আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রশিবির নেতা সালেহী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক তাহের হত্যাকান্ড



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক, মুক্তিযোদ্ধা, জিয়া পরিষদের নেতা এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একই বিভাগের একজন শিক্ষকসহ চারজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। আর বেকসুর খালাস পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রশিবিরের রাবি শাখার সাবেক সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীকে। গত ২২ মে, ২০০৮ তারিখ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ টি এম মেসবাউদ্দৌলা এই আদেশ দেন। এই রায়ে নিহতের পরিবার, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা খুশি নন। তারা বলেন, অধ্যাপক তাহের হত্যাকান্ডের অভিযুক্ত প্রধান দুইজনের মধ্যে একজনের শাস্তি অন্যজন মুক্ত হলো।

রাবি ক্যাম্পাসবাসি এই রায় প্রত্যাশা করেনি। এদিকে হত্যা বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় প্রদানকালে আদালতের ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে ছাত্রশিবিরের নেতাদের আদালতের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে শিবির নেতা সালেহী খালাস পাওয়ায় বিপুল সংখ্যক উল্ল¬সিত শিবির আদালত চত্বরে মৌন র‌্যালি ও মহড়া দিয়েছে। আদালত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে সালেহীর অনুসারীরা এই শো-ডাউন ও র‌্যালি করে।

মৃত্যদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন নিহত অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী ভূ-তত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, বিএনপি সমর্থক মিয়া মো. মহিউদ্দিন আহমদ, পিতা-মৃত আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার শিবিরকর্মী জাহাঙ্গীর, পিতা-আজিমউদ্দিন ওরফে আজিম মুন্সি, জাহাঙ্গীরের ভাই ও শিবির কর্মী আবদুল সালাম, সালামের আত্মীয় বিএনপি সমর্থক নাজমুল ইসলাম, পিতা মো. আলাউদ্দিন। এই মামলার খালাসপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেন শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহী, পিতা-আবদুল করিম খন্দকার ও আজিমউদ্দিন ওরফে আজিম মুন্সি। দন্ড ও খালাসপ্রাপ্ত আসামি ৬ জনের মধ্যে ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও আজিমউদ্দিন মুন্সি জামিনে ছিলেন। গত ২২ মে, ২০০৮ রায় ঘোষণাকালে ৬ জনই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত আঘা ঘন্টা ধরে বিচারক রায় পড়ে শোনান।

এসময় আসামিদের কাউকে বিচলিত হতে দেখা যায়নি। সবাই ছিলেন স্বাভাবিক। রায় প্রদান শেষে সালেহীসহ অন্য চারজন আসামিকে পুলিশ আদালত থেকে বেরিয়ে আনার সময় শিবির নেতা সালেহী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করে বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে নগ্ন ষড়যন্ত্রের মৃত্যু ঘটেছে। ’ এসময় মিয়া মহিউদ্দিনকে বেশ হাস্যোজ্জল দেখাচ্ছিল। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ফেব্র“য়ারি অধ্যাপক তাহেরকে রাবি ক্যাম্পাসের পশ্চিমপাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টারের নিজ বাসায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

খুনিরা তার লাশ লুকিয়ে রাখে বাসার পেছনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে। অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ নিহত অধ্যাপক তাহেরের লাশের সন্ধান পায়। ৩ ফেব্র“য়ারি লাশ উদ্ধার করা হয় সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে। ওইদিনই নিহত অধ্যাপকের ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ হিমেল বাদি হয়ে মহানগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর খুনের রহস্য ফাঁস করে দেয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ জাহাঙ্গীরের আত্মীয় নাজমুলকে গ্রেফতার করে। সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অধ্যাপক তাহের খুনের সাথে মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও শিবির নেতা সালেহীর জড়িত থাকার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। জাহাঙ্গীর পুলিশকে জানায় যে, এই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন মিয়া মহিউদ্দিন ও ছাত্রশিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহী। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী স্পট খুনি হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে জাহাঙ্গীরের ভাই আবদুস সালামকে।

পুলিশ ২০০৬ সালের ৭ পেভ্র“য়ারি মিয়া মহিউদ্দিনকে রাবি ক্যাম্পাসের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে গ্রেফতার করে। ৮ ফেব্র“য়ারি জাহাঙ্গীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট জোবেদা খাতুনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ওই জবানবন্দিতে মিয়া মহিউদ্দিন তার পদোন্নতির পথের কাঁটা অধ্যাপক তাহেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে খুনের পরিকল্পনা করেন। আর এই খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় ছাত্র ও শিবির নেতা সালেহীকেও সম্পৃক্ত করা হয় অধ্যাপক তাহের হত্যাকান্ডে। বিনিময়ে সালেহীকে ভূ-তত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক বানানোর প্রলোভন দেন মিয়া মহিউদ্দিন।

