আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখে এলাম জনিকে....! একরাশ অভিজ্ঞতা, কষ্ট ও দুঃখ নিয়ে ফেরা। আসুন রুবী হত্যাকান্ডের সুবিচার ও জনির জন্য কিছূ করি......./শেখ রহিম

ছোট্ট দেশ, ছোট্ট শহর, ছোট্ট আমার কুড়েঘর

দেখে এলাম জনিকে। কেমন আছে জনি ··? ভালো ! অর্থাভাবে ভালো খাবার দিতে পারছে না জনির নানী। মাতৃহারা এক বছরের এই শিশুকে খাওয়ানো হচ্ছে চায়ের সাথে মুড়ি। ভাগ্যে জুটলে দুধ। বড় বোন ৮বছর বয়সী ঝর্ণাকে দেখলাম তেল না দিতে পেরে চুলে ঝটলা লেগে গেছে।

একরাশ কষ্ট ও দুঃখভরা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফেরা হলো রুবীর বাড়ি থেকে। একটি বাস্তব উপলব্ধি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দুরুহ ব্যাপার। ভাবতে অবাক লাগে এরকম একটি নিষ্পাপ চেহারার মাসুম বাচ্চাকে কোন পাষন্ড নদীর কিনারায় ফেলে যেতে পারে·····! মা নেই! মায়ের মৃত্যুর জ্বলন্ত সাক্ষী জনি। কিন্তু কিছুই বোঝার বয়স হয়নি তার। তার আত্মার প্রতিশব্দ শুনেছে তার মায়ের মৃত্যুপূর্বকালীন আত্মচিৎকার।

জনির মায়ের নির্যাতনের দ্রোহের সেই কালরাত্রীটি দেখেছে সেই লাঘাটা নদী, সেই মাটি, আকাশ-বাতাস, সেই গ্রামের গাছগাছালি। ভাবনার গহীন সীমানায় অতিক্রম করলাম। যেখানে আর কালি ও কলমের কোন সংমিশ্রণ ঘটে না। স্বস্তা ধরের কগজে স্বস্তা ধরের কথাগুলো মূহুর্তেই মিলীন হয়ে যায়। সূর্য এখনো অস্ত হয়নি।

সন্ধা হতে চলেছে। পশ্চিমাকাশে লাল আভাটি এখনো জ্বলছে। ততক্ষণে আমরা মৌলভীবাজার পাড়ি দিয়েছি। এইতো কমলগঞ্জের মাটিতে পা দিলাম। যাচ্ছি জনিকে দেখতে ও ব্লগারদের লাস্ট আপডেট দেওয়ার জন্য।

যানবাহন বলতে মাঝারী টাইপের লাইটেস। আমাদের সঙ্গি বলতে ব্লগার ভাস্কর চৌধুরী (ভাস্কর দা), ব্লগার হামীম ভাই, ব্লগার ড· বিবেক। বলে রাখি হামীম ভাই আমাদের যাওয়ার সুবিধার্থে গাড়িটি দিয়েছেন। কমলগঞ্জের পাঁকা-কাঁচা সরু পথ দিয়ে খুব জোড়েই যাচ্ছে গাড়িটি। ঘুটঘুটে অন্ধকার।

এসে পৌছলাম শমসেরনগর বাজারে। আমাদের আসার সংবাদ শুনে সেই বিকেল থেকে অপেক্ষা করছিলেন আমার দেশ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক এস কে দাস (এস কে দা)। তাকেও গাড়িতে উঠিয়ে শসসেরনগর ইউনিয়ন ছেড়ে রওনা হলাম পতনউষার ইউনিয়নের দিকে। ততক্ষণে এস কে দা জনির বাড়ির সবাইকে ফোনে জানিয়ে দিলেন আমাদের আসার সংবাদ। (সন্ধা ৭·১৫) পতনউষার ইউনিয়নের একেবারে শেষমাথা তথা রাজনগরের থানার শুরু গোপীনগর গ্রাম।

