সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
শাহী মির্জা ইস্যুতে আমার অবস্থান কী? এইটা ভাবতে গিয়া জ্যোতি বসুর কথা মনে পইড়া গেল। ঠেকাইতে পারলাম না। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সময়ের কথা। কোনো এক দুর্গা পূজার আগে ইনডিয়ার বিভিন্ন স্থানে গণেশ মূর্তি দুধ খাইতে শুরু করলো।
এই নিয়া ইনডিয়ান মিডিয়ার মাতামাতি মাতমে পরিণত হইতে সময় লাগলো না। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকাতেও তার ঢেউ আইসা পড়লো। তো, ওই সময় একদিন বিবিসি রেডিও গণেশ মূর্তির দুধ খাওয়া নিয়া বিশেষ একটা প্রতিবেদন প্রচার করছিল। তো প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে তারা পশ্চিমবঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে কথা কইলেন। প্রতিবেদন জিগাইলেন, মি. বসু গণেশ মূর্তির দুধ খাওয়া বিষয়ে আপনার অভিমত কী? মি বসু, এক লাইনে উত্তর দিলেন, গণেশ দুধ খাচ্ছে তো আমি কী করবো?
গনেশ দুধ খাইতেছে তো আমারও করার কিছু নাই।
কথায় বলে, যা জানি না, বুঝি না সেইটা নিয়া তর্ক করলে তর্কের অপলাপ হয়। হ্যাকিং, ক্র্যাকিং বিষয়ে আমার অবস্থা সেইরাম। এই বিষয়ে আমি তর্ক করতে গেলে তর্কের অপলাপ হবে।
শাহী মির্জারে নিয়া চিন্তা করতে গিয়া আমার মধ্যে নৈতিকতার সংকট দেখা দিল। আমি সুগভীর চিন্তায় নিপতিত হইলাম।
কিন্তু কোনো উদ্ধারই পাইলাম না। নৈতিক সংকট দেখা দিলে সাবজেকটিভ আলোচনায় অনেক সুবিধা হয়। তাই চিন্তা করলাম, আমার তো কোনো পার্সোনাল ওয়েবসাইট নাই। ফলে, সেইটা হ্যাক হওনেরও সম্ভাবনা নাই। কিন্তু ব্লগ-ম্লগ, ইমেইল যা সামান্য কিছু আছে সেইটা যদি কেউ হ্যাক করে তাইলে আমার কী অবস্থা হইতে পারে? ফাহমিদুল হকের ইমেইল অ্যাড্রেস একবার হ্যাক হইলো।
একবার পাভেল পার্থর হইলো। বুঝলাম, হ্যাকিংয়ের সঙ্গে একধরনের অপমান, অস্বস্তি ও বোকা হওনের ভাব কাজ করে। হ্যাকিং, ক্রাকিংয়ের জন্য লোকে কত কত টাকা দিয়া অ্যান্টিভাইরাস পোষে। ফায়ারওয়াল বানায়। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর যে, আমারে হ্যাকিংয়ের মধ্যে পড়তে হয় নাই।
ধরেন আমার একটা সাইট আছে, আর সেই সাইটটা হ্যাক হইলো। এখন আমার কর্তব্য কী?
আমি কি থানায় ডাইরি করবো? রাবের কাছে যাবো? কার কাছে নালিশ জানাবো?
আমি কি তখন ব্লগে আইসা পোস্ট দিবো কোন বর্বর দেশে বাস করি, যে ওয়েবসাইট হ্যাক হওনের পরও পুলিশ হ্যাকারদের গ্রেফতার করতে পারলো না? আমি কই হা হুতাশ করবো? কেমনে কী?
আর যদি সেই হ্যাকার গ্রেফতার না হয় বা খুশী মনে আমার সাইট ফিরায়া না দেয়। তাইলে আমার ডাটাশাক, লালশাকের অবস্থা কী হবে? আমার যে ক্ষতি হইবে সেইটা কে পূরণ করবে?
