সবকিছুতেই নির্মোক থাকছি, সবকিছুই ইদানীং অর্থহীন মনে হয়; নিজের এই নেতিবাচক প্রবণতায় নিজেই লজ্জিত । :(
পোল্যান্ড এ আইসা অফিসে কামলা দিতাছি দুইদিন... ভাব গতিক বুঝারে চেষ্টা করতাছি। টানা চাইর উইকএন্ডে এগারোটা পর্যন্ত ঘুমানোর সুযোগ পাই নাই, ঢাকা-দোহা-বার্লিন-প্রাগে কাটছে দৌড়াইয়া, তাই জব্বর একখান ঘুমের চিন্তায় আছিলাম। আমাগো কো-আর্ডিনেটর স্ট্যানেক আইসা কইল, মিয়াভাইয়েরা , কাইলকার বন্ধে একখান ইন্টীগ্রেশান ( হেরা কয় ইন্টিগ্রেশিয়া! ) প্রোগ্রাম আছে , তোমরা কি যাইবা?
তিন বংগসন্তান মিইল্যা শলাপরামর্শ কইরা ঘুমেরে কুরবানী দিতে সম্মত হইয়া জানাইলাম , যামু। আমরা ভাবছিলাম টিম বিল্ডিং বা পিকনিক টাইপের কোনো প্রোগ্রাম মনে হয়।
রাইতে টিভি দেখতে গিয়া ওই টাইপের একখান প্রোগ্রাম দেইখা পেটে পাক দিলো। পাহাড় গাঙ সব বিচরাইয়া বেড়াইতেছে... হাঁচোড়-পাচোড় করতে গিয়া জাইঙ্গা খুইলা যাইতাছে... আমারে কি কুত্তায় কামড়াইছে যে আমি মরতে যামু? কলিগ, যারে আমরা লীডার(কুক) বানাইছি,তারে কইলাম আমার শরীরটা কেমন কেমন জানি লাগে... হে কয় খানা বন।
কি আর করুম, শনিবার সক্কালবেলা উইঠা অফিসের দিকে রওনা দিলাম।
এরাও দেখি টাইমের বেলায় আমাগো মত, সাড়ে আটটা বাজলো সাড়ে নয়টায় গিয়া। রওনা দিলাম ব্রসলো থেইকা দুইশো কিমি দূরে, পোলিশ কান্ট্রিসাইড পার হইয়া কার্পাজ পাহাড়ের দিকে।
আমাগো গেরামের দিকে সুন্দর এইটা সত্য। তয় এই কান্ট্রিসাইড ও কম সুন্দর না। আঁকা-বাকা পথে দুর্লভ ঝলমলে রোদ, পথের পাশে পাশে ক্ষেত-খামার, কিছু কিছু জায়গায় গরু-ঘোড়া চরে। স্ট্রেজগোম পার হইবার পরে উঁচা-নিচা পাহাড়ী পথ, পাশে পাশে সবুজ হলুদ রুপালী পাতার গাছগুলোর কোলাজ, দিকচক্রবালে লেকের পানি ঝিকিয়ে উঠা... বাসে বাজছে পোলিশ দারুণ সুরের কিছু রোমান্টিক গান... আহা... দেখতে দেখতে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায় তাও বন্ধ করি না।
দূর হতে কার্পাজ পর্বত।
আইসা পৌছার পরে আমরা গোব্দা একটা ব্যাগ আর ক্যামেরা লইয়া রেডী হইবার পর বাকী কলিগরা দেখি খ্যাক খ্যাক কইরা হাসতে আছে... যা শুনলাম, তাতে বুঝলাম আইজ শরীরের কিছু অংশ মনে হয় রাইখা যাওন লাগবো...
ওই দূরে দেখা যায় চেক রিপাবলিক, শীতেই নাকি এই পর্বত সবচাইতে সুন্দর।
দেইখা প্রাগের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ‘ময়ূর’ এর কথা মনে পইড়া গেলো, আহা... বিরাণী আর মুরগীর ঝোল বানায় বটে...
