অর্থনৈতিক ফপোড়,২০১৩
"১৯ টুকরো হওয়ার জন্য তৈরি হোন; সামনেই টের পাবেন জেলখানা কি জিনিস" ।
সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক তাহসিনা খাতুন সংবাদ সন্মেলন করার পর থেকে যেন একটা নতুন আন্দোলনের সূচনা হয়ে গেল । প্রধান বিরোধী দলকে বলে তোরা চুপ থাক যা করার আমরাই করতেছি । তারপর ১২ ঘন্টা অতিবাহীত হওয়ার পূর্বেই পরের দিন সকাল বেলা ফোর কালার ডিজিটাল প্রিন্টিং ড. ইউনুস সাহেবের বড় বড় রঙিন ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে শুরু গয়ে গেল মানব বন্ধন । সত্যিই ব্যপারটি মুটামুটি প্রশ্নবোধক ।
সরকারকে কত বার শুনিয়েছে গ্রামীন ব্যাংকের ৮৫ লক্ষ নারী সদস্য আছে কিন্তু ৩/৯/২০১৩ তারিখের মানব বন্ধনের সময় দেখা গেল মাত্র ১৯ জন, তাও আবার সকলেই পুরুষ লোক । একজনও গ্রামীন ব্যাংকের নারী উদ্দ্যোগতা উপস্থিত ছিলো না ।
মানব বন্ধনে বক্তারা সরকারকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বললেন, "গ্রামীণ ব্যাংক ১৯ টুকরো করার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেরাই ১৯ টুকরো হওয়ার জন্য তৈরি হোন । সামনেই টের পাবেন গ্রামীণ ব্যাংক কি জিনিস আর জেলখানা কি জিনিস" । জানিনা সরকার ১৯ টুকরা হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে কি না কিংবা জেলখানা কি জিনিস টের পেয়েছে কি না ।
এমন বক্তব্য বিরোধী কোন রাজনৈতিকদল দিলে হয়ত সরকার এমন কিছু করতো যাতে কমসে কম দেশের মধ্যে ২/৩ দিন হরতালের ডাক পরতো । সেই তুলনায় সরকার গ্রামীন ব্যাংকের সাথে অনেক ধোযর্্যের পরিচয় দিয়েছে বলতে হবে ।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে গ্রামীন ব্যাংকে কাঠামো পরিবর্তন এবং পরিচালনা পরিষদের মধ্যে আনা পরিবর্তন হাইকোটর্ের নির্দেশনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রশাসনীক নীতিমালা, বাংলাদেশর সকল ব্যাংকগুলি যেই প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে চলে বা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই সকল নিয়মের বাহিরে কোন কিছু করা হইয়াছে কিনা । আর করিয়া থাকিলে সরকার নিজের খেয়াল খুশী মত করিয়াছে কিনা যে গ্রামীন ব্যাংকের পরিচালকদের সম্মিলিত গনতান্ত্রিক জোট মানব বন্ধনে এমন হুমকি ধামকী দেওয়ার পরে সরকারের সবাই চৃপ মেরে গেল । তাহলে কি ধরে নিবো সরকার গ্রামীন ব্যাংকের সাথে বেয়াদবী করেছে তাই গ্রামীন ব্যাংকের লোকরা বড় ভাই সেজে একটু শাসন করে দিল ।
সত্যিইতো সরকার গ্রামীন ব্যাংকের সাথে মস্ত বড় অন্যায় করে ফেলেছে । তাইতো সরকার নিজের অন্যায় বুঝতে পেরে মাথা নীচু করে দাড়িয়ে আছে তবুও কোন জবাব দিতেছে না ।
গ্রামীন ব্যাংকের পরিচালক কিংবা ব্যাবস্থাপনা পরিচালক বহাল থাকা বা না থাকার ব্যপারটি অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম নীতি অনুসারেই হতে হবে । তারপরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম ভেঙ্গে অতিরিক্ত ১০ বৎসর দ্বায়ীত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সরকার কোন এ্যাকশনে যায়নি । সরকারের নমনীয়তার কোন দিকটি লঙ্ঘিত হলো যার কারনে সরকার এত খারাপ হয়ে গেল যে, মানব বন্ধনে সরকারকে হুমকী ধামকী দিতে হবে ।
সরকার যদি গ্রামীন ব্যাংকের সাথে এই সকল অন্যায় না করে থাকে তবে কি সরকারের কিছু করার নেই । একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকার বিষয়টি তুলিয়া ধরিতে পারিত । যদি কোন সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয় কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক-এর কোন আদেশের ভিত্তিতে গ্রামীন ব্যাংকের পরিবর্তন করা হইয়া থাকে এবং উক্ত পরিবর্তনে কেউ বিরোধীতা করলে আইনগতভাবেই করিবার সুযোগ অবশ্যই আছে । আদালতে যাইয়া ন্যয় সংগত কারণ উল্ল্যেখ করিয়া গ্রামীন ব্যাংক অর্থ মন্ত্রনালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে আপত্তি তুলিতে পারিত । আপত্তির ব্যপারে মাননীয় আদালত রায় বা অভিমত প্রদান করিতেন ।
