জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, রাজশাহী
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের প্রার্থি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একাধিক প্রার্থি থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তিনজন করে মোট ছয়জন প্রার্থি রয়েছেন মাঠে। ফলে বড় এই দল দুটির ভোটাররা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছেন। তবে জামায়াতের ভোট ব্যাংক আর ওয়ার্কাস পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ও কারাবন্দি মেয়র বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর সমর্থন পাল্টে দিতে পারে মেয়র পদের নির্বাচনের সব হিসাব-নিকাশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তথা প্রগতিশীল শিবিরে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা এবং বিএনপি বা চার দলীয় জোটের জন্য জামায়াতের ভোট ব্যাংক বিরাট ফ্যাক্টর। সেক্ষেত্রে বিএনপির তিন প্রার্থির মধ্যে একজন সরাসরি বিএনপি করেন না। অপর দুইজনের মধ্যে যিনি জামায়াতের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হবেন তিনিই নির্বাচনি লড়াইয়ে লাভবান হবেন বেশি।
বিএনপি-জামায়াত সমর্থক প্রার্থির জন্য রাজশাহীর আরও একটি প্লাস পয়েন্ট হলো ‘এন্টি লিবারেশন’ মানসিকতা। অবশ্য কারও কারও মতে, বর্তমান সময়ে সেই মানসিকতার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।
বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও বিগত নির্বাচনগুলোর ভোটের প্যাটার্ণ দেখে সেটা মনে হয় না বলে রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমত। সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, ‘বাঘহীন বনে’ এবার প্রগতিশীল শিবিরে যে সম্ভাবনার দ্যুতি দেখা দিয়েছিল তাও নিবু নিবু করছে এই শিবিরের একটি বড় অংশীদারের একগুয়েমি আর অভ্যন্তরীণ অনৈক্যের কারণে।
নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ১৫ জন। এরমধ্যে বড় দুই দল থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক ডুলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক প্রচার সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ বিদ্যুৎ, বিএনপি থেকে মহানগর যুবদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, বিএনপি সমর্থক প্রাক্তন ওয়ার্ড কমিশনার রেজাউন নবী দুদু। তবে দুদু সরাসরি বিএনপির সঙ্গে যুক্ত নন বলে বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জনশ্র“তি রয়েছে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রার্থির সমর্থনে ‘বিশেষ বাহিনী’র আশির্বাদ রয়েছে। আবার অন্য একটি সূত্র মতে, ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে থাকা দুদগুর পক্ষে এই আশির্বাদের পাল্লাটা ভারি।
মেয়র পদের নির্বাচনি লড়াইয়ে আরও আছেন জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দুরুল হুদা, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির রায়হানুর রহমান রায়হান, বাসদের সাবেক জেলা সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস টুনু, রাজশাহী পৌরসভার প্রাক্তন প্যানেল চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, আমরা রাজশাহীবাসির আহবায়ক আবদুল মতিন খান, বিকল্প ধারার আখতারুজ্জামান বাবলু, স্বতন্ত্র আবদুল খালেক, আবুল কালাম আজাদ বাবু ও ফরমান আলী।
বিগত প্রায় দেড় দশকের ভোট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোটার ছিল এক লাখ ৫১ হাজার ৬৬২ জন। ওই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থি বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু পেয়েছিলেন ৫৮ হাজার ৫৩২ ভোট।
আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থি আবদুল মতিন খান ২৩ হাজার ১ ভোট, জাতীয় পার্টির দুরুল হুদা পান ৭ হাজার ৫৮১ ভোট, জামায়াতের সিদ্দিক হুসাইন পান ১৭ হাজার ৬৯২ ভোট এবং রাজশাহী পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান ১২ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়েছিলেন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রার্থি নির্বাচন করেন। এদের মধ্যে বিএনপির তৎকালিন তরুণ নেতা মিনু একাই পেয়েছিলেন ৫৮ হাজার ৫৩২ ভোট। আর অন্য ৬ প্রার্থি মিলে ভোট পেয়েছিলেন ৬১ হাজার ৪৩০।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে বিএনপি নেতা মিনুর একটি চাঁদাবাজি মামলায় ১৩ বছরের কারাদন্ড হয়।
তিনি এখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জীবন-যাপন করছেন। আর এবারের নির্বাচনে জামায়াতের সিদ্দিক হুসাইন বা অন্য কেউ প্রার্থি হননি। তবে জাতীয় পার্টির দুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের (‘৯৪ সালের প্রার্থি) আবদুল মতিন খান ও রাজশাহী পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান এবারেও মেয়র পদের জন্য নির্বাচনি যুদ্ধে নেমেছেন।
২০০২ সালের নির্বাচনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভোটার বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৮০। এবার মেয়র প্রার্থি ছিলেন ৫ জন।
এদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী নাগরিক কমিটির প্রার্থি ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা পান ৭৩ হাজার ৩০২ ভোট। বিএনপি তথা চার দল সমর্থিত প্রার্থি মিনু ৮৭ হাজার ৭০০ ভোট পেয়েছিলেন। অন্য প্রার্থিদের মধ্যে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক পান ২ হাজার ৩ ভোট, বাসারুজ্জামান হীরা পান ৪০৭ ভোট এবং সোলায়মান হোসেন পান ২৪০ ভোট। ফলাফল যাই হোক, রাজশাহীর মানুষ মনে করে, এই নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ফজলে হোসেন বাদশাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। একই অভিযোগ এনে বাদশা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। জনশ্র“তি রয়েছে, সদর আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থি হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচনে মিজানুর রহমান মিনু বিজয়ী হবার পর ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিলের সিটি নির্বাচনে পুনরায় মেয়র পদে প্রার্থি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষিতার অভিযোগ ওঠে। এ কারণে দলের ভেতরেই মিনুবিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরী হয়। নির্বাচনের পরপরই সরকার সমর্থক ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলায় মহানগরীর ভদ্রায় নিহত হন যুবলীগ কর্মী দুলু। এই দুলু হত্যা মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতারা তেমন কোন ভূমিকা রাখেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর চারটি থানা ও পবা উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ বা সদর আসন। এই আসনে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থি হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহাবুব-উজ-জামান ভুলু পান ২৪ হাজার ৪৭ ভোট, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগের প্রার্থি হিসেবে ফজলে হোসেন বাদশা পান ৩৪ হাজার ২৬৭ ভোট, জাতীয় পার্টির বদিউজ্জামান জামাল পান ২ হাজার ৯৬৭ ভোট, জামায়াতে ইসলামের মহানগর আমির আতাউর রহমান পান ৪০ হাজার ১৪১ ভোট। আর বিএনপির প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট কবির হোসেন ৮১ হাজার ১৪ ভোট পেয়ে সেবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
একইভাবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সদর আসনে আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটন পান ৭৫ হাজার ৮০৩ ভোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থি ফজলে হোসেন বাদশা ৩ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির আবদুল মতিন খানের প্রাপ্ত ভোট ১৩ হাজার ৭৪৭, জামায়াতে ইসলামের আতাউর রহমানের প্রাপ্ত ভোট ৪১ হাজার ৭৭৪।
এই নির্বাচনেও বিএনপির কবির হোসেন ১ লাখ ৮ হাজার ৪৭১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সর্বশেষ ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসন থেকে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু চারদলীয় জোটের প্রার্থি হিসেবে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থি হিসেবে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পান ৯৬ হাজার ৬০৪ ভোট। জাতীয় পার্টির মোস্তাক আহমেদ লাবু ১০ হাজার ৬৭৬ ভোট পান। ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থি ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৪৯০ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-সদর আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৫। এবার রাজশাহী সদর আসন থেকে পবা উপজেলাকে মোহনপুরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সদর আসন তথা মহানগরীতে ভোটার হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৯। আর পবা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৩০ জন। সে হিসাবে পবা ও মহানগরী মিলে এবার মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮৯।
বিগত বছরগুলোর প্রাপ্ত ভোট বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী সিটি এলাকায় জামায়াতের ভোট রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবারে জামায়াত, বিএনপি বা চারদলের সরাসরি সমর্থিত কোন প্রার্থি নেই। তবে বিএনপির তিনজন এবং পৌরসভার প্রাক্তন একজন প্যানেল চেয়ারম্যান মেয়র পদে লড়ছেন। এদের মধ্যে বিএনপির রাজনীতিতে ‘ক্লিনম্যান’ হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট এনামুল হকের গ্রহণযোগ্যতা দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে তেমন একটা নেই। মেয়র মিনুর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনকারি সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার রেজাউন নবী দুদুর অবস্থাও বলতে গেলে একই রকম।
দলের তরুণ নেতা হিসেবে মিষ্টভাষী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের গ্রহণযোগ্যতা দলের তৃণমূল পর্যায়ে তুলনামূলকভাবে বেশি বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানায়।
সূত্র মতে, যুবদল নেতা বুলবুল কারাবন্দি মেয়র মিনুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। সেই হিসেবে বুলবুল সমর্থকরা মনে করছেন, বুলবুল মেয়র মিনুর পুরো সমর্থন পাবেন। তিনি এখন জামায়াতের ১০০ ভাগ সমর্থন পাবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও মেয়র পতœী সালমা শাহাদত স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, চারদল নির্বাচন বর্জন করেছে, সেক্ষেত্রে সমর্থন দেয়ার কিছু নেই।
তবে মেয়র মিনুর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, মেয়র মিনু ও তার সমর্থকদের সমর্থন থাকবে বুলবুলের পক্ষেই। সূত্র মনে করে, বিএনপির দুইজনের মধ্যে দলের প্রতি কার ত্যাগ বেশি তা বিএনপির বিশাল কর্মী-সমর্থকগোষ্ঠী ঠিকই জানে। বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপি বুলবুলকে সমর্থন জানিয়েছে অনানুষ্ঠানিকভাবে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থি খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, স্থানীয় ১৪ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ন্যাপের একাংশ (জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর তেমন কোন তৎপরতা নেই) সমর্থন জানিয়েছে। লিটনের পক্ষে ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে নাগরিক কমিটি।