ম্যাপ জিপিএস আর ওয়াকিটকি ধরায়া দিয়া চরতে দেওয়া হইছে...
আমাগো জিপিএস ম্যান আছিলো ,‘অলওয়েজ কনফিঊজড’ ...
মোটে টার্গেট বাইশটা, ঘুইরা পেঁচায়া ছয় ঘন্টার মইধ্যে শেষ করন লাগবো...
চালাও রেলগাড়ি...
টিমের এক মরা মরা আফা/খালারে (পিছনে আছে) দেইখা মনে করছিলাম এরে আইজকা আমরা বাওয়া লাগবো। ওমা দেখি কি , চড়া বাওয়া গুল্লি মারা তীর মারা সবকিছুতে আফা এক্কেরে হিরোইন... কিন্তু দেইখা মনে হয় বহুতদিন খাওন দাওন পায় না...
রেলগাড়ি চালাইতে গিয়া চিৎপটাং , অবশ্য এইরকম চিৎপটাং হইতেও মজা । আগের ছবিটা দিলে বুঝতেন... তয় দিলাম না...
বস্তায় ভইরা দে দৌড়, এই কামডা আমি পারছিলাম জটিল। আফসুস ফটুক নাই।
এই গোল্লার মইধ্যে একজনেরে ঢুকায়া ঘুরাইতে ঘুরাইতে আরেকজায়গায় নিতে হয়। জীবনে যদি আর মইধ্যে ঊঠছি! তয় একটা লাভ হইছে... দোয়া দুরুন যা ভুইলা গেসিলাম সব মনে চইলা আসছে।
খুব ভাব লইয়া বেল্ট বাইন্ধা এইটাতে বাইতে গেছিলাম। কাতলা মাছের মত ঝুলতে ঝুলতে টিমের পয়েন্ট তো খোয়াইছি, দেশের ও নাম ডুবাইছি।
আমাগো টিমের ‘মরা আফা’ ফড়িঙের মত বাইয়া উইঠা গেছে।
নিজের ওজন কত এই পত্থম টের পাইলাম।
পোল্যান্ডের ক্ষেত খামার। হেরা এত্ত উৎপাদন কইরা কেমনে খায় আল্লাহ মাবুদ! লোকজন তো দেখি নাই।
কোড খোঁজা হইতেছে গাছের বাকলে...
পাওয়া গেলো একটা কোড। বান্দরামীতে আমরাও কম যাই না।
দুিজন গিয়া কিছু এক্সট্রা লেইখা আসছে, যাতে পরের টিমের পাবলিকরা ধরা খায়!
একশনে আমি...
হাঁচোড় পাঁচোড় কইরা আসো... রিবনে লাগাইতে পারবা না...
এইটাতে লাফাইতে গিয়া মচকাইলাম ডাইন পায়ের গোড়ালি... এই প্রোগ্রামের নামটাই ভুল হইছে... এইটার নাম দেওন দরকার আছিলো ‘ডিসলোকেশন প্রোগ্রাম’... শেষ হইবার পর হাত পাও ঠিক আছে কিনা জায়গামত , দেইখা নিতে হইবে...
পার হইয়া পাইছি গরুর লাদা, বেশ পুরুষ্টু লাদা... কে জানে এইটাও গেমসের অংশ নাকি...
ঊল্টায়া পড়লে খবর আছে... প্যাঁক-কাদায় ভইরা ভূত হয়া গেছিলাম...
কার্পাজ রুপ বদলায় কিছুক্ষণ পর পর...
গোমড়া মুখ, তীব্র বাতাস... ঠান্ডার কথা নাই বললাম...
একবার কানটুপি হাত মোজা সবগুলা পড়ি আবার খুলি, এই অবস্থা..
এইবার শুরু হইছে বনে বাদাড়ে চরা। আর কিছুক্ষণ পরপর আমাগো জিপিএস ম্যান আলেক্স কয় , ‘আই এম কনফিউজ়ড!’। আর জিপিএস লইয়া মনে হয় হের ছাগল খুঁজে!
