আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Critics Fear Criticism most....! (গল্প)

আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..

[“মাইকেলের কাব্যে শিল্পবোধের তুলনায় নিজেকে জাহিরের প্রবণতা অধিক, জীবনানন্দের ছন্দশৈলী কাব্যিকতাবর্জিত, বঙ্কিমের সব লেখা হয়ত তিনি নিজেও ভালো বুঝতেন না, রবীন্দ্রনাথ শব্দচয়নের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল, নজরুল প্রাচীনপন্থী, বাংলা সাহিত্যে ভলতেয়ার, দস্তয়েভস্কি, কাম্যু’ র নন্দনতত্ত্ব উপস্থাপনের মত যথেষ্ট মানসম্পণ্ন লেখক একজনও নেই ......”- .. সমালোচনা করার সময় সমালোচকরা সম্ভবত নিজেদেরকে মানবীয় বোধ-বিবেচনার ঊর্ধ্বে কল্পনা করে ফেলেন ; তাই,কী বলছেন-কার সম্বন্ধে বলছেন, এসবের পরিবর্তে বলতে পারাটাই তাদের বিবেচনায় পরম সার্তকতা! কিন্তু তাদের এমন অপবাক্যের ঝঙ্কার কাহাতক সহ্যসীমায় থাকে? সুতরাং, রগচটা স্বভাবের-সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় এধরনের পণ্ডিতমন্য সমালোচকের প্রতি ক্ষুব্ধ হলে অবাক হওয়ার কী আছে? সেই ক্ষুব্ধতারই বহিঃপ্রকাশ সুদূর পরপার থেকে সম্প্রতি দেশের জনৈক প্রথিতযশা সমালোচককে লেখা তার কয়েকটি চিঠি! বিজ্ঞ সমালোচকের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে তার প্রকৃত পরিচয় এখানে গোপন রাখা হল!] সুচরিতেষু, সাহিত্য সংক্রান্ত তোমার বক্তব্য শ্রবণ করিয়া কিরূপ প্রীত হইয়াছি কী বলিব। রবি-দুখু-মধুরা যে সাহিত্যকে পথভ্রষ্ট করিবার দুঃসাহস দেখাইয়াছে, দেরিতে হইলেও তোমার বদান্যতায় এ গজমূর্খ জাতি তাহা অনুধাবন করিতেছে। আমি দিব্যনয়নে অবলোকন করিতেছি তুমিই হইবে বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত : প্রাচ্য-পাশ্চাত্য-ইউরোপ-ইতালি কোনকিছুর নির্যাস হইতেই তোমার লেখনী বঞ্চিত হইবেনা! তথাপি, তাহার প্রাক্কালে তোমার সমীপে এ 'কুপমণ্ডুক-কুলেখকের' দু’খানি সরল জিজ্ঞাসা : 'সাহিত্য' বলিতে তুমি আদতেই কি কিছু বুঝ? কাব্য-উপন্যাস বাদ দিলাম,তুমি কি জীবনে এমন একখানি ছোট গল্পও লিখিয়াছ যাহাকে পাঠযোগ্য বলা চলে? -তোমার উত্তরের প্রতীক্ষায় রহিলাম.. আরজদার- শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় #চিঠি পেয়ে অপমানে নীল সমালোচক সাহেব তৎক্ষণাৎ উত্তর লিখেই ক্ষান্ত হলেননা, সঙ্গে নিজের লেখা এমন একটি গল্প পাঠিয়ে দিলেন যেটি তাকে বিশ্বসাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকারের স্বীকৃতি এনে দেবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস...! বঙ্কিমসাহেব, অপরিচিত কাউকে নির্দ্বিধায় 'তুমি' সম্বোধনের অভদ্রতা পুনর্বার না করলেই খুশি হব। সাহিত্য আমি কতটুকু বুঝি তার সনদ আপনার না দিলেও চলবে ; তবুও আপনার জন্য ছোট্ট একটা পরিসংখ্যান দেই: শুধুমাত্র তুলনামূলক সাহিত্যের উপরই আমার ২৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, উপন্যাস ২৯টি, ছোটগল্প অগণিত... আর অন্যান্য প্রসঙ্গের অবতরণ বাহুল্যমাত্র! আপনাদের সাধুভাষার আটপৌরে লেখনীকে 'সাহিত্য' না বলে আমি বরং 'ঔদ্ধত্য' আখ্যা দিতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি। যাহোক, 'অনুর্বর-মস্তিষ্কের' মানুষই কেবল আমার বিবেচনায় আপনাদের “মহান লেখক” ভেবে আত্মরতিমগ্ন হয়।

