তোমাকে দিয়েছি চিরজীবনের বর্ষা ঋতু; এখন আমার বর্ষাতে আর নেই অধিকার ।তবুও জলদমন্দ্রে কাঁপে যেহেতু, চোখ ঢেকে তাই মনে করি শুধু ক্ষনিক বিকার। আকাঙ্খা ছিলো তোমাকে সাজাবে বৃষ্টিকণা...
তাঁর আত্মজীবনীর অনুবাদ ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান ’ দুনিয়া জুড়ে সাড়া ফেললেও শেষ পর্যন্ত কিন্ত্ত তাদের রোষ থেকে আর নিস্তার মিলল না৷ ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ ’ সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুন হয়ে গেলেন আফগান জঙ্গিদের গুলিতেই৷ বৃহস্পতিবার ভোরে , কাবুলে তালিবান আক্রমণে প্রাণ হারান সুস্মিতা (৪৯ )৷ লাগাতার তালিবানি হুমকি উপেক্ষা করেই স্বামী জাম্বাজ খানের সঙ্গে বসবাসের জন্য সম্প্রতি তিনি আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের স্রায়কালা গ্রামে ফিরেছিলেন৷ ‘আফগান ডেইলি ’ প্রাদেশিক পুলিশ আধিকারিক দৌলত খান জাডরানকে উদ্ধৃত করে লিখেছে , হামলাকারীরা জাম্বাজকে বেঁধে রেখে , সাহিব কামাল ব্যানার্জিকে (সুস্মিতার আফগান নাম ) বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করে৷ তার পর স্থানীয় একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান লাগোয়া জায়গায় ফেলে রেখে যায় দেহ৷ আফগান টাইমস -এ সে দেশের মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের কর্মী বিবি হাওয়া খোশিওয়াল জানিয়েছেন , সুস্মিতা কাবুলে স্বেচ্ছা স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন৷ আত্মজীবনীর জোরে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাওয়া সুস্মিতার নৃশংস হত্যার বিবরণ প্রকাশ পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রথম সারির সবক ’টি সংবাদমাধ্যমেই৷ কলকাতাতেই জাম্বাজের প্রেমে পড়েন৷ ১৯৮৯ -এ তাঁকে বিয়ের পর পাকাপাকি থাকতেও শুরু করেছিলেন কাবুল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের পাকতিকায়৷ তবে দাম্পত্য -জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল কলকাতার মেয়ের৷ পারিবারিক অত্যাচার চরমে ওঠায় এবং তালিবানি মারণ -ফতোয়া থেকে বাঁচতে ১৯৯৫ সালে কাবুল হয়ে তিনি পালিয়ে আসেন এ -দেশে৷ এর পরই ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ ’ লিখে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন আদতে আসানসোলের মেয়ে সুস্মিতা৷
ওই বইয়ের সূত্রে তালিবান সন্ত্রাসীদের জাতশত্রুও হয়ে ওঠেন দ্রুতই৷ ১৯৯৮ -এ আত্মজীবনীর ইংরেজি অনুবাদ ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান ’ প্রকাশ পায়৷ ২০০৩ -এ সেই নামে একটি ছবিও তৈরি হয় বলিউডে৷ এর পর আরও বেশি করে তালিবানদের নিশানা হয়ে ওঠেন সুস্মিতা৷ বছর দেড়েক আগে তাঁর দেওর জাহাঙ্গির খান ধর্মতলা এলাকায় খুন হওয়ার নেপথ্যেও তালিবানি হাত থাকার আশঙ্কা করেছিল অনেকে৷ তার পর থেকে নিয়মিত হুমকিও আসত সুস্মিতার ফোনে৷ সে সবের অবশ্য পরোয়া করেননি৷ এ বছরই দমদমের নাগেরবাজারের ডায়মন্ড সিটি হাউজিংয়ের ভাড়া ফ্ল্যাট ছেড়ে ফের আফগানিস্তানের শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান৷ সুস্মিতার সাত লক্ষ কপির ‘বেস্টসেলার ’ বইয়ের প্রকাশক স্বপন বিশ্বাস বৃহস্পতিবার বলেন , ‘বার বার নিষেধ করেছিলাম৷ কিন্ত্ত উনি শোনেননি৷ বলেছিলেন , এখন নাকি ওখানকার পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক৷ তা ছাড়া শ্বশুরবাড়ির লোককে আপন ভেবে এখানে আর থাকতেও চাইছিলেন না৷ ’ স্বপনবাবু জানিয়েছেন , গত ৩০ মার্চ জাম্বাজ কলকাতায় আসেন৷ পাঁচটি ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান ’ ও একটি ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ ’-এর কপিও কেনেন৷ তার পর সুস্মিতা স্বামীর সঙ্গে পাড়ি দেন কাবুলে৷ প্রিয়জনেরাও ফিরতে নিষেধ করেন।
১৯৮৯ : কলকাতায় আলাপ আফগান জাম্বাজ খানের সঙ্গে৷ কিছুদিন প্রেমপর্বের পর বিয়ে এবং স্বামীর দেশে পাড়ি তরুণী সুস্মিতার... ১৯৯৩ : আফগানিস্তানে তালিবানি তত্পরতার শুরু... ১৯৯৫ : মৌলবাদীদের রক্তচক্ষু এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ব্যবহারে স্বপ্নভঙ্গ৷ আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে৷ আফগানিস্তানে সংসার করার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলেন ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ ’৷ প্রকাশের পরই ‘বেস্টসেলার ’৷ বোরখা পরতে অস্বীকার করায় তালিবানের রোষের মুখে পড়েন বলে পরে এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন তিনি৷ এমনকি কট্টরপন্থীরা বাড়িতে এসে হামলাও চালিয়েছিল পারিবারিক অ্যালবামে সুস্মিতা... ২০০৩ : তাঁর স্মৃতিকথা অবলম্বনে বলিউডে ছবি৷ এসকেপ ফ্রম তালিবান৷ পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়৷ মুখ্য চরিত্রে মনীষা কৈরালা... কিছু দিন আগে আফগানিস্তানে ফিরে যান৷ আবার স্বামীর সঙ্গে ঘর করছিলেন৷ ছিলেন দক্ষিণ -পূর্বের পাকতিকা প্রদেশে... সাহিব কামাল নাম হয়েছিল তাঁর৷ স্বাস্থ্যকর্মীর কাজও করছিলেন৷ কাজের অঙ্গ হিসেবেেই মুভি ক্যামেরায় বন্দি করছিলেন স্থানীয় আফগান মহিলাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা... ৫ সেপ্টেম্বর , ২০১৩ : সুস্মিতাদের বাড়িতে হামলা তালিবানের৷ স্বামী -সহ অন্য আত্মীয়দের বেঁধে তাঁকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যায় জঙ্গিরা৷ তার পর গুলি করে হত্যা করে৷ ২০টি বুলেটে বাঙালি বউয়ের ক্ষতবিক্ষক দেহ রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায় জঙ্গিরা৷
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।