আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দস্যূ মোহন

জীবনের দীর্ঘ পথ অনেকটা পেরিয়ে এসে আমি একজন ক্লান্ত পথিক, তবে অবসর খুবই কম। তাই ইচ্ছে থাকলেও লেখা হয় না তেমন একটা।

দূরন্ত কৈশোর বলে যে একটা কথা আছে, আমার বেলাতে সেটা কখনোই খাটতো না। আমি চিরকাল-ই একটু ঠান্ডা ধরনের। আসলে কিছুটা অলস ছিলাম বলতে গেলে।

তবে, ঐ রকম ঠান্ডা স্বভাবের হলেও দূরন্তপনা যে আমাকে কখনোই ছুঁয়ে যায়নি, তা কিন্তু নয়। সেটা ছিলো আড়ালে, আমার ভাবনায়, আমার স্বপ্নে। আর সব কিশোরদের মতই আমার কল্পনাও ডানা মেলতো অসীমে, সেই ডানায় ভর করে আমিও ছুঁয়ে যেতাম গভীর সমুদ্রের নীল জল। রূপকথার ইভানের মত ‘‘সিভকা বুরকা, যাদুকা লেড়কা, চিকনাই ঘোড়া, সামনে এসে দাঁড়া’’ বলে আমিও হাজির করতাম স্বপ্নের পঙ্খীরাজ ঘোড়াকে, রাজকন্যাকে জয় করতে যাবো বলে। বাইরে চুপচাপ ছিলাম বলেই কিনা জানি না, বই এর পোকা ছিলাম ছোটবেলা থেকেই।

অবশ্য বই পড়ার চর্চা আমাদের পরিবারে সব সময়ই ছিলো। তো এমনই কল্পনাবিলাসী কৈশোর-এর এক দিনে বাবা আমাকে এনে দিলেন ‘‘মোহন অমনিবাস’’। ভারতীয় লেখক শশধর দত্তের দস্যূ মোহন সিরিজের অমনিবাস সংষ্করন। বললেন, ‘‘আমি যখন তোমার মত কিশোর ছিলাম, তখন আমার প্রিয় গল্প ছিলো এগুলো। তোমারও ভালো লাগবে।

’’ আমি পড়তে শুরু করলাম। প্রথম কয়েক পাতার পরই মনে হলো আমি যেন নতুন এক জগৎ-এর সন্ধান পেয়েছি। এখন অবশ্য সেই অনুভূতিটাকে প্রকাশ করা বা ধারন করা, কোনটাই সম্ভব না। আমি গোগ্রাসে পড়ে যেতে থাকি, আর একেকটা গল্পের সাথে সাথে আমার জীবনটাই যেন বদলে যেতে থাকে। অজানা অচেনা অনুভূতির সাথে পরিচয় হতে থাকে।

গল্প গুলো ছিলো রহস্য-রোমাঞ্চ ধরনের। দস্যূ মোহন - এক দূর্ধর্ষ ডাকাত, অনেকটা যেন বাংলার রবিনহুড। সকলের ধরা ছোয়ার বাইরে, আইনের চোখকে অনায়াসে ধূলো দিয়ে চলে সে। তারপর একদিন অবধারিত ভাবে আসে প্রেম, বদলে যায় তার জীবন। বাবা আমাকে মোট চারটি অমনিবাস এনে দিয়েছিলেন।

সব গুলো একটানা পড়ে ফেললাম। ছোটবেলায় সব কিছুই খুব সহজে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, প্রভাবিত করে। দস্যূ মোহন-এর কাহিনীও ছিল সেরকম, তবে আমার ক্ষেত্রে এর রেশ ছিল অনেক দীর্ঘস্থায়ী। আমি পরেও আরও অনেকবার সব গুলো বই পড়েছি। অনেক বছর পর, কিছুদিন আগে বই গুলোর খোঁজ করতে গিয়ে দেখলাম একটা অমনিবাসও আর পাওয়া যাচ্ছে না।

নিশ্চয়ই কোন সহৃদয় বন্ধু বা আত্নীয় নিজের মনে করে নিয়ে গেছে। আমি ঢাকার বিভিন্ন বইয়ের দোকানে খোঁজ করেছিলাম, পাই নি। এখন শেষ ভরসা যদি কলকাতা থেকে কাউকে দিয়ে আনাতে পারি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।