তাই আপনার নিজের আত্মশুদ্ধির উদ্দেশ্যেই আমার লেখা একটি কালজয়ী ছোটগল্প পাঠিয়ে দিলাম। আশা করি, এটি পড়ার পর নিজেকে সাহিত্যসম্রাট ভাবার ভ্রান্তবিলাস থেকে আপনি বেরিয়ে আসবেন। আর, এতকিছুর পরও যদি চিঠি লেখার মত সৎসাহস থাকে, তবে লিখবেন... ইতি- আবু মজিদ আমার গল্পটি : “ বিবেকের খামখেয়ালি এবং তারপর...” আমি রিদম আহসান; বয়স ৩৭, পেশায় ব্যাংকার, বেতন যা পাই তাতে আমাদের টোনাটুনির সংসার চলে যায় একরকম: এই সর্বসাকুল্যে ৪০ হাজার!বনানীতে একটি এপার্টমেণ্ট নিয়ে থাকি। অনর্থক পরিচয়পর্ব দীর্ঘ না করে আসল প্রসঙ্গে যাওয়া যাক। আগেই বলে রাখি আমার স্ত্রীর ভীষণ গহনার শখ।

প্রতিমাসে বেতনের সিংহভাগ ব্যয় হয় তার গহনার পেছনেই ; গতকাল বেতন পাওয়া মাত্রই কী ঘটল : সঙ্গে সঙ্গে বউ রেডি। আমার আর কী করা_ তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হল। বলে রাখা ভাল , কেনাকাটার ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন হওয়ায় বউ কখনও আমাকে নিয়ে দোকানে ঢুকেনা। তাই আমি তার হাতে সর্বস্ব তুলে দিয়ে রিক্সায় বসে রইলাম আর মনে মনে দোআা জপতে থাকলাম যেন বউয়ের কিঞ্চিৎ দয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর আমার তিনি যখন ফিরে এলেন জিনিসের বহরে তাকে দেখাই যাচ্ছিলনা!তার কাছ থেকে অবশিষ্ট টাকা বুঝে পেয়ে আমার মাথায় হাত- সবশুদ্ধ ৩২হাজারের শ্রাদ্ধ!অতঃপর ফিরতি যাত্রা... ফিরেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বউ হনহন করে উপরে উঠে গেল ; পক্ষান্তরে রিক্সার ভাড়া মেটাতে গিয়ে আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে : শুরুতেই রিক্সাওয়ালা বলল, “স্যার এতক্ষণ আমারে আটকাইয়া না রাইখলে বহুত খ্যাপ দিবার পারত্যাম ; ভাড়া দিওনের সময় একটু ইনসাফ কইরা দিয়েন।

