আটক আনোয়ারার এখন নতুন সুর ঃ সাতটি সন্তান তার নয়, জ্বিনের
বাকি সাতটি সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে ঃ এডভোকেট এলিনা খান
। । আবুল খায়ের । ।
পুলিশের সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী আনোয়ারা রহমান কর্তৃক সাত সন্তানের পিতা-মাতা দাবির ঘটনা অবশেষে মিথ্যা প্রমাণিত হলো।
তারা শিশুদের প্রকৃতি পিতা-মাতা নয়। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফরেনসিক বিভাগ থেকে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদ সমন্বয় গঠিত বেঞ্চে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়। বিপুলসংখ্যক আইনজীবীর উপস্থিতিতে বেঞ্চ ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পড়ে শুনান। ফলাফলে সাত শিশু কেউ কারো ভাই-বোন নয় এবং এরা এক মায়ের সন্তান নয়। প্রমাণিত হয়েছে, সাতটি শিশু সাত মায়ের জন্ম।
ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মিজানুল হক সকালে সিলগালা করা অবস্থায় ডিএনএ রিপোর্টটি হাইকোর্টে গিয়ে নিজে হস্তান্তর করেন। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগে ডিআইজি আনিসুর রহমানের পক্ষের আইনজীবীদের বেঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়। ঘণ্টাব্যাপী খোঁজাখুঁজি করে ডিআইজি আনিসুর রহমানের আইনজীবীদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে বেঞ্চ এই মামলার অ্যামিকাস কিউরি ও সাবেক এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম ও অন্যান্য আইনজীবীর উপস্থিতিতে সাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত চাঞ্চল্যকর ঘটনার অবসান হতে যাচ্ছে। আজ বুধবার হাইকোর্টের উক্ত বেঞ্চ এই সম্পর্কে রায় ঘোষণা দেবেন।
উল্লেখ্য, অন্যান্য দিন সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান আদালতে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু গতকাল তিনিও অনুপস্থিত। বাদির পক্ষের আইনজীবী মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, মহিলা আইনজীবী সমিতির সভানেত্রী অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ হাইকোর্টের বেঞ্চে উপস্থিত থেকে সাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল অবহিত হন। সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী আনোয়ারা রহমানের বারিধারা বসুন্ধরার বাসায় আরও যে সাত শিশু সন্তান রয়েছে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা আদালতে আবেদন করবে। এই সাতটি শিশুও একই মায়ের নয় বলে এলিনা খান দাবি করেন।
গতকাল ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল জানার পর কারাগারে আটক আনোয়ারা রহমান বিভিন্ন লোক মারফতে আইনজীবীদের জানান যে, সাতটি শিশু তার নয়। জিনের সন্তান এবং জিন তাদেরকে এনে তাকে দিয়েছেন। অ্যাডভোকেট এলিনা খান এর সত্যতা স্বীকার করেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট হাইকোর্টের উক্ত বেঞ্চ উল্লেখিত সাতটি শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ঐ দিন ঢাকা মেডিক্যালে হাইকোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম সারওয়ার পুলিশ প্রহরায় সাতটি শিশুকে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে যান।
উক্ত ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মিজানুল হক, ডিএনএ ল্যাব প্রধান ডা. শরীফ আকতারুজ্জামান ও প্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফারুক আহম্মেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বোর্ড সাতটি শিশুর দেহ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্ত ও লালা সংগ্রহ করেন। এরপর সাতটি শিশুকে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়।
২০০৬ সালের ৮ জুন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান সাতটি শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য বাড্ডা থানায় একটি জিডি করেন। ঐ সময় তিনি সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী আনোয়ারা রহমানের বিরুদ্ধে সাতটি শিশুকে পাচার ও আটক রাখার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালত থেকে সাত দিনের মধ্যে সাতটি শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশ অনুযায়ী ঐ বছরের ১৫ জুন ঢাকা মেডিক্যালে ডিআইজি আনিসুর রহমান, আনোয়ারা রহমান এবং তাদের সাতটি শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তারিখ ছিল। ঐ দিন সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান সাতটি শিশু নিয়ে ফরেনসিক বিভাগে হাজির হয়েছিলেন; কিন্তু তার স্ত্রী আনোয়ারা রহমান আসেননি। তবে সাবেক ডিআইজি সাতটি শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করতে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের নিকট লিখিতভাবে অস্বীকৃতি জানান। পরে বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২০০৬ সালের ১৮ জুন মহিলা আইনজীবী সমিতি সাতটি শিশুকে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেন।
গত ৬ আগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশের মধ্য দিয়ে এই রিট পিটিশনের নিষ্পত্তি হয়। সাতটি শিশুর মধ্যে ৪টি ছেলে ও তিনটি মেয়ে। তারা হচ্ছে, জান্নাতুন মারিয়া নাফিজা, আইমান রহমান আনিস, আনাস রহমান আকন, নাসেফ রহমান নায়েফ, তাইয়ান রহমান আনিস, জান্নাতুন নাফিজা রহমান ও জান্নাতুন আনিসা রহমান।
সম্প্রতি কাকরাইলে বর্তমান সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তার স্ত্রী পরিচয়ে প্রতারণাকালে সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা রহমান গ্রেফতার হন। তিনি বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আসার আগে সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান ও আনোয়ারা রহমান উত্তরায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঐ সময় মহিলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তারা একটি নারী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে ঐ বাসায় গেলে এক বাসায় অনেকগুলো শিশু দেখে তাদের সন্দেহ হয়।
২০০৬ সালের মার্চ থেকে সাবেক ডিআইজির ১৪টি শিশু নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু হয়। ১৪টি শিশুর মধ্যে সাতটি শিশুর এক সঙ্গে জন্ম বলে আনোয়ারা রহমান দাবি করেন। তবে তিনি কোন ডাক্তারি কাগজপত্র ঐ সময় দেখাতে পারেননি।
কৌতূহলীদের ভিড় ঠেকাতে সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমানের বাস ভবনে পুলিশ প্রহরা বসানো হয়। সন্তান দাবিদার কাউকে ঐ বাসার কাছে যেতে দেয়া হতো না। আদালতে সাতটি শিশুকে দুই দফায় উপস্থিত করাকালে বেশ কয়েকজন মহিলা তাদের সন্তানের সন্ধানে এসেছিলেন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।