আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১ যুদ্ধাহত নারীদের সম্মান করতে পারে নি বাংলাদেশ- করতে পারি নি আমরা

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

নারীর সতীত্ব এবং বিশুদ্ধতার সামাজিক ধারণাটা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তার একটা নিদর্শন ফ্রান্সের আদালতে বিশেষজ্ঞ বিচারকের দেওয়া রায় থেকে পরিস্কার হলো। একজন হতভাগ্য স্বামী বলেছেন তার স্ত্রী সতীচ্ছদ অক্ষত ছিলো না, যদিও হলফ নামায় নারী নিজেকে কুমারী দাবি করেছে তবে যে যেহেতু অক্ষতযোনি নয় তাই পুরুষ, এই ক্ষেত্রে হতভাগ্য স্বামী উপযুক্ত দেনমোহরানা প্রদান করা সত্ত্বেও প্রতারিত হয়েছেন এবং আদালতের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি প্রার্থনা করেছেন। আদালত সব বিবেচনা করে রায় দিয়েছেন অক্ষত যোনী কুমারিত্বের প্রতীক, সতীচ্ছদ অক্ষুন্ন থাকতে হবে নারীর। মাঝে মাঝে আইনের পরিভাষা আর যুক্তর মারপ্যাঁচ অসম্ভব রকমের অমানবিক হয়ে উঠে। এখন ফ্রান্সে এই প্রবনতা শুরু হওয়ার পর নিজেদের কুমারী এবং অবিবাহিত দাবী করা প্রতিটা মেয়েই কসমেটিক সার্জারি করে নিজেদের ছিন্ন সতীচ্ছদ সংযুক্ত করবার প্রচেষ্টা করছেন।

এ কাজে খরচ হচ্ছে ৫০০০ ইউরো কিংবা তার বেশি, তবে এর বিনিময়ে আদালতে তিনি সতী হইবার স্বীকৃতি পাচ্ছেন। স্বামীরা অক্ষতযোনী ছিন্ন করিবার প্রবল পৌরুষ মেনে নিয়ে শান্তি পাচ্ছেন । বাসর রাতের সাদা চাদরের লাল রক্তে তাদের মনে প্রশান্তি আসছে অন্তত দেনমোহরানা পরিশোধ করে সুন্নাহমোতাবেক বিশুদ্ধ নারী ভোগ করছেন তিনি। আমাদের সামাজিক পৌরুষের ধারণা আমাদের সামাজিক সতীত্বের ধারণার মর্মান্তিকতা দেখেছে ১৯৭১এর যুদ্ধাহত নারীরা। তাদের অনেককেই ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছিলো, তাদের অনেকেই ছিলেন সৌভাগ্যবতী, তারা চলতি পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

যুদ্ধের অমানবিকতার শিকার এইসব নারীদের সতীত্ব অটুট ছিলো না। ক্যাম্পে ধর্ষিত নারীরা অনেকেই গর্ভবতী হয়েছিলো, তাদের গর্ভমোচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ডাক্তারটির সাক্ষাৎকারের অনুবাদ পাওয়া যাবে অমি রহমান পিয়ালের ব্লগে। তবে যে মর্মান্তিক পুরুষতান্ত্রিক মানসের পরিচয় বাংলাদেশ যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেখা গেছে সেটা কোনো সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত হবে না। অনেক ধর্ষিতা নারী মুক্ত হয়ে ফিরে এসে স্বামী কতৃক পরিত্যাক্তা হয়েছিলেন। তাদের অপরাধ ছিলো তাদের কতিপয় পশু ধর্ষণ করেছিলো।

তারা অশুচি এবং অপবিত্র। স্বেচ্ছা মিলনের অপবিত্রতার ধারণা এবং পরপুরুষের স্পর্শ্বের ধারণার বাইরে আসলে পৌরুষ নেই। আমার স্ত্রীকে ভোগ করবার কিংবা তাকে খুবলে খাওয়ার অধিকার আমি অর্জন করেছি দেন মোহরের বিনিময়ে, তাকে আমার অসম্মতিতে অন্য কেউ জোরপূর্বক ভোগ করলেও সে অশুচী। এইসব সমাজ বর্জিত এবং স্বামীপরিত্যাক্তা মহিলারা বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন, কোনো বিদেশী দাতা সংস্থা তাদের বিদেশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো বিধায় তারা সেখানে সসম্মানে বসবাস করছেন। তাদের কি স্বদেশের কথা মনে পড়ে? স্বদেশের অমানবিক জাতির পিতার কথা মনে পড়ে।

আমি কোনো পাকিস্তানী সৈন্যের অবৈধ সন্তান জন্মাক বাংলাদেশে এমনটা চাই না- এই উক্তি পড়ে আমি অনেকটা সময় স্তম্ভিত হয়ে ছিলাম। মহানায়কের পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের কাতারে নেমে আসা শেখ নুজিবকে কখনই ক্ষমার যোগ্য মনে হয় নি তার এই অমানবিক উক্তির পরে। সেইসব কূলীন স্বামীরা যারা তাদের স্ত্রীদের সামাজিক ধারণার বশবর্তী হয়ে পরিত্যাগ করেছিলেন, তাদেরও ক্ষমা করতে পারি নি। আমার ভেতরের পুরুষ স্বত্তাটাকেও ক্ষমা করতে পারি না। সেও মাঝে মাঝেই দাবি করে অমলিন সৎ একনিষ্ট পতিভক্তা স্ত্রীর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।