এখানে সরাকারের কোন হস্তক্ষেপ থাকিতে পারে না । কিন্তু গ্রামীন ব্যাংক এমন কোন পদক্ষেপ সেই মূহুতর্ে গ্রহন করে নাই । এতদিন পরে যদি উক্ত পরিবর্তনের বিরোধীতা করিয়া কোন একটি পক্ষকে রাজনৈতিক ফায়দা প্রদানের উদ্দ্যেশ্যে জনসম্মুখে বক্তব্য দিয়া কিংবা রাস্তায় মানব বন্ধন করিয়া প্রতিবাদ করে তবে কি সিজেনাল প্রতিবাদকারীদে থামাইতে বাংলাদেশে কোন আইন নাই । এখানে বিবেচনার বিষয় কার রাজনৈতিক ক্ষতিকে টার্গেট করিয়া প্রতিবাদ করা হইয়াছে । সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় গ্রামীন ব্যাংকের এমন প্রচার প্রচারনা চলিতে থাকিলে আগামীতে সংসদীয় "জিরো ডেইজে"(পুরাতন সংসদ এবং নতুন সংসদের মধ্যবতর্ি সময়) কি অবস্থা দাড়াইবে ।
আগামীতে ব্যাপরটি একটি বড় ইস্যূ আকারে উপস্থাপিত হইয়া সরকারের সামনে এবং জনগনের মাঝে উপস্থিত হইতে পারে । এই মূহুর্তে সরকার যদি গ্রামীন ব্যাংকের হেফাজতীয় প্রচার প্রচারনা নিয়ন্ত্রন করিতে ব্যর্থ হয় তবে ভবিষ্যতে সরকারে অবস্থা "পঁচা শামুকে পা'কাটা"-র পর্য্যায়ে পৌঁছাইলেও পৌঁছাইতেও পারে । কারণ তাদের এখনকার কার্য্যকলাপে আগামীর সম্ভাবনা লুকায়ীত আছে । আগামী নিবর্াচনে অগ্রাধীকার নিশ্চিৎ করিতে বর্তমান সরকারের তেমন কোন রাজনৈতিক মাইনাস পয়েন্ট নাই । যেটুকু আছে সেটা অন্য দলগুলির তুলনায় অনেক কম ।
সুতরাং বর্তমান সরকারী দলকে সংসদীয় "জিরো ডেইজ" সময়ে বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের অপপ্রচার হইতে সাবধান থাকিতে হইবে এবং নিজেদেরকে কয়েকটা অপপ্রচারের কূ-প্রভাব হইতে মুক্ত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করিয়া যাইতে হইবে । ইতোমধ্যে একটা শ্রেষ্ঠ অপপ্রচার সকলেরই জানা । হেফাজতে ইসলামের আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত ৫ই মে,২০১৩ রাত্রের ২৫০০ লাশ গুমের ঘটনা । গ্রামীন ব্যাংকের এই ১৯ টুকরার ঘটনাটিও তেমনি একটা অপপ্রচারের প্রাথমিক পদক্ষেপ মনে করা যাইতে পারে । তাছাড়া গ্রামীন ব্যাংকের ১৯ টুকরার অপপ্রচারের জন্য আলাদা একটা আন্তর্জাতিক প্লাটর্ফমতো মুটামুটি রেডি হয়েই আছে ।
আরেকটা প্রসংগে না বললেই না । গ্রামীন ব্যাংক আপত্তি তুলেছে ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা অপমান করেছেন । ড. ইউনুস সাহেবের কি কোন দোষ নেই ? অযথাই সরকার অপমান করেছিলো ? ড. ইউনুস কোন কিছুই বলেন নি ? বিএনপির সাথে মিলে কি ড. ইউনুস সাহেব কোন প্রোগ্রাম করেন নি, কোন গোপন রাজনৈতিক পরিকল্পনা তিনি করেন নি । সরকার বেকায়দায় পরে এমন দূই চারটা বক্তব্য ড. ইউনুস সাহেব দেননি ? সরকারকে হেয় করার জন্য তিনি কি কোন একটা কথাও মিডিয়ার সাথে শেয়ার করেন নি । সরকারের বিপক্ষে যাদের যাদের অবস্থান তাদের সাথে ড. ইউনুস সাহেব সভা সমাবেশ করেন নি ।
করেছেন অনেক করেছেন । তারপরেও সরকার চুপচাপই ছিলো । কিন্তু যখন তিনি বললেন যে, "আওয়ামী লীগ বা সরকার চাইলে আলোচনা বা কথা বলতে রাজি"' তারপর থেকেই সরকার বলা শুরু করলো । একটা গনতান্ত্রিক সরকারকে কতটা ছোট বা দূর্বল ভাবলে একজন সিভল সোসাইটির লোক এমন কথা বলতে পারে । এমন কথা বলায় একটা দেশের সরকারকে কতটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে সেই ব্যপারটি প্রতিষ্ঠানের(গ্রামীন ব্যাংক) কেউ বিবেচনায় আনবে না ?