গ্রামটি নিহত রুবীর মায়ের বাড়ি। কিন্তু রুবীর মায়ের কোন ভিটেমাটি নেই। তিনি তার ভাইয়ের বাড়িতেই থাকেন। মূলত সেখানেই যাচ্ছি আমরা। জনি এখন সেখানেই আছে।

এখনো বাড়িতে ঢুকিনি, নিস্তব্ধ, কোন সাড়া শব্দ নেই। ভাবলাম ঘটনার প্রেক্ষিতে বাড়িতে লোকারণ্য কমে গেছে। কিন্তু না আমাদের দেখার জন্য আশপাশের বাড়ির অনেকেই জড়ো হয়েছেন। রুবীর মামা পরিচয় হলাম নিহত রুবীর মামা অসরপ্রাপ প্রাঃ সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুক মিয়া। রুবীর চাচা নিহত রুবীব চাচা মোঃ হাজী হারিস মিয়া।

তিনিই এখন রুবীর মা সিতারা বেগম, দুই সন্তান (জনি ও ঝর্ণা) কে দেখাশোনা করছেন। সাইফুল ইসলামপরিচয় হলাম সম্মিলিত নাগরিক কমিটির কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলামের সাথে। সাংবাদিক ও ব্লগারদের সাথে কথা বলছেন সিতারা বেগম যার জন্য আসা.......। যে মুখটি দেখার জন্য এই সন্ধারাতে এই প্রত্যন্ত গ্রামে। যার খবর নেওয়ার জন্য হাজারো পাঠক অধিক আগ্রহে.......! সেই মুখটি।

(৮·১৮ মিঃ) দেখতে পেলাম জনিকে। জনিকে নিয়ে এগিয়ে আসলো তার নানী সিতারা বেগম। জনি এখন ঘুমিয়ে আছে........! রুবীর চাচা মাসুক মিয়া জানালেন মামলার বর্তমান অবস্থা। তিনি আজ (৬ নভেম্বর) গিয়েছিলেন রাজনগরন থানায়। রুবী হত্যাকান্ডের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই বিজয় দেবনাথ মামলাটি নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছেন।

আজ থানায় গিয়ে মামলার খবর নিতে গেলে তাদের সাথে দুর্বব্যহার করেছেন বলে রুবী মামা মাসুক মিয়া জানান। সবচেয়ে লেটেস্ট আপডেট বলতে যে বিষয়টি এখন বলবো সেটি হলো রুবী হত্যা কান্ডের ব্যাপারে রুবীর শ্বশুর বাড়ির লোকদের পক্ষ থেকে রুবীর চাচার পরিবারের ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করা হয় ঘটনার ১৮দিন পর। আর এই মামলাটি করেন রুবীর স্বামীর বোন। তিনি বিলম্বে করা মামলার প্রেক্ষিতে বলেন, অসুস্থ থাকার কারণে মামলাটি করতে বিলম্ব হয়েছে।

এ ব্যাপারে রুবীর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় রুবীর মা কর্তৃক মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কারনেই এই মামলাটি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার দেশ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক এস কে দাশ জানান, তার পত্রিকায় রিপোর্ট করার কারণে রুবীর স্বামীর বাড়ির লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক এস কে দাস তিনি আরো বলেন, রুবী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে এলাকার দুই মেম্বারবে নিয়ে আমি পত্রিকায় লিখি তারপর থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। রুবীর মৃত্যুর পর ব্লগারদের মধ্যে আমরাই একমাত্র কমলগঞ্জের বাইরের কেউ তাদের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। কিছু করতে পারি আর না পারি সহানুভূতিটুকু নিয়ে পাশে দাড়াতে পেরেছি।

জনিকে ভালো কিছু খাওয়ানোর জন্য আমরা কিছু টাকা দিয়ে এসেছি তার নানীর কাছে। রুবীর মা কাতরকন্ঠে বলেন, আল্লাহ আপনেগো বাচাঁইরা রাখুক। আফনেরাই একমাত্র দেখতে আইছেন। ততক্ষণে জনি ঘুম থেকে জেগে তার কিছু চেনা মানুষের ভীড়ে অচেনা মানুষকে দেখে কিছুটা হতবাক, বিস্মিত। এদিক-ওদিক দেখছে।

