ধুম ধাম ধুম।
ক্লিলি ১
ক্লিলি ২,৩
গল্পটা যারা পড়ছিলো, তাদের কাছে আমি দু:খিত।
আমার গল্পটা আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
গল্পটা আমার মাথায় ছিল বেশ কদিন, এবং আমার মনে হচ্ছিল গল্পটা বলার মতো। গল্পটা অনেক পরের একটা সময়ের, যখন রোবটরা লেখালেখি শুরু করে।
সেই বিশেষ রোবটগুলোকে মানুষই বানায়, তাদের থেকে বিশাল মাপের আয় করার জন্য। এই রোবটগুলোকে আমি বলছিলাম রাইটারবট। রাইটারবটদের অনেকগুলো প্রসেসর এবং অনেক বড় ডাটাব্যাংক। তারা পৃথিবীর সব সাহিত্য পড়েছে এবং প্রতিদিন যা কিছু লেখা হয় পৃথিবীতে, যত ভাবনা ভাবা হয়, তার সমস্ত তাদের ফিড করা হয়।
একটা রাইটারবটের অনেকগুলো টুল থাকে।
নির্ভর করে রাইটারবটটার উপর। কারণ প্রতিটি রাইটারবটের ডিজাইন ইউনিক। একেকজন একেকভাবে ভাবে। একেকভাবে কল্পনা করে, একেকভাবে দেখে।
আমার গল্পটা ছিল একটা ব্যর্থ লেখকের, যে তার নিজের মতো লিখতে ভালোবাসতো, এবং পৃথিবীতে তার কোন দাম ছিল না।
কারণ রাইটারবটরা অসম্ভব ভালো লিখে এবং তাদের সাথে মানুষ প্রতিযোগিতায় যেতেই পারে না, কারণ মানুষের চিন্তাভাবনা এবং ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। সে সবাইকে পিছে ফেলে নিজেকে আলাদা করে ফেলল কারণ সে চাইতো না সবাই তাকে মনে করিয়ে দিক সে কতটা ছোট। এবং সে নিজের মতো করে এক ধরণের লেখা লিখতে চেষ্টা করতো, যেটাতে সে মোটেই ভালো ছিল না, কিন্তু অনেক দিন টানা চেষ্টা করার পর একটা সময় সে আসলেই তা করতে পারা শুরু করলো যেটা সে করতে চাইছিল।
ওর বয়স যখন ষাট এর কাছাকাছি তখন সে একটা অদ্ভূত অফার পেলো, তার প্রিয় রাইটারবটের সাৎক্ষাতকার নেয়ার। এর পরের গল্পটা একটু জটিল, সে আবিষ্কার করলো, রাইটারবটরা খুব দু:খী।
তাদের দু:খটা বুঝতে হলে তাদের মানুষ ভাবতে হবে, একটা মানুষ যার অনুভূতিগুলো ইনটেনসিফাই করে অনেক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য তাকে লেখার ক্ষমতা ছাড়া আর কিছু দেয়া হয়নি। সে কারো বন্ধু না, সে কাউকে ভালোবাসে না, কিন্তু সে ভালোবাসা খুব ভয়ংকর তীব্রভাবে অনুভব করে। এই জিনিসটা লেখা খুব চ্যালেন্জিং ছিলো, কারণ আমার গল্পে ইস্কান্দিওর এই রাইটারবটটাকে ভালোবেসে ফেলে। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক, কিন্তু জিনিসটাকে স্বাভাবিক করে লেখা যায়, এবং সেটা চ্যালেন্জিং।
রাইটারবটটাকে ভালোবাসার কারণ অনেকগুলোই হতে পারে, রাইটারবটটা ইস্কান্দিওর এর মতোই একা, এবং তাদের দুজনের যথেষ্ট মিল, দুজন দুজনের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে, এবং দুজন অনুভূতি এবং ভাবনার দিক থেকে খুব চার্মিং।
ইস্কান্দিওর কখনো কাওকে ভালোবাসেনি, তার কাছে এই ব্যাপারটা অদ্ভূত ছিল, অদ্ভূত এবং প্রচন্ড ম্যাজিকাল এবং প্রচন্ড শক্তিশালী। কাউকে ভালোবাসা এবং বিনিময়ে তীব্র ভালোবাসা পাওয়া। ইস্কান্দিওর ফিরে আসে তার বাসায়, তার একা বাসায়, যেটা মেঘের খুব কাছাকাছি, ইস্কান্দিওর তার তীব্র ভালোবাসা নিয়ে সেখানে মেঘের কাছাকাছি বসে থাকে, কারণ ক্লিলির সাথে তার যোগাযোগের কোন উপায় নেই।
ইস্কান্দিওর তার বাকি জীবণ কাটায় ক্লিলিকে ভালোবেসে, এবং প্রতিদিন ক্লিলির নতুন উপন্যাস এর জন্য অপেক্ষা করে।
