জীবন্ত মানব সত্তার অস্তিত্বই নিঃসন্দেহে মানবের সকল ইতিহাসের প্রথম আরম্ভ...
[কারো কথাতে কান দিয়োনা মেয়ে, এক ফোটা জল অনেক দামী শত বেদনার চেয়ে
গত ২৪শে অক্টোবর প্রিয় ব্লগার ইউনুস খান উপরোক্ত শিরোনামে একটি পোষ্ট দিয়েছিলেন, সেই পোষ্টের কিছু কমেন্ট পড়ে এই লিখার অবতারনা-]
''.......রিস্তা অগর বোঝ বন জায়ে- তো উসকা তোড়না ঈ বেহতর হ্যয়…… ''
সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরছি- দরজা খুলে দিল চিত্রা। মুখ চোখ থমথমে- দু হাতে দরজার দুই পাল্লা ধরে জিজ্ঞেস করলো- ভালোবাসা মানে কি বলতে পারো?
- ঝঞ্জাট করিস না চিত্রা, খিদায় আমার জান যাচ্ছে- খালি পেটে আবার ভালবাসার তত্ত্ব……।
- তুমি বুঝছো না ছোটকা, আমরা আসলেই সিরিয়াসলি একটা ডিবেট করছি-
চিত্রা আমার মেজদার মেয়ে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় পড়ে। বাস্তবতা হল দুই বেড রুমের এই ফ্লাটটা আমার মালিকানায়, কিন্তু এ বাসার বেডরুমটা, যেটায় আমি থাকি- শুধু সেটাই আমার দখলে- বাদ বাকী সব চিত্রার রাজত্ব। সারাদিন তার বন্ধুরা এবং বন্ধুদের বন্ধুরা এ বাসায় যাচ্ছে আসছে- খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে।
এক কোনে আছে স্টুডিও- সেখানে কাজ করছে।
বাসায় ফিরলে প্রায়ই দেখি কোন ছেলে অথবা মেয়ে ড্রইং রুমের সোফায় পরে ঘুমাচ্ছে নয়তো কিচেনে রান্না করছে এবং অবশ্যই তাকে আমি এর আগে দেখি নি।
এমনও হয়েছে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলে দিয়ে কেউ আমাকে প্রশ্ন করেছে কাকে চান?
পুরো বিষয়টা আমার কাছে মজার লাগে- এক সাথে এত গুলো সতেজ তারুন্যের উপস্থিতি…… তারা জোর গলায় যখন তাদের কথা বলে বা কোন বিষয়ে মতামত দেয় তখন এক ধরনের কর্তৃত্ব তাদের চেহারায় ফুটে ওঠে…… তাদের রাগ ক্রোধ বা ঘৃনা বড় বেশী তীব্র…… একই সঙ্গে তারা কোন কিছু ভালোবাসে প্রান খুলে- উজার করে দিয়ে।
এ যৌবন জল তরঙ্গ কে না উপভোগ করবে……
চিত্রার বন্ধুদের কেউ কেউ হয়তো একটু লাজুক- কিছুটা অপ্রকাশ্য, আবার কেউ কেউ ভীষন এক রোখা আর বেপরোয়া। কেউ কেউ হয়তো বা আদব কায়দার ধার একটু কম ধারে- অবলীলায় আমাকে বলে দিতে পারে- আপনি মিয়া বেশী বোঝেন…… কিন্ত ঐ টুকুই।
আমি জানি এর থেকে অরুচিকর কোন বাক্য চিত্রার বন্ধুরা উচ্চারন করবে না- এ বাসায় কোন অশ্লীল শব্দ উচ্চারন করলে তার জন্য এ বাসার দরজা চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করে দেবে চিত্রা…….
তবে একটা বিষয় আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি এ বাসায় যারা আসে তারা সবাই হৃদয়বান, নিজেদের বিশ্বাসের প্রতি সৎ এবং সর্বোপরী দ্বায়ীত্ব বান। যদিও অনেক বিষয়ে তাদের দ্বিধা আছে, ভাল মন্দের বিষয়ে আছে সংশয়- রাজনীতির ব্যাপারে ততটা সচেতন নয়… কারো কারো হয়তো রাজনীতি নিয়ে একটু নেতিবাচক মনোভাবও আছে।
আমার সাথে তাদের প্রজন্মের ব্যবধান প্রায় এক দশকের, কিন্ত মাঝে মাঝে যখন তাদের সাথে আড্ডা মারি বা কোন কিছু নিয়ে তর্ক করি- আমি কিন্ত গলা ফাটাই তাদেরই একজন হিসাবে- আমি যে চিত্রার চাচা এই প্রাকৃতিক সম্পর্কের উর্ধ্বে উঠে।
জিশান সম্ভবত আগত ছেলেমেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সের কিন্ত তার ভারী পাওয়ারের চশমার জন্যই হয়ত সে সব সময়ই একধরনের বাড়তি সমীহ আদায় করে নেয়- তবে সে কথা বলে গুছিয়ে – অন্যের কথা শুনে মনোযোগ নিয়ে। একবার মা-বাবার সাথে রাগারাগি করে রুপম বাড়ী ছেড়েছিল… পুরা বিষয়টা জিশান একা হাতে সামলেছিল- সময় নিয়ে আর ধৈর্য্য দেখিয়ে।
প্রশ্নটা ওকে দিয়েই শুরু করলাম- ভালবাসা জিনিষটা কি বস্ত জিসান? কও দেখি…
- ভালবাসা হল কাউকে একান্ত ভাবে চাওয়া- তার সাথে জীবন কাটানোর পরিকল্পনা করা…
- জীবন কাটাতেই হবে? না কাটালে ভালবাসা হবে না?