নানীকে জড়িয়ে ধরেই আছে। তার জগতের অচেনা মানুষ হয়ে তার স্পর্শ পাওয়ার জন্য কুলে তুলে নিলেন ব্লগার ভাস্কর চৌধুরী (ভাস্কর দা)। এক কথায় জোড়াজুড়ি করেই ···। আমিও কোলে তুলে নেব ভাবছিলাম··· কিন্তু····জনি ওর নানী ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারপর আর কি পাশে বসিয়েই ছবি তুললাম আমাদের জনির সাথে।

ভাবতে অবাক লাগে এরকম একটি নিষ্পাপ চেহারার মাসুম বাচ্চাকে কোন পাষন্ড নদীর কিনারায় ফেলে যেতে পারে·····! মা নেই! মায়ের মৃত্যুর জ্বলন্ত সাক্ষী জনি। কিন্তু কিছুই বোঝার বয়স হয়নি তার। জানতে পারি জন্মগতভাবেই জনির নিউমিনিয়া। ডাক্তার সাব কইছন, ভালা ভালা খাওয়াইতাম। কিন্তু কি-তা ভালা খাওয়াইতাম।

টেকা তো দরকার। চায়ের লগে মুড়ি দিয়া আর মাঝে মাঝে দুধ আনিয়া খাওয়াই। এভাবেই সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় একরাশ দুঃখ ও কষ্টের বর্ণনা করছিলেন জনির নানী সিতারা বেগম। ভাবতে অবাক দুধের বাচ্চাকে দুধ না খাওয়াতে পেরে চায়ের সাথে মুড়ি খাওয়ানো হচ্ছে। হায়রে কষ্ট······! বললাম জনির বাবার কথা····? তিনি কি বলছেন ? তাইন কোন ফোনটোন করইন না।

যোগাযোগও করইন না। তান কোন নম্বরও আমরার কাছে নাই। ভাবতে অবাক লাগছে যেখানে মায়ের মৃত্যুতে বাবার পাশে থাকা কতটুকু জরুরী। এক কথায় ঘাঁ ঢাকা দিয়েই দেশের বাইরে আরাম আয়েশ জীবন কাটাচ্ছেন জনির বাবা। যেখানে তার সন্তানরা ঠিকভাবে খেতে পারছে না, অসুস্থতার মধ্যে প্রতিটি ক্ষণ পার হচ্ছে।

সেখানে কি-না টাকার নেশায় দুবাইকে বেশ আরাম আয়েশ জীবন যাপন করছেন জনির বাবা মাসুক মিয়া। হায়রে দুর্ভাগা······! তোর কষ্টের এ মূহুর্তে পিতার আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হলি·····! একরাশ কষ্ট ও আর দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বেরিয়ে পরলাম নিজ গন্তব্যে। আপাতত বিদায় নিলাম জনিদের বাড়ি থেকে। ততক্ষণে জনির ডাক্তারও ফোন দিলেন আমাদের। তিনি আমাদের সাথে দেখা করবেন।

গোপীনগর ছেড়ে গাড়ীতে চড়ে আসলাম নয়াবাজারে। দেখা হলো জনির ডাক্তার কমলগঞ্জ সদর হাসপাতালের মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আঃ মুকিত সাহেবের সাথে। কথা হলো একটি চায়ের স্টলে। ডাক্তার সাহেব যা জানালেন এই পোস্ট দেওয়ার একটু আগেও ফোন দিয়েছিলাম কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল মুকিত সাহেবের কাছে । তিনি গতকালও জানিয়েছেন , এখনও বলছেন প্রাথমিক ভাবে বুঝা যাচ্ছে যে শিশুটির ক্রনিক নিউমোনিয়া হয়েছে ।

