রবিউল ইসলাম ইংরেজি বলতে পারেন না। ম্যাচসেরা হয়েও মাইক্রোফোনের সামনে কিছুটা যেন বিব্রত তিনি। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সহায়তায় নিজের ‘বক্তব্য’ তুলে ধরলেন। বক্তব্য যা দিলেন, তাকে সেরকম কিছু না বলে ‘হুঁ-হাঁ’ জাতীয় কয়েকটি শব্দের মিলিত রূপ বলা যেতে পারে। কথার বদলে চালিয়ে গেলেন ইশারা।
ইংরেজি বলা দূর থাক, লজ্জায় কুঁকড়ে যেন কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গেলেন, ওই জায়গায় মাতৃভাষা বাংলায় কথা বললেও চলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব সম্ভবত এই প্রথম কোনো ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইশারায় প্রকাশ করলেন নিজের অনুভূতি।
মাঠের বাইরে সরলপ্রাণ বাংলাদেশের এই খেলোয়াড়টি কিন্তু মাঠে ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সব মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ ১৫ উইকেট। মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটজনিত অনুপস্থিতিতে একজন ভালো পেসারের জন্য বাংলাদেশ শিবিরে যখন রীতিমতো হাহাকার, ঠিক তখনই চারদিক আলোকিত করে যেন আবির্ভাব রবিউলের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নিজের চওড়া কাঁধে বয়ে বেড়ালেন গতি-আক্রমণের সব দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তিনি কেবল বয়েই বেড়ালেন না, সফল হয়ে দেখিয়ে দিলেন যে পেসারদের নিয়ে হাহাকারের এই দেশে তিনি আশ্চর্য এক ব্যতিক্রম।
ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত নাম এই রবিউল ইসলাম। পেসারদের জন্য বন্ধ্যা উইকেটেও ক্লান্তিহীন বল করে যেতে সিদ্ধহস্ত তিনি। এ জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর বেশ কদর।
তিন বছর আগে, ২০১০ সালে, টেস্ট অভিষেকটা তাঁর লর্ডসে। তিন বছর আগে অভিষিক্ত হলেও এই প্রথম তিনি এলেন লাইমলাইটে। অভিষেকটা তাঁর ছিল উইকেটশূন্য। তিন বছরে চারটি টেস্ট খেলে সাকল্যে আট উইকেট পাওয়া রবিউল জিম্বাবুয়ের মাঠে যেন একেবারেই বদলে যাওয়া এক বোলার। সিরিজসেরা হয়ে দেখিয়েও দিলেন, তিন বছর আগের রবিউল আর এই রবিউলের অনেক তফাত।
পরিশ্রম করে আপাদমস্তক বদলে যাওয়া এক পেসার এখন তিনি, যাঁর বলে আছে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির সব অনুষঙ্গ।
দ্বিতীয় টেস্টে ক্লান্তিহীন বল করে গেছেন। পেসার হয়েও পুরো সিরিজে ১১০ ওভার বল করে তিনি অবাক করে দিয়েছেন হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের দর্শকদের। সিরিজসেরার পুরস্কারটি তাঁর হাতে তুলে দিয়ে তাই অবধারিতভাবেই তাঁর দিকে ছুটে গেল প্রশ্নটি। উত্তরে মুশফিকের জবানিতে বললেন নিজের দৃঢ়তার কথা, ‘প্রয়োজনে আরও ১০০ ওভার বল করতে বললেও আমি পারব।
’ ভাষ্যকার অবাক হলেও রবিউলকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, কেবল বলার জন্য কথাটা বলেননি তিনি। তিনি আসলেই আরও ১০০ ওভার বল করতে পারতেন।
রবিউলকে যে পারতেই হবে। পেসার নিয়ে হাহাকারের এই দেশের ক্রিকেটে তিনি যে এখন অনেক বড় ভরসা!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।