শাহী মির্জা রাবের ওয়েবসাইট হ্যাক করছে তো মেলা মানুষ খুশী হইছে। কারণ শাহী মির্জার প্রতি অনুরাগ না রাবের প্রতি রাগ সেইটা বুঝা যায় না। সেইটা বুঝতে হইলে একটা গবেষণা করতে হবে।
আমিও খালি হ্যাক করা ওয়েবসাইটার দিকে তাকায়া থাকলাম ফ্যাল ফ্যাল কইরা। দুঃখ সুখ কিছুই মনে আইলো না। কিন্তু মির্জা ধরা খাওয়ার পর মন খারাপ হইলো। বিশেষ কইরা ছবিটা দেখার পর। ভদ্রলোকের ছেলের গায়ে নাম লেইখা ২১ দিছে রাব।
এইটা ঠিক না। নাম না লিখলে ভদ্রলোকদের মনে আর দাগা লাগতো না। রাব এইটা বুইঝা উঠতে পারে নাই। কার গায়ে নাম লেখবে আর কার গায়ে লেখবে না এইটা নিয়া একটা নীতিমালা থাকা দরকার।
শাহী মির্জা কিন্তু অলরেডি বীরের সম্মানে ভূষিত হইছে।
প্রথম প্রথম সবই ভাল লাগে। প্রথম প্রথম হ্যাকারও ভাল লাগার কথা। আর মির্জার ছবি দেইখা যা বুঝলাম লোকটা অতো খারাপ না। তারে ছাইড়া দেওয়া যাইতে পারে। কারণ তারে ছাইড়া না দিলে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম কম্পিউটার নিয়া গবেষণা ছাইড়া দিবে।
তাতে দেশের প্রভূত ক্ষতি হইবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য কোনো আইআইটি আমরা বানাইতে পারি নাই। কিন্তু তারা নিজেরা একটু শিখতেছে এইটাও তাই বইলা বন্ধ কইরা দিবো? চলুক না। ভালো মন্দ মিলায়া একটা কিছু দাঁড়াইবেই। সেইটাই আমাদের লাভের লাভ।
এখন সিরিয়াস কথায় আসি।
ধরেন, আপনার দরজা খোলা দেইখা আপনের এক প্রতিবেশী ঘরে ঢুকলো। একটা জিনিশ নিয়া নিজের ঘরে রাইখা পরের দিন আইসা কইলো, কোনো জিনিশ হারাইছেন নাকি? পরে জিনিশ ফেরত দিয়া সাবধান হইতে কইলো।
আবার ধরেন তিনি খোলা দরজা দেইখা কিছু না বইলা চইলা গেল। আর ওই দরজা দিয়া আপনার ঘরে ডাকাতি হয়া গেল।
অথবা প্রতিবেশী ঘরে ঢুইকা মালামাল নিজেই সরায়া চাইপা গেল।
আমি বলবো। প্রথম প্রতিবেশীই ভাল। আর শাহী মির্জার প্রথম প্রতিবেশীর কাজটাই করছে। ফলে, রাবের ওয়েবসাইট যারা বানাইছেন তারা একটু লজ্জা পাইলেও ঘটনা বৃহত্তর অর্থে আমাদের উপকারই করছে।
আরেকটা কথা। সিরিয়াস কথা। দেশে আইন-আদালত সবই আছে। তারপরও রাবের বিনাবিচারে 'ক্রশফায়ার' চলতেছে। কারণ আমাদের সমাজের বহু মানুষ মনে করে এইটা ঠিক আছে।
আমরা মানবাধিকার, রাষ্ট্র, ন্যায়বিচার এইগুলা কয়া কত কথা কই কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয় না। কারণ, সমাজ মনে করে এইটা ঠিক আছে।
এখন শাহী মির্জারেও সমাজ কোনো গুরুতর অপরাধী হিসাবে দেখতেছে না। তারা মনে করে, মির্জারে রাবের ওয়েবসাইটের কাজে লাগানো উচিত। আমার কথা হইলো, সেইটা যদি নাও করেন, অন্তত ছেলেটারে ছাইড়া দেন।
পড়াশুনা শেষ হউক। তারপর জাতি তার চাকরি নিয়া চিন্তা করবেআনে। ততোদিনে কত হ্যাকার আইবো! কতজনে সাইট বাঁচানোর জন্য রাবের কাছেই দৌড়াইবো!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।