আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ সরকারকে শেষ পর্যন্ত ‘দয়া’ করলাম, ৯০০০ টাকা ট্যাকসো ফাঁকি দিলাম না...

সবকিছুতেই নির্মোক থাকছি, সবকিছুই ইদানীং অর্থহীন মনে হয়; নিজের এই নেতিবাচক প্রবণতায় নিজেই লজ্জিত । :(

বাংলাদেশ সরকারকে শেষ পর্যন্ত ‘দয়া’ই করলাম । রিটার্ণ সাবমিট করছি , আমার উকিল মহাশয় দেখায়ে দিলো যে – একটা চিপা আছে আমার হিসাবে। তো আমি যদি ওই চিপা দিইয়া বাইর হই , তাইলে (৯০০০-১০০০)=৮০০০ টাকা আমারে রাজস্ব বোর্ড রিফান্ড দিবে। ১০০০ মাইনাস , কারণ অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য এইটা উনার প্রাপ্য , কিয়দংশ হয়তো মান্যবর কর আদায়কারী স্যারদের ও তার চেলাপেলাদের মধ্যে ও ভাগ হবে।

চিপাটা চিনাইলাম না, কারণ মানুষ চিপা চিনলে ওইখান দিয়া বেশী যাইতে পছন্দ করে। ঊদাসী স্বপ্ন ভাই একবার কইছিলেন, ইনকাম ট্যাক্স হইলো গিয়া কাঁঠালের আঠা । তক্ষন ও বুঝি নাই, তারপর ট্যাক্স টিন এইসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বুঝলাম, এই আঠা কি আঠা!! সাধ কইরা গিয়া টিন কইরা ট্যাকসো দিতে চাই, কিন্তু রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর ) এর স্যার এবং স্যারদের যারা স্যার ডাকেন , সেইসব মহান প্রজাতন্ত্রের সেবকদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয় – আমরা বিশাল কোনো একটা অপরাধ করে ফেলেছি, আর তেনারা আমাদের দয়া করছেন , কৃতার্থ করছেন!!! আমার জীবনের একটা অংশ কেটেছে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ খাতুনগঞ্জ এলাকায়, ওই এলাকার তাবৎ ব্যাবসায়ীকূল কে আমি চিনি অল্প-স্বল্প, আব্বু চিনেন খুব ভালো করে। এদের মাঝে এমনও ব্যাবসায়ী আছেন (সয়াবিনের পাইকারী নিয়ন্ত্রক), যাদের প্রতিদিনের লেনদেন কোটি টাকার উপরে , কিন্তু আয়কর দেন বছরে সর্বনিন্ম ২৪০০ টাকা; যেটা ট্যাক্স সার্টিফিকেট এর জন্য লাগে। বিস্তারিত আর কিছু বলার দরকার আছে? ব্যাবসার আয়কর পুরোপরি ঠিকভাবে হিসাব করা যায় না, সে হিসাবে আমরা যারা কামলা খাটি, তাদের আয়কর অনেক বেশী স্বচ্ছভাবেই বের হয়ে যায়।

ব্যাক্তিগত দুইটা অভিজ্ঞতা বলি আয়কর নিয়ে। আমার আব্বা ১৯৯০ থেকে নিজের ইচ্ছায় আয়কর দেওয়া শুরু করলেন। ২০০০ সালের দিকে এসে বাবার ছোটোখাটো ব্যাবসাটা ‘পায়ে থেকে মাথায়’ (জুতা থেকে টুপি টাইপের) উঠে গেলো, আব্বুও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন আমি নিজের উপার্জিত টাকায় পড়াশোনা করেছি, পরিবারে ও কন্ট্রিবিঊশন করেছি। অথচ প্রথমবর্ষে আমার কম্পিঊটার কেনার জন্য ব্যাংকলোনের জন্য আব্বু আবেদন করলে তারা ট্যাক্স সার্টিফিকেট চায়।

ওই সার্টিফিকেট ও আমাদের দয়াবান রাজস্ব স্যারেরা ৫০০ টাকা ‘বিনিময়’ এর কমে দেন নাই। একজন সৎ আয়করদাতার সম্মান এইদেশে এতোটুকুই! ঋণ করে ছেলের কম্পিউটার কিনছেন বাবা, আয়কর সীমার নিচে আয় নেমে গেছে কিন্তু, ন্যুনতম আয়কর দিতে হয়, রাষ্ট্র তাকে ও এই সম্মান দেয়! এরপর চাকরী জীবনে ঢোকার পর আয় যখন ট্যাক্সেবল হলো, আমরা কয়েক বোকাসোকা বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, ‘সুনাগরিক’ হবো। প্রথম একশ্যান শুরু হলো রাস্তায় থুতু না ফেলা দিয়ে (!) , তারপর ঝাঁপায়ে পড়ে ট্যাকসো দেওয়া শুরু করলাম; এবং কাঁঠালের আঠায় আটকা পড়লাম। আমার পাসপোর্টের ছবি নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় (সংশোধিত ছবি ও ফর্ম অতি-দায়িত্ববান পাসপোর্ট অফিসের স্যাররা হারিয়ে ফেলেছিলেন, ভাগ্য আমার ভালো পাসপোর্টটাই হাওয়া হয়ে যায়নি) পাসপোর্ট পাচ্ছিলাম না দীর্ঘদিন। এইবছর মার্চে হঠাৎ জাকার্তায় একটা ট্রেনিং আসলো, পাসপোর্ট লাগবে দুদিনের মধ্যে।

ভুল তাদের , কিন্তু আবারো সংশোধন ফর্ম পূর্ণ করে ১০০০ টাকা জমা দিয়ে (৫০০ টাকা ভুলে!) লাইনে দাড়ালাম। তারপরের অভিজ্ঞতা লিখা তো দূরের কথা , চিন্তা করলেও আমার মাথায় এখনও বিস্ফোরণ হয়। চারঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখে , পান খেয়ে চা খেয়ে গড়িয়ে পাসপোর্ট অফিসের সেই কেরাণী বললো আজ হবে না! (মানে আমার ১০০০ টাকা + জাকার্তা ট্রেনিং নাই হয়ে গেলো)। তারপরো ভদ্রভাবে বললাম, ভাই আমি সেকেন্ড ট্যাক্স স্ল্যাবে আমার ঢাকার রুমভাড়া থেকেও বেশী ট্যাক্স দেই, এইরকম সেবা পাবার জন্য? সে বলে, আপনার ট্যাক্স ধুইয়া শরবত খান আর শুচু করেন আমার কিছু যায় আসে না !! আর বলতে চাই না। (পরে রাত আটটায় এক সহৃদয় আনসার সদস্য আর একজন উপপরিচালক আমাকে পাসপোর্ট টা দেন, ক্ষীণ একটা স্যরি বলে ওই কর্মচারীকেও বাঁচিয়ে দেন; কারণ সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় আমি ফোন করা শুরু করেছিলাম .....) এতো হেনস্থা অসম্মান এর পরেও ঠিকঠাক ট্যাক্স দেই খালি একটা কথা চিন্তা করে।

সারাজীবন জনগণের টাকায় প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ মায় প্রকৌশল ডিগ্রিটাও নিয়েছি। এখন যদি কিছু রিটার্ণ দেবার চেষ্টা না করি, এইটাতো বিশাল নিমকহারামী হয়ে যাবে। নিমকহারাম হইতে ইচ্ছা করে না... হারাম টাকা খাইতে চাই না...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.