হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)।
অস্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও শিবিরের সঙ্গে গতকাল ছাত্রলীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের বহিরাগত ও ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে সকালে বাসে মারামারির ঘটনাকে কেন্দ করে এ সংঘর্ষ হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও শিবিরের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ থেকে সকাল ১০টার ক্যাম্পাসে আসার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল কর্মী রনি ও সোহাগের সঙ্গে ছাত্রলীগের বহিরাগত কয়েকজন ক্যাডারের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে তা মারামারিতে রূপ নেয়। ছাত্রলীগের বহিরাগত ক্যাডাররা ওই ঘটনা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিছুজ্জামান রাসেল জোয়ার্দ্দারকে জানান। এ খবর শোনামাত্র ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রাসেল টেন্টে অবস্থানরত ছাত্রদল কর্মী সোহাগের ওপর আক্রমণ চালান রাসেল। তারা ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে সোহাগের হাত ভেঙে দেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বারবার শান্ত হওয়ার কথা বললেও ছাত্রলীগ ক্যাডার রাসেল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি সোহাগকে গুলি করবেন বলে শাসাতে থাকেন। এর পরপরই ছাত্রলীগের একদল কর্মী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা কেন্দ আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি, রামদা, ইটপাটকেলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। ফলে উভয় দলের মধ্যে শুরু হয় ভয়াবহ সংঘর্ষ। সংঘর্ষের সময় গুলি, টিয়ার শেল, বোমা ও ককটেলের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
প্রাণ বাঁচাতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংঘর্ষের সময় শিবিরের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে অবস্থান নেন আবাসিক এলাকায়। ছাত্রলীগের আক্রমণের সামনে টিকতে না পেরে পিছু হটে আবাসিক এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রদল। সংগঠিত হয়ে আবারও ক্যাম্পাসের দিকে মুভ করতে চাইলে ছাত্রদলকে লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের গুলির সামনে টিকতে না পেরে আগে থেকে আবাসিক এলাকায় অবস্থান নেওয়া শিবির কর্মীদের মধ্যে ঢুক পড়েন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ছোড়ে। পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলে আহত হন শিবিরের কয়েকজন কর্মী। এ ঘটনার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শিবির। ছাত্রদলের সঙ্গে মিলে সংঘর্ষে যোগ দেয় তারা। আক্রমণ আর আক্রমণে নাস্তানাবুদ করে তোলে ছাত্রলীগকে।
শিবির ও ছাত্রদলের আক্রমণে টিকতে না পেরে প্রশাসনিক ভবনে আশ্রয় নেয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী একসময় প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান। ওই সময় প্রসাশনিক ভবনের সামনে থাকা পাঁচটি মোটর সাইকেলে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রদল ও শিবির কর্মীরা। সংঘর্ষ চলাকালে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী জিয়ার মাথা চাপাতির কোপে গুরুতর জখম হয়।
সংঘর্ষে ইবি ছাত্রদলের সহসভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, অর্থ-সম্পাদক কামরুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিন ছাত্র সংগঠনের ৪৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী। ছাত্রদলের আহত নেতা-কর্মীরা হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, সহসভাপতি আনিসুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, শামিম, রাসেল, দপ্তর সম্পাদক শাহেদ, প্রচার সম্পাদক সৌরভ, রাজু, হুমায়ুন, বোরহান, বিকুল, রনি, সাহানুর, মিজান, সোহাগসহ অন্তত ২০ জন। আহত ছাত্রলীগ নিতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুজর গিফারী গাফফার, সজীবুল ইসলাম সজীব, রতন, সাইফুল, দফতর সম্পাদক সাহেদ, রইস, রুবেল, আনিছ, জাাহাঙ্গীর, পারভেজ, রাসেল, লিটন, রকিসহ ১৫ জন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের বহিরাগত ক্যাডার ও শিবির নেতা-কর্মীদের ১০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, 'বহিরাগতরা বাসের চালককে মারধর করলে আমার দুই কর্মী প্রতিবাদ করে।
এতে ছাত্রলীগ ক্যাডার রাসেল জোয়ার্দ্দার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করলে প্রতিরোধ করা হয়। ' ইবি শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম হোসেন খান বলেন, 'ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। '
ইবি শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ বলেন, 'পুলিশ ও ছাত্রলীগ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের কর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এ ঘটনায় শিবির জড়িত নয়।
ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। ' ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। এদিকে সবকিছু প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে কবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কমিটি : বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দুুপুরে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকারের সভাপতিত্বে তার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রুহুল আমীন ভূঁইয়া, প্রফেসর ড. মো. গোলাম মওলা ও প্রফেসর ড. মো. মাহবুবর রহমান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে কমিটিকে। এ ছাড়া গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।