মুখোশ
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ভিতরটা কখন’ই অন্যকে দেখানো হয় না। মৌনতা, সংশয় আর সংকোচের আড়ালে লুকিয়ে যায় সূর্যের সবটুকু আলো। বাইরে থেকে দেখে যাকে মনে হয় শুধুই পথ হারানো অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্যের কুঁঠুরি, অথচ ভিতরে চোখ জলসে যাওয়া অনুভূতি। সে অনুভূতি কখন’ই মুখে প্রকাশিত হয় না, সে অনুনয় কখন’ই বাতাসে স্পন্দিত হয় না।
এই লেখাটা লেখার সময়ও আমার উপর যেন বিরাজ করে আছে এক প্রচ্ছন্ন ছায়া।
যেন আমি বসে আছি ক্রুদ্ধ সূর্যের খরতাপে আর এক শুভ্র আঁচল নির্মোহ ছায়া দিয়ে যাচ্ছে মাথার উপর। সেই শুভ্রতায় আমি ক্রমশঃ আচ্ছন্ন হয়ে যায়, ইচ্ছে করে মোহাচ্ছন্ন থাকি মহাকাল। ঝাপসা দৃষ্টি আর ঠোঁটের কাঁপুনিতে আমি বুঝতে পারি শত মাইল দূরে থেকেও সূর্য-সত্য জুড়ে আছে আমার আত্মার সাথে। ডায়েরির পাতায় আমার অশ্রুর ফোঁটায় ভেসে উঠে প্রিয় অবয়ব।
মা, হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল তোমার পরাজয়ের একটা গল্প।
যে তুমি পাহাড়সম মনোবল নিয়ে তীব্র ঝড়ের বিপরীতে লড়ে গেছ সে তুমি এক রাতে কিভাবে একটা দুঃস্বপ্নের কাছে হেরে গেলে। দেখেছিলে না হয় একটা দুঃস্বপ্ন, তাই বলে কি কেউ এভাবে গভীর রাতে মরণ-আহাজারি করে? ঘুম-ভাঙ্গা চোখে আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম তোমার বুকে। তোমার ভয়ার্ত কন্ঠের আহাজারি আর অসহায় চোখের দৃষ্টির ভীড়ে আমি যেন একটা শব, আর তুমি সেই শব জড়িয়ে ধরে যেন সব হারিয়ে বসে ছিলে। স্বপ্ন-আতঙ্কে জর্জর তোমার সেই কান্নার ডাক বিশ্বাস করো আমি কখন’ই ভুলব না। আমার পঞ্চন্দ্রিয় যদি কখনো অসার হয়ে পড়ে, যেদিন সমস্ত চৈতন্য অতীত হয়ে যাবে সেদিনও আমার দুঃসাহস হবে না তোমার সেই ডাক অগ্রাহ্য করার।
মা, আমি তোমাকে তোমার মত করে ভালবাসতে পারিনি। আমি দেখাতে পারিনি মা আমার এই মানব শরীরের অভ্যন্তরে কত সবুজ কত দীর্ঘ পথে শুধু তুমি’ই পথচারী। তোমাকে জড়িয়ে ধরে কখনো বলতেও পারিনি ‘মা, তোমাকে অনেক ভালবাসি’.........পৃথিবীর কোন সন্তান’ই মনে হয় পারে না। আচ্ছা, যেই সত্য চিরজাগতিক সেই সত্য মুখে কতটুকু প্রকাশ-সক্ষম? পৃথিবীর সমস্ত শব্দ আর আবেগ শিশির বিন্দু হয়ে অসহায় পড়ে থাকে তোমার পদতলে। আর যদি কেউ পেরে থাকেও আমি না হয় তাদের দলের বাইরে রইলাম।
দলছুট সন্তানদের নির্লিপ্ততা আর মৌনতাকে ক্ষমা করে ভালবাসা বুঝে নিও মায়েদের দল। যদিও জানি অপরিশোধ্য ঋণে বেঁধে রেখেছ।
পৃথিবীর সমস্ত মায়ের বিসর্জন, আত্মত্যাগ, আর সংগ্রামের বিনিময়ে যে রঙ পৃথিবীকে রাঙ্গিয়ে যায় তা যেন কখন’ই বিবর্ণ না হয়। জয়তু মা......জয়তু মাতৃত্ব।
**ডায়েরীর পাতা থেকে উৎসরিত...কোন এক স্পন্দিত সময়ে লিখিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।