খুব সাধারন মানুষ
আওয়ামীলীগ এর এই পাঁচ সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম কারন হিসেবে শাহবাগের আন্দোলনকে দুষছেন অনেকেই । কেউ কেউ সরাসরি ইমরান এইচ সরকারকেই দায়ী করচ্ছেন এবং মূল ফ্যাক্টর হল “আস্তিক-নাস্তিক”। “আস্তিক-নাস্তিক” এর জের ধরে হেফাজতের উত্থান। অবশেষে “অপারেশন শাপলা” ।
এবার আসা যাক মূল বিষয়েঃ শাহবাগের আন্দোলন টা শুরু হয়েছিল একটি মহৎ দাবি নিয়ে।
অরাজনৈতিক এই আন্দোলন দেশ ও দেশের বাইরে এতটা সারা পাবে সেটা এই আন্দোলন শুরুর আগে বিন্দু পরিমাণও ভাবা যায় নি। এই আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার নিতান্তই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতেই এই আন্দোলন শুরু করেন। এই মানুষটার সাথে আদর্শের মিল থাকলেও বেশ কিছু জায়গায় মতের অমিল ছিল আমার । বয়সে আমার থেকে সিনিয়র হলেও বলতে দ্বিধা নেই যে ইমরান ভাইয়ের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বেশ ভালই অভাব ছিল।
তার সাথে আমার যে সব জায়গায় মতের পার্থক্য ছিল এবং যে সব বিষয় শাহবাগের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তার কিছু টা নিচে তুলে ধরলাম।
১ পৃথিবীতে এক খণ্ড স্বাধীন দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে তা বিরল না হলেও ভাষার জন্য রক্ত দেয়া পৃথিবীতে সত্যিই বিরল। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা। মাতৃ ভাষা সব জাতির কাছেই একটি পবিত্র মাধ্যম।
আমি এই আন্দোলনের কিছু শ্লোগানের সাথে মতবিরোধ করেছিলাম। আর আমার মতবিরোধ এর জায়গাটি হলঃ ক-তে কাদের মোল্লার, ম-তে মুজাহিদ, ব-তে বাচ্চু এরকম আরও কয়েকটি বর্ণমালা দিয়ে রাজাকারদের নামের প্রতিনিধিত্ব করাটা।
আমার লেখাটা কাউকে সমালোচনা করার জন্য না। এটা পুরটাই আমার নিজস্ব মতামত। কারন আমি জানি যখন কোন কিছু মহান ইতিহাস এর জন্ম দেয় তখন তার কিছুটা ভুল থাকলেও তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করাও একটি অন্যায় কিন্তু আমাদেরকে হয়তো এসব বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।
আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষার বর্ণমালা দিয়ে কোন জানোয়ার রাজাকারের নামের প্রতিনিধিত্ব না করে বাংলা ভাষার বর্ণমালার সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে । আমার বর্ণমালা মহান, পবিত্র কিছুরই প্রতিনিধিত্ব করবে কোন জানোয়ার রাজাকারের নামের প্রতিনিধিত্ব করবে না।
২ ষহিংসু শ্লোগান যে কোন সময় ষহিংসুতা ছড়িয়ে দিতে পারে। কোন ভাবেই ষহিংসু শ্লোগান দিয়ে অহিংসু আন্দোলন হয় না। ইমরান ভাইকে বলেছিলাম ষহিংসু শ্লোগান দিলে মুখে বলার দরকার নেই অহিংসু আন্দোলন করচ্ছি আর যদি অহিংসু আন্দোলনই হয় তাহলে ষহিংসু শ্লোগান এর প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু ইমরান ভাই এই বিষয়ে কর্ণপাত করলেন না। করবেন ই-বা কেন? ততক্ষণে তার ডানে-বায়ে সরকারি দলের অনেক নেতাই জুটে গিয়েছিল এবং তিনি সাধারন মানুষের শক্তির থেকে তাদের শক্তিকেই বড় করে দেখেছেন।
যা পরবর্তীতে ভুল প্রমান হয়েছে।
৩। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে “আলোর মিছিল” বের করে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আল্টিমেটাম এর মধ্য দিয়ে শাহবাগের আন্দোলন সাময়িক বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব ইমরান ভাইকে আমি দিয়েছিলাম। এবং এই বিষয়ে আমার স্বাক্ষর করা দুটি চিঠি এখনো মুক্তিযুদ্ধা সংসদ এর কাছে আছে। এবং এই বিষয়ে ইমরান ভাই, আমি ও মুক্তিযুদ্ধা সংসদ এর সেক্রেটারি জেনারেন মতিন ভাই পিজি হাসপাতালের মদ্ধে মিটিং ও করেছি।
কিন্তু ইমরান ভাই যথারীতি এবারো আমার প্রস্তাবটা কর্ণপাত করলেন না। যার ফল সরূপ “আস্তিক-নাস্তিক” এর মতপার্থক্য তৈরি এবং হেফাজতের জন্ম।
৪। BNP জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের মিথ্যাচার শাহবাগীদের নাস্তিক বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা এবং কিছুটা সার্থক হলেও আমি স্পষ্ট ভাবে বলবো এটা শুধুই মিথ্যাচার। শাহবাগের আন্দোলন এর সাথে নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই।
এবং যারা আমারদের প্রিয় নবীকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে তাদের বিচার আমরা সবাই চাই। তবে নাস্তিকদের বিচার এর দাবি শাহবাগের আন্দোলন থেকে হওয়ার কথা বলেছিলাম, সেটা হওয়াটাই বাঞ্ছনীয় ছিল। সেটা ত হলই না বরং তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের পুলিশ আটক করার পরে তাদের মুক্তির দাবি জানানো হয় শাহবাগ থেকে। নাস্তিক ব্লগারদের মুক্তির দাবি কেন শাহবাগের আন্দোলন থেকে করা হবে? শাহবাগের আন্দোলন তো চিৎকার করে বলছে তারা নাস্তিক না ও নাস্তিকদের সমর্থন করে না। তাহলে তাদের মুক্তির দাবি কেন শাহবাগের আন্দোলন থেকে করে শাহবাগের আন্দোলন কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হল ?? আমি জানি তারা প্রকৃত অর্থেই নাস্তিক কি না ? কিন্তু তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের মুক্তির দাবি কেন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে জানানো হবে?? কেন তথাকথিত নাস্তিক ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করলেন ?? এই আন্দোলন মানেই কি নাস্তিকদের সমর্থন করা না ? এবং যা গণজাগরণ মঞ্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এটা ইমরান ভাইর ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।