জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই
কৈফিয়ত : পবিত্র রমজান মাসে সবাই ব্যস্ত নানা ধর্মীয় কাজে। আমি তেমন ধার্মিক নই। তবে ধর্ম ও ধার্মিক লোককে গালাগালিও করি না।
আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা আছে সে ধার্মিক হবে নাকি নাস্তিক হবে। সে হিসেবে ব্যক্তি-স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা আছে বলেই আমি কাউকে গালাগালি করার পক্ষপাতি নই।
যাকগে, তবে ধর্ম বিষয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন জাগে মনে। সে সব প্রশ্নের উত্তর বেশ জটিল। তেমনি একটি প্রশ্ন এই লেখার শিরোনাম।
ইমাম শব্দের অর্থ নেতা। আমি আমাদের মহল্লার ইমামকে জিজ্ঞেস করে এই অর্থ জেনেছি।
অর্থ জেনে হতভম্ব হয়েছি। নেতা কি কোন চাকুরিজীবী হতে পারে ? নেতৃত্ব দান কি চাকুরি হতে পারে ? অথচ আমাদের দেশে ইমামতি একটি চাকুরি।
আরও জেনেছি, ইসলামে ইমাম সেই লোকটি হবে যে সবচেয়ে বেশি ধর্মভীরু ও আমলদার। সে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞানী হবে। ধর্ম বিষয়ে যে কোন সমস্যার সমাধানও দেবে সে।
একজন নেতা হিসেবে সে এলাকার মুসল্লীদের বিচার আচার করবে এবং ধর্ম অনুসারে রায় ঘোষণা করবে। অর্থাৎ একজন ইমাম তার এলাকার যাবতীয় সমস্যার সমাধানকল্পে নেতার ভূমিকা পালন করবে।
খেলাফতের জামানায় খলিফারা ইমাম ছিলেন। নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা ছিল বলেই খলিফারা ইমামতি করতেন। তারা কোন চাকুরি করতেন না।
তারা নেতৃত্ব দিতেন বলেই তারা ছিলেন ইমাম।
কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখি ? একজন ইমাম হল এলাকার সবচেয়ে নিরীহ মানুষ। তার কাজ মসজিদের ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো। আর শুক্রবারে জুম্মার নামাজের আগে কিছু ভালো ভালো কথা বলা। এর বিনিময়ে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে তার জন্য বরাদ্দ সামান্য বেতন।
আর তার খাবার বরাদ্দ এলাকার কোন দুনম্বরী ইনকামওয়ালার বাড়িতে। ঘুষখোররা মসজিদের ইমামকে খাওয়াতে খুব পছন্দ করে। ভাবে, এতে হয়তো তাদের পাপের ভাগ কমবে। ইমাম সাহেব এলাকায় মিলাদ পড়িয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে আয় করে। বাকি সময় মসজিদ সংলগ্ন একটি ঘরে তিনি ঘুমান।
তবে ভালো কাজের মধ্যে তিনি সামান্য সময় শিক্ষকতাও করেন। সকালে মসজিদের বাচ্চাদের কায়দা পড়ান তিনি। সেই সূত্রে এলাকায় কিছু গৃহশিক্ষতার কাজও পেয়ে যান। বাড়ি বাড়ি কোরান শরীফ পড়িয়ে তিনি সামান্য আয় করেন।
ইমাম সাহেবদের সাথে তার স্ত্রী বা সন্তান বসবাস করে না।
তারা থাকে গ্রামের বাড়িতে। ইমাম সাহেব মাঝে মাঝে বাড়ি যান। এত অভাবের মধ্যেও অনেক ইমাম একাধিক বিয়েও করেন।
তাহলে ইমাম নামের নেতাটি কি আসলে কোন নেতৃত্ব দেন ? তিনি তো আসলে নেতা নন, একজন চাকুরিজীবী মাত্র। এলাকার কিছু পয়সাওয়ালা লোক যারা নানা অপকর্ম করে টাকার পাহাড় গড়েছেন, তারা মসজিদ কমিটির নেতা হওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যান।
দান খয়রাত করে মসজিদ কমিটি দখল করেন। এসব লোকের কথায় ইমাম সাহেব ওঠেন বসেন। এমনকি শুক্রবারের ওয়াজের সময়েও একমন কোন বেফাঁস কথা বলেন না, যাতে সেই পয়সাওয়ালারা রুষ্ট হন। বরং সারাক্ষণ মসজিদ কমিটির লোকদের সাথে মানিয়ে চলেন তিনি। তাদের তেল মেরে চাকুরি বাঁচিয়ে চলাই তার কাজ।
ইমাম অর্থ নাকি নেতা। এ কোন নেতা আমাদের ? নেতৃত্ব কি কোন চাকুরি হতে পারে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।