গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না
দেশ থেকে আসার আগে একবারও ইচ্ছা হয়নি গুগল ইমেজে কোরিয়া কেমন একটু দেখি। আসার পর ভাবলাম আমি যেখানে থাকি মনে হয় সেটাই পাহাড়ী এলাকা, পরে দেখি ওরে নারে চারিদিকে খালি পাহাড় আর পাহাড়। তাও ভালো ক্যাম্পাসে খুব বেশি উঁচু নীচু না। অনেক ক্যাম্পাসে নাকি বিশাল পাহাড় বাওয়া লাগে ল্যাবে যাইতে আসতে। জন্মের পর থেকে কোনদিন পাহাড়ে উঠিনাই, মানে চান্স পাইনাই আর কি।
নাদুস নুদুস ভাবে বেড়ে ওঠা শরীর, সমতলে রিক্সা ছাড়া চলিনা তার উপর আবার পাহাড়।
যাইহোক গতবছর আসার পর পর একবার ঠেলায় পড়ে পাহাড়ে উঠছিলাম, প্রায় আড়াই ঘন্টা ওঠার পর চূড়ায় পৌঁছাইছিলাম। তখন ভালো লাগছিলো না খারাপ লাগছিলো ঠিক মতো বুঝিনাই। তবে একদম মাথায় ওঠার পর এটুকু মনে হইছিলো, বাপরে দুনিয়া এত উঁচা? আর এইখান থেকে একখান গড়ান খাইলে কই যামু? ফিলিংস যেমনই হোক এরপর পাহাড়ের কথা শুনলেই পিছলা খাইতাম, শেষবার জেজু দ্বীপে যেয়ে কোন রকমে বাঁচছি, কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর ছিলো স্পোর্টস ডে। সেন্টার থেকে সবাই যায়।
অজুহাত দিতে আর ইচ্ছা করলোনা। বল্লাম যাবো তোমাদের সাথে।
সকাল সোয়া ৮ টার দিকে আমরা কয়েকজন এক জায়গায় মিলিত হলাম। ১৬৩ নাম্বার বাসে করে ১০ মিনিট পরে একজায়গায় নামলাম। আরেকটা সবুজ বাস নিতে হবে পাহাড়ের গোড়ায় যাওয়ার জন্য।
ওখানে বাকি সবাই মিলিত হবে। সবুজ বাস ১৫ মিনিট পরে নামিয়ে দিলো। সবাই তখনও আসেনি। নয়টা বিশের ভিতর প্রায় সবাই চলে আসলো। এরপর আমরা শুরু করলাম উপরে ওঠা।
শুরু হলো উপরে ওঠা
কোথাও কোথাও মাঝারি সাইজের পাথর বসিয়ে বসিয়ে ওঠার জন্য সিড়ি মতো করা থাকে, কোথাও কাঠের গুড়ি বিছানো থাকে। কোথাও বা দড়ি বাঁধা থাকে ধরে ধরে ওঠার জন্য। আস্তে আস্তে বন ঘন হতে শুরু করলো। প্রায় ৩০ মিনিটেই সবাই হাঁপিয়ে গেলো। একটা খোলা জায়গায় বসলো সবাই।
ওখানে ট্যাপ বসানো আছে খাওয়ার পানির। আবার শুরু হলো উপরে ওঠা।
প্রথম বিশ্রামের আড্ডা
প্রথম পিক থেকে দূরের সিউল
প্রায় ৪০ মিনিট ওঠার পর একটা গেটের মতো পেলাম আমরা। ওটা সিউল রক্ষার জন্য একটা দরজা, দরজার দুইপাশ দিয়ে পাঁচিল নেমে গেছে পাহাড় বেয়ে। এটা হলো প্রথম পিক, মূল উচ্চতার মাঝামাঝি।
ঐ পাঁচিলের ফোকর দিয়ে কোনদিন গোলাগুলি হয়েও থাকতে পারে। ওখান থেকে আরও ৪০ মিনিট ওঠার পর পৌঁছালাম একদম শীর্ষে (প্রায় ৮৫০ মিটার)। ওখানে পাটি বিছিয়ে চললো হালকা খাওয়া দাওয়া।
গেটের ভিতরে কাঠের উপর নকশা
এমন সময় ঘন কালো মেঘ করে এলো, সাথে কনকনে বাতাস। তাড়াতাড়ি নামা শুরু করলাম আমরা।
হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেলো, সাথে ছাতা আছে কিন্তু ছাতা হাতে অতোটা খাড়া পাথর বেয়ে নামা সম্ভব না। তাই মাথা ভিজে গেলো, যদিও একটু পরে ভাগ্যক্রমে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্ত ঐটুকু বৃষ্টিতেই পিছলা হয়ে গেলো পড়ে থাকা পাতা আর পাথর। খুব সাবধানে ধরে ধরে নামতে হল, কোথাও পাথরে বসে বসে আস্তে আস্তে। কারন পাশের খাদ অনেক নীচু, পড়লে রক্ষা নাই কোন।
একসময় নীচে নেমে আসলাম আমরা, তারপর আমাদেরকে নিয়ে ঢুকলো একটা চাইনিজ রেস্তোরায়। আমাদের জন্য ফ্রাইড রাইস উইথ ভেজিটেবল, চিকেন এর একটা আইটেম আসলো। এতো পাহাড় বাওয়ার পরে ক্ষিদার চোটে নিমেষে সব শেষ হয়ে গেলো।
খাইদাই শেষ করে বাসায় ফিরে ফ্রেস একটা গোসল দিয়ে কি আরাম। কিন্তু আসল কাহিনী হলো পরের দিন সকালে।
নিজের পা জোড়া আর নিজের রইলোনা। শক্ত লোহার ন্যায় নট নড়নচড়ন হয়ে গেলো। তবু রক্ষা দুই দিন পরে নিজের পা জোড়া আবার নিজের দখলে এসেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।