যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
স্বাধীনতা যুদ্ধকে নস্যাত করার লক্ষ্যে জামাতে ইসলামীর অন্যান্য প্রচেষ্টার মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা ছিল আল-বদর নামে একটা সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রতিষ্ঠা। শিক্ষিত জামাত সদস্য এবং ইসলামী ছাত্র সংঘের (অধুনা ইসলামী ছাত্র শিবির) সমন্বয়ে এই বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধরত জনগোষ্ঠীকে পাকিস্থানী মতাদর্শের গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করা।
পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সংগে যোগসাজসে বদর বাহিনী সার্বিকভাবে জামাত নেতা গোলাম আজমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। এর প্রকাশ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন:
১) বর্তমান জামাতের নায়েবে আমীর মতিউর রহমান নিজামী - সারা পাকিস্থানের প্রধান
২) বর্তমান জামাতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদ - প্রাদেশিক প্রধান
৩) মীর কাসেম আলী - তৃতীয় নেতা
৪) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান - প্রধান সংগঠক
সেপ্টেম্বর ৭১ এর প্রথম দিকে গভর্নরের উপদেষ্টা রাও ফরমান আলীর সংগে বৈঠকে গোলাম আজম বুদ্ধিজীবি নিধনের অনুমোদন লাভ করেন। তার পরপরই গোলাম আজমের তৎপরতা লক্ষ্যনীয় ভাবে বেড়ে যায়।
তিনি সেই সময় আল বদরের মোহাম্মদপুরের হেড কোয়ার্টার পরিদর্শন কালে চরম উত্তেজনাময় বক্তব্য রাখেন। ( দৈনিক সংগ্রাম - ১৭ সেপ্টেম্বর ‘৭১)। সাথে সাথে দৈনিক সংগ্রামও তাল মিলিয়ে উত্তেজনাকর কলাম প্রকাশ করতে থাকে।
১৪ই সেপ্টেম্বর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত হয় আল-বদর শিরোনামে একটি লেখা, যেখানে বলা হয় -
“আল-বদর একটি নাম! একটি বিষ্ময়! আল বদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আল বদর সেখানেই। ভারতের চর কিংবা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আল বদর সাক্ষাৎ আজরাইল” ।
বাঙালী বুদ্ধিজীবিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে আল-বদর বাহিনীর প্রস্তুতির প্রমান পাওয়া যায় আল বদর প্রধানের ভাষনে। ২৩শে সেপ্টেম্বর ‘৭১ ঢাকার আলীয়া মাদ্রাসাস্থ বদর বাহিনীর ক্যাম্পের এক সমাবেশে বদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী বলেন -
“যারা ইসলামকে ভালবাসে শুধুমাত্র তারাই পাকিস্থানকে ভালবাসে। এইবারের উদ্ঘাটিত এই সত্যটি যাতে আমাদের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিরা ভুলে যেতে না পারে সে জন্যে সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালাতে হবে”।
যার ফলশ্রতিতে আমার দেখি ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ভয়াবহ বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবিদের নিধনের ঘটনা বিশ্ব দেখেছে।
নিজামীর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত চায় ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত চেয়েছে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি।
অন্যদিকে, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম নিজামীসহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠনের দাবি জানিয়েছে।
ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান সোমবার বলেন, "নিজামীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ ও তার পরবর্তী সময়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে এখন তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও অতীতের সব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। "
জেলে যাওয়ার পর বেকসুর খালাস পেয়ে নিজামী বেরিয়ে এলে সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "দুর্নীতি মামলার অভিযোগ কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ, তা আমি জানি না। জেলে যাওয়ার পর নির্দোষ হিসেবে ছাড়া পেলে বিষয়টি কোনোভাবে সরকার বা রাষ্ট্রের পক্ষে যাবে না।
এটি হলে নিজামী নিজের পক্ষে সাফাই গাইবার সুযোগ পাবেন। "
অন্যদিকে, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সমন্বয়ক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন অর রশীদ বলেন, "দুর্নীতির সঙ্গে গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধকে এক করে দেখা ঠিক হবে না। ১৯৭১ সালে গণহত্যায় জড়িত নিজামীসহ তার সব সহযোগীর বিচার করতে হবে। এজন্য অবিলম্বে সরকারকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। "
ফোরামের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ বলেন, "আমাদের অভিযোগ কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা দলের বিরুদ্ধে নয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যারাই যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের সবার কৃতকর্ম জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে বিচারের জন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। "
ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গত ৩ এপ্রিল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংশ্লিষ্ট ১৫৯৭ জনের যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মধ্যে মতিউর রহমান নিজামীর নাম রয়েছে।
ডা. এম এ হাসান জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন নিখিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করতে তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়।
মতিউর রহমান নিজামী রাজাকার বাহিনী গঠনেও জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি গঠনের পর ১২ এপ্রিল ঢাকায় প্রথম যে মিছিল হয় তাতে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম, খান এ সবুর, মতিউর রহমান নিজামী প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামেই নিজামীর ভূমিকার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয় জানিয়ে ডা. হাসান বলেন, "বিভিন্ন সংগঠন ও গণমাধ্যমও বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত হওয়ার দরকার। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।