ইমরোজ
"সরে এসো ওসব থেকে"...কথাগুলো কানে বাজতে লাগল আমার। আমি তখন নেশায় বিভোর। সামনে ব্ল্যাক লেবেল-এর বোতল যা অর্ধেক খালি। কিংবা অর্ধেক ভরা...যাই বলুক যে কেউ। আমার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।
ছোট কাঠের বাঙ্গালী চেয়ারে হেলান দিয়ে আছি।
এই বারটার অবস্থা বেশ নান্দনিক। কোন শিল্পীর হাতে আঁকা যেন। এক ধারে একটা বড় কাঠের বেস্টনী। বেস্টনীর ঐপাশে কতগুলো কাঠের সেলফ।
সেলফে সুন্দর করে সাজানো হুইস্কি। লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা বার টেন্ডারকে মনে হচ্ছে যেন বিদেশি সুন্দরী বারটেন্ডারদের মতই। আবোল তাবোল...ঐদিকে কতগুলো চেয়ার আর টেবিল। রুমে কয়েকটা চল্লিশ ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে। সামনে একটু খালি জায়গা।
টেবিলগুলোর নগ্ন কাঠগুলোকে টেবিল ক্লথে ঢেকে দেওয়ার কোন চেষ্টাই করা হয়নি। টেবিলের মাঝ বরাবর একটা বিশাল ফাটা দাগ। ভূমিকম্প হয়েছিল!
কে জানে...চারিদিকে মাতালের হাহাকার...সাথে সাথে এও শুনি, মানে চিৎকার চেচামেচি। ওহ! আর এলকোহলের অসহ্য গন্ধ তো আছেই। যার তীব্রতা এখানে বসে বসে টের পাচ্ছিলাম।
ব্ল্যাক লেবেলের একটা ভালো দিক আছে। এটা একটু খেলেই নেশা হয়। আর আমি কিনা অর্ধেক শেষ করেছি। বাসায় যেতে পারবো কিনা সন্দেহ। আবার রাস্তায় মাতাল লোকজনের তো কোন কদর নাই।
মাইর খেয়ে বসা অসম্ভব কিছু না। হাত টেবিলে রাখতে গিয়ে আলতো করে টেবিলের পাশে বাড়ি খেয়ে নিচে ঝুমে পড়ছে। আহা...কতদিন এরকমটা লাগে নাই।
মাঝরাতের আর কতক্ষণ বাকি? বাসায় আজ কেউ নাই, কোনদিনও থাকে না, তবে আজকে আমার গ্রাম থেকে আসা ফুফাত ভাইটাও নেই। তার জন্যই এতদিন পরে তৃপ্তি করতে এসেছি।
তাকে রেখে তো আর বোতল টানা যায় না। প্রেমিকার হাত ধরেছিলাম। মায়ের কথা মত ঘরে লক্ষ্মী আনবো বলে। কিন্তু হলো তো উল্টোটা। তাকে বিয়ে করতে পারলাম না, ঘরই নাই তার আবার লক্ষ্মী!
মানে টাকা পয়সা তেমন একটা ছিল না তখন।
আর প্রেমিকার মা বাবার তখন নিজেদের মেয়েকে বেঁচে দেবার অসম্ভব তাড়না। মানে যাকে বলে, "আরেকটা দিন বাপের বাড়িতে থাকবি তো তুই অপয়া"। শেষটায় আমার চুমু খাওয়া মেয়েটাকে ছোবল মেরে নিয়ে গেল মহা বিজ্ঞানী, ডাক্তর ইত্যাদি ইত্যাদি...বিশেষণধারী এক মহা টেলেন্টেট যুবক।
আহা...আমার ঘরের লক্ষ্মী মদের নেশায় নেশায় তার কথা কানে বাজে, "সরে এসো ওসব থেকে"। সরে এসে যাবো কুন্ঠে? এদিকে ঘরের লক্ষ্মীর খোজে মা বাবা সব পাড়ি দিয়েছে গ্রামের দুই পয়সার জমিদারীতে।
এখন আমি একা।
আমাকে নিয়ে হাল ছাড়েনি কেউ। আমার বোন...বাবা মা...এখনও পাত্রীর খোজে একেবারে যাচ্ছেতাই খাটছে। শুধু একটাই সমস্যা। পাত্রীর বাড়ি গেলেই মাতলামিটা অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।
এক পাত্রীর বাবা তো বলেই বসলেন, "পাত্র কী মাতাল"?
নাহ, মাতাল হবার তো কথা নয়, মাত্র এক সিপ কেরু কোম্পানি খেয়েছিলাম। এ দেশের সেন্টের কোন গন্ধ নাই। ভাবলাম কেরুর গন্ধ দিয়েই কাজ চালাই। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল। বেটারা মদও বানাতে শিখে নাই।
শালার বাংলা মদ কী সাধে কয়? কথা কেমন জড়িয়ে যাচ্ছিল।
নাম বললাম, ঠিকানা একবার বলি ঢাকা, একবার বলি জিগাতলা...কন্যার বাপ তো বুঝে গেল। ব্যাটা একদিন মদ্যপ ছিল, বুঝলাম। মাতালে মাতাল চিনে।
বারের বাইরের লাইট বন্ধ হয়ে গেছে।
কাছে পিঠে কোন হোটেল নেই, আজকে রাতটা কাটাবার নিমিত্তে। বাসায় যেতেই হবে। সিগারেট ধরাচ্ছি, বোতল হাতে বেতাল আমি...কোন রঙের খোঁজে হেলে দুলে বাড়ির দিকে যাচ্ছি। সামনে অনেক লোক। মদের গন্ধে বমি এসে যায়।
প্রিমিয়াম সোডামোডা দিয়ে চতুর্দিগন্ত আবছা।
এদিকে সূর্য মামা লজ্জায় আরও গভীর ঘুমে যাচ্ছে যেন। এই নোংরা গৃহে পাছে আলো পড়ে। নষ্ট হয় সূর্যের পবিত্রতা। কাল অফিসের এক অনুষ্ঠান আছে।
মাথায় অনেক ব্যাথা হবে সকালে। আবোল-তাবোল ভাবতে ভাবতে আমি চললাম বাসার পথে। শালার গণতন্ত্রের দেশ বলে কথা। মদের বোতলটাও কাগজে পেচিয়ে নিতে হচ্ছে। নাহলে কে কী বলবে কখন।
স্বপ্নের বাইরে এসে, মানে ল্যাম্পোস্টের আলোতে এসে আলোর প্রচন্ডতায় মাতলামি নড়ে উঠে। হঠাৎ সতর্ক হই...আমাকে বাড়ি যেতে হবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।