আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদেশ ভ্রম ॥ ভাল আছে শুধু দালালরা

ভালো আছি

স্বচ্ছলতার আশায় মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশ বিভূয়ে গিয়ে ভাল নেই বাংলাদেশী যুবকরা । চাকরী না পেয়ে বিদেশের মাটিতে মানবতার জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। এখন তাদের দিন কাটছে গ্রেপ্তার ও মৃত্যু আতংকে । অথচ তাদের যারা বিদেশে নিয়ে গিয়েছে তারা রয়েছে মহা সুখে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা যুবকদের কাছ থেকে জানা যায় এমন অনেক কষ্ট গাঁথা।

চাঁদপুরের কচুয়া থানার বারইয়াড়া গ্রামের মোশারেফ হোসেন ভাগ্যের সন্ধানে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে ভাগ্য ফেরাতে কাজে যোগ দেয় সে। কিন' স্বল্প আয়ে কাঙ্খিত সাফল্য সম্ভব নয় বলে দ্রুততম পন'ার খোজ শুরু করে। এক পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় বি এন পি শাখায় নাম লেখায়। ধাপে ধাপে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ অর্জন করে।

একই সাথে তার পেশায় নতুন মাত্রা যোগ হয় । মোশারেফ হোসেন শুরু করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার কাজ। ২০০৭ সালে তার মাধ্যমে ১০০ জন মালয়েশিয়ায় যায় ভাগ্য ফেরাতে। এদের সবাইকে ফাক্টরীতে কাজ দেয়ার কথা বলা হয়। যার জন্য প্রতি ঘন্টায় পারীশ্রমিক ১৮ দশমিক ৫০ রিংগিত তথা বাংলাদেশি ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকা।

প্রতি দিন ৮ ঘন্টা ডিউটি এবং ৪ ঘন্টা ওভার টাইম। এজন্য জনপ্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন- নেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার জহরবারুতের ফ্রেক্সটোনিক কোম্পানীতে ওই ১০০ জন শ্রমিককে কাজ দেয়া হয়। মাসে ২৬ দিন কাজের কথা থাকলেও কখনও ১৪/১৫ দিনের উপরে কাজ হয়না। যার ফলে শ্রমিকরা যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের জীবিকা র্নিবাহ সম্ভব হয়না।

এছাড়া এসব শ্রমিকরা ওই প্রতিষ্ঠানে ৮ মাস কাজ করলেও বেতন পেয়েছে মাত্র চার মাসের । যার জন্য বিদেশ বিভূয়ে মানবতার জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে তারা । এ কারনে ওই সব শ্রমিকরা মোশারেফ হোসেনকে অন্যত্র চাকরী অথবা দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। কিন' তাতে আরো বড় বিপদে পড়ে শ্রমিকরা । মোশারেফ হোসেন সময় ক্ষেপন করে তাদের ভিসার মেয়াদের শেষ র্পযায়ে এনে পুণরায় ভিসার জন্য উল্টো টাকা দাবী করে ।

এজন্য জনপ্রতি ২ হাজার রিংগিত করে চাওয়া হয় । অথচ ভিসার মেয়াদ বাড়াতে প্রয়োজন মাত্র ১৮০ রিংগিত। অনেকে শেষাবাধি ৫০০ রিংগিত দিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়ান। যারা পারেননি তাদের গ্রেপ্তার ও মৃত্যু আতংক নিয়ে জঙ্গলে বাস করতে হচ্ছে। এদেরই একজন চাঁদপুরের ইসহাক।

মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেতে দেশ থেকে টাকা নিয়ে সিংগাপুর হয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি। তার ভাষ্য মতে বাংলাদেশী হাজার হাজার যুবক মালয়েশিয়ায় বন-জঙ্গলে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এদের মধ্যে যশোর অঞ্চলের অসংখ্য যুবক রয়েছে। যশোরের ঝিকরগাছার পানিসারা গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে আনারুল ও মুজিবর রহমানের ছেলে কামরুল মোশারেফ হোসেনের মাধ্যমেই গিয়েছিল মালয়েশিয়ায়। ভাগ্য জয়ের স্বপ্ন নিয়ে গেলেও তা পুরন হয়নি।

বরং আঁধপেটা খেয়ে কষ্টের জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের । তারা তাদের পরিবার সদস্যদের জানিয়েছে এমন ভাবে চললে তাদের দেশে লাশ হয়ে ফিরতে হবে । এজন্য তারা যে কোন পন'ায় তাদের দেশে ফেরত আনার জন্য কাঁকুতি-মিনতি করছে। এ চিত্র শুধু আনারুল ও কামরুলের নিজেদের নয়। মালয়েশিয়ায় কাজের জন্যে যাওয়া হাজারও বাঙ্গালি যুবকের।

ভাগ্য বিড়াম্বিত এসব যুবকদের ফেরত আনতে র্ব্যথ তাদের পরিবার । রিক্রুটিং এজেন্ট বা তাদের দালালরা এসব শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যাপারে কোন দায়-দায়িত্ব গ্রহন করতে রাজি নয়। তারা শুধু জানে প্রতারনার মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানো। এজন্য এসব শ্রমিকদের ফেরত আনতে সরকারী হস-ক্ষেপ কামনা করে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। একই সাথে আদম ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাসি-মূলক ব্যবস'া গ্রহনের দাবী জানান তারা ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।