,দামী পোষ্ট এইসব ব্যাপারে আমি ছিলাম বোকা। কমেন্ট করতে করতে যখন আমি বিরক্ত তখন পড়ার ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হলাম। মাঝে মাঝে নিজের কিছু সুপ্ত অকর্মা প্রতিভা দেখাবার জন্য পোষ্ট দিতাম। কেউ পড়তো আবার কেউ উৎসাহ প্রদানের জন্য কমেন্ট ও করতো।
কিন্তু মনে মনে যেনো নিজেকে একজন 'কিছুই না' ভাবা শুরু করলাম। তার পর কিছু কিছু দামী ব্লগারের মূল্যবান পোষ্ট যেমন নবীনদের কি করা উচিত এই টাইপের পোষ্ট পড়লাম। অনেক কিছু শিখলাম।
কি পোষ্ট করা যায়? এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতো। কবিতা, গল্প নাকি অন্যকিছু।
কোন পোষ্ট করলে ব্লগাররা আগ্রহ নিয়ে পোষ্ট পড়বে? এইসব চিন্তা ধারা থেকে হঠাৎ করে চোখে পড়লো কিছু ব্লগারকে। তারা প্রাত্যহিক জীবনে কি ঘটলো তা নিয়ে পোষ্ট করে লেখার মান অসাধারন সামান্য একটা তুচ্ছ কাহীনি অথচ লেখাটা পড়লে মনে হতো কোনো বড়ো লেখকের লেখা পড়ছি। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে পোষ্ট করার সাহস পেলাম না। কবিতা নিয়ে একটু নাড়াচড়া করলেও তাতে শুধুই নিজেকে একজন আতেঁল বা গদ্যকে পদ্য বানানোর অপচেষ্টা মনে হতো। কিন্তু যখন অন্য ব্লগারের কবিতা পড়তাম তখন মনে হতো এতো সহজ কথাগুলো কিভাবে এতো মায়া দিয়ে এতো কঠিন ভাষা দিয়ে লিখেছে! কবিতাও বাদ দিলাম।
মাঝে মাঝে দেখতাম 'হুদাই পোষ্ট' টাইপের কিছু পোষ্ট যাতে হয়ত একটা লাইনরে পোষ্ট এসেছে। অনেক কমেন্ট ও দেখতাম, কিন্তু ভাবতাম না এটাও আমাকে মানাবে না কারন হয়ত এমন একটা লাইন লিখে পোষ্ট করবো যাতে ব্লগাররা বিরক্ত হবেন!
কি ধরনের কমেন্ট করবো? সবার পোষ্ট পড়তাম কমেন্ট ও করতাম। হয়ত 'বেশ ভালো হয়েছে' বা 'অসাধারন' বা 'জটিল' ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মনে মনে তৃপ্ত ছিলাম না, ভাবতাম এতো সুন্দর লেখাতে এই ধরনের কমেন্ট মানায় না আরো ব্যাপক কিছু লেখা উচিত যাতে লেখক মনে করে তার লেখা সার্থক হয়েছে। কিছু সময় পর কমেন্ট ও ছেড়ে দিলাম।
নিজের পোষ্টের সাড়া পেতে অধীর আগ্রহে থাকতাম। কতবার পড়া হলো বা কেউ কমেন্ট করেছে কিনা বা কোনো নামী ব্লগার আমার ব্লগে তার পদধুলি দিয়েছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কতক্ষন? সময় পরে ভাবতাম না আমার পোষ্ট আমি করেছি কেউ পড়লে পড়বে কমেন্ট করলে করবে। কিন্তু কতক্ষন নিজেকে দমিয়ে রাখা যায়। অফলাইনে থেকে কিছুক্ষন পর পর চেক করতাম।
যা ছিলো খুবই হাস্যকর।
এখনো ব্লগাই। আছে পুরনো স্বভাব। সবার পোষ্ট পড়ার চেষ্টা করি। দু একটা মন্তব্য ও করি।
বেশ কয়েকজনকে জানিও। অন্যর পোষ্ট ফেভারিট করি। 'আমার লিংঙ্কে' নাম ও উঠিয়েছি কয়েকজনের। ভালো লেখাগুলো বার বার পড়ি। নিজের লেখা দিয়ে মাঝে মাঝে অফলাইন হয়ে যাই, ভাবি পরে এসে সব দেখবো কি হয়েছে।
সব কিছু মিলিয়ে চলছে ঢিলা ব্লগীং। হয়ত সিরিয়াস হবো...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।