- নট দ্যট, আপনি কি আমাকে ব্যাখা করতে বলছেন? কাকে বলে ভালবাসা…
সাবিহা চেয়ারে বসে পা দোলাচ্ছিল- যাই বলো ভালবাসায় অনেষ্টি খুব দরকারী, আমি যদি সৎ না থাকতে পারি, তবে ওটা ভালবাসাই হলো না…
- এত সহজ সরল না রে সব কিছু… চিত্রা বড় করে একটা শ্বাস ফেলে- আসলে বিষয়টা মোটেও এত সাদা মাটা নয়। যে কারনে ছোটকা আমি তোমাকে ডাকলাম… আমাদের এক ক্লাস মেটের কি হয়েছে জানো? তার ছেলে বন্ধু, যাকে এমনকি সে বিয়ে করার কথাও ভাবছিল, জঘন্য একটা কাজ করেছে।
- কি করেছে?
- আমার ধারনা এ যাবৎকাল ভালবাসার নাম দিয়েই সবচেয়ে বেশি মেয়েদের গাড্ডায় ফেলা হয়েছ্, সবচেয়ে বড় বড় ক্ষতিগুলো হয়েছে কিন্ত এই ভালবাসার নাম দিয়েই। সেই ছেলে তাদের একান্ত কিছু মুহুর্ত গোপন ক্যামেরা দিয়ে…. বুঝতেই পারছো-
- যে তোর সবচেয়ে কাছে থাকে- সব চেয়ে বড় আঘাত, সবচেয়ে বড় ক্ষতি করার ক্ষমতা তো তারই হবে। কিন্ত এ ধরনের ঘটনা গুলো আমার কাছে হতভম্ব হবার মতো- আমি এগুলো শুনলে নিজেই অসুস্থ হয়ে যাই।
- বিশ্বাস করো আমাদেরও একই অবস্থা- না সেই ভিডিও সে এখনো কোথাও প্রকাশ করে নাই- কিন্ত এ কাজ করার পিছনে তার যুক্তি কি ছিল জানো? বর্তমান পরিষ্থিতিতে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করলে এ জাতীয় ভিডিও টেপ রাখা এবং সংরক্ষন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এতে নাকি প্রতারিত হবার রিস্ক কিছুটা হলেও কমে!!!!
এবার আমারই হতভম্ব হবার দশা……। আমি একজনের সাথে প্রেম করি-মানে তাকে ভালবাসি, আমি চাই সে যেন আমাকে ছেড়ে না যায় …… তাই তো?
এ পর্যন্ত শুনে তো মনে হচ্ছে ঠিকই আছে- বিশ্বের সব প্রেমিক চাইতেই পারে, তার প্রেমিকা যেন তাকে ছেড়ে না যায়। কিন্ত কোন কারনে যদি সব কিছু ঠিকঠাক না চলে (চলতেই পারে), কেউ যদি তার ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ই…… এটাকে কি সভ্য সমাজ প্রতারনা হিসাবে গন্য করবে? কাউকে ভালবাসা কি আজকাল এরকম চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিনত হয়েছে?
এখন কেউ যদি তার সিদ্ধান্ত ফিরে আবার বিবেচনা করতে চায়…… তবে কি তার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে গোপন ভিডিও প্রকাশের হুমকি? যাতে করে সে বাধ্য হয় সেই ভালবাসার সম্পর্ক চালিয়ে যেতে!!!
যা্রা যারা আমার এই লিখা পড়ছেন- সবার প্রতি আমার একটাই প্রশ্নঃ ‘একজন’ ছেলে/মেয়ে তার অন্য কোন উপায় নাই, কোথাও যাওয়ার নাই, সকল রাস্তা তার বন্ধ- আপনাকে তার ভালবাসতেই হবে- এবং সে আপনাকে ভালবেশে যাচ্ছে ……
আপনি কি অনুভব করবেনঃ কেউ আপনাকে ভালবাসছে??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।