আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সফটওয়্যার পাইরেসিতে শীর্ষে বাংলাদেশ

(¯`·._ Welcome to last blog _.·´¯)

দেশীয় পণ্য কিনে ধন্য হলেও বাংলাদেশের কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা বিদেশী সফটওয়্যার কিনে ধন্য করছে না। আর এ কারণেই চোরাই সফটওয়্যারের বাজার সর্বসত্দরে বেড়েই চলছে। দেশে ইতোমধ্যে মেধাসত্ত্ব আইন বজায় থাকলেও নেই এর কোন প্রয়োগ। আর সেকারণেই এই সপ্তাহে প্রকাশিত হওয়া আনত্দর্জাতিক রিসার্চ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশন (আইডিসি) এ বিজনেস সফটওয়্যার ইন্টেলিজেন্স (বিএসএ)'র সমীৰায় চোরাই সফটওয়্যারের দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান বাজার দখল করে রেখেছে আর্মেনিয়া ও বাংলাদেশ। সফটওয়্যার চুরি করে ব্যবহারের হার এই দুটি দেশে যথাক্রমে ৯৩ ও ৯২ শতাংশ।

অর্থাৎ মাত্র ৮ শতাংশ জেনুইন সফটওয়্যার বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। '২০০৭ পাইরেসি স্টাডি' নামে এই রিপোর্টে সারা বিশ্বের কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও আল্ট্রাপোর্টেবল পিসিতে ব্যবহৃত প্যাকেজ সফটওয়্যার পাইরেসির হার তুলে ধরা হয়েছে দেশভেদে। অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ, সিকিউরিটি প্যাকেজ, বিজনেস এপিস্নকেশন-এর মতো সিস্টেম সফটওয়্যার এবং রেফারেন্স সফটওয়্যার চুরি করে ব্যবহারের হার এই '২০০৭ পাইরেসি রিপোর্ট'-এ উঠে এসেছে। এবারের রিপোর্টে চোরাই সফটওয়্যারের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ১০৮টি দেশে আলাদা আলাদা রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে যাতে ২০০৬ সালের তুলনায় ৬৭টি দেশে পাইরেসি কমেছে আর মাত্র ৮টি দেশে বেড়েছে যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

কম্পিউটারের বাজার বড় হয়েছে কারণ সারা বিশ্বব্যাপী পিসি'র ব্যবহার বেড়েছে বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো 'ইমার্জিং কান্ট্রিতে'। ফলে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৭ সালে সারা বিশ্বব্যাপী পাইরেসি ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। বড় দেশ ব্রাজিল, ভারত, চীন ও রাশিয়ায় পিসি শিপমেন্ট ২০০৬ সাল থেকে ২০০৭ সালে বেড়েছে ২৭% আর নর্থ আমেরিকাতে ১৩%। একই সময়ে ২০০৭ সালে বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে মার্কিন ডলার অন্যান্য মুদ্রার চেয়ে দাম কমে গেছে ৭% আর তাই দামের দিক থেকে পাইরেসি বেড়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার যেখানে সারা বিশ্বব্যাপী সফটওয়্যার পাইরেসি হয়ে থাকে ৪৮ বিলিয়ন ডলার। দ্রম্নত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার পাইরেসির হার ৭% কমে দাঁড়িয়ে ৭৩%।

এর কারণ হলো সরকারি পর্যায়ের সহযোগিতা, চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনগনের সচেতনতা, সফটওয়্যারের প্রস্তুতকারক স্থানীয় আমদানীকারকদের মধ্যে চুক্তি এবং হার্ডওয়্যারের সাথে ব্র্যান্ডের সফটওয়্যার বিক্রি। গত দুই বছর ধরে চীনের পাইরেসির হার ৮২%-এ এসে থেমে আছে যদিও ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ সালে চীনের পাইরেসির হার ছিল ৯২%। আইডিসি বলেছে, চীনের সরকার দৃঢ়ভাবে চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার রোধ করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স ও সফটওয়্যার ব্যবহার করছে এবং সাধারণ বাসা-বাড়িতে ব্যবহারকারীরাও জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। দ্রম্নত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশগুলোতে চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার ঠেকানো এখনো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রথমবারের পিসি ব্যবহারকারী এসব দেশে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে এবং ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে যেখানে কম্পিউটার কেনা হচ্ছে এবং যেগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে চোরাই সফটওয়্যার। আর ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতা বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতার ফলে চোরাই সফটওয়্যার দ্রম্নতই বিভিন্ন স্থানে সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। ভৌগলিক সীমারেখাকে অতিক্রম করার ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এগুলো সনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে মেধাসত্ত্ব আইন যেকোন দেশের জন্যই যে মঙ্গলজনক এটি সমাজে প্রতিষ্ঠা করা দূরূহ হয়ে পড়েছে। গেস্নাবাল পিকচার অঞ্চলভেদে বা সারাদেশব্যাপী চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহারের হার দেখলে বোঝা যাবে বেশিরভাগ অঞ্চলেই পাইরেসি বেড়েছে, শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ১ শতাংশ কমেছে।