” আমি মুচকি হেসে ২০ টাকার (ঘামে ভেজা ) একটা নোট যখন তার হাতে তুলে দিলাম সে যেন আকাশ থেকে পড়ল, “এইডা কী করলেন স্যার ; এমনিইতো ভাড়া ৩০টাকা, তারউপর দুইঘণ্টা আটকাইয়া রাইখ্যা অহন ২০ টাকা দিবার লাগছেন। ” হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়ায় লাগামহীনভাবেই বলে চললাম,“এই হারামজাদা, তোরা রিক্সা না চালিয়ে ডাকাতি করিসনা ক্যান; ২০টাকার ভাড়া ৩০টাকা চাস; মামাবাড়ি পাইছো চান্দু?”- “স্যার এমন করতেছেন ক্যান,আমি অন্যায়ডা কী কইলাম ; আপনেরা আমাগো না দেখলে কই যামু?” আমার স্যুট-টাইয়ের ফাক গলে আসল আমি বেরিয়ে এল এ কথার প্রেক্ষিতে : সপাটে রিক্সাওয়ালার জীর্ণ গালে চড় কষিয়ে বলে উঠলাম,“ এই শালা বেজন্মার বাচ্চা, আমি কি দেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি যে তোদের ভার আমায় বইতে হবে? ফের কথা বলেছিস তো...” রিক্সাওয়ালা কথা না বাড়িয়ে টাকাটি নিয়ে নিল। সে মুহূর্তে পাশ দিয়েই ১ খোঁড়া ভিক্ষুক যাচ্ছিল ; ২০টাকার নোটটি সে ভিক্ষুকটিকে দিয়ে একবার মাত্র আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল, এরপর দ্রুত চলে গেল দৃষ্টির বাইরে! বাসা-অফিস-বউয়ের কেনাকাটা এই বৃত্তেই জীবন ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেদিন কত তারিখ ছিল মনে নেই ; সাধারণত রাত ৭-৮ টার আগে আমার বাসায় ফেরাটা অস্বাভাবিক হলেও কোন এক জরুরী কাজে সেদিন দুপুরে ফিরতেই হল। সিড়ি বেয়ে উঠার সময় ১৬-১৭ বছরের একটি ছেলেকে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামছে ; ওর হাতে ধরা আমার শ্বাশুড়ির দেয়া নতুন পাঞ্জাবিটা আমায় দেখে মৃদু হাসছে! ব্যস, খপ করে ছেলেটার টুটি চুপি ধরে নিচে নামলাম, আমার মাথায় তখন জলোচ্ছ্বাসের উদ্দাম নৃত্য ; তাই গেটের দারোয়ানের হাতে ধরা সাড়ে ছয় ইঞ্চি পুরু রোলার দিয়ে সর্বশক্তিতে ওকে পেটাতে লাগলাম।

ওর গগনবিদারী আর্তনাদে মুহূর্তের মধ্যে সেখানে লোক জড়ো হল ; ক্ষুধার্ত নেকড়ে শিকার পেলে যেমন ছিড়ে ফুড়ে খায় , তেমনি আমরা যে যার মত ছেলেটিকে মেরে পাশবিক ক্ষুধা নিবারণে সক্রিয় হলাম , এমনকি আমাদের পাশের ফ্যামিলির ছয় বছরের ছেলেটাকেও দেখলাম ভীড়ের মধ্যে চোরটাকে দু’ এক ঘা বসাতে। নিজেকে হঠাৎ ভীষণ স্মার্ট মনে হল, একটা পাঞ্জাবির এত দাম! অনেক দিন কেটে গেছে। ইতিমধ্যে প্রমোশন হওয়াতে বেতনও কিছু বেড়েছে, অর্থাৎ জীবনের পালে হাওয়া লাগছে একটু একটু করে। অবশেষে এল সেই ভয়াল রাতের অভিশাপ : তখন রাত প্রায় ২টা। অফিস থেকে ফিরে ক্লান্তিজনিত কারণে ঘুমিয়ে পড়েছি বহু আগে।

