ইমরোজ
আজ অফিসে অনুষ্ঠান। দুপুর তিনটার সময়। ঘুম থেকে উঠলাম এগারটার দিকে। উঠে বসতে দেখি বুয়া টেবিলে নাস্তা রেখে গেছে। ওকে বলেছিলাম দুপুরে খাব না।
তাই অনেক আগেই চলে গেছে। অগোছাল ঘরটা অনেক সুন্দর লাগছে। ব্যাপার না। মাতাল রাত কাটিয়ে ওঠা একটা জিনিস বটে। সকালে উঠে সমস্ত শরীর ম্যাজম্যাজ করে।
নাস্তাটা খেয়ে গোসল করতে গেলাম। মাতলামোটা এখনও কিঞ্চিৎ আছে বুঝতে পারছি। ক্ষণে ক্ষণে মাথা ঘুড়ে ওঠে।
গোসলে যাবার প্রাক-কালে মোবাইল বেজে উঠে। কী বিশ্রী শব্দ।
অগত্যা যাত্রা ভঙ্গ দিয়ে মোবাইল হাতে নিলাম। প্রিয়াঙ্কা কল করেছে। নাম দেখে বুকটা ধরাস করে উঠে। ওর সাথে তো সেই সম্পর্কে ছিটে-ফোটাও নাই। এখন আবার কেন অতীত টেনে আনা?
-হ্যালো।
-কেমন আছেন?
-এইতো।
-কথা জড়ানো কেন?
-ঘুম থেকে উঠলাম মাত্র। আজ ছুটির দিন তাই।
-কালরাতে বুঝি আবার ছাইপাশ খেয়েছ?
-তাতে তোমার কী আসল গেল?
-সেটা না, তোমাকে একটু দরকার ছিল। আমার বাসায় আসতে পারবে?
প্রিয়াংকা।
কোনদিন ওর বাসায় আমাকে যেতে বলেনি। আজ যখন বলছে না যাই কেমন করে? অথচ ওকে দেখে ব্যাথাটা অসহ্য হয়ে উঠবে বুঝি। সাধারণ মেয়ে প্রিয়াংকা। নামের সাথে ওর মিল অনেক। বললাম, "কখন আসব"?
-পারলে এখনই আস।
ঠিকানা নিয়ে রাখলাম। বুকের ভেতর বার বার করে কেঁদে উঠল কে জানি।
গোসল সেরে বাড়িটার খোজে রওনা হলাম। বাড়ি গুলশানে। নিশ্চয়ই অনেক আলিশান একটা বাড়ি হবে।
নাহলে কী আর বাপ মা বিয়ে দেয়?
গুলশান -২ এর একটা গলির ভেতর। খুজতে দেরি হলো না। একরকম প্রাসাদই বলা যায়। ফ্ল্যাট। দরজায় টোকা দিতেই প্রিয়াংকা দরজা খুলে দিল।
ও নীল শাড়ি পড়েছে। আমার প্রিয় রঙ। কতদিন নীল শাড়ি পরে ওকে দেখিনি। আজ ও সামনে এরকম অকস্মাৎ। ওর হাতটা কত কাছে অথচ...আমি অনেক দূরে সরে গিয়েছি।
ঢুকলাম বাসার ভেতর। আলিশান না। একে বলা যাবে মুঘলাই কান্ড। কী নেই জিজ্ঞেস করতে বড় ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু করতে পারলাম না।
আমাদের মাঝে আর সেই সম্পর্ক কোথায়? আমি অপরিচিত লোকের মত উসখুস করতে লাগলাম। "প্রিয়াংকা, আমাকে কী আমার দৈন্যতা দেখাতে এখানে এনেছ"? মনে মনে বলি। প্রিয়াংকা আমার পাশের সোফাটায় পায়ের উপর পা তুলে, সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল, "কী খাবে"?
আমি শোকেজের একটা ভাস্কর্যের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলাম। বললাম, "কিছু না, কী বলবে বলো, আমার কাজ আছে"।
-বলবো, একটু বসো না, যাবেই তো, তোমাকে ধরে রাখবো না।
-আমার কাজ আছে।
-তোমার কবে কাজ ছিল না? বসো আমি চা নিয়ে আসছি।
আমার নিজেকে টুকরো করে ফেলতে ইচ্ছে হলো। মনে হলো, আমি একটা ফ্লাওয়ার ভাস। এখনই দেয়ালে আচড়ে পরে চুরমার হয়ে যাই।
প্রিয়াংকা আমার টুকরো গুলো ওর কোমল হাতে ধরে ডাস্টবিনে ফেলে দিক। আমার কেজুয়াল ড্রেসটা অনেক বেমানান লাগছে। ভাবছি। ৫ হাজার টাকা দিয়ে স্যুট কিনে পরে না আসাটা কী ঠিক হলো?
এমন সময় ক্যাট ওয়াক করতে করতে প্রিয়াংকা চা নিয়ে হাজির। "তোমাকে সুন্দর লাগছে"।
-থ্যাঙ্কস। (বসতে বসতে বলল)
চা হাতে নিয়ে ওর দিকে তাকালাম। "বাসায় কেউ নাই"?
-নাহ, ও আজ সকালে ফ্রান্সে গেল। নেক্সট উইকে আসবে।
-আর কেউই নাই।
-নাহ!
প্রিয়াংকা এইসময় ওর শাড়ির আঁচল দিয়ে স্তনের উপর ঠিক করে দিল। মেয়েরা যেটা প্রায়ই করে। কিন্তু ওর এইব্যাপারটা আমি মানতে পারলাম না। আমি তো ওর দিকে সেই দৃষ্টি কোনদিনও দেইনি! আমার সামনে এমনটা না করলেও পারত!
আমি উঠে দাড়ালাম। চা রেখে।
"কী হলো"?
-কিছু না। আমার সময় নাই। যেতে হবে।
-আহা এরকম করছো কেন?
প্রিয়াংকা তোমার সাথে তো আমার দেখা কথা কমদিন হয়নি। আমাকে এই বাজে ইঙ্গিতটা না দিলেই পারতে।
মুখে কিছু বললাম না। অপমানে নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল।
-আমার সেই চাকরিটার কথা মনে আছে, সেখানে আমি বলে আসিনি যে আমি চলে যাচ্ছি। বাচ্চু ভাই রেগে আছেন মনে হয়। ওনাকে একটু বলে দিও।
-কথাটা ফোনে বলা যেত। এতদূর ডেকে আনার কোন মানে হয় না।
প্রিয়াংকা আমার দিকে তাকাচ্ছে না। বলল, "তুমি অনেক বদলে গেছ"।
-জানি আর কিছু?
-নাহ! চলে যাও।
-ভালো থেকো!
সমস্ত কিছু দিয়ে ওকে ভালোবেসেছিলাম। কখনও ভুল বুঝিনি। আজ যখন আমাকে এতটাই নিচু করল, আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কী করব। কাছে কিছু থাকলে সেটাকে আচড়ে টুকরো টুকরো করতাম। কিন্তু কিছুই নেই...এক প্রাচীন দেহ ছাড়া!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।