এশিয়ায় ১৩টি দেশে পাইরেসি কমেছে ২০০৭ সালে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পার্সোনাল কম্পিউটারে পাইরেসি কমে গেলেও পুরো এশিয়া মহাদেশে পাইরেসির হার বেড়েছে ৪ শতাংশ। ২০০৬ সালে এখানে পাইরেসির হার ছিল ৫৫% আর ২০০৭ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৫৯%। চীনের কম্পিউটার ব্যবহারকারী গত ১ বছরে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং ডলারের দরপতন হওয়ায় পাইরেসির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইডিসি বলেছে, এই অঞ্চলে মূলত পাইরেসির মূল সঞ্চালনকারী হলো 'হোয়াইট বক্স' বা কোন পিসি। যাতে চোরাই সফটওয়্যার দিয়ে দেয়া হয়।

মেধাসত্ত্ব আইন নিয়ে ভারতের সরকার ও প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। মালয়েশিয়ার সরকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হঠাৎ রেইড করে চোরাই সফটওয়্যার বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ শীর্ষে সফটওয়্যার পাইরেসির শীর্ষে রয়েছে আর্মেনিয়া (৯৩%), বাংলাদেশ (৯২%), আজারবাইজান (৯২%), মালদোভা (৯২%)। বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের প্রোডাক্টের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সরকার এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। মূলতঃ কর্পোরেট প্রোডাক্ট বিক্রির উপরেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যারের বাজার।

তারপরও এদেশে মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার কেনার ক্রেতার অভাব নেই। ব্যবহারকারীদের একটা উলেস্নখযোগ্য অংশের আগ্রহ রয়েছে জেনুইন সফটওয়্যারের প্রতি। এরা আইডিবি ভবন থেকে কিংবা ডিলারদের শো-রম্নম থেকে জেনুইন সফটওয়্যার ক্রয় করেন। আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ ক্রেতাদের এই অংশটিই জেনুইন সফটওয়্যার কিনে ৰতিগ্রসত্দ হোন। কারণটাও দুবের্াধ্য নয়।

সাধারণ্যে মাইক্রোসফটের জেনুইন প্রোডাক্ট বিক্রি হয় খুব সামান্যই। অন্যান্য জেনুইন সফটওয়্যারের বিক্রি আরো বেশি সীমিত। এ অবস্থায় ডিলারদের লৰ্য থাকে এই স্বল্পসংখ্যক ক্রেতার কাছে থেকেই অধিক মুনাফা করে নেয়ার। ডিলারদের এই অসাধু মানসিকতার কারণে ৰতিগ্রসত্দ হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। অতি উচ্চ মূল্য রাখার কারণে অনেক ক্রেতাই জেনুইন সফটওয়্যারের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।

অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন পাইরেটেড সফটওয়্যারের দিকে। মাইক্রোসফট বাংলাদেশে অফিস খোলার আগে দফায় দফায় স্টক হোল্ডারদের সাথে বৈঠক করেছে লাইসেন্সড সফটওয়্যারের বেনিফিট উপলব্ধি করাতে। সাফল্য কতোটা ধরা দিয়েছে মাইক্রোসফট বাংলাদেশের মুঠিতে? মাইক্রোসফট নিযুক্ত বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট মাইক্রোসার্ভ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এদের বহুবার পরিচালিত জরিপে যে ফলাফল বেরিয়ে এসেছে তা হচ্ছে মাল্টিন্যাশনাল এবং স্থানীয় বৃহৎ কিছু কোম্পানিই কেবলমাত্র তাদের লাইসেন্সড্ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কিন্তু কেন সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট ব্যবহারে উদাসীন সেই প্রশ্ন আসতেই পারে।

মাইক্রোসফট-এর বাজারজাতকরণ কৌশলের মাঝে রয়েছে বড় ধরনের ফোকর। জনসাধারণের কাছে তাদের পণ্য পৌঁছাতে পেরেছে কি-না অথবা না পৌঁছালে ভিন্ন কি পদৰেপ নেয়া যায় তার কোন লৰণই মাইক্রোসফটের আচরণে ফুটে উঠে না। দেশের কম্পিউটার মার্কেটে উইন্ডোজের অপারেটিং সিস্টেম-এর জেনুইন সফটওয়্যার হারিকেন দিয়ে খুঁজতে হয়- এই তথ্য কি অজানা মাইক্রোসফটের কাছে? দুষ্প্রাপ্য আর দূমর্ুল্যের এই বাংলাদেশ তাই এখন বিশ্ববাসীর কাছে হয়ে উঠেছে পাইরেসির স্বর্গরাজ্য। ইত্তেফাক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.