সূত্র মতে, ১০ ফেব্র“য়ারি নাজমুল ও ১২ ফেব্র“য়ারি সালাম ১৬৪ ধারায় ম্যাজিষ্ট্রেটর সম্মুখে অভিন্ন জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে তারাও মহউদ্দিন ও শিবির নেতা সালেহীকেই খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। পুলিশ পরবর্তীতে আলামত গোপন করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর ও সালামের পিতা আজিমউদ্দিনকে গ্রেফতার করে অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায়। কিন্তু ছাত্রশিবির নেতা সালেহী প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ এমনকি জামায়াত-শিবিরের সমাবেশ থেকে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দেয়ার পরও পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা অন্য বাহিনী সালেহীকে গ্রেফতারের সাহস দেখায়নি। সূত্র আরও জানায়, মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় এই মামলাকে সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মনিটরিং সেলের অন্তর্ভুক্ত করে।

পুলিশ খুনের পুরো রহস্য, মোটিভ উদ্ধার ও খুনিদের শনাক্ত করার পরও মনিটরিং সেলের অনুমতি না পাওয়ায় মামলার চার্জশিট প্রদান করতে পারেনি। চাঞ্চল্যকর এ মামলা তদন্ত করেন মতহার থানার এসআই ওমর ফারুক, ডিবি পুলিশের এসআই গোলাম মাহফিজ ও আচানুল কবির। বর্তমান তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসআই আচানুল কবির ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ মহউদ্দিন, সালেহীসহ ৬জনকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন আদালতে। গত বছরের ২৩ এপ্রিল শিবির নেতা সালেহী রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী তার জামিন না-মঞ্জুর করে সালেহীকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

একই বছরের ৬ জুন আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে। ওই বছরেরই ৩ জুলাই হতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। সংশি¬ষ্ট সূত্র মতে, ২০ আগষ্ট রাজশাহীর জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর আলম মোল¬া এ মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিবৃতবোধ করেন। তিনি মামলাটিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। ৯ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ আর মাছউদ সাক্ষীদের প্রতি প্রসেস ইস্যু করার আদেশ দেন।

৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের জন্য মন্ত্রনালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। মামলার নথি জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রজ্ঞাপনে তারিখ ত্রুটিজনিত কারণে ট্রাইব্যুনাল নথি গ্রহণ না করে ফেরত পাঠায়। প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে গত ৩ ডিসেম্বর পুনরায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য প্রেরণ করা হয়। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

গত ৪, ৫ ও ৬ মে আদালতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, মোট ১০০টি কার্যদিবসে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। মামলায় মোট ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এছাড়া আসামিপক্ষে একজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, ২০০২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে পারবে।

সালেহীর বিরুদ্ধে ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ এবং আজিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম, আবদুস সালাম, নাজমুল ও মিয়া মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হলো। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, গোলাম আরিফ টিপু। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন খন্দকার মাহবুবউদ্দিন, শাহজাহান, মনসুর রহমান, মিজানুর রহমান প্রমূখ। বিচারকের বিশেষ মন্তব্য : রায় পড়ে শোনানোর সময় বিচারক বলেন, জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন আসামির জবানবন্দিতে অধ্যাপক তাহেরকে মাহবুব আলম সালেহী বালিশ চাপা দিয়ে ধরে।

এতে শ্বাসরোধে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু মেডিক্যাল পরীক্ষায় শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে এটা বলা নেই। বিচারক বলেন, পদোন্নতি পাবার জন্যই মিয়া মহিউদ্দিন অধ্যাপক তাহেরকে খুনের পরিকল্পনা করেন। মিয়া মহিউদ্দিনের গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্রে জালিয়াতির বিষয়টিও স্পষ্ট মনে হয়েছে। আদালত কক্ষে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ তবে শিবির নেতারা সিদ্ধ : বহুল আলোচিত অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকরা জড়ো আসতে থাকেন।

