ধূসর কণা
পাতা থেকে গড়িয়ে পরা
প্রথম জলের ফোটার
হীরার কুচি হওয়া হল না _
তার সমগ্র জুড়ে দিনের সমস্ত ধুলো।
[শূন্যের কবিতা: প্রথম দশকের কবিদের নির্বাচিত কবিতা
- বাঙলায়ন প্রকাশনা, বইমেলা ২০০৮]
কালোতাগা
চোখ ভর্তি অবহেলায় হে শৈশব আমায় ছুড়ে ছিলে
বহুভূজা ধুতুরার বিষাক্ত সবুজ ফল, সুদীর্ঘ সব ঋতু
আর দিন অনন্যোপায় পড়ে আছি পথে
তুমি আজ কোন্ বালকের উঠান সমতলে একান্ত পা ফেলে
ঘাসেদের বুকে বেড়াও, ভালো থাকার লাল ঘুড়ি ওড়াও
কোন্ সুদিনের সুতোয়, বাতাসের নীলে !
জীবনের সুতীব্র ব্যথাগুলো নিয়ত অভিনব অভিনয়ে
একপ্রস্থ মেকাপের সিনথেটিক প্রলেপণ ঢেকে রাখা যায়
আয়ু কি লুকিয়ে থাকে করতলের মসৃণ সীমায় ?
সেই অপাপবিদ্ধ ঠোঁট হারিয়েছি গ্রীষ্ম দুপুরের নির্জনতা
কুমার নদী বাঁকের প্রিয় পাঠশালা, দুই'র ঘরের সরল নামতা
সহজ রোজনামচা খাতা !
তবু আজ সকরুণ মন, দীর্ঘ ছুটির সকাশে হেঁটে গেছি
সেই সে শ্রীকৃষ্ণ আঙিনার কীর্তন উদ্ভাসিত প্রান্তর !
ভিজিয়েছি মাথা ইলশেগুড়ি ভোরবেলা, পশ্চিমে দৃকবিজ্ঞানী
ভাবনায় দেখেছি হেয়ালী রঙের রঙধনু।
পরিতৃপ্ত পায়ে ফিরে যাই মাটির শিথানে, চিরচেনা কুমারের
বাঁধ নিয়ন্ত্রিত স্রোত, মাছেদের জলজ সংসার।
তারও অধিক অতিক্রান্ত চৌচির ভূমি জ্যামিতি
কিছু বৃক্ষজ মায়া, ফাঁক গলে কলতলা, বাঁশের দেউড়ি
উঠান সমতলে আচানক এক কালো শিশুর হামাগুড়ি
আহা আমার ফেলে আসা কালোতাগা, ঘুঙুর-মাদুলী । ।
[শূন্যের কবিতা: প্রথম দশকের কবিদের নির্বাচিত কবিতা
- বাঙলায়ন প্রকাশনা, বইমেলা ২০০৮]
হাজার বছর আগে
তেজপাতা বনপ্রান্তের দো-চালা ভরে যায়
ঝাঁঝালো বাস্নার প্রার্থিত আহ্বানে,
ঘরের আসবাব বলতে শুধু দুইজনা
স্বপ্নরঙা জল ভেজা মাটির পায়ে
মেজেতে অাঁক কেটে যাও তুমি 'সহজিয়া'।
এই কোণে ঐ কোণে
কুণ্ডলী পাকিয়ে অদ্ভুত বসে থাকি
আর তোমাকে দেখি মিটিমিটি
চকিতে তুমি আমাকে কপট অবহেলায়।
পাখির পায়ে উড়ে যাও
শুষ্ক পাতামাখা উঠোনে,
তোমার ফিকে বাদামি পলির শরীর
এই তো ছুঁয়ে গেল সমতটের বেয়াড়া বাতাস!
অপলক মনে মাদলের সুর? অথচ ব্যস্ততা বাড়ে
শিবের নিশ্চুপতায় কোলে তুলেছ ফসলী জমিন
প্রাচীন কৃষাণির নৈপুণ্যে ভরে যায় স্থিতির বাসর।
তবু সতর্ক অাঁচলের গিঁটে বাঁধা থাকে কিছু
এলাচের দানা, অভ্যস্ত সংকল্পে।
ঝাঁঝালো স্বপ্নের অদমিত নকশিকাঁথা আর
অবিমিশ্র হাসি-কান্নার পরম্পরায়
বৃক্ষ লালায়িত পৃথিবীর এই ঘরেতে আজ নবান্ন !
[সমগ্র জুড়ে দিনের সমস্ত ধুলো), সূর্যমুখী প্রকাশনী, বইমেলা ২০০৬]
সঙ্গম
মধ্যরাতের আছে এক আশ্চর্য গতিময় রূপ ।
নরম কাদায় ডুবে যাবার মতো যাদুবাস্তবতায়
আমরা প্রমাণ করি
শরীরী খেলায় মৃৎশিল্পের চটক না থাকলে
ফসলী মাঠ কারো অভাব পুরাতে পারে না ।
ঘরবন্দি প্রজাপতির মতো উদ্ভ্রান্ত তখন ,
দীর্ঘায়িত নিশ্বাসের মাঝে খুঁজে ফিরি
দেয়ানেয়ার এক লৌকিক আখ্যান ।
সহসা্ত
আমাদের মাঝে কেউ একজন বলে ওঠে
"যৌথ প্ররোচণার এহেন মিথস্ক্রিয়ায়
কবিতা কি হয় ?"
(মগজের কোনো-এক কোণায়
অর্থহীন প্রশ্নটি বিষ ছড়ায় )
আমরা ভাবতে থাকি...
[সমগ্র জুড়ে দিনের সমস্ত ধুলো, সূর্যমুখী প্রকাশনী, বইমেলা ২০০৬]
একাকিত্ব
কিছু কিছু ভোর নিপাট নিস্তব্ধ।
জোছনায় জবজবে চর, অকর্ষিত
মাটির বুকেতে সংবেদী ঘাসেদের
শিরশির শব্দ্ত
এরই মাঝে রাত পাড়ি দেয়
লোভাতুর নৌকার হাল,
পানি কেটে কেটে যায়্ত
নামহীন-পরিচয়হীন একা মাঝি আমি
প্রথম আলোয় দেখি্ত
রূপালি ইলিশের অাঁশটে স্বপ্নে
নৌকার পেট ভরে গেছে সেই কবে
বড় ব্যস্ততায়্ত বুঝতে পারিনি।
[সমগ্র জুড়ে দিনের সমস্ত ধুলো, সূর্যমুখী প্রকাশনী, বইমেলা ২০০৬]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।