কোন আপডেট নেই।
খুব খারাপ সময় যাচ্ছে।
ইলেকশনের জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে সেমিস্টার এর দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিয়েছে। ছুটির দিনগুলোও
ঘাড় গুজে খাটতে হচ্ছে। আর নির্দয় ও আমার আজন্ম শত্রু শ্রদ্ধেয় ফ্যাকাল্টিদের উৎসাহ ও গতি দেখে মনে হচ্ছে সেমিস্টার শেষ হবার অনেক আগেই সিলেবাস শেষ করে দেবেন।
ম্যাটল্যাবের ইন্সট্রাক্টরের সাথেও প্রতিদিন সিমুলেশনের কাজ করতে গিয়ে একরাশ তিক্ততা নিয়ে ফিরি। এই ব্যাটার বংশ ইতিহাসে মনে হয় গ্রিক আর চাইনিজ মিশেল আছে। এর কথা কেউ বুঝে না। সদ্য আম্রিকা ফেরত এই আলট্রাস্মার্ট ভাইজান তার চারপাশের সবাইকে চারপেয়ের সমান বুদ্ধিবৃত্তির নামানুষ মনে করেন। আর এর চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শোনার পর ...আর কোন কাজ করতে উৎসাহ পাই না।
সকাল ৮টা থেকে ক্লাস করে ...সারা বিকাল আর সন্ধা যখন এই ব্যাটার সাথে কাটিয়ে রাত ৮টা বা ৯টায় বের হই ...নিজেকে আর মানুষ মনে হয় না।
ঘাড়ের উপর সারাদিনের ক্লান্তি জমিয়ে রাখা ভারি ব্যাকপ্যাকটা কোনমতে ঝুলিয়ে কামাল আতাতুর্ক রোডের আলোছায়ার নকশাকাটা ফুটপাথ ধরে বনানী বাসস্টান্ডে ফিরি। এই পথটা অসম্ভব বিশ্রি লাগে দিনের বেলায়। রাতের বেলার একটা অন্য রকম মায়া আছে। ঠিক মায়ের চোখে দেখার মত।
মায়েরা যেমন চোখের কোন এক অজানা মায়ার ছাকনির জন্য হতশ্রী ছেলেটাকেও রাজপুএ মনে করেন। রাত ঠিক তেমন একটা মায়ার ছাকনি দিয়ে এই কুৎসিত শহরটাকে ঢেকে দেয়। রাতের বেলায় এই শহরটাকে তাই আমার বেশ লাগে। আর বনানী পোস্টঅফিসের উল্টো দিকে একটা নতুন ফুলের দোকান আছে। এই সময়টা ওই দোকান থেকে আমার অসম্ভব প্রিয় দোলন চাপার ভারি ঘ্রাণ ভেসে আসে রাস্তার আরেক পাশেও।
৯টার/সাড়ে ৯টার দিকে বাসগুলো একটু ফাকাই থাকে। কোনমতে একটায় নিজেকে তুলে সিটে এলিয়ে পড়ি। মহাখালি থেকে বিজয়স্মরণীর জ্যামটাও এখন ডালভাত হয়ে গেছে। আশে পাশের অনেককেই দেখি অস্থির হয়ে সরকার, রাজনীতিবিদ, ট্রাফিক পুলিশের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে। আমি নি-র্বাক থাকি।
এই তো স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে হটাৎ দু-এক দিন যখন জ্যামটা হালকা থাকে ...তখন মনে হয় সব ঠিক আছে তো?
পান্থপথের প্রিয় নীড়ে যখন ফিরি ...অনেকটাই ঝড়ের পরে নীড়ে ফেরা পাখির মত মনে হয় নিজেকে। আর আমি যে একটা মানুষ ...শাওয়ারের ঠান্ডা পানির ধারাগুলো অবশেষে সেই বোধটা ফিরিয়ে আনে।
বাসায় আমার ঘরের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। পড়তে পড়তে বা কাজ করতে করতে যখন খুব ক্লান্ত হয়ে যাই ...এই জানালা আর তার ওপাশের বিশাল আকাশের সাথে ক্লান্তিগুলো শেয়ার করে নেই।
মাঝে মাঝে রাতের ভাঙ্গা চাঁদটাও আমাদের সঙ্গি হয়ে যায়। তবে ইদানিং কংক্রিটের দানবটাকে খুব মিস করি। ...খুব। জানালার ওপাশের স্কাই-লাইনের মধ্যে একমাএ এই দানবটাই ছিল চোখে পড়বার মত। সাততলার জানালা বরাবর দৃষ্টিসীমায় ছাইবর্ণের এই দানবটা অনেক টা বাতিঘরের মত ছিল আমার কাছে।
অনেক রাতে ঘুমুতে যাবার আগে যখন জানালার পাশে এসে দাড়াতাম .... সামনের ঘুমন্ত শহররের মাঝে র্যাংস টাওয়ার এর কয়েকটা জানালায় জ্বলতে থাকা বাতি দেখে নিঃসঙ্গতা বোধ কিছুটা হলেও দুর হত। আবার শীতের দিনে সকালের ক্লাসে যাবার আগে ...ভোরে বিছানা থেকে আগে কম্বল এর ভেতর থেকে মাথা বের করে জানালা দিয়ে দেখতে চেষ্টা করতাম র্যাংস টাওয়ার দেখা যায় কিনা। এর উপর নির্ভর করে চেষ্টা করতাম কুয়াশার ঘনত্ব আন্দাজ করার। একই কাজ করতাম বৃষ্টির জন্যও। আর আকাশে কালো মেঘ করলে এই ছাইবর্ণের দানবটাকে যে কালোমেঘের পটভূমিকায় কি অদ্ভুত লাগত...
এখন জানালা দিয়ে তাকালে মনে হয় কি যেন নেই ...কি যেন নেই....
অনেক কথা হয়ে গেছে এই বিল্ডিং কে নিয়ে।
অনেক নাটক আর অনেকগুলো প্রাণের করুণ পরিনতিও হয়ে গেছে এখানে। তার পরও এই কংক্রিটের দানবটার জন্য আলাদা করে রাখা আমার ভালবাসাটুকু জানালা খুললেই এখনও টের পাই। ইটকাঠের এই শহরটাতেও কিছু ইটকাঠের কাঠামো কেমন করে যেন জীবণের প্রিয় অংশ হয়ে যায়।
ছবিটি ফ্লিকারের সুদিপ্তের একাউন্ট থেকে ধার করা।
Click This Link
সামান্য বিষয় নিয়ে আমার আরো একটা আজাইরা প্যাচাল এর জন্য স্যরি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।