দুপুরে আদালতের এজলাজে বিচারক বসার আগেই সাংবাদিকরা আদালত কক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ জানায়, আদালতের ভেতরে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ আছে। তবে এসময় ছাত্রশিবির রাবি শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিসহ ৪ জন শিবির নেতা বিশেষ পিপি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলমের ¯ি¬প পুলিশকে দেখিয়ে আদালত কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন। সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিশেষ পিপি বলেন, সাংবাদিকরা আদালতের ভেতরে প্রবেশ করলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া আদালতের স্থান সংকুলানও হয় না।

একারণে সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে দেয়া হয়নি। আদালত চত্বরে শিবির ক্যাডারদের মহড়া মৌন র‌্যালি : চাঞ্চল্যকর অধাপক তাহের হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহী। এজন্য শিবির নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমায়। তারা আদালত এলাকায় মহড়া দিতে থাকে। ছাত্রশিবির নেতা সালেহীর খালাস পাবার খবর পাবার সাথে সাথে শিবির ক্যাডাররা আদালত চত্বরে উল¬াস প্রকাশ করে।

এসময় তারা হাতে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে আদালত এলাকায় শিবির নেতা-কর্মীরা মৌন র‌্যালিতে অংশ নেয়। প্রতিক্রিয়া : অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার বাদী ও নিহত অধ্যাপকের ছেলে সানজিদ আলভী আহমেদ হিমেল রায়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রায় আইনানুযায়ী হয়েছে। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। এই রায়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র।

একজন প্রধান আসামি বেকসুর খালাস পেলেন। এ বিষয়ে আমরা চিন্তিত। কাজেই আমরা পরিপূর্ণ খুশি হতে পারিনি। বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হত্যাকান্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আইনের দৃষ্টিতে রায় সঠিক হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শিবির নেতা সালেহীর নাম ছিল। কিন্তু সালেহী খালাস পেয়েছে। রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিলম্বে হলেও একটা রায় হলো, বিচার পাওয়া গেছে। তবে সব আদালতেতো এক রায় পাওয়া যায় না। কয়েকজন অভিযুক্তের শাস্তি হলো, কিন্তু অভিযুক্ত শিবির নেতা সালেহী খালাস পেয়েছে।

অধ্যাপক তাহের আমাদের সহকর্মী ছিলেন। আমরা সবই সব খুনিদেরই বিচার হোক। যে রায় হলো তাতে আমরা খুশি হতে পারছি না। কারও সাজা হবে কেউ খালাস পাবে এমনটা আমরা চাই না। আমি মনে করি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া উচিত।

রাবির আরেক প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান বলেন, আমরা সবাই আশা করিছেলাম যে, মূল আসামি দুইজনেরই শাস্তি হবে। কিন্তু একজনের হলো, আরেকজন যেভাবেই হোক ধরাছোয়ার বাইরে থেকে গেল। এই রায় ক্যাম্পাসবাসির প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মলয় ভৌমিক বলেন, মিডিয়ার রিপোর্টে শিবির নেতা সালেহী অধ্যাপক তাহের হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী বলে আমরা দেখেছি। তাহলে কিভাবে খালাস পেলো তাই রহস্যজনক।

শিবির নেতা সালেহী যেভাবে খুনের সঙ্গে জড়িত : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের হত্যাকান্ডের সাথে শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহী সরাসরি জড়িত। এরই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের আতদ্মস্বীকৃত খুনি জাহাঙ্গীর, সালাম ও নাজমুল তিনজনই প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্টেট এর সামনে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে স্পষ্ট করেই বলেছেন, সালেহী অধ্যাপক তাহের হজত্যাকান্ডের শুধু পরিকলপনাকারীই নন, হত্যাকান্ডের সময় সারাসরি অংশ নেন। জাহাঙ্গীরের জবানবন্দিতে বলা হয়, ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়ে মিয়া মো. মহিউদ্দিন শিবির নেতা সালেহীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ওইদিন মহিউদ্দিন তাকে বলেছিলেন যে, সালেহীর সাথে সম্পর্ক রেখো তাহলে ক্যাম্পাসে চলতে তোমার কোন অসুবিধা হবে না। অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আদালতকে জবানবন্দিতে আরও বলেন, একই বছরের ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অধ্যাপক তাহেরের ফাঁকা কোয়ার্টারে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করা হয়।

এসময় শিবির নেতা সালেহীও ছিলেন। মিয়া মহিউদ্দিন অধ্যাপক তাহেরকে গুলি করে হত্যার কথা বললে সালেহী আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন যে, গুলি করলে শব্দ হবে। এরপর ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। সে মোতাবেক ২০০৬ সালের ১ ফেব্র“য়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের পেছনে মহিউদ্দিন একটি পিস্তল দেন জাহাঙ্গীরকে। ওইসময়েও শিবির নেতা সালেহী মহিউদ্দিনের সাথে ছিলেন।

