আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিনদেশের ভাষা, মানুষ, এবং বাস্তবতা।

প্রতিটি সর্যাস্তে বুক বাঁধি একটি অন্যদিনের সূর্যোদেয়র প্রত্যাশায়.......

যারা জাপান এবং এর মানুষগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা অবশ্যই এদের ইংরেজীর উপর ভীষণ দুর্বলতার কথা অকপটে স্বীকার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র-শিক্ষক সবার ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য। তবে তারা ইংরেজী বলার চেয়ে লেখায় এবং পড়ায় যথেষ্ট ভাল। ইদানিং অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। জাপানের বড় বড় শহরগুলোতে সাধারণ মানুষ ইংরেজী টুকটাক বলতে পারে।

যদিও তাদের সেই ইংরেজী আমাদের দেশের স্কুলপড়ৃয়াদের চেয়ে লো লেবেলেরই হবে বলে আমার ধারণা। গত তিন বছরেও জাপানীটা শিখা হয়ে ওঠেনি আমার। আসলে কোন একটা ভাষায় টুকটাক কথা বলা বা বুঝার জন্য তিন বছর সময়টা যথেষ্টই বলতে হবে। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সেটা হল, দরকার হয়নি। সাধারণত জাপানে পড়তে আসা সব ছাত্রকেই মূল কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে প্রথম ৬ মাস জাপানী ভাষা শিখতে হয়।

এটা অনেকটা অলিখিত বাধ্যতামুলক এবং অনেকাংশে কোর্স টিচারদের উপর নির্ভর করে। আমি আসার পরও আমার প্রফেসর আমাকে জাপানী লেংগুয়েজ কোর্সে ভর্তি করিয়েছিলেন। আমার সাথে একজন ইন্ডিয়ানও ছিলেন। ডঃ রমেশ। পোষ্টডক্টরেট করতে এসেছিলেন।

আমরা দু'জনই যেতাম লেংগুয়েজ ক্লাশে। এক মাস ক্লাস করার পর একটা ক্লাস টেষ্ট হল এবং তাতে আমি আর ডঃ রমেশ দু'জনই আন্ডার স্কোর করলাম। প্রথম প্রথম জাপানী ভাষা শেখার যে ছোট খাট ইচ্ছেটা ছিল, ক্লাস টেষ্টের পর মাথা থেকে সেটা একদম ইরেজ হয়ে গেল। ফলাফল যেটা হল, ক্লাসে আমরা অনিয়মিত হয়ে গেলাম এবং এক পর্যায়ে একদমই আর ক্লাস করতাম না। লেংগুয়েজ-এর শিক্ষকরা আমাদের প্রফেসরকে চিঠি বা ই-মেইল এ আমাদের অনুপস্থিতির কথা জানালেন।

প্রফেসর আমাদের সাথে কথা বল্লেন এবং আমাদের অনাগ্রহতা দেখে আর ঘাটালেন না। লেংগুয়েজ ক্লাসটা চালিয়ে গেলে হয়তো এদের ভাষাটা কিছুটা হলেও শিখতে পারতাম। কিন্তু আমার অনাগ্রহতা আর আমরা প্রফেসারের আসকারায় ভাষাটা অজানাই রয়ে গেল। আমি জাপানী ভাষা না জানলেও সব কিছুই কিভাবে যেন চালিয়ে নিতে পারি। এখানে এসে প্রথমে একটা ষ্টুডেন্ট ডরমিটরিতে ছিলাম দুই বছর।

তারপর আইনেই বাধ্যবাধকতায় সেই ডরমিটরি ছাড়তে হল গত অক্টোবরে। এখানে প্রাইভেট বাসা ভাড়া নেয়া মহা ঝামেলার। কিন্তু সেই মহা ঝামেলার কাজটা যখন আমি একা একা-ই করে ফেল্লাম, আমার প্রফেসর শুনে যেন বিশ্বাসই করতে পারলেননা। এটা কি ভাবে সম্ভব। এদের ভাষা না জানা একটা মানুষ কি ভাবে এমন একটা ঝামেলার কাজ করে ফেলল? কিভাবে করলাম, আমি নিজেও যানি না।

তবে যেটা হয়েছিল, আমি ইংরেজী বিহীন এই জাপানী সমাজে চলতে গিয়ে গত দুই বছরে একটু জাপানী আর একটু ইংরেজী মিশিয়ে এদের সাথে কথা বলার একটা বিশেষ পদ্ধতি রপ্ত করে ফেলেছি। একটু কষ্ট হলেও ওই বিশেষ পদ্ধটিটা আমার অনেক কাজে লাগে। আমার এক বছর পরে জাপানে আসা নিউজিল্যান্ড প্রবাসী এক শ্রীলংকান ছেলেও আমার মতই ভাষাগত সমস্যায় পড়েছিল। বেচারা ভাষা না জানার কারণে প্রায় একমাস তিন বেলা শুধু ন্যুডুল্স খেয়ে কাটিয়েছিল। কিভাবে বাজার করতে হবে, কোথায় কি পাওয়া যাবে, কিছুই জানত না।

একদিন আমার সাথে পরিচয় হঠাৎ করেই। তার অবস্থা অবগত হয়ে আমার খুব কষ্টই হয়েছিল। তারপর তাকে আমার ইংরেজী মিলিয়ে জাপানী বলার কায়দাটা শিখিয়ে দিলাম। খুব তাড়াতাড়িই শিখে ফেলল কায়দাটা। এখন আমার সাথে দেখা হলে প্রথমেই এক গাল হেসে তারপর কথা বলে।

তার ওই হাসি "ভাষাগুরু"-র প্রতি তার তাচ্ছিল্লতা নয়, কৃতজ্গতার বহিপ্রকাশ। যা বলার জন্য এত কথা, সেই আসল কথাটাই বলা হল না। আমার এই এক অভ্যাস। কোন কথা বলতে গিয়ে তার ভূমিকায় এত কথা বলে ফেলি যে, শেষ পর্যন্ত আসল কথাই বলা হয়না। ইংরেজী সম্পর্কে জাপানীদের দুর্বলতা এবং সেই সম্পর্কিত আমার কিছু বাস্তব উপলব্দি শেয়ার করতে চেয়েছিলাম।

তার পরিবর্তে জাপানী ভাষা এবং এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও বাস্তবতার গল্পই বলা হয়ে গেল। জাপানীদের ইংরেজী নিয়ে কিছু বলা হল না। অন্য একটা পোষ্টে সে সম্পর্কে বলার ইচ্ছে রইল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।