. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
ক’দিন থেকে খুব ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, আর সিলেটের বৃষ্টি একবার শুরু হলে আর থামার নাম নেই।
টানা সাত/আট দিন থাকত। এখন অবশ্য ওরকম নেই। উঠোন পেরিয়ে রান্না ঘরে যেতে হত। এখন
আম্মা যাননা।
ঘরেই ষ্টোভে খাবার গরম করে নেন। শহরে এখন বেশ মানুষ-জন দেখা যায়। যারা
ভয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলো, তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন।
আমাদের মুড়ি দিতো একজন বুড়ো লোক। হঠাত একদিন সে একঝুড়ি পেঁপে নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির।
আম্মাতো তাঁকে দেখে খুশীতে চিতকার করে উঠলেন। চা, রুটি খেতে দিয়ে পাশে মোড়ায় বসে খুঁটিয়ে
খুঁটিয়ে তাঁর কথা শুনলেন। তাঁর মুখে এ ক’মাসের কষ্ট, বিভতসতার কথা শুনে আম্মার চোখ দিয়ে
পানি গড়াতে লাগল। হারানের গ্রামে ৮/১০ ঘর গরিব হিন্দু পরিবার। ওরা সবাই ধান, চাল কিনে
মুড়ি, খই ভেজে বিক্রি করত।
তখন পর্যন্ত তাঁদের গ্রামে মিলিটারি না গেলেও শহর থেকে আগত
মানুষের মুখে পাকসেনাদের নির্মমতার কথা শুনে গ্রাম ছেড়ে প্রায় সবাই ভারতে চলে গিয়েছে। হারানের
১৬ বছরের ছেলে, আর বিবাহিতা মেয়েও তার পরিবার নিয়ে চলে গেছে। হারান যায়নি। তাঁর বউ
পঙ্গু, হাটতে পারেনা। ধান চাল কিনতে পারছেনা, তাই খই, মুড়িও ভাজা হচ্ছেনা।
আর ভেজেই বা
করবেটা কি? শহরে না এলে বিক্রি করবে কোথায়? খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। গাছের ক’টা পেঁপে
ছিলো, তাই নিয়ে শহরে এসেছে বিক্রি করতে, আর মা কে দেখে যেতে।
রাতে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র শুনতে শুনতে হাসির দমকে আমাদের গলায় খাবার আটকে যেতো।
বিচ্ছু বাহিনি, গজারিয়া মাইর, ছেড়াবেড়া, গেঞ্জাম, এসব নতুন নতুন শব্দ শুনে আমরা খুবই আমোদ
পেতাম। কথিকাটির নাম ছিলো চরমপত্র।
পরে জেনেছি, ওটা পাঠ করতেন এম, এ আকতার মুকুল।
আব্বা কে দেখতাম বেশ কিছু ঔষধ-পত্র এনে আম্মাকে দিতেন, আম্মা ওগুলো ভাগ ভাগ করে উনার
পুরোন শাড়ির টুকরা দিয়ে মুড়ে সেলাই করতেন। নোভালজিন, ডেটোল, ফ্লাজিল চোখের মলম, আরও
থাকত হোমিয়প্যাথ ওষুধের শিশি। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় বাজারের ব্যাগে করে পুরানো কাপড়ে
মুড়িয়ে আব্বা ওগুলো নিয়ে যেতেন। পরে শুনেছি, আব্বার কাছে মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা আসত, তাদের
জন্যই এগুলো নিয়ে যেতেন।
রাত বারটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত এখন কারফিউ থাকে। শহরে মানুষজন বেড়ে গেছে। আব্বা বললেন,
শান্তি-কমিটী তো আগেই হয়েছিলো, এখন আবার আল-বদর, আল-সামশ এগুলোর জন্ম হয়েছে। আম্মাতো
হামেসাই বদদোয়া দিয়ে চলেছেন, “ আল্লাহ’র গজব পড়বে এদের উপর, বিনা মেঘে বজ্রপাত হবে এদের
মাথায়, নির্বংশ হবে এরা”। আমাদের বাসার আশে-পাশে অনেক আম গাছ।
আম কুড়িয়ে কেঁটে রোদে
শুখিয়ে আমসি দিতাম। আঁচার তো বানানো যাবেনা, আম্মা বলেন অনেক খরচ পড়বে তাতে। অলস দুপুরে
আম গাছের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছি, হঠাত নজর গেলো মিছিরউল্লাহ’র রান্নাঘরের জানালা দিয়ে, একি!!
দাদুর রান্নাঘরের কলস রাখার তাকটা এখানে কেনো? কলসের মুখে ঢাকা দেয়া যে পেতলের ছোট ছোট
রেকাবি গুলো, ওগুলো তে তো ঠাকুর ঘরে দুধ-সাদা সন্দেস দিতে দেখেছি। এ গুলো এখানে এলো কি করে?
মিলিটারি যদি দাদুর বাসা তছনছ করে তবে জিনিস গুলো এ বাসায় এলো কি করে, এ রহস্য আমার ছোট
মাথায় ঢুকেনা। আব্বা শুনে বললেন, চৌমোহনীর বই’এর দোকানের সব বই গুলোও ঐ বাড়ীতে এসেছে।
ঐ বাড়িতে একটা ডোবা ছিলো, যেটার পানি ওরা গরুকে খাওয়াতো, গোসল করাতো, ঐ ডোবার পানি
শুখিয়ে গেলে দেখা গেছে কয়েকটা বস্তা পাঁকে পড়ে আছে, তাতে বই ছিলো।
চারিদিকে কলেরা ছড়িয়ে পড়ছিলো, আমরা পানি ফুটিয়েই খেতাম, তারপরেও ফিটকিরি দেয়া পানি দিয়ে
ধোয়া-পাকলা করা হচ্ছিলো। সামনের পুকুরের কচুরিপানা পরিস্কার করা হলো। সবাই বলাবলি করছিলো
মাছ খাওয়া বন্ধ করতে হবে, মাছ তো প্রায় খেতামই না মাঝে মধ্যে যাও পেতাম, সেটাও বন্ধ হলো।
একদিন কিছু লোক এলো টিকা ইনজেক্সন দেবার জন্য।
ওদের দেখেই আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া। লুকিয়ে
ছিলাম রান্না ঘরের পিছনে। চার/পাঁচ বছর বয়সে কুকুরে আচঁড়ে দিয়েছিলো। তখন নাভির চারপাশে
চৌদ্দটা ইনজেক্সনের বিভিষিকা আমায় এই এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। লুকিয়ে থেকে বাঁচতে পারলাম না।
চেংদোলা করে আমায় ধরে নিয়ে টিকা, ইনজেক্সন দেয়া হলো। ইস! মানুষ এতো নিষ্ঠুর!
এর মাঝে নতুন উপদ্রব হলো চোখ উঠা। চারিদিকে সবার চোখ উঠতে শুরু করলো। সেকি যন্ত্রনা। চোখ
লাল হয়ে ফুলে গেলো, অনবরত পানি পড়া, আর ব্যাথা।
অষুধ খেয়ে, মলম দিয়েও কমেনা। দশ/বারো দিন
ভুগিয়ে এমনি কমে গেলো।
মিলিটারির আনাগোনা, গোলাগুলির শব্দ ঠিকই ছিলো। ওসব শব্দ তখন আমাদের কানে যেনো ঘুমপাড়ানির গান।
আব্বা বলেন, বর্ডার এলাকা গুলোতে রোজই যুদ্ধ হচ্ছে, তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে নাকি অনেক বাংগালি মিলিটারি
জড়ো হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ওখানে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে।
গেরিলা যুদ্ধও হচ্ছে অনেক জায়গায়। গেরিলা শব্দটা
শুনলেই চোখের সামনে গরিলার ছবি ভেসে উঠে, গেরিলা আবার কি? কিন্তু আব্বা কে প্রশ্ন করার সাহস ভাই
বা আমার কারোরই নেই। তাই চুপ করে শুনে যাই। সিলেটে এমনিতেই খুব বেশী জোঁকের উপদ্রব, চা-বাগানে
এই ব্রিষ্টিতে জোঁক তো কিলবিল করছে, মনে হতেই গা শিরশির করে উঠল। তবু নাকি ব্রিষ্টি হওয়াই ভালো।
আব্বা বলেন। ব্রিষ্টিতে ঐ পাকসেনারা নাজেহাল অবস্থায় থাকবে। ওদের দেশে তো এতো খাল, বিল, নদী নেই,
এতো ব্রিষ্টিও হয়না।
১৪ই আগষ্টে স্কুলে খুব ধুমধাম করে অনুষ্ঠান হবার কথা, আমি তো আবার সব তরকারির মসলা(আম্মার ভাষায়)।
কবিতা, গান, নাচ, সবকিছুতেই আছি।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হলোনা। এর আগেই পা পুড়িয়ে লেংড়া হয়ে
ঘরে বসে রইলাম। সকালে তাড়াহুড়ো করে আব্বাকে নাস্তা বানিয়ে দিতে গেছেন আম্মা, আমাকে বলেছেন, এসে
তোমাকে দিচ্ছি। চুলার উপর গরম তাওয়ায় তেল ছিলো, আমি ভাবলাম আম্মার কাজে সাহায্য করে আমি নিজেই
তো বানিয়ে নিতে পারি। যেই ভাবা সেই কাজ- তাওয়ার তেলে রুটিটা যেই ছেড়েছি, ঝপাত করে সব তেল আমার
পায়ের পাতায়--- তারপর তো যথারিতি বকুনি, জ্বালা যন্ত্রনা।
পা নিয়ে ভুগতে ভুগতে ১৪ই আগষ্ট শেষ।
এর মাঝে একদিন দেখা গেলো মিছিরউল্লাহ মোক্তার তার পরিবার সহ গ্রামের বাড়িতে চলে গেলো। বাসায় রয়ে গেলো
বহু পুরোন মানুষ বটুমিয়া। আব্বা চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমাদের কে কোথাও পাঠানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে উঠলেন।
কিন্তু কোথায় পাঠানো যায়? দাদার বাড়ী, নানার বাড়ী এতো দূরে- কে নিয়ে যাবে? মামাদের বলবেন এসে নিয়ে
যেতে তারও উপায় নেই। বড় মামা তাঁর পরিবার নিয়ে কোন অবস্থায় আছে কে যানে, মেজ মামা পাকশী পেপার
মিলের ইঞ্জিনিয়ার। উনার কথা যা শুনেছি, তাতে গায়ের রক্ত হীম হয়ে যায়। একরাতে পেপার মিলের প্রায় ৩০/৪০
জনকে ধরে নিয়ে যায় পাকসেনারা। মামাও ছিলেন সে দলে।
সবাই কে পদ্মার তীরে নিয়ে যায়। সেখানে আরো অনেক
লোক কে ধরে আনা হয়েছিলো। সবাই কে সার বেধে দাড় করানো হয়। মামা একেবারে নদীর কিনারে ছিলেন। যখন
ব্রাশফায়ার শুরু করে মামা তখন আগেই কাত হয়ে পড়ে যান, গড়িয়ে পড়েন পানিতে।
রাতের অন্ধকারে সাঁতার কেঁটে
দূরে একটা গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। তারপর সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে যান। সেজ-মামা ভারতে চলে গেছেন,
কেও যানেনা উনি বেঁচে আছেন কিনা। বাকি দুজন মামা তো ছোট।
অগত্যা কী আর করা।
আব্বা আমাদের নিয়ে সিলেটেই রওনা দিলেন। আমার। দুর-সম্পরকিয় ফুপুর বাসায়। ফুপা
হাবিব ব্যাঙ্কে এজিএম ছিলেন। সুবিদবাজারে বাসাটা খুবই নিরিবিলি।
সামনে পিটি স্কুল, পিছনে চা-বাগান। আমাদের
রেখে আব্বা পরদিনই মৌ্লভীবাজার ফিরে গেলেন।
আব্বার জন্য মন খারাপ হতো, তবে এ বাসায় টেলিফোন থাকায় আব্বার সাথে প্রায়ই কথা হতো। এখানেও রাতের
বেলা স্বাধীনবাংলা বেতার শোনা হতো। এতো সুন্দর সুন্দর গান বাজানো হতো- “তীর হারা ঐ ঢেউ এর সাগর পাড়ি
দেবো রে, হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাত বাংলাদেশ, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, নোঙ্গর তোলো তোলো সময় সে হলো
হলো, আরও কত যে গান- শুনলেই বুকের ভিতর কেমন করে উঠত।
সুবিদবাজার এলাকাটা মূল সহর থেকে দূরে, গ্রাম গ্রাম মনে হতো, কাছের গ্রাম আখালিয়া হতে তরিতরকারি, হাঁস মুরগি
এনে রাস্তার পাশে নিয়ে বসত গ্রামের মানুষ। তাও সকালের দিকে। সরকারি আদেশে সব বাড়িতেই ট্রেঞ্চ খোড়া হয়েছে।
মৌ্লভীবাজারেও উঠোনের একপাশে খোড়া হয়েছিলো। টিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
টিনের উপর গাছের ডালপালা দিয়ে
ঢাকা। যাতে প্লেন থেকে টিন দেখা না যায়। যখন তখন সাইরেন বেজে উঠত, সবাই ছুটাছুটি করে ট্রেঞ্চে যেয়ে ঢুকতাম।
মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যেত। বুম বুম বোমার শব্দ।
এমনি করে যখন দিন রাত কাটছিলো, তখন হঠাত একদিন
আব্বা এসে হাজির। শুনলাম উনার মুখ থেকে—মুক্তিবাহিনী খুব দ্রুত এগিয়ে আসছিলো, পাকবাহিনী পিছু হঠছিলো। এমন
অবস্থায় আব্বা খেয়াল করলেন দল বেধে পাকবাহিনীর গাড়ি শহর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ওখানে থাকা নিরাপদ
নয় মনে করে আব্বা সিলেটে আসতে চাইলেন। কিন্তু আব্বাকে অনুমতি দেয়া হল না।
উচ্চপদস্থ অফিসারের অনুমতি ছাড়া
সরকারি কর্মকর্তারা কোথাও যেতে পারবেনা, এমনই আইন জারি করা ছিলো। আব্বার উপর্যপরি অনুরোধে সেই অফিসার
খুব কড়া ভাষায় আব্বাকে নিষেধ করল। আব্বার মনে খটকা লাগল। রাতের বেলায় বাসা তালা দিয়ে, অফিসের একটি
সাইকেল নিয়ে আব্বা রওনা হলেন। শহরের মুখে চেকপোষ্টে আব্বাকে আটকানো হল।
এক পাঞ্জাবি সেপাই আব্বাকে বলল,
তোমার অনুমতিপত্র কোথায়? আব্বা বললেন, অনুমতিপত্র তো দেননি, মুখে বলেছেন। সেপাইটি তখন আব্বাকে বলল, ঠিক
আছে, আমার সামনে ফোনে কথা বল, আর আমার সাথে কথা বলিয়ে দাও। চেকপোষ্ট থেকে ঐ অফিসার কে ফোন করা
হলে, খুব কড়া ভাষায় আব্বাকে মানা করে অফিসার ফোন রেখে দিলো। সেপাই বলল, কি বললেন অফিসার? আব্বা
করুন মুখ করে বললেন, মেজর সাহেব তো ঘুমাচ্ছেন। এ কথা শুনে সেপাইটা রেগে আগুন হয়ে আব্বা কে বলল, তুমি
কি জানো তোমার কপালে কি আছে? যে ব্ল্যাক-লিস্ট করা হয়েছে, তাতে তোমারো নাম আছে।
আমরা ডিউটি করে, গুলি
খেয়ে মরি, আর উনারা আয়েস করে ঘুমাচ্ছেন। যাও, যাও তুমি, ভাগো---। আব্বার কাছে তখন ঐ পাঞ্জাবি সেপাইটি
ফেরেস্তার মত মনে হয়েছে। সাইকেল চালিয়ে কিছুদুর আসার পর একটি জিপ আব্বার পাশ কাটিয়ে কিছুদুর গিয়েই আবার
ব্যাক করে ফিরে এলো। আব্বাতো তখন মনে মনে কলেমা পড়োছিলেন।
আল্লাহ’র অশেষ রহমত, যে ওটা পাক-আর্মির
জিপ ছিলোনা। গাড়িতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলো, ওদের মাঝে দেওয়ান ফরিদ গাজি আব্বার পরিচিত ছিলেন। উনারা
আব্বাকে জিপে উঠতে বললে সাইকেল রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে আব্বা ওদের সাথে সিলেট আসেন।
যখন তখন কেঁপে কেঁপে সাইরেন বেজে উঠত, সবাই ছুটে ট্রেঞ্চে ঢুকতাম। কড়কড় শব্দে মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে
যেত।
বোমার শব্দ, গুলির শব্দ, প্লেনের শব্দ, সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা। রাতের বেলায় সাইরেন বাজলে আব্বা
আমাদের নিয়ে বাসার মাঝখানের একটি রুমে অবস্থান নিতেন। একদিন খুব নিচু দিয়ে প্লেন উড়ে গেলো। কানে তালা
ধরানো শব্দে বোমার আওয়াজ শোনা গেলো। সারা বাড়ি কেঁপে উঠল, ঝনঝন করে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেলো।
খুব
কাছাকাছি কোথাও বোমা পড়ল। ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৩/৪ জন মিলিটারি অফিসার এলো বাসায়। খুব বিদ্ধস্ত আর
হতাশ চেহারা। অনুরোধ জানালো ওদেরকে রেডিও’র খবর যদি শুনতে দেয়া হয়। বাইরের ঘরে বসে আব্বা, ফুপার
সাথে বসে ওরা খবর শুনলো।
কিছুক্ষন পাথরের মত বসে থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলো। ১৫ই ডিসেম্বর বারবার
রেডিওতে পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পন করার ঘোষনা দেয়া হল। রাস্তা ঘাটে উতফুল্ল মানুষ বেরিয়ে পড়ল। বাসার সামনে
দিয়ে সার বেধে পাকসৈন্যদের মাথা নিচু করে যেতে দেখলাম। ১৬ই ডিসেম্বর সকাল থেকেই রাস্তায় গাড়ির আনাগোনা।
অসংখ্য মানুষ দলবেধে বেরিয়ে পড়ল। শুনলাম আজ পাক-বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পন করবে। আমরাও বেড়িয়ে পড়লাম।
শহরের বারুদখানা এলাকায় যে দুটো জায়গায় বোমা পড়েছে তা দেখলাম। দু-জায়গাতেই বোমার আঘাতে ছোটখাট পুকুরের
সৃষ্টি হয়েছে।
বড় বড় কনভয় ভর্তি মুক্তিযোদ্ধা আর ভারতীয়-সেনা, আর মিলিশিয়া। জয়বাংলা ধ্বনীতে আকাশ বাতাস
মুখরিত। দীর্ঘ নয়মাস রক্ত ঝরা সংগ্রামের পর এই মাটি স্বাধীন হল। জন্ম হল একটি নতুন স্বাধীন দেশের। বাংলাদেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।