-সালাম।
-ওয়া আলাইকুম সালাম।
-কেমন আছো?
-ভাল, হামদুলিললাহ।
-তোমার দোকানটি ছোট হলেও বেশ চমৎকার সাজিয়েছ। আমাকে একটা পারফিউম স্প্রে দাও।
-অবশ্যই অবশ্যই। পুরুষ না মেয়েলোকের?
-নিশ্চই মেয়েলোকের, আমি কি পুরুষ? আমাকে কি তোমার পুরুষ বলে মনে হয় তোমার?
-না মানে স্বামী বাবা ভাই বন্ধু ওদের কারো জন্য তো নিতে পারো।
-না না আমাকে একটা আতর দিয়ে দাও ফ্রি।
-সেটা কি করে সম্ভব?
-তুমি দিলেই তো সম্ভব হয়ে যাবে।
-কিন্তু আমি তো এগুলো পয়সা দিয়ে কিনেছি বিক্রি করার জন্য।
-একটা আমাকে দিয়ে দাও আললাহর ওয়াস্তে, তোমার খায়ের বরকত হবে। আমি মিসকিন।
-তোমাকে তো দেখতে মিসকিন বলে মনে হয়না। তুমি সম্ভবত আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছো।
-সত্যি বলছি, আমি ফকির, ভিা করি।
-তুমি জাননা এদেশে ভিা করা মমনু(নিষেধ)। সিআইডি পেলে তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে জেলে।
-জানি, তবু লুকিয়ে করি, করা প্রয়োজন তাই।
-তোমার স্বামী নেই?
-না । মা আছেন, এক বোন আছে।
একমাত্র ভাই ও বাবাকে আমেরিকান সৈন্যরা মেরে ফেলেছে বাগদাদে। এক বছর হয়ে গেল, এখানে, এই কাতারে, এই দোহাতে, এসেছি বোনের কাছে। মাও ছিলেন, ছ’ মাস থাকার পর দেশে ফিরে গেছেন বাড়ীটা ধরে রাখার জন্য । এখানে বোনের জামাইটার আয় কম। কোন মতে এখানে দশ বছর ধরে আছে।
বোনের তিনটা বাচ্ছা আছে। শাশুড়ী ওর সাথেই থাকে। বোনের জামাইয়ের বেতনের টাকায় কোনমতে মাস চলে যায়। আমি এখন বোঝা হয়ে আছি বোনের ঘরে।
-ইরাকের কোথায় তোমাদের বাড়ী?
-কারবালা শহর থেকে দুই কিলোমিটার বাইরে, পশ্চিমের দিকে।
আচ্ছা ঠিক আছে এখন যাই। তুমি তো হিন্দের বড়লোক। আমার ইতিকথা শুনে তোমার ফায়দা নাই। আমিও কেন যে কিছু কথা বলেই ফেললাম।
-না আমি হিন্দি নই, বাংলাদেশী।
-ও আচ্ছা বাঙ্গালী?
-হাঁ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, তাই বাঙ্গালী। কিন্তু আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ।
-বাংলাদেশে কি আতর-পারফিউমে ভরপুর? আমি দেখলাম, বেশীরভাগ আতরের দোকান বাঙ্গালীদের।
-বাঙ্গালীরা এই জিনিসের ব্যবসায়ে আগ্রহী। তা তুমি লেখাপড়া কতটুকু করেছ?
-চার কাশ মাত্র ।
পড়ালেখা বেশী থাকলে তো এখানে একটা চাকরী পেয়ে যেতাম। ঠিক আছে, এবার যাই, তুমি তো আতর দিচ্ছনা। আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভি েকরে অন্তত একশ রিয়াল যোগাড় করতে হবে। একশ রিয়াল হলে পঞ্চাশ রিয়াল বোনকে দেই আর বাকী পঞ্চাশ আমি জমা রাখি।
-কেন জমা করো?-কিছু মায়ের জন্য পাঠাই, আর কিছু নিজের ভবিষ্যতের জন্য।
-তোমার বোনকে বলনা কেন তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করতে? তুমি তো মাশাললা সুন্দরী, বয়সও তো বেশী নয়, আঠারো/বিশ হবে হয়তো। -না না সতেরো বছর। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি আমাকে সুন্দরী বলেছো। খোদা আমার সমস্ত শরীরটাকে সুন্দর করে বানিয়েছেন সত্য কিন্তু মিসকিন, বিদ্যাবুদ্ধিও নাই।
এই সুন্দরের কি দাম?
-আরে তোমার চোখে পানি এসে গেছে দেখছি! দুঃখ করো না। জীবনটাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করো। তোমার নাম কী?
-লিসা। আমি মুসলিম নই,মসিহী, খৃষ্টান আরব।
তুমি?-আমি মুসলিম।
আচ্ছা তো বলো দেখি, তোমরা খৃষ্টান, তবু আমেরিকান সৈন্যরা তোমার বাবা ও ভাইকে মেরে ফেললো? ওরা তো খৃষ্টান। -আরে ওদের ধর্মটর্ম কিছু নাই। ওরা এসেছে ইরাকের তেল লুট করতে। আমার বাবা ও ভাই গেরিলাদের সাহায্য করতে যেয়ে ওদের হাতে ধরা পড়ে গেল। বিশ্বাস করো, আমার বাবা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন।
সাদ্দামকেও সমর্থন করতেন না। আমাদের আশেপাশের মুসলমানরা আমার বাবাকে খুবই ভালবাসতো। আরো একটি সত্য কথা তোমাকে বলবো?-বলো। আমি সত্য কথা পছন্দ করি। তুমি সত্য কথা বলো, আমি তোমাকে উপহার দেবো।
-আমার বাবাকে মেরে ফেলার তিনমাস আগে………তুমি আবার নারাজ হয়ে যাবে না তো আমার ব্যক্তিগত দুঃখের কথা শুনে?