তাকে প্রতিদিন ২৯৫ টাকা দামের একটি করে ইঞ্জেকশন পুশ করতে হচ্ছে , সাথে অন্যান্য ঔষধও চলছে । এই আর্থিক চাপ শিশুটির অসহায় দরিদ্র নানীর পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না । জনিকে দেওয়া ডাক্তারের একটি মাত্র প্রেসক্রিপশন ডাক্তার সাহেব আরো জানালেন, আমি তাদের বলেছি কারও সাহায্য নিয়ে ভালো কিছু খাবার দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা দুধের বাচ্চাটিকে চায়ের সাথে মুড়ি খাওয়াচ্ছে। আমি শুনে হতবাক......! প্লিজ আপনারা কিছু করেন? একজন জনির জন্য কিছু অবিভ্যক্তি, কিছু বলা, কিছু দায়বোধ, দায়ভার···········! বাস্তব আর বাস্তবতাকে স্বীকার করার কিছু প্রয়াস।

হাজার জনির জন্য কিছু করতে না পারি। কিন্তু একজন জনির জন্য কিছু করতে পারবো ? অনেকেই পাশের থাকার কথা বলেছেন ! সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন! টাকা দিবেন, এখানে আসবেন, স্পন্সর ইত্যাদি। আমরা মঞ্চে অনেক বুলি ওড়ানো কথাই শুনি। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটা কি শুধু বুলি ওড়ানো! না-কি·····? একটা নির্মম বাস্তব উপলব্দি করে আসলাম গতরাতে। একদিকে জনির জন্য কষ্ট ও দুঃখ অন্যদিকে ক্লান্তির ছাপরেখা থাকায় ব্লগে বসেনি।

পোস্টও করেনি। দিতে পারিনি আপডেট। তাই আজ এ লেখা·······! রাত ১০টায় একরাশ অভিজ্ঞতা, কষ্ট ও দুঃখ নিয়ে জনির বাড়ি থেকে ফেরা নিজ গন্তব্যে। যে বিষয়টি এখন প্রধান হয়ে দাড়িয়েছে ১· রুবী হত্যা মামলার ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপশি আইনী সহযোগিতা করতে হবে।

২· জনির উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি তহবীল গঠন করা জরুরী। ৩· অভাবের তাড়নায় জনিকে স্বস্তা ধরের খাবার দেওয়া হচ্ছে। ডাক্তার বলেছে ওর মানসম্মত খাবার প্রয়োজন। ৪· হয়রানী মূলক মামলা থেকে জনির নানী সিতারা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের হেফাজত করতে হবে। না হয় জনি ও তার বোন ঝর্ণা একা হয়ে পড়বে।

৫· এ ব্যাপারে ঢাকা, সিলেট কিংবা বিভিন্ন জায়গায় জরুরী ভিত্তিতে সভা আহবান করা যেতে পারে। ৬· বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধনের আয়োজন করা যেতে পারে। এরই লক্ষে আগামী সোমবার ১০ নভেম্বর এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে কমলগঞ্জে। আমরাও সেখানে যাচ্ছি। ব্লগারদের সুবিধার্থে রুবীর আত্বীয় স্বজনের নাম্বার দেওয়া হলো····! ১· নিহত রুবীর মামা মাসুক মিয়া-০১৭১৫-৩৫৮২৬৯ ২· নিহত রুবীর চাচা হাজী হারিস মিয়া -০১৭২৭-০৫৪৮৫০ ৩· সম্মিলিত নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম-০১৭১৬-২৯১১২৪।

৪· জনির ডাক্তার আঃ মুকিত-১১৭২০-৫১১২৭৮, ০১৭১১-৩৭৬৭৯১ ৫· স্থানীয় সংবাদিক এস কে দাশ-০১৭১১-১৬৪১০৫। ব্লগার ভাস্কর চৌধুরী'র কোলে জনি রুবি হত্যাকান্ড এবং জনিকে নিয়ে ব্লগার ভাস্কর চৌধুরী'র তথ্য বহুল প্রথম পোস্ট দেখুন- জনিরা জলে উঠুক প্রতিশোধের আগুনে........../ভাস্কর চৌধুরী

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.