পিস্তলটি নিয়ে জাহাঙ্গীর অধ্যাপক তাহেরের বাসায় যাবার ১০ মিনিট পরেই মহিউদ্দিন, সালেহী, সালাম ও নাজমুল অধ্যাপক তাহেরের বাসার দরজায় শব্দ করেন। তাদেরকে ড্রইং রুমে রেখে জাহাঙ্গীর দোতালায় উঠেই রিভলবারের বাঁট দিয়ে অধ্যাপক তাহেরকে মাথার পেছনে আঘাত করেন। অধ্যাপক তখন অধ্যাপক তাহের মেঝেতে পড়ে যান। এরই মধ্যে সালেহী, মহিউদ্দিনসহ অন্যরা দোতালায় উঠে আসেন। মহিউদ্দিনের নির্দেশনানুযায়ী অধ্যাপক তাহেরের দুই হাত ও বগলের নিচে ধরেন সালেহী ও জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম কোমরের নিচে ধরে নিচতলায় নিয়ে আসেন।

সেখানে জাহাঙ্গীর ও সালেহী অধ্যাপক তাহেরের নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন। অধ্যাপক তাহের হাত-পা নড়ানোর চেষ্টা করলে মহিউদ্দিনের নির্দেশে জাহাঙ্গীর ও সালাম অধ্যাপক তাহেরেরে হাত এবং নাজমুল পা চেপে ধরেন। এক পর্যায়ে অধথ্যাপক তাহের ঝাঁকি দিয়ে ডান দিকে কাত হলে জাহাঙ্গীর তার কাছে থাকা একটি ছোরা দিয়ে অধ্যাপক তাহেরের মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে চিৎ করে শুইয়ে দেন। এরপর সালেহী ও জাহাঙ্গীর পুনরায় বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন। একটু পরেই অধ্যাপক তাহেরের নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।

২০০৬ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে আবদুস সালাম বলেন, সালেহীকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। সালামও ৩০ জানুয়ারির হত্যা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, অধ্যাপক তাহেরকে হত্যা করার পর মিয়া মহিউদ্দিন বলেছিলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের বড়াই দেখিয়ে দে’, তখন সালেহী অধ্যাপক তাহেরের পিঠের ওপর বসে চাপ দিতে দিতে বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের বড়াই !’ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামী নাজমুল (সালামের স্ত্রীর ভাই) ত্যাকান্ডের বিষয়ে ২০০৬ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মন্নুজান হলের পেছনে আসামী সালাম তাকে শিবির নেতা সালেহী ও মিয়া মহিউদ্দিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। জামায়াত-শিবিরের চ্যালেঞ্জ : অধ্যাপক তাহের হত্যাকান্ডের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এই জঘণ্য হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে। এসময় দেশজুড়ে যখন ছাত্রশিবির নেতা সালেহীর হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে সমালোচনা ও খুনি শিবির নেতাসহ হত্যাকান্ডে জড়িত সকলের বিচারের দাবিতে সোচ্চার কণ্ঠ, তখন ২০০৬ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি রাজশাহী মহানগরীতে জামায়াত-শিবির সমাবেশ সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়। ওইদিন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি (তৎকালীন) শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছিলেন যে, শিবিরের বিরুদ্ধে কিছু করা মানেই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা।

তিনি তার পাঁশে দাঁড়ানো সালেহীকে দেখিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আসামিকে সাথে নিয়েই এসেছি। সাহস-ক্ষমতা থাকলে আপনারা তাকে গ্রেফতার করুন। সত্যিই সেদিন পুলিশ তাকে ধরার সাহস দেখায়নি। ২০০৬ সালের ৫ মার্চ শিবির নেতা সালেহীর নামে ক্রোকী পরোয়ানা জারি হয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার পুলিশ খোলা পরোয়ানা জারির পর রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম এর আদালতে প্রতিবেদন পাঠায়।

এরপর সালেহী তিন বার উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিনন নেন। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি সালেহী হাইকোর্ট থেকে তিন মাসের জন্য সর্বশেষ জামিন লাভ করেন। ২৯ মার্চ জামিনের বর্ধিতকরণের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানালে সালেহীকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ২৩ এপ্রিল সালেহী রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হলে তাকে আদালত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। E-mail :


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.