আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মসলিন কাপড়ের ইতিহাস



আমার এক class 5 এর ছাত্রকে পরানোর সময় প্রথম জানতে পারি মসলিন সংক্রান্ত চমৎকার একটি তথ্য। তারপর বাংলা wikipedia তে সার্চ দিয়ে যা পেয়েছি তা এখানে দেওয়া হল। মসলিন তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুত করা এক প্রকারের অতি সুক্ষণ কাপড়। এটি প্রস্তুত করা হতো পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও অঞ্চলে। মসলিনে তৈরী করা পোশাকসমূহ এতই সুক্কণ ছিলো যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দেশলাই বাক্সে ভরে রাখা যেতো।

ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে উনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীয় ভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত করা আমদানীকৃত কাপড়ের উপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিলো। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের তাঁতশিল্পে ধ্বস নামে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উৎপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী তাঁতীদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেয় বলে কথিত আছে মূলত ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় উৎপন্ন তুলা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সুতা তৈরি করে তা দিয়েই বোনা হতো মসলিন। আর কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে সুক্ষতা আর দক্ষতা ফুটিয়ে তোলার যে জ্ঞান সেটা তাঁতিরা অর্জন করতেন অনেকটা বংশানুক্রমেই। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে ঢাকায় পা রাখা একাধিক পর্যটকের হাত ধরে মসলিন এর খ্যাতি পৌঁছে যায় চীন থেকে রোম অবধি।

সেখানকার সম্রাট আর রাজা-বাদশাদের উপঢৌকন হিসেবে সীমিত আকারে রপ্তানি হতে থাকে ঢাকাই মসলিন। একই ভাবে মসলিন এর উন্নত ও অনুন্নত কিছু সংস্করণ সে সময় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছেও। তবে ঢাকাই মসলিন তার খ্যাতি এবং মনোযোগের শীর্ষে পৌঁছায় মূলত মোঘল শাসনামলেই। মোঘল বংশীয় নবাব আর জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় মসলিন যেমন আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে তেমনি ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেও বাড়তে থাকে এর গুরুত্ব। মলমল, ঝুনা, রঙ, খাসা, শবনম, আলাবালি, তানজিব, নয়নসুখ, কুমিস, ডুরি, চারকোনা, জামদানী প্রভৃতি হরেক মান আর হরেক নামে মসলিনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজোড়া।

আর খ্যাতির এই টানেই বহু ইংরেজ বণিক ছুটে আসেন ঢাকাই মসলিনের কাছে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, বাংলার ঐতিহ্য আর ঢাকার গর্ব সুক্ষাতিসুক্ষ এই কাপড়ের নাম মসলিন হবার পেছনেও হাত রয়েছে ইংরেজ বণিকদেরই। কারো কারো মতে ইরাকের মসুল শহর থেকে আমদানী করা পাতলা কাপড়কেই মসলিন বলতো ইংরেজরা। আবার কেউ কেউ মনে করেন ভারতে ইংরেজদের বাণিজ্যিক আখড়া মুসলিপট্টম এর নাম থেকেই উদ্ভব হয়েছে মসলিন নামটির। তবে নাম নিয়ে যতো সংশয়ই থাকুক না কেন, এটা সবাই প্রায় এক বাক্যেই স্বীকার করেন যে সে আমলে ঢাকাই মসলিন এর মতো এতোটা খ্যাতি আর মান আর কোথাও ছিল না।

পলাশীর যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইংরেজ বণিকদের স্বেচ্ছাচার, ক্ষমতা হারানো মোঘল নবাবদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আর ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সাথে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পারায় ক্রমেই বিলুপ্তির পথে অগ্রসর হয় ঢাকাই মসলিন। ঢাকা, সোনারগাঁও, ধামরাই, জঙ্গলবাড়ি এবং বাজিতপুর এলাকার যেসব তাঁতিরা মসলিন কাপড় বুনতেন তারা টিকে থাকার স্বার্থে তাদের কাজের ধরণ পাল্টে ফেলেন। ফলে যুগ যুগ ধরে যে বংশানুক্রমিক ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতা মসলিনকে দিয়েছিল আকাশছোঁয়া খ্যাতি, সেই মসলিন বুননের জ্ঞানও হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। মানের অবনমনের পাশাপাশি সুক্ষ তন্তুজাত এই শাড়ি সংরণের অভাবে হারিয়ে যায় ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকেও।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।