সূর্য ভায়া উকি মারতেছে...
আইসা আয়োজকদের একজনেরে জিগাইলাম, কতদূর দৌড়াইলাম এই সাড়ে পাঁচ ঘন্টায়? উত্তর শুইনা নিশ্চিত হইলাম, আমাগোরে হাছা হাছাই কুত্তায় কামড়াইছে। নাইলে এই ঠান্ডায় আর বাতাসে ঘুম ফালাইয়া দুইন্যার সব বদমাইশি খেলা খেলতে আর বাইশ কিমি হাঁটতে কেউ আসে? ভাইগ্য ভালা আগে কয় নাই, তাইলে নির্ঘাত টায়ার্ড হইয়া যাইতাম।
ফেরার পথে যেলানিয়া ওয়ারা তে লেক...
রাতের ডিনার আর কলিগদের পার্টি ।
এরা আমরা সবাই এত মানসিক চাপে থাকি, এরকম চিন্তামুক্ত কিছু সময় আসলেই বিশেষ কিছু...
সারাদিনের লাফালাফির পুরস্কার, পোলিশ ট্রাডিশনাল গদা! আমার কাতলা মাছের মত লাফালাফির জন্যই নাকি, আমরা হইছি চতুর্থ...
আমাগো লুকাজ মদনের মত এইটা আবার ওর গার্লফ্রেন্ডরে দিছে, ওর বেগানা কলিগগো লগে নাচানাচির ছবি দেইখা যদি ওই মাইয়া একটা বাড়ি না দিছে...
চলিতেছে গান, চলিতেছে নাচ, চলিতেছে আড্ডা... এক কোনায় আমিও আছি...
নাইট ইজ স্টিল ইয়াং... আমাগো টিমের গ্রেগজ হাবলুর মত বইসা আছে...
মার্টিনি ভোদকা আরো কি কি জানি কয়, এইসব ‘অমৃত’ ফালায়া খাইছি খালি কমলালেম্বুর রস, কলিগরা অবাক! ওগোরে বুঝাইতে গিয়া আসলো ধর্ম, কালচার, কালচার শক, প্রি-ম্যারিটাল সেক্স ট্যাবু,
সাউথ এশিয়ার কনসেপ্ট, আমাগো জাতীয় পানীয় ‘চা’... পাকিস্তানের বদমাইশি, একাত্তরের গনহত্যা, রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধ, পোল্যান্ড ক্যান এমিরিকার লগে জোট বান্ধছে আর রাশিয়ারে ডরায় এইসব...।
বুঝলাম এইসব পার্টি খালি ওগো এনজয় না শুধু, সোশ্যাল কমিউনিকেশনের ও একটা অংশ...
ঘুম ঘুম ঘুম, হোটেলের সিঁড়িতে...
দ্য এ টিম...
বিদায় কারকানোসিয়া...
ইন্টিগ্রেশানটা আসলেই ভালা হইছে... বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত আমাগো ডেভেলাপমেন্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ভেরিফিকেশান, ইন্টিগ্রেশান, ইমপ্লিমেন্টেশান-মেইন্টেনান্স সবাই অনেকটা হইলেও কাছে আসছে...
বাংলাদেশে থাইকা কলিগরা যারে কেমনে বানাইবো এই প্ল্যান করতো, সেই কিসলুর (ক্রিস) টিমেই আমরা পড়ছিলাম, খালি আদুভাই (আঁন্দ্রে) ই রাগ ভাঙতে পারলো না, দুই সপ্তা আগে হেরে আমরা বার্লিন অফিসের ওয়ার্কশপে ট্রেনার হিসাবে খুব খারাপ গ্রেড দিছিলাম ... হাতাহাতি হয় নাই এই ভাইগ্য...
ব্রসলোতে ফিরা বাসার সামনের ফটুক...
দ্রঃ
কাতারের দোহায় রাইত পর্ব লিখ্যা দিবার সময় ছবিগুলা খুঁইজা পাইতেছি না... তাই ওইটা বিরতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।