যদিও নাগরিক কমিটিতে দলীয় লোকের আধিক্যই বেশি। বিগত সিটি নির্বাচনের আগে গঠিত নাগরিক কমিটির মূল ব্যক্তি প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী প্রখ্যাত আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু ও প্রখ্যাত কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের নাম এবারের নাগরিক কমিটিতে স্থান পায়নি। তাছাড়া প্রগতিশীল শিবিরের সুশীল সমাজ তথা নাগরিক সমাজে ফজলে হোসেন বাদশার গ্রহণযোগ্যতা খুব বেশি।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে কেন্দ্রীয় ১৪ দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন দিলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবল বিরোধিতার মুখে শেষ পর্যন্ত বাদশা তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। পরে অবশ্য ওয়ার্কাস পার্টি সিটি নির্বাচনে কাউকে সমর্থন জানাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টিও এখন পর্যন্ত সিটি নির্বাচনে কাউকে সমর্থন জানায়নি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক শক্তিশালী প্রার্থি মাসুদুল হক ডুলু মেয়র নির্বাচনে তার প্রচারণা বেশ জোরেশারেই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রচারণায় ডুলুর পতœী রাবির কর্মকর্তা খুকুও ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। একইসাথে আওয়ামী শিবিরের আরেক প্রার্থি নাসিরউদ্দিন আহমেদ বিদ্যুৎও আছেন মাঠে। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো জানায়, রাজশাহীর সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থি খায়রুজ্জামান লিটনকে এবারের নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এরমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদুল হক ডুলুর সঙ্গে তাঁর (লিটনের) বিরোধ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুকের জামাতার নামে চাচাকে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে র্যাবকে দিয়ে গ্রেফতার ও নির্যাতন করানো, ফজলে হোসেন বাদশার কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই ১৪ দলের মনোনয়ন ছিনিয়ে নেয়া, আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ফারুককে হত্যা প্রচেষ্টা, বিগত সময়ে হাট-ঘাট ইজারা সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ, ১৯৯৯ সালে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম হত্যাকান্ডসহ নানান বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে।
তবে লিটন সমর্থকরা মনে করছেন, এবার খায়রুজ্জামান লিটনের অবস্থা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, জনাব লিটন সাহেবের শ্বশুরের পরিবার জামায়াতি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া জনাব লিটনের ভাই ২০০১ সালের মে মাসে আওয়ামী লীগে যোগদানকারি ব্যবসায়ী ওমর ফারুক চৌধুরীর মাতা সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
লিটন সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, এবারের নির্বাচনে যেহেতু জামায়াতের কোন প্রার্থি নেই সেহেতু জামায়াতের বিপুল ভোট ব্যাংক লিটনের ঘরেই যাবে। লিটন সমর্থকরা আরও জানান, খায়রুজ্জামান লিটন একাধারে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল সমর্থিত নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থি। কাজেই এবার লিটনের বিজয় ঠেকানো যাবে না।
জামায়াতের মহানগর আমির আতাউর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সিটি নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। আমাদের কোন প্রার্থি নেই।
আমরা ভোটকেন্দ্রেও যাবো না। ’
এদিকে মেয়র প্রার্থি হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহানগর সভাপতি মাসুদুল হক ডুলুকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শো’কজ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। এই সিদ্ধান্তকে ডুলু অবৈধ ও অগঠনতান্ত্রিক দাবি করে মাসুদুল হক ডুলু বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে তাঁকে (ডুলুকে) মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। কাজেই এবার নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন, ৪ আগষ্টের আগে তিনি ঘরে ফিরবেন না। যদিও লিটন সমর্থকরা বলছেন, নির্বাচনের ২/৪ দিন আগে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
বাদশা সমর্থকরা মনে করেন, দলীয় ভোট যাই থাক না কেন জোটগতভাবে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে খায়রুজ্জামান লিটনের চেয়ে ফজলে হোসেন বাদশাই শ্রেষ্ঠ।
অন্যদিকে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারি জাতীয় পার্টির নেতা দুরুল হুদা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও ব্রক্তি হিসেবে একজন ভাল মানুষ হিসেবে নগরবাসির কাছে পরিচিত। সূত্র জানায়, কারাবন্দি মিনু ও জামায়াত বিএনপির দুই প্রার্থি বুলবুল ও এনামুলের মধ্যে যাকে সমর্থন দেবেন তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনাই বেশি। আবার ফজলে হোসেন বাদশা, ১৪ দল ও প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারি আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুল হক ডুলু যদি খায়রুজ্জামান লিটনকে সমর্থন দিয়ে একযোগে মাঠে নামেন তাহলে তার বিজয়ের সম্ভাবনাও থাকে। সবমিলিয়ে এবার ভোটের ফলাফল কি দাঁড়ায় তা এই মুহুর্তে বলা মুশকিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নির্বাচন কমিশন জানায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে ১৫ জন প্রার্থি, কাউন্সিলর পদে ২০৩ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৩ জন প্রার্থি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
মোবাইল-০১৭২০০৮৪৮৯৪৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।