হঠাৎসিড়িতে পায়ের আওয়াজের অনুনাদ শুনতে পেয়ে হকচকিয়ে উঠে বসলাম। ধীরে ধীরে আওয়াজ বাড়তে বাড়তে আমাদের দরজার সামনে থিতু হল ; দড়াম শব্দে দরজা ভেঙে পড়তেই ৭-৮জন অস্ত্রধারী যুবক তড়িৎ গতিতে ভেতরে ঢুকে পড়ল। আমরা ভয়ার্ত দম্পতি জড়সড় হয়ে বসে রইলাম। খানিক বাদে ওদের দলপতি আমার দিকে বন্দুক তাক করে বলল,“চুপচাপ আলমারির চাবি দিন। ” আমি অহেতুক বিতর্কে না জড়িয়ে চাবি দিতে উদ্যত হতেই আমার স্ত্রী চিৎকার দিল,আর সঙ্গে সঙ্গে ইতরগোছের একটা ছেলে খেকিয়ে উঠল, “ওই মাতারি, আর একবার শব্দ করবি তো সোয়ামীর সামনেই তরে...”।

এক বাক্যেই আমার স্ত্রী জমে বরফ হয়ে গেল; এরপর ওরা চলে গেলে দীর্ঘক্ষণব্যাপী তার কান্নার সাইরেন বেজে চলল, কিন্তু তাকে নিবৃত্ত করার মত শুভাকাক্সক্ষীরা তখন ঘুমের নগররাষ্ট্রে এরিস্টটলের সঙ্গে বসে সোল্লাসে কফিপানে ব্যস্ত! সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা ভুলতে ছুটি নিয়ে কক্সবাজার রওয়ানা হলাম। সমুদ্র সৈকতে দোড়াদোড়ি, সমুদ্রস্নান আমাদের বিয়ের শুরুর দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল যেন! কিন্তু হঠাৎ করেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি : সমুদ্র বিহার শেষে হোটেলে ফিরবার সময় দেখলাম ৬-৭জন ছেলে প্রকাশ্য রাস্তায় এক পথচারীকে এলোপাতাড়ি গুলি করল এবং মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া অবধি অস্ত্র উচিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। রক্তে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হলেও কেউ গুলিবিদ্ধের সাহায্যার্থে এগিয়ে এলনা ; অস্ত্রের কাছে মানবতার কী নিরুত্তাপ আত্মসমর্পণ! সমস্ত জগতটাকে অচেনা লাগতে শুরু করল আমার, বিবশতার ঘুর্ণিবায়ু আমায় প্রায় কাত করে ফেলে দিচ্ছে এমন সময় আমার স্ত্রী ধরে ফেলল আমাকে। সারারাত যন্ত্রণাক্লিষ্ট দশায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। হঠাৎ এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলাম : সেই রিক্সাওয়ালাটির সাথে অফিসে যাবার পথে দেখা হল_ আপনমনে সে বিড়ি ফুকছে।

