ত্রিরঞ্জনের কিছু ব্যাপার সবার থেকে বেশ একটু আলাদা রকমের। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি তার ভীষন একটা ঝোঁক। এমনটা অনেকরই হয় কিন্তু সবার থেকে তার ব্যাপারটা একটু আলাদা। এটা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। যেমন সবসময় সে ছবি আঁকে না কিংবা আঁকার কথা ভাবেও না।
অন্য দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতই তার জীবন। কোথাও কোনও বিচ্যুতি নেই । কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় কোথাও যেন কিছু একটা ব্যাপার আছে তার মধ্যে। কিন্তু সেটা কি তা সে বুঝতে পারে না।
যখন রংতুলি হাতে তুলে নেয় তখনও ঠিক জানে না সে কি ছবি আঁকবে।
ওর ভেতর থেকে কিছু একটা ওকে দিয়ে রংতুলিটা হাতে উঠিয়ে নেয়। কোনও এক অদ্ভুত ইশারায় কিভাবে যেন রঙের আচড়্গুলো পড়তে থাকে ক্যানভাসে একের পর এক। পৃথিবীর কোনও কিছু তখন তাকে আর স্পর্শ করে না। বুঁদ হয়ে থাকে সে ছবি আঁকার সময়। স্বত্তার অনেক ভেতরে তখন বাজতে থাকে অপার্থিব কিছু সুর যার ছোঁয়া তার শিরা উপশিরায় বয়ে যায়।
সুরের তালে তালে তুলির স্ট্রোক চলে ক্যানভাসের উপর।
একসময় শেষ হয় তার ছবি আঁকা। দু’পা পিছিয়ে অনেক সময় নিয়ে ত্রিরঞ্জন দেখতে থাকে সম্পুর্ন ছবিটা । খুঁজে নিতে চেষ্টা করে কোথাও কোনও কিছু বাদ পড়েছে কিনা। যখন সে নিজে সন্তুষ্ট হয় তখন তার ঠোঁটে একটা ক্ষীন হাসি নেমে আসে।
৬ বছর বয়সে জীবনের প্রথম সম্পুর্ন ছবিটা আঁকে সে। খুব সাদামাটা একটা দৃশ্য কিন্তু ছবিটায় পেন্সিল আর রঙের স্ট্রোকগুলো ছিল আশ্চর্য রকমের সুন্দর। জন্মদিনে মামার এক বন্ধু তাকে রঙপেন্সিলের একটা সেট উপহার দেন। এর আগে সে কখনও ছবি আঁকেনি এবং এ বাড়িতে কেউই ছবি আঁকে না। রঙপেন্সিলগুলো মাসখানেক ধরে পড়ে ছিল।
কখনও তার ছবি আঁকার কথা মনে হয়নি। হঠাৎ ছোট্ট ত্রিরঞ্জনের খুব ছবি আঁকতে ইচ্ছা হল। তখন সে ছবিটা আঁকে। রাতে মামাকে ছবিটা দেখাতেই তিনি হইচই বাঁধিয়ে ফেললেন।
এত সুন্দর একটা ছবি তুমি কিভাবে আঁকলে বাবা? তোমাকে কে শেখালো এমন সুন্দর করে ছবি আঁকতে?
কেউ শেখায়নিতো মামা ! আমার এমনিই খুব ইচ্ছা হল আঁকতে তাই আজকে আঁকলাম।
খুব সুন্দর হয়েছে বাবা। এখন থেকে তুমি ছবি আঁকবে।
পরদিনই ওই বন্ধুকে ডেকে মামা ছবিটা দেখান। তিনিও ছবিটা দেখে খুব প্রসংশা করেন। এরপর অনেকদিন ত্রিরঞ্জন আর ছবি আঁকেনি।
তার ইচ্ছা হয়নি। কিন্তু ওইদিনটার কথা তার এখনও মনে আছে। দোতলার বারান্দায় বসে সে রাস্তার দিকে দেখছিল। রিক্সা, সাইকেল, মানুষ – এসব দেখতে তার খুব ভাললাগছিল। বুয়া ছিল রান্নাঘরে আরা মামা অফিসে।
বাইরে তখন বিকালের রোদ । রাস্তায় একটা ইয়া বড় কাল বিড়াল ঘোরাঘুরি করছিল। বিড়ালটা দেখেই তার কেন যেন খুব ছবি আঁকার ইচ্ছা হয়েছিল। তারপর সে বিড়ালটার একটা ছবি এঁকে ফেলে।
এরপর অনেকদিন বিড়ালটাকে দেখেনি সে বারান্দায় বসে।
পরে বুয়ার কাছে জেনেছে বিড়ালটা নাকি মরতে মরতে বেচে গেছে। একটা গাড়ির নিচে পড়তে যেয়েও বিড়ালটার শুধু একটা পা চাপা পড়েছিল। তাই বেচে গেছে। ওর খুব মন খারাপ হয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।