আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুজন কিংবা চারজনের গল্প



হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে ছোট্ট অমল। তার কান্নায় একরকম বিপদেই পড়ে গেছেন তার বাবা। মুরগি জবাই করতে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। হঠাৎ করেই জবাইকৃত মুরগির ছটফটানি অমলের কোমল মনকে নাড়া দিয়েছে। আর তাতেই এই কান্না।

তার বাবার নিষ্ঠুরতায় সে বিমূঢ়। তাকে ঠান্ডা করা হলো এই বলে যে বাড়িতে নতুন মুরগি এনে দেয়া হবে তাকে যাতে সে আদর করে পালতে পারে। তার কান্না থামলো। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সে তার দেশের বাড়ি হতে তার দাদী পরের দিনই একটি মুরগি পাঠিয়ে দিলেন। আর এখানেই আমাদের গল্পের শুরু।

****** দীপা আর দীপক দুই ভাই বোন। একেবারে পিঠাপিঠি। সব কিছুতেই তাদের প্রতিযোগিতা। আবার বাপ মাকে তাগিদ দিতে দুজনই একজোট। তা তাদের আদরের ছোট কাজিন অমলের বাড়ি এসে তারা যখন গৃহপালিত মুরগি নামক নতুন জিনিসের সন্ধান পেল মেতে উঠল দুজনেই।

সারাদিন তারা পড়ে থাকত কিংবা বলা যায় সুযোগ পেলেই ছুটে যেত অমলদের বাসায়। তাদের অতি আদরেই হোক কিংবা আসল মালিক অমলের ঘোর কেটে যাওয়া অযত্নেই হোক সেই মুরগিটা একদিন পালিয়ে গেল। পালিয়ে গেল অমলদের বাড়ি ছেড়ে চিরতরে। অমলের এ নিয়ে বোধ করি তেমন মাথা ব্যাথা ছিল না কিন্তু দীপা আর দীপকের বুকে শেল হয়ে বাজতে থাকে মুরগিকে হারানোর ব্যথা। এবং ফলাফল অবশ্যম্ভাবী এক সপ্তাহের মাঝে তাদের বাসায় দুটি মুরগি চলে এলো দুজনের জন্য।

****** অদ্ভুত আনন্দে মজে গেল দুই কিশোর কিশোরী। তাদের আনন্দের উৎস তাদের সদ্য প্রাপ্ত জীবন্ত খেলনাগুলো। দীপার মুরগিটাকে দীপা ধলি বলে ডাকে। মাঝে মাঝে তার কাছে ধলিকে মনে হয় যেন খুব কাছের একেবারে নিজের। সেই ছোট্ট কিশোরীর মনে মাতৃত্ব জাগিয়ে তুলে ধলি।

ধলি যেন তার সন্তান। তার নিজের কাছে রেখে তাকে খাওয়ায় ঘহুম পাড়ায় দেখাশুনা করে তার সন্তানের। সে অবাক হয়ে দেখতে থাকে ধলির বেড়ে উঠা। একদিন যখন ধলি ডিম পাড়ল দীপার আনন্দ কে দেখে? হৈচৈ করে পাড়া মাথায় তুলে ফেলল সে। আমার ধলি ডিম পেড়েছে।

তার মনে যেন এক অপার্থিব আনন্দ। প্রতিদিন ধলির ডিম পাড়ার সময় হলে ধলিকে বসিয়ে সে অপেক্ষা করে - অপেক্ষা করে এক অব্যক্ত সুখানুভুতির জন্য। ওদিকে দীপকও হেরে যাবার পাত্র নয় অন্তত ভালোবাসার মাঠে তো নয়ই। তার দিদি ধলিকে যতটা ভালোবাসে সে তার কালুকে তার চেয়ে কোন অংশেই কম ভালোবাসে না। সে ও পিছু পিছু কালুর দেখাশুনা করে।

কালুটা তুলনামুলক চঞ্চল। সে তার পিছে সারা দিন ছুটিয়ে বেড়ায় দীপককে। এভাবে কাটতে থাকে তাদের দিন তাদের প্রতিযোগিতা আর ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় দু ভাই বোন কেউ কারো কাছে হারার পাত্র নয়। তাদের সেই দিন গুলি মোড়ানো যেন সোনা দিয়ে। ****** গল্পটি এখানে শেষ করতে পারলে দুজন বা চারজন সবার জন্যই ভালো হতো কিন্তু তা হতে দিলো না।

দিলো না প্রাণ ঘাতী রাণীখেত রোগ। একদিন হঠাৎ করেই দীপক দেখল কালুটা আর আগের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে না। কী ব্যাপার? সে বাসায় চিৎকার শুরু করলেও তার বাবা মা প্রথমটায় তেমন আমল দিলেন না। কিন্তু যখন শুনলেন রাণীখেতের আগমন ঘটেছে মহামারী রূপে তখন দাকলেন পশু চিকিৎসক। তিনিই জানালেন সেই খবর।

জানালেন কালু লড়ছে প্রানঘাতী রাণীখেতের সাথে। তার জীবন প্রদীপ নিভে যাবার আর বেশি বাকি নেই। দীপক খবরটা জানল না। কিন্তু আড়ালে দাড়িয়ে জেনে গেল দীপা। নির্ঘুম কাটলো দীপার রাত।

হঠাৎ করেই সে বুঝল ধলিকে বিসর্জন দিতে হবে দীপককে খুশি রাখতে। নইলে তো তার ভাইটি কেদে খুন হবে। এমন সময় আবার তার চোখের সামনে তার সন্তানপ্রতিম ধলির মুখচ্ছবি ভেসে উঠলো। কী করবে সে? কালুকে দুরে সরাতে হবে তার ভাইটি ঐ কালুর মৃত্যু সহ্য করতে পারবে না। কালুকে সরালে ধলিকে সে রাখে কোন মুখে।

আবার তার সন্তানের (ধলি) চেহারা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এক পর্যায়ে সে যেন অনুভুতিহীন হয়ে গেলো। পরের দিন সকালে উঠে দীপক দেখল ধলি নেই। তার দিদি নাকি রাগ করে তাকে বের করে দিয়েছে। বের করবি কর দিদিটা এখন আবার ফুপিয়ে কাদছে।

দীপক তার কাছে গেলো । কী বলে সে সান্তনা দিবে সে বললো দিদি তুই কাদিসনে। আমার কালু তোর। যা বোকা এসব কী বলিস। কড়া ধমক দিয়ে তার দিদি যেন তাকে বসিয়ে দিতে চাইলো।

দীপক হঠাৎ করে রেগে গেলো। দিদি তুই যদি না নিস কালুকে আমি পালবো না বলে চেচাতে চেচাতে বাড়ি মাথায় তুলল এবং এক পর্যায়ে সে বাবাকে বলল যেন কালুকে বেচে দিতে। দীপার বুক আটকে আসছে কষ্টে সে জানে সে যেখানে রেখে এসেছে ধলিকে তাতে সে ইতোমধ্যেই চলে গেছে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে। আর তার নিথর দেহের মাংস গিলছে কোন মানুষরূপী রাক্ষস। তাই দুপুরের খাবারে মুরগীর মাংস দেখার পর সেযখন কুকড়ে উঠলো তার কারণ বোধ করি কেউ জানলো না ,শুধু দীপক তার অশ্রুসিক্ত কপোলপানে চেয়ে রইলো আর আজ তাদের মধ্যে যে নীরব অভিনয় চলল সে কথাই ভাবতে লাগলো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।