আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেদে নারীদের জীবন কথা

বাংলাদেশকে নিয়ে শংকিত

http://the-editor.net থেকে বেদে সম্প্রদায়। বাংলাদেশের একটি জনগোষ্ঠি। এদের জীবন যাপন, আচার আচরণ সব কিছু চলছে একটি ভিন্ন সংস্কৃতিতে। এই সম্প্রদায়ের বাস নদীর পাড় কিংবা কোন পতিত জায়গা। বিক্রমপুর এলাকায় বেদে সম্প্রদায় বেশি দেখতে পাওয়া যায় ।

শুধু বিক্রমপুর কথাটা বললে ভুল হবে, মুন্সিগঞ্জ এলাকার প্রায় পতিত জায়গা দখল করে আছে এই সম্প্রদায়। এর মধ্যে লৌহজং থানায় বাস করে অধিকাংশ বেদে। নদীর ভাঙ্গন এদের জীবনকে করে তুলেছে আরও বেশি যাযাবর। এক জায়গায় রান্না অপর জায়গায় খাওয়া এটাই তারা মেনে নিয়েছে। বেদেদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক।

সংসারের যত কিছু রীতি আছে সব কিছু দেখবে নারীরা। বতমার্ন সময়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। সওদাগর শ্রেণী নাম দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো তৈরী হয়েছে। বেদে সমাজের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে সাপ খেলা দেখানো, ঝাড়ফুক ব্যবসা, শিঙা লাগানো, তাবিজ কবজ বিক্রি। মূলত নারীরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম ঘুরে এসব কাজ করে থাকে গ্রামই তাদের ব্যবসার মূল কেন্দ্রস্থল।

কিন্তু গ্রামগুলোতে আধুনিকতার কারণে তাদের ব্যবসায় এসেছে মন্দা। আমীন বাজারের কাছে থাকা মালতি বয়স (৪০) বলেন এখন তাদের দিয়ে কেউ চিকিৎসা করায় না । সবাই এখন ডাক্তারের কাছে যায়। বন বাদর কমে যাওয়ায় সাপ ও কমে গেছে। বেদে নারীরা এতটুকু জানে যে, এখন সবাই ডাক্তারের কাছে যায়।

কিন্তু এ সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবেশ করে নাই আধুনিকতার ছোঁয়া। এখানে ঠিকে আছে কুসংস্কার , জীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা, বাল্যবিবাহ । বাল্য বিবাহের কারণে মাতৃমৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। আধুনিকতা এসব নারীদের জীবনে পড়েনি। এখনও ভোর হলে বেদে নারীরা ঝোলায় তাদের ব্যবসার জিনিস পত্র নিয়ে বের হয়।

চলার পথে ব্যবসা আর সন্তানের যত্ন দুইই করতে হয়। এরা নিজেকে অন্যের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সাজগোজ করে বা এটাও তাদের ব্যবসার একটা ধরন হতে পারে। এদের হাঁটাতে একটা মাদকতা আছে। পায়ে নুপুর কোমরে বিছা কপালে বড় টিপ মুখে খিলি পান এদের সাজের প্রধান উপকরণ। বেদে নারী কুসুম হোটেল সোনারগাঁর সামনে ছোট্ট বক্সে করে সাপ নিয়ে খেলা দেখায় ।

কুসুম বলে একটা সময় আমার মা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপখেলা দেখানোর পাশাপাশি কাঁচের চুড়িও আলতা, ফিতা, টিপ, কাজল, হরেকরকম জিনিস বিক্রি করতো। এখন আর তেমন বিক্রি হয় না। গ্রামের মানুষজনও মার্কেটে যায়। আমাদের থেকে কিছু কিনতে চায় না। মা এখনও তার ব্যবসা ধরে রেখেছে আর আমি ঢাকায় এসে রাস্তার পাশে সাপের খেলা দেখাই।

অনেকে অনেক কথা বলে কি করবো, আমাদের কেউ সহজে কাজে নিতে চায় না ঠিকানা নেই বলে আর সবচেয়ে বড় কথা হলো বেদে শোনলে আরও কাজ দিতে চায় না। বেদে নারী একাধারে অশিক্ষিত, সমাজ থেকে বঞ্চিত, আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানেনা। বতমার্ন সময়ে এইচআইভি এইডস এর উপর অনেক গবেষনা হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের সমাজের মানুষকে নিয়ে। বেদে নারীদের নিয়ে তেমন কোন কাজ করা হয়নি। অথচ এসব নারীরা প্রতিটি সময় যৌন নিযার্তনের শিকার হচ্ছে।

পান্থপথ রোডে অবস্থানরত মল্লিকার বয়স(১৭)বলে, আমি সাপ খেলা দেখাই। মাঝে মাঝে রাত হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে, গাড়িতে উঠতে চাইলে অনেকে বলে সারাদিন তো অনেক খেলা দেখাইলি এবার চলনা----- খারাপ খারাপ কথা বলে। বেদে নারীরা সমাজের প্রতিটি স্তরে অবহেলিত। তারা তাকিয়ে আছে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে। অভিযোগ করে বলে মাঝে মাঝে এন জি ও আপারা আমাদের নাম লিখে নিয়ে যায় অনেক আশ্বাসের কথা বলে তারপর আর আসে না।

আমাদের নির্দিষ্ট থাকার কোন জায়গা নেই যার কারণে আমাদের সন্তানেরা স্কুলে যেতে পারে না। বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতে হয় যারফলে আমাদের সন্তানরা নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে ভর্তি হতে পারে না বা আমাদের সেই সামর্থ্য নেই তাদের লেখা পড়ার খরচ চালানোর। খোলা আকাশের নিচেই আমাদের জীবন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।