সংবাদ সন্মেলন আর মানব বন্ধনে করে সরকারকে একতরফা দোষারোপ করে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত মনে হলো ।
সরাকার যদি একঘন্টার জন্য নমনীয়তা ভুলে যায় তবে যারা যারা সরকারকে ধমক দিয়ে বলে, "এ দেশের জনগণ শেখ হাসিনা সরকারকেও একই ভাবে অপমান করে ক্ষমতাচ্যুত করবে" । সরকারকে ১৯ টুকরো হওয়ার জন্য তৈরি হতে বলে কিংবা যদি বলে সামনেই টের পাবেন গ্রামীণ ব্যাংক কি জিনিস আর জেলখানা কি জিনিস । কিংবা যদি সরকারকে ভয় দেখিয়ে বলে যে,"তোমাদের আমরা টের পাওয়াবো জেলখানা কি জিনিস" । এমন বড় বড় ধমকি একটা দেশের সরকারকে দিলে সেই দেশের সরকারের বিদ্রোহী জনগনকে সায়েস্তা করার জন্য কি কি করা উচিৎ ছিলো । সরকার সেটা করে নাই ।
সরকারের শৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পায় নাই বিধায় গ্রামীন ব্যাংকের মানব বন্ধন শ্বান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে করা সম্ভব হয়েছে । কিন্তু উচিৎ ছিলো জামায়াত শিবিরের মত ব্যবহার করা ।
এত কথা বলার প্রয়োজন ছিলো না । একটা প্রতিষ্ঠান নিজেদের ভবিষ্যতের সম্ভমনাময় লাভের কথা ভেবে আরেকটা রাজনৈতিকদলকে নৈতিকভাবে সচ্চরিত্রবান অনুভব করাইয়া দিতেছে আর তুলনামূলকভাবে সচ্চরিত্রবান দলটিকে(১৯৯০ সালের পরে উভয় দলের দূই দুইটি মেয়াদ) অসৎ, অসচ্চরিত্র, ব্যভিচারী রূপে বিবেচনা করাইতেছে । আমাদের দেশে অনেক অর্থনীতিবিদ এবং অভিজ্ঞ ব্যাংকার আছেন ।
সরকারী স্বিদ্ধান্ত যদি সত্যিই ভুল হতো তবে উনাদের এই প্রসংগে বলতে শুনতাম । উনারা সবাইতো আর সরকারের লোক ছিলেন না । সরকারী দল ছাড়াও অনেক অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার আছেন । যেই সকল সংগঠনের কোন অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার নাই তাহারাই যেন গ্রামীন ব্যাংকের দূঃখ কষ্ট বেশী বেশী অনুভব করতে লাগলো । আমরা সাধারণ জনগন স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারি সমস্যাটা কোথায় এবং কোন যায়গায় ।
একটা সরকারী স্বিদ্ধান্তের প্রতিবাদের ধরন যদি এমন হয় তবে দেশ ও জনগনের স্বার্থে সরকার সহজে কোন স্বিদ্ধান্ত নিতে পারিবে না । গ্রামীন ব্যাংকের টাকাতো কেউ নিয়ে চলে যাচ্ছে না । ব্যাংকের যায়গায় ব্যাংক ঠিকই থাকতেছে । তাহলে সরকারকে কেন গ্রামীন ব্যাংক বিরোধীদলের ন্যয় আক্রমন করিতেছে ?
দেশের জনগন, দেশের রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক দল কারো আত্মমর্যাদাকে তিনি বিন্দুমাত্র মূল্যায়ীত করেন না । যদি করতেন তবে বলতে পারতেন না, "আমি কারো কাছে যাই না আমার কাছে সবাই আসে"।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে কত তুচ্ছ ভাবলে এমন একটা কথা বলতে পারেন । নিজেকে অনেক অনেক বড় ভাবতেছেন । আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার উদ্দ্যেশ্যে কেউ বলতে পারে না, "সরকার চাইলে আলোচনায় রাজি আছি"। কেন? কি প্রয়োজনে ? সরকার কি সংকটে আছে ? সরকারে যে বা যারাই থাকুক আমরা পদমর্যাদাকেই সম্মান করি । দেশের পদমর্যাদাকে অসম্মান করলে চূড়ান্তভাবে দেশের মানুষের অসন্মান হয় ।
এত বড় অসম্মানের বিপরীতে সামান্য অসম্মানীত হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা উচিৎ নয় কি । ধন্যবাদ ।
সংবাদের লিংকঃ http://www.priyo.com/2013/09/03/29734.html
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।