ইস্কান্দিওর জানতো না ক্লিলি তাকে মিস করে কিনা, কারণ সেটা জানার কোন উপায় ছিলো না।
এবং একটা সময় ইস্কান্দিওর মারা যায়।
ক্লিলি বেঁচে থাকে অ্যান্টারটিকার সমুদ্রের গভীরে, আরো কয়েকশত বছর, যতদিন না ওর কম্প্লিট রি-কনস্ট্রাকশন এর প্রয়োজন হয়।
ইস্কান্দিওর মারা যাবার পর, ওর পিসিটা একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মেশিনের দোকানে বিক্রি করে দেয়া হয়। এবং সেটা কেনে একটা সাধারণ ছোট ছেলে, ১৫ বছরের।
যে একা একা কবিতা লিখে আর সব কবিতা লুকিয়ে রেখে দেয় সবাই তাকে পাগল ভাববে বলে, একা একা ফিসফিস করে গান গায়, কারণ তার গান কেউ কখনো ভালোবাসেনি। এবং ছেলেটা যখন পিসিটার ফাইলগুলো পড়তে থাকে, সে বুঝতে পারে জিনিসগুলোর গুরুত্ব।
ইস্কান্দিওর একটা বড় ফাইল রেখে গিয়েছিল।
তার জীবণের একমাত্র উপন্যাস, একমাত্র - এবং সর্বশেষ।
সেটার নাম ছিল অতিমাত্রিক, আর সেটা ছিল সেই মিলিনিয়ামের সবচে' বেশি বিক্রিত বই।
সেটা ছিল প্রথম ষষ্ঠ মাত্রার সাহিত্য। এবং সেই বইটা পাবলিশ হবার কিছুদিনের মধ্যে বিশুদ্ধ সাহিত্য পুরো পাল্টে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো কোন জিনিস এত তাড়াতাড়ি এত বেশি পাল্টায়নি, এবং পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো একটা বই এত বড় মাপের রেভুলুশন আনতে পারেনি।
ইস্কান্দিওর চেষ্টা করেনি বইটা রাইটারবটদের মতো করে লিখতে। কিন্তু যে কেউ বইটা পড়লেই বুঝতো, ইস্কান্দিওর নিজের মতো করে লিখতে চেয়েছিল, এবং লিখেছিলোও।
সে কোন স্ট্যার্ন্ডাড ফর্ম মানেনি, এবং তার শব্দ আর বিশেষণগুলো মোটেও ঝকঝকে ছিল না। কিন্তু উপন্যাসটা পড়ার সময় খুব করে মনে হতো, এটা একটা সত্যিকারের মানুষের লেখা। আবার এও মনে হতো, যে এটা কোন মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভবই নয়!
--
গল্পটা সুন্দর ছিল - আমার তাই মনে হয়।
আমার মনে হচ্ছিল গল্পটা মৌলিক, এবং সেটাই সবচে' দারুণ জিনিস, আমি লিখতে মজা পাচ্ছিলাম সে জন্য। মাথার মধ্যে একটা গল্প থাকার পর যখন সেটা একটু একটু করে বেরোতে দেখি - তখন অদ্ভূত লাগে, কারণ যে গল্পটা বের হয়, সেটা ঠিক পুরোপুরি মাথার গল্পটা না, আরো ম্যাচিউর কিছু, আরো সুন্দর এবং পূর্ণাঙ্গ কিছু্ ।
কিন্তু হঠাৎ করে, আমার মনে হচ্ছে, আমি ঠিক লেখক হবার জন্য জন্মাইনি। এবং আমার মনে হচ্ছে, এটা আসলে আমার চয়েস .. আমি কি করবো আমার সময় নিয়ে ..
And I have better things to do with my life!
--
ইস্কান্দিওর গল্পের মোরাল ছিল অনেকটা এরকম
dont let the giants tell you that you are small,
cause if you are small then thats the best thing about being a giant!
আমি চাচ্ছিলাম, গল্পটা এমন ভাবে লিখতে যাতে শেষে গিয়ে এই জিনিসটা মাথায় ঘুরতে থাকে, যে যেভাবেই ভাবুক, ঠিক সেভাবেই তার মাথায় জিনিসটা ঘুরুক। লাইনদুটো না বলে কারো মাথায় লাইনদুটো ঢুকানোর লোভটা আসলেই ভয়ংকর। কেউ কখনো ব্যাপারটা না চেষ্টা করলে আমি বোঝাতে পারবো না।
--
আমি খুব দু:খিত এক নিশ্বাসে গল্পটা বলার জন্য।
এই গল্পটার কোন কপিরাইট নেই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।