আমাকে দেখামাত্র আমার গাঁয়ে থুথু ছিটিয়ে দিল,“শালা ভদ্দরনোকের ছাওয়াল, ৩২হাজার টাকার সদাই করতে গাঁয়ে বাজেনা আর রিক্সা ভাড়া ৫ট্যাকা বেশি দিবার গ্যালে আত্মা চড়চড় করে। ” আমি নিশ্চুপ হেটে চললাম, কিছুদূর এগুতেই সেই চোর ছোকরাটিকে দেখলাম ; সে যেন তৈরি হয়েই ছিল- প্রচণ্ড এক চড় কষিয়ে দিল আমার মসৃণ গালে,“কিরে বীরপুরুষ! সামান্য একটা পাঞ্জাবির জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধালি, আর প্রকাশ্য দিবালোকে একটা মানুষ খুন হল টু শব্দটি পর্যন্ত করলি না ; তোর সামনেই তোর বউকে ডাকাতরা ভোগ করতে চাইল...তখন পুরুষত্ব কই ছিল?” কথা শেষ হতেই আচমকা আমায় লাথি মেরে বসল সে, আমি হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ; উঠে দাঁড়িয়ে গোলমালের শব্দে পিছন ফিরে তাকাতেই আমার আত্মারাম উধাও হবার জোগাড় : একদল রিক্সাওয়ালা আর চোর বাহিনী আমার দিকে তেড়ে আসছে; আমি দিগি¦দিক ভুলে দৌড় শুরু করলাম; আমার দুরবস্থা দেখে দূরে দাঁড়ানো সেই ডাকাতদল অট্টহাস্য করছে! একসময় হোচট খেয়ে পড়তেই ওরা আমায় ধরে ফেলল, এরপর সরাসরি উনুনে চালান করে দিল; আজ ওদের 'grand feast' এ আমিই 'main item '........ সশব্দে 'না' বলে বিছানায় ধড়পড় করে উঠে বসলাম। সম্ভবত আমার এই 'না' আমাদের মত সভ্যতার ধারক আধুনিকতাবাদীদের বিরুদ্ধে যারা লাখ টাকার মদ খেতে পারে, কিন্তু ভিক্ষুককে একটি পয়সা দেয়না, এই 'না' বিবেকের সকলপ্রকার খামখেয়ালের বিরুদ্ধে যার জন্য আমরা প্রায়শই পশু হয়ে উঠি; আমার বুকের ভেতর চেপে থাকা দীর্ঘদিনের জগদ্দল পাথরটি এইমাত্র আমায় মুক্তি দিল! ভাবলাম বাস্তবেও যদি তথাকথিত সভ্য মানুষদের একদিন হেনস্থা করা যেত!আমাদের বিবেকগুলো সত্যিই ইদানীং বিবেকশূন্য হয়ে পড়েছে। হায় গোলাম হোসেন! এরই মাঝে বেঁচে আছি অনন্তকাল। কপালের চুইয়ে পড়া ঘাম জানান দিল আসলেই মরিনি এখনো।

সত্যি...........! #সম্পূর্ণ চিঠি-গল্প পড়ে ভাবগম্ভীর বঙ্কিমও হাসতে হাসতে কেঁদে ফেললেন যেন ; 'তাহলে এইটুকু যোগ্যতায় শৈবাল মহীরুহ হইতে চায়' - এমন ভাবতে ভাবতেই নিতান্ত অনিচ্ছায় তিনি ২য় এবং শেষ চিঠিটি লিখতে বসলেন... গোকুলের ষাড়, 'সাহিত্য দেবী' যদি এতই সহজলভ্য হইতেন তবে প্রতিকুলে অন্তত ১ডজন রবির সমাগম ঘটিত , কিন্তু বাছা জানইতো রবি মাত্র একবারই উদিত হয়। তুমি যাহাকে ছোটগল্প হিসেবে প্রমাণে ধনুর্ভাঙ্গা পণ করিয়াছো, তাহার সম্বন্ধে বলিতে রুচিতে বাধিলেও তোমার হঠকারিতা আমায় বাধ্য করিতেছে। সমগ্র গপ্পে বানান ভুলের মাত্রায় আশঙ্কা হয়, ইহা কোন স্কুল বালকের লেখা নয়তো? ইহার পর কাহিনীর বিন্যাস: যে ব্যক্তির বেতন ৪০ হাজার, একদিনে তাহার স্ত্রীর কিরূপে ৩২ হাজার টাকা খরচের শখ হয় তাহা প্রশ্নের উদয় করে বৈকি; পক্ষান্তরে দুইঘণ্টা কেউ রিক্সায় বসিয়া থাকিবে ইহা যেমন কল্পনার পক্ষে ক্লান্তিকর, ব্যক্তির নিজের জন্যেও। পরবর্তীতে যে ঢঙে চোরের দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটাইয়াছো তাহাও শিশুতোষ। কাহিনীর অন্তিম অংশে অনুশোচনা পর্বে 'গল্পের গরু' 'প্রবন্ধের ভেড়া' হইয়া উঠিল অকস্মাৎ! সুতরাং তোমার লেখনিটিকে গপ্প নাকি প্রবন্ধ বলিব, এই দোটানায় ইহাকে অবশেষে 'জারজ ঔদ্ধত্য' আখ্যা দিলাম (তোমার ভাষায় সাহিত্য মানে যাহা)।

আসল বক্তব্যই তো অনুক্তই রহিল: আমার ভৃত্য তোমার 'জারজ ঔদ্ধত্যের' শিরোনামটিতেই ভুল পাইয়াছে! বলতো বাছা 'বিবেকের খামখেয়াল', আর 'বিবেকের খামখেয়ালি' -দুইয়ের মাঝে সঠিক কোনখানি? আমার ভৃত্য কোনদিন স্কুলে পর্যন্ত যায় নাই, পক্ষান্তরে তুমি পণ্ডিতশ্রেষ্ঠ ; সুতরাং সাহিত্যের পাঠশালায় তোমার অবস্থান কোন্ পর্যায়ে বুঝিয়াছো? তুমি যাহা লিখিয়াছো এমন সহস্র লেখা আমি পাণ্ডুলিপি দশায়ই ছিড়িয়া ফেলিয়াছি হাত পাকাইবার কৌশল হিসেবে। একটিমাত্র শুদ্ধ বাক্য লিখিতেই যে ব্যক্তি অক্ষম তাহার মুখে মধু-নজরুলের সমালোচনা কি পাপাচার নহে? পরিশেষে তোমার সম্বোধন সংক্রান্ত উস্মার প্রত্তুত্তরে- আমার ভৃত্যকে আমি 'তুই' সম্বোধন করি; সাহিত্যে তোমার দৌড় যেহেতু ওরও বহুত পশ্চাতে - তোমায় কী সম্বোধন করিব নিজেই নির্বাচন করিও! প্রত্যয়নে- সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় # সমালোচনা করার সময় লেককের সামাজিক দায়বদ্ধতা, চরিত্র চিত্রায়ণে পারদর্শীতা, কাহিনীর পরম্পরা, দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা...প্রভৃতি বহুবিধ আঙ্গিক বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু এই সমালোচকদেরই যদি লিখতে দেয়া হয়,তখন সব আঙ্গিক সৌন্দর্য আত্মগোপন করে 'গড়পড়তা নিরামিষ লেখায়' পরিণত হয়। লেখালিখির ধর্মই এমন, কারণ লেখক জীবনের একঢেলা কাদা মাটিকেই 'গল্পের প্রতিমায়' রূপ দেন , কিন্তু মানুষের জীবন কোন 'স্বরবর্ণের জোট' নয় , তাতে যুক্তাক্ষর আছে, আছে বিকৃত ধ্বনি, ধ্বনি বিপর্যয় কিংব ধ্বনির অসম্পূর্ণতা; আর তাই লেখাতে থাকবে অসম্পূর্ণতা, চরিত্রে চিত্রায়ণে দুর্বলতা, কাহিনীতে অতিকথন-অতিরঞ্জন....হয়ত এতসব ত্রুটির মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে একটি অসাধারণ লেখা লেখকের অজ্ঞাতেই। এইসব বিদগ্ধ-বহুমাত্রিক(!) সমালোচকগণ নিজেদের মেধার সর্বস্ব উজাড় করেও একটি 'মধ্যম লেখা' লিখতে অপারগ; অসাধারণ লেখার জন্য প্রাচীনপন্থী-প্রতিক্রিয়াশীল(!) আখ্যায়িত লেখকদেরই দ্বারস্থ হতে হবে আমাদের।

..... ....আপনারা কি সেই সমালোচকের সর্বশেষ সমাচার জানেন? বঙ্কিম চ্যাটার্জির মৃদু সমালোচনায় তিনি এতটাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে বর্তমানে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন! আমরা তার আশু আরোগ্য প্রত্যাশা করি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।