-না না তুমি বলো।
-তিনমাস আগে বাগদাদের এক যুবকের সঙ্গে বাবা আমার বিয়ে দিয়েছিলেন। যুবকটি প্রথম মাসখানেক আমাকে খুব ভালবেসেছে। আমেরিকান শিবিরে কি যেনো একটা কাজ করতো। আমাকে মানা করেছিলো বাবাকে না বলতে।
আমি বাবাকে বলিনি। কিন্তু বাবা ও ভাইকে মেরে ফেলার পর দেখি সে বদলে যেতে থাকে। বাবার মউতের একমাস বাদে সে আমেরিকা চলে যায় আমাকে ছেড়ে। একটা চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সে আর আমেরিকা থেকে ফিরে আসবেনা। আমি যেনো অন্য কাউকে বিয়ে করি, তা-ও জানালো।
-ঐ যুবকের মা বাবা আত্মীয়-স্বজন কী বললো?
-ওর মা বাবা বললো, ছেলে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে, আমরা কি আর করবো, চলে যাও তোমার মায়ের কাছে। সন্তানাদী যখন হয়নি, তখন আর চিন্তা কিসের? অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলো।
-তুমি করে সংসারী হতে চাও?-হ্যাঁ চাই বটে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেলো কোন সুজন পুরুষের সন্ধান পাইনি। দু একজনের সঙ্গে কথা বলেছিলো আমার বোন।
ওরা ভাবেসাবে, বুঝা গেছে, আমার শরীরটাকেই উপভোগ করতে চায়।
-তোমার বয়সী অনেক মেয়েই তো এই শহরে, প্রতিরাতে অনেক পুরুষের সঙ্গে শুয়ে পয়সা কামায়। তুমি ঐ রকম করলে অসুবিধা কি? যৌবনের চাহিদাও মিটলো পয়সা কামাইও হলো। -অনেকদিন ভেবেছি ও রকম হয়ে যাই, বোনটাও রাজী আছে, মন বারবার বলালো-ব্যাপারটা অত্যন্ত নোংরা, অনেক পুরুষের সঙ্গে প্রতিরাতে ——– না না না আমি পারবো না। চব্বিশ ঘণ্ঠা ঐ কামের ধান্ধায় থাকা কোন মানুষের কাম না।
হায়ওয়ান হয়ে যেতে হবে। আমি একটা পরিচ্ছন্ন জীবন চাই। কোন মুসলিম ভালো যুবক চাইলে, আমি মুসলিম হয়ে ওকে বিয়ে করতে রাজী আছি। -তুমি খুব ভালো মেয়ে।
-ধন্যবাদ তোমাকে।
আচ্ছা আমি আজ উঠি। তোমার দোকানে এখন কাস্টমার আসবে। এভাবে তোমার সঙ্গে কথা বলতে দেখে কে কি ভেবে বসে আবার।
-আরে কে কি ভাববে -আমি ওসবের তোয়াক্কা করিনা। তুমি কাল এসো, তোমার সঙ্গে কথা বলবো।
-তুমিও তো দেখছি খুব ভালো মানুষ। এতো ভালো মানুষ এই প্রথম দেখলাম। সে বললো।
-তোমাকে ধন্যবাদ। এই পারফিউমটা নিয়ে যাও, এটা তোমাকে হাদিয়া দিলাম।
আমি বললাম।
-তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ।
-তোমাকেও ধন্যবাদ। চোখের পানি মুছে ফেলো। চোখের পানিটা মানুষকে ধোকায় ফেলে।
-তোমার সঙ্গে কথা বলে আমার মনটা অনেক হালকা হলো।
-ধন্যবাদ, তুমি দীর্ঘজীবি হও, তোমার অনেক মঙ্গল হোক।
-ধন্যবাদ, খোদা হাফেজ।
দুই
পরদিন দুপুর বেলা বারটা। দোহা শহরের চৌরাস্তার মোড়।
মানুষের জমায়েত। কিছু একটা হয়েছে। এক পা দু’পা করে এগিয়ে যাই। দেখি, এক্সিডেন্ট। একটি মার্সিডিজ কার একজন মেয়েলোককে রাস্তা পার হওয়ার সময় মেরে দিয়েছে।
মেয়েটি রাস্তায় পড়ে আছে। কিছুনের মধ্যে পুলিশের গাড়ী এসে যাবে। তার আগে গিয়ে দেখে নেই। ইয়া আললাহ! এতো দেখছি লিসা, কারবালার সেই মেয়েটি! চোখ খোলা। কটমট করে আকাশের দিখে তাকিয়ে আছে।
সমস্ত শরীরে কোন স্পন্দন নেই। এ্যাম্বুল্যানস এলো। ফিলিপিনো ডাক্তারটি চেক আপ করে বললো, ’ওহ গড! শী ইজ এ্যা বিউটিফুল গার্ল- শী হেজ গান! শী হেজ লেফট